কলেজ ফাঁকি দিয়ে সংসদ ভবনে কিছুক্ষন ....
১৩ ই মে, ২০০৯ বিকাল ৫:৫০

তখন কলেজে উঠেছি, পাংখা গজাইতে শুরু করছে মাত্র ... পড়ালেখা তো দুরের কথা, কলেজের ক্লাসগুলো যেন বন্ধ কারাগার বলেই মনে হতো ... ম্যাডামরা যথেষ্ট আদর করলেও উনাদের দিকে তাকানোর টাইম নাই তখন ... স্যার গুলো ও আপাতত আমাদেরকে ঘাটায় না,তাই আমরাও তাদের সাথে কোন পাঙ্গা নেই না, শুধু সোজা একটা হিসাব আমাদেরকে তারা ক্লাস শুরুর সময় বলে দিসে ... ক্লাস ফাকি দেয়া চলবে না, অনুপস্হিত থাকলে কঠিনরকম ফাইন দিতে হবে ... তবে বাপের ট্যাকা বেশী থাকলে ফাইন দিও ... আর পরীক্ষায় খারাপ করলে টি সি দিয়া কলেজ থেকে ভাগায়া দিবে ... কাহিনী শেষ।
এই শুনে তো যাও একটু ক্লাস করার ইচ্ছা ছিল তাও শেষ হয়ে গেছিলো, কি আর করা ... রেগুলার ক্লাস ফাকি দিয়ে ছাদে অথবা কলেজের ওপাশের কোন ধোয়া উৎসব পালন করা হতো .... ক্লাসে রেগুলার কোন একজন বাকিদের প্রক্সি দেয়া আর কোনোভাবে মিস হয়ে গেলে সুজোগ মতো প্রফেসর রুমে গিয়ে আমাদের গ্রুপের পোলাপানের হাজিরা দেয়া একরকমের চোর-পুলিশ খেলা বেশ ভালভাবেই চলছিল ...
একদিন আমাদের গ্রুপের পোলাপাইন সব দেখি এই রুটিনে টায়ার্ড হয়ে গেছে বলে বোরড হয়ে সবাই ক্লাসে বসে আছে, কেউ একজনে বললো -- চল আজকে সংসদ ভবনে যাই ... ব্যাস আর কৈ যাবা ... বাথরুমের নাম করে একে একে পোলাপাইন বের হতে লাগলো বাইরে আর সবচেয়ে পিছনের জানালা দিয়ে একে একে সবার ব্যাগ বাইরে রপ্তানী করা হলো .... পিছনের দেয়াল টপকে বাইরে বের হতেই দেখি কয়েকজন স্হানীয় রিক্সাওয়ালা হাসতে হাসতে আসকাইলো -- মামারা আজকে এত দেরী করে বের হলেন যে ?
আমরা বললাম -- ম্যুড তৈরী হতে লেট হইছে আজকে ....
উনাদের একজন বললো -- তাইলে মামা চলেন আপনাগো ঘুরায়া আনি ...
আমরা বললাম -- নাহ , সবতে মিলে আজেক সংসদ ভবন যামু ....
এর পরে এক রিক্সায় ৪ জন করে বসে একরকম রিক্সা মিছিল নিয়েই দুপুরের কড়া রোদের মধ্যে সংসদ ভবনে পৌঁছালাম ... গিয়া দেখি পুরা এলাকা খালি ... কিছু কিছু দোকলা এক একটি গাছের ছায়া দখল করে নিজেদের মধ্যে ফুসুর ফুসুর ঘুটুর মুটুর করে যাচ্ছে ... কয়েকজন চা - মামা / ভাইগ্না ফ্লাক্স হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ... আর বেশ অল্প মানুষজন হেটে বেড়াচ্ছে ... কিছু ইউনিফর্ম পরা ছেলেমেয়েদেরকেও দেখা গেল ... চটপটি মামা একমুখ হাসি দিয়ে কইলো --- মামা আজকে এখন আইলেন যে, আইজকা সন্ধ্যার আইবেন না ?
কইলাম -- কলেজের থেকে আইছি মামা, সন্ধ্যায় আসব কিনা ঠিক নাই ...
এদিক ওদিক তাকায়া সুবিধামত কোন ছায়ার জায়গা না পেয়ে ত্যাক্ত হয়ে যে এখানে আসার বুদ্ধি দিয়েছিল তাকে কঠিন কথা শুনানো শুরু করেছি অমনি কৈথ্থেকে দুই পোলা আইসা কয় --- ভাইয়া একটু এই দিকে আসবেন ?
আমি কইলাম --- ক্যান ?
ওরা কইলো --- আমাদের এক বান্ধবী আপনারে খুব পছন্দ করছে ... কিন্তু কাছে আইতে পারতেছে না ... আপনি একটু যাবেন ওর কাছে ?
আমি কইলাম --- ওরে এইখানে আইতে কও, আমি যামু না ....
ওরা আবার প্যাচড়াপ্যাচড়ি টাইপ ডায়লগ দিতাছে দেইখা কইলাম -- মিঞা কার লগে হাংকি পাংকি করো ... তোমাগো বান্ধবীরে এইখানে আইতে কও ...
এ কথা বইলা ওগোর একটারে আমগো কাছে রাইখা বাকিটারে পাঠাইলাম সেই কইন্যারে আননের জন্য .....
কিছুক্ষন পরে দেখি সত্যই ইউনিফর্ম পরা এক মাইয়া ঐ পোলার সাথে আইতাছে ... আমার সাথের এক দোস্ত (কলেজ লাইফের অল টাইম বাদরামী পার্টনার) কইলো --- শোন ওরে ঝাড়ি মারিস না , অন্যভাবে কিছু একটা করি চল ...
আমি কইলাম --- কি করবি ?
ও কইলো --- আসুক আগে এর পরে দেখা যাবে....
ঐ মেয়ে এসে দাড়াতেই আসকাইলাম --- তোমার নাম কি ?
সে বললো -- কঙ্কা
আমি বললাম --- ঘটনা কি ? তোমার ফ্রেন্ডরা আইসা কি কয় আমারে ? (একটু ফাপর নিয়া কইলাম) আমারে চিনো তুমি ?
সে হালকা থতমত খায়া কইলো -- ভাইয়া কিছু মনে করবেন না আমরা আপনার সাথে একটু ফান করতে চাইছিলাম .... প্লিজ ভাইয়া কিছু মনে করবেন না ...
আমার পার্টনার হাতের হালকা টোকা দিয়া বুঝাইলো সময় হইছে ওগোরে সাইজ করার ....
পার্টনার কইলো --- তুমগোরে কৈ জানি দেখছিলাম .... নিউমার্কেটে প্রিন্স মাহমুদের এ্যালবাম (নাম টা ভুলে গেছি, তখন হটকেকের মত চলতেছিল ঐটা) কিনতে গেছিলা তাই না ?
সবকয়টা একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে কইলো --- জ্বি, আমরা কয়দিন আগে গেছিলাম ক্যাসেট কিনতে ...
আমি কইলাম --- ঐখানে কি ঘটনা ঘটাইছিলা মনে আছে কিছু ?
ওরা কয় --- না ... মানে ... ওখানে তেমন কিছু হয়নি তো ...
ওদের মুখ দেখে বুঝতে পারছি, কিছু না হলেও মোটামুটি ভাল মাইনক্যাচিপায় পড়ছে আল্লার বান্দা গুলো ...
আমি পার্টনার রে কইলাম --- দোস্ত, ফার্মগেট থেকে আমগো কালা পাহাড়টারে ডাইকা আনতো ... ওরে দেখলেই এগোর সবকিছু মনে পড়ে যাবে ....
বলতে না বলতে দেখি ছেলেগুলো কেমন কেমন করছে আর সেইসাথে কঙ্কা নামের মেয়ের অবস্হা আসলেই খারাপ হয়ে গেছে ...সে পাংশুমুখে বললো --- ভাইয়া আমরা আসলেই ওখানে কিছু করিনি ...
আমরাও তখন হেসে দিয়ে বললাম --- জানি তোমরা কিছু করোনি, তোমরা শুরুতে যেমন মজা করছিলে , আমরা ও একটু দুস্টুমি করলাম ...
নিজেদের মাঝের দুস্টুমিগুলো একে অপরদের কাছে শেয়ার করতে করতে সবাই মিলে ঝাপিয়ে পড়লাম চটপটি আর ফুচকা ভক্ষন কর্মসূচীতে ...