Saturday, January 31, 2009

Sharir achole rokte lekha Ekdin (Bangla Blog)

শাড়ীর আঁচলে

রক্তে লেখা একদিন


০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ ভোর ৪:৩১







একটু ভুলের কারনে হাতের ধাক্কা লেগে কাঁচের গ্লাস পড়ে যেতেই ভেঙ্গে খানখান হয়ে গেল .... কিভাবে কি হলো ভাবতে ভাবতে আনমনে তুলতে গিয়ে কাঁচের খোঁচা লেগে হাত কেটে রক্তের ধারা টপ টপ করে পড়তে শুরু করলো .... ব্যান্ডেজ বাধলেও কেন যেন রক্ত এই বাধ মানতে চাইছিলো না ... চুইয়ে চুইয়ে বেরিয়ে আসতে চাইছিল রক্তের ধারা ... সাদা ব্যান্ডেজ লাল হচ্ছিল আর সেই রক্তের মাঝেই যেন ফুটে উঠলো এক পুরানো স্মৃতির টাটকা অনুভব ....

বাঙ্গালী মেয়েদেরকে শাড়ি পরা দেখলে কেন জানি আগে থেকেই ভালো লাগতো, মনে হতো এটাতেই ওদের আসল সৌন্দর্য প্রকাশ পায় ... মনের এ গোপন কথাটি আমার বান্দরনী দোস্তটা কোন এক ভাবে জেনে গিয়েছিল .... তাকে আমি কখনোই বলিনি এ কথা ... তার পরেও সে জানলো কিভাবে ? ..... যাই হোক একদিন সে করলো কি , রাতে ফোন করে জিজ্ঞেস করলো -- কাল একটু সময় হবে ?

আমি বললাম -- কতক্ষন সময়? কি কাজ ?
সে বললো -- খুব জরুরী না, তোর সাথে একটু ঘুরতে ইচ্ছা করছে ... আসতে পারবি ?

আমি বললাম -- আচ্ছা ঠিকাছে, কিন্তু সন্ধ্যার পরে ছাড়া যে পারবো না ?
সে বললো -- অসুবিধা নাই, তুই এসে আমাকে নিয়ে যাস বাসা থেকে তাহলে আম্মু যেতে দিবে ...

আমি বললাম -- আচ্ছা তুই রেডী থাকিস, আমি কিন্তু বসবো না, তোকে নিয়েই আমি বের হয়ে যাবো ... ঠিকাছে ?
সে বললো -- ঠিকাছে আমি রেডী হয়েই থাকবো।

পরদিন সন্ধ্যায় ওদের বাসার সামনে এসে নিচে রিক্সা থেকে নামিনি, এমন সময় শুনি ৬ তলার উপর থেকে চিৎকার করে বান্দরনীটা বলছে -- তুই রিক্সা ছাড়িস না, আমি আসছি ...

একটু পরে দেখি বাসন্তী রং এর শাড়ী পড়ে রাজকন্যা নীচে হাজির .... সেদিন ওকে আসলেই খুব সুন্দর লাগছিল ... মুখ ফুটে কিছু বলার আগেই সে আমাকে বকা দিয়ে বলে -- জানি তোর শাড়ী অনেক পছন্দের তাই বলে এমন হা করে তাকায়ে থাকবি নাকি ? চলেন রিক্সাওয়ালা ভাই ... আপনি আপনার মতো চলতে থাকেন আমরা কোথাও থামবো না ....

আমি জিজ্ঞেস করলাম -- কি হয়েছে, আজকে এত সাজুগুজু করে শাড়ী পরে রিক্সায় ঘোরার ম্যুড হলো যে ?
সে বললো -- এই শাড়ীটা নতুন কিনেছি, তোর শাড়ী অনেক পছন্দ না ? তাই ভাবলাম নতুন শাড়ী পরে তোর সাথে একটু ঘুরি ... কেমন হয়েছে শাড়ীটা ?

আমার আসলে শাড়ীটা এত ভালো লেগেছিল যে বলার মতো না ... কিন্তু ওর সামনে প্রকাশ না করার জন্যই বললাম -- কি একটা ঘোড়ার ডিমের কালারের শাড়ী কিনেছিস, এ তো বুড়ীরা পরে ... তুই কি বুড়ী নাকি ?
এ কথা শোনার পরেও সে একেবারেই রাগ না করে বললো -- তুই না আমাকে মাঝে মাঝে বুড়ি ডাকিস ? তাহলে তো ঠিকই আছে ... এটা আমার জন্যই বানানো হয়েছে ... তাই না?

আমি মনে মনে ভাবছি কিরে বাবা, কাহিনী কি ... আজকে এর ম্যুড এত্তো ভালো ক্যান রে বাবা ... আর সাথে সাথে ওকে বিভিন্ন কথার মাধ্যমে খোচা দিচ্ছিলাম ... কিন্তু কোন ক্রমেরই সে ঐ দিন রাগছিলো না বরং আমার কথা কানেই তুলছিলো না ... অথচ অন্যদিন এমন কোন কথা বলা তো দুরের কথা খোচা মারার কথা মনে আসার সাথে সাথে ওর ধমক খাওয়া লাগে ... আবার রিক্সাওয়ালাও আমাদের কথা শুনে মজা পাচ্ছিলো আর বারবার ঘুরে পিছন ফিরে তাকাচ্ছিল ... উনাকে বললাম -- ভাই পিছনে না তাকিয়ে একটু সাবধানে চালান ...

একসময় বলা নেই কওয়া নেই আকাশ ফেটে বৃষ্টি শুরু হলো ... আমি রিক্সার হুড তুলে দিতে চাইলাম কিন্তু তা সে তুলতে দিবে না ... আরে ! কি মুসকিল ... বলে নাকি তার বৃষ্টিতে ভেজার ম্যুড হয়েছে তার ...
আমি মনে মনে বলি -- আজকে এর মাথাটা পুরা গেছে !!!!

ঝম ঝম বৃষ্টিতে ৫০ মিটার সামনের কিছুই ঠিকমতো দেখা যাচ্ছিলো না , রাস্তায় কোথাও কোথাও হাটু পানি জমে গেছে .... হঠাৎ কোনো এক ঢাকনা খোলা ম্যানহোল পানি কারনে দেখা না যাওয়ায় আমাদের রিক্সার একটি চাকা এর মধ্যে পড়তেই কাত হয়ে পড়লো ... ওদিকে বান্দরনীর ম্যুড এতই ভালো ছিল যে সে ঠিকমতো ধরে বসতেই নাকি ভুলে গিয়েছিলো .... ফলাফল হিসেবে রিক্সা কাত হতেই সে ছিটকে পড়ে যাচ্ছিলো ... কোনক্রমে ওর নিচে পড়াটা বাচাতে গিয়ে শেষমেষ নিজেই পড়ে গিয়ে একটা রাম-ধাক্কা আর কিছুটা ঘষা খেলাম রাস্তার পাশের লোহার রেলিং এ ... তবে হাত দুটো সামনে দিয়ে ব্যালান্সটা ঠিক করে চুড়ান্ত পতনটা ঠেকালাম...

অন্ধকারে ঠিক বুঝিনি ব্যাথা পেয়েছি কিনা ...তবে, ওখান থেকে হেটে একটু সামনে আসতেই বাম হাতটা কেমন জানি চটচটে অনুভূত হচ্ছিলো, ভাবছিলাম বৃষ্টির পানি এমন আঠালো তো হয় না, এরপরে হাতটা উপরে তুলে তাকিয়ে দেখি টাটকা রক্তে লাল হয়ে যাচ্ছে আমার হাত ...

তাড়াতাড়ি পাশের একটি টং এর দোকান থেকে পানি নিয়ে হাত ধুয়ে ফেলছি আর দেখার চেষ্টা করছি কতটুকু কেটেছে .... এর মাঝেই হঠাৎ পাগলিটা এক টুকরা কাপড় এগিয়ে দিয়ে বললো -- আয় তো, তোর হাতটা বেধে দেই, রক্ত পড়া কমে যাবে ... এর পরে সামনে গিয়ে ফার্মেসী থেকে ব্যান্ডেজ করে নিস ...

কাপড়টা হাতে নিতেই মনটা খারাপ হয়ে গেল ... আমি বেখেয়ালে রক্ত ধুচ্ছিলাম আর সেই ফাকে পাগলীটা নিজের নতুন শাড়ীর আচল ছিড়ে ফেলেছে ... সেটা দিয়েই আমার হাত বাধতে বলছে ...

মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো, বললাম -- তোর নতুন শাড়ী ....
সে বললো -- তোর হাতের রক্ত বন্ধ করাটা আমার কাছে এই শাড়ীর চেয়ে বেশী জরুরী ... যা করতে বলছি কর তো ... এটা তো তোর জন্যই কিনেছিলাম...

আমি অবাক হয়ে বললাম -- মানে ?
সে আমার হাত বাধতে বাধতে বললো -- মনে আছে কয়েকদিন আগে আমার সাথে তুই শপিং এ গিয়ে এই শাড়ীটা দেখে বলেছিলি খুব "সুন্দর শাড়ী" ... এ জন্যই কালকে গিয়ে শাড়িটা কিনে আজকে তোর সাথে বেড়াতে বের হলাম ...

বান্দরনী দোস্তটা আমার হাতে শাড়ীর আচলের ব্যান্ডেজ বাধা শেষ করে মধুমাখা হাসি দিয়ে বললো -- দেখ ! ... শাড়ীটা আমি তোর জন্য কিনেছিলাম ... আর এখন শাড়ীটা আমাদের দু-জনকেই কেমন সুন্দর করে পেচিয়ে রেখেছে ...

এর পরেও দেখি আমার হাতে রক্তের প্রবাহ ওর নতুন শাড়ীর আঁচলকে লাল করে দিচ্ছে ... এটা দেখতেই সে নিঃশব্দে হাত বাড়িয়ে দিয়ে ঐ রক্ত মাখা হাত ধরেই হাটতে শুরু করলো একসাথে .... পাশাপাশি




.

Monday, January 26, 2009

sobai mile amar sathe sorojontrO korechilo (Bangla Blog)

সবাই মিলে আমার সাথে

এ ষড়যন্ত্র করেছিল...


০৪ ঠা আগস্ট, ২০০৮ বিকাল ৩:১৩







ও কালকে রাতে এসেছিল বেশ দেরি করেই.... প্রতিদিন আমি ওর জন্য খাবার নিয়ে বসে থাকি, কিন্তু কালকে আমার যে কি হয়েছিল - ১০টা বাজতেই আকাশ- পাতাল এক করে ঘুম আমাকে টানতে টানতে নিয়ে গিয়েছিল বিছানায়... হয়ত তার সাথে দেখা না করানোর জন্যই সবাই মিলে আমার সাথে এ ষড়যন্ত্র করেছিল..... না হলে এমন করে ঘুম আসবে কেন ?

বৌ মা কালকে আমাকে কেন জানি একটু বেশী আদর করে বেশী খাইয়ে দিয়েছিল.... এ জন্যই তো খাবার শেষ করার পরপরই ধুমধাম ঘুম এসে গিয়েছিল, ওর জন্য অপেক্ষা করতে দিবে না বলেই বৌ মা এমন করে খাইয়েছিল ...... তার সাথে দেখা না করানোর জন্যই সবাই মিলে আমার সাথে এ ষড়যন্ত্র করেছিল.......

ওকে ছাড়া আমি তো খেতাম না ..... কাল কেন আমার এত ক্ষুধা লেগেছিল ? .... কেন আমি আরেকটু সহ্য করে থাকতে পারলাম না ? মন না চাইতেও কেন আমি খেয়ে ফেলেছিলাম ? তার সাথে দেখা না করানোর জন্য নিজের শরীর ও আমার সাথে এমন ষড়যন্ত্র করতে পারলো ?.....

আমি নিজ হাতে তুলে না দিলে ও কখনো খেতে চাইতো ..... তা সে ঘরে হোক অথবা বাইরে ..... আমাকে ডেকে ডেকে ঘর মাথায় করে তুলতো যদি আমি ভাত না বেড়ে দিতাম ..... কালকে রাতে ওর কি হয়েছিল যে এমন করে চুপচাপ খেয়ে নিলো, একবার ও কি ও আমাকে ডাকেনি ? ..... আমার কান ও কি তাহলে কাল রাতে ষড়যন্ত্র করেছিল ?

ওকে তো আমি নিজের হাতে খাওয়ার পরে মুখ মুছে দিতাম .... এখন অবাক হয়ে দেখছি সে খাওয়ার পরে এত পরিষ্কার করে কিভাবে মুখ পরিষ্কার করেছিল ..... আমার মাথায় আসছে না ..... এটা সে নিজে করেছিল নাকি অন্য কেউ ? ..... আর কে করতে পারে আমার বিরূদ্ধে ষড়যন্ত্র ? .....

মাঝরাতে আমি ড্রইংরুমের পাশ দিয়ে বাথরুমে গিয়েছিলাম, তখন একবার উকি দিয়ে দেখলেও হয়তো ওর হাসি হাসি মুখ খানা দেখতে পেতাম ..... আরো একবার ওর কন্ঠে মিষ্টি ডাকটি শুনতে পেতাম ...... আমার মন ও কি তবে আমার সাথে ষড়যন্ত্র করেছিল ?

শেষ সময়ে ওর কি অনেক কষ্ট হয়েছিল ? ..... সে কি আমাকে মা বলে ডেকেছিল ? .... সে কি বেচে থাকার শেষ চেষ্টা টুকু করতে পেরেছিল ? ....... আমি কেন এসবের কিছুই টের পেলাম না ? ......... তবে কি আল্লাহ তুমি ও আমার সাথে ............


( এ কথাগুলো এক অভাগা মায়ের, যার একমাত্র যুবক ছেলে সেদিন রাতে ঘরে ফেরার পরে সকালের সূর্যদয় দেখার পূর্বেই সবার মায়া ত্যাগ করে চলে গিয়েছে....... অনেক অনেক দুরের অজানা গন্তব্যে .....

তার লাশের পাশে বসে তিনি মূর্ছা যাওয়ার আগ পর্যন্ত এ বিলাপ করে যাচ্ছিলেন ....

Saturday, January 24, 2009

Dhakka .... Ottopor (Bangla Blog)

*ধাক্কা..:| /:) :(( অত:পর :-* *

২৫ শে জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১:৫৭








সকালে তমালের ঘুম ভাঙ্গলো আম্মুর ধাক্কা ধাক্কিতে -- ঐ ওঠ, সকাল হয়ে গেছে আর কত ঘুমাবি, নাস্তা করে ক্লাসে যা ... কিরে এখনো উঠলি না ?

একটু পরে, বাথরুমের ফ্রেস হওয়ার জন্য ধাক্কা -- দরজায় নিজের তৈরী শব্দ সংকেত ... ঠুক ঠুক , নক নক ,ধুম ধাম, ধড়াম ... পরক্ষনেই আব্বুর রাগী চেহারায় দরজা খোলা দেখে চোখে মুখে ধাক্কা খেতেই হলো ...

বাথরুমে ঢুকেও শান্তি নাই ... কারন সে ঢুকলেই ছোট ভাইটার ছোট হোক বড় হোক একটা প্রেসার লাগবেই ... সুতরাং দরজায় আবার ক্রমাগত ধাক্কা -- ধড়াম ধড়াম , ভাইয়াআআআআআআআআআ .......................

সেখান থেকে বের হতেই নাস্তার টেবিলে আব্বু আম্মুর পড়া বিষয়ক বকার ধাক্কা -- পরীক্ষা তো সামনে , পড়ার কি অবস্হা, সারাদিন তো বাইরে ঘুরে বেড়াও পড়ালেখা কখন করো শুনি ? এমন করলে তো পরীক্ষা খারাপ হবে .... পরিক্ষা যদি খারাপ হয় .... এর পরের কথাগুলো শুনতে শুনতে তমালের মুখস্ত হয়ে গিয়েছে, তাই ঐ দিকে মন না দিয়ে নাস্তায় ডিমের খোজ করতেই আরেকটা ধাক্কা খেতে হলো ... পিচ্চিটা নিজের জন্য বরাদ্দ ডিমের সাথে ওর ডিমটাও খাওয়ার পর পরই নিন্মচাপ অনুভুত হওয়াতেই বাথরুমের দরজায় আজকে অমন ধাক্কা দিচ্ছিলো ...

বেজার মনে ঘর থেকে বের হয়ে বাস স্ট্যান্ডে পৌছে আজকে সুমীকে না দেখতে পেয়ে আবার ধাক্কা খেল ... ও তাকে ফেলে চলে গেল কিভাবে ? ... পাশের লোকটির কাছে সময় জানতেই কয়েকটি ক্রমাগত ধাক্কা খেতে হলো ... তার আজকে ক্লাস সকাল ৮টায়, এখন বাজে ৯টা ... সুমিকে বলেছিলো ৭:৩০ এ এখানে থাকবে ... এর পরের কথা হলো ... আজকে সকালে খুবই ইমপর্টেন্ট ২টা ক্লাস ছিল যেগুলোতে ও এখটু কাঁচা ..... এতগুলো ধাক্কা একসাথে হজম করতে না পেরে নিজেকে ধাক্কা মেরে মাটিতে লুটিয়ে ফেলতে ইচ্ছা জাগতেই পাশের মানুষটি হালকা ধাক্কা মেরে বললো -- বাস এসে গেছে

প্রতিদিনকার মতো ধাক্কা ধাক্কি করে বাসে উঠে গন্তব্য পর্যন্ত বাসের ভিতরেও সামনে থেকে পিছনে ধাক্কাধাক্কি করতে করতে বাসস্টপে নামার সাথে সাথে হেলপার একপ্রকার ধাক্কা দিয়েই নামিয়ে দিলো ...

ক্লাসের সামনে তার জন্য আরেকটি ধাক্কা অপেক্ষা করছিল ... দেখে ক্লাস শেষে সবাই বাসায় চলে গিয়েছে ... আর আজকের পরবর্তী সব ক্লাস প্রসপন্ড করা হয়েছে ... এদিক সেদিক তাকিয়ে সুমিকে দেখতে না পেয়ে আরেক ধাক্কা খেল ... ও কোনদিন তাকে ছাড়া বাসায় যায়না ... আজকে কিভাবে গেল ?

মন খারাপ করেই নির্দিষ্ট বাসস্ট্যান্ডের দিকে রওনা হলো তমাল ... ঐখান থেকেই ওরা সব সময় বাস নেয় ... কিন্তু হঠাৎ মনে হলো নাহ ! ওখানে গেলে মনটা আরো খারাপ লাগবে ... এর চেয়ে আজকে এই স্টপ থেকেই গেটলক সার্ভিসে চলে যাবে। গেটলক সরাসরি ওর বাসার কাছের স্টপে থামে এর মাঝে আর শুধু এক জায়গাতে স্টপ করে... একটু একটু জলদি যেতে পারলে হয়তো সুমির সাথে ওদের হাটা পথেই দেখা হয়ে যাবে ...

যে ভাবা সেই কাজ, একবুক আশা নিয়ে দ্রুত-সার্ভিসে চলতে না চলতেই দেখতে পেল পরের স্টপে সুমি ঠিকই ওর জন্য দাড়িয়ে আছে ... দুজন দুজনকে দেখে একসাথে ধাক্কা খেল ...

সুমিকে অমন মন খারাপ দেখতে পেয়ে তমাল বাস-কন্টাকটরকে বললো বাস থামাতে, সে নামতে চায় ... বাস থামনে না শুনে পাগলপ্রায় তমাল বাসের দরজায় ধাক্কা দিতেই হেলপার আর কন্ট্যাক্টরের সাথে শুরু হলো ধাক্কা ধাক্কি ... এক পর্যায়ে রাগ সামলাতে না পেরে বাস কন্ট্যাক্টর আর হেল্পার তাকে ধাক্কা দিয়ে চলন্ত বাস থেকে ফেলে দিতেই প্রথমে রাস্তার সাথে ধাক্কা এবং পর মুহুর্তে একটি চলন্ত প্রাইভেট কারের সাথে ধাক্কা খেয়ে জ্ঞান হারানোর আগে পর্যন্ত সে শুধু জানে কয়েকজন মানুষ ওকে ধাক্কাধাক্কি করে একটি গাড়িতে তুলছিলো আর বলছিল -- জলদি করে ছেলেটাকে হাসপাতালে নিয়ে চলুন ... অত:পর ......

Saturday, January 17, 2009

~ Protikkhar Prohore ~ (Bangla blog)

.... প্রতীক্ষার প্রহরে ....

১৭ ই জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১০:৪৫







জ্বলন্ত সিগারেট হাতে নিয়ে আনমনে ধুমায়িত চায়ের কাপে চুমুকটি দিতেই.... উফফফ.... জিভটি যেন পুড়েই গেল, সাথে সাথে এক মূহুর্তে ফিরে গেলাম ১০-১২ বছর আগের এক আলো আধারীর সন্ধ্যাবেলায়...

তখন শীতকাল, এমন সকালের মিষ্টি মধুর ঠান্ডায় নাক মুখ লেপের ভিতরে ঢুকিয়ে দিয়ে ঘুমানোর আনন্দই আলাদা ... কিন্তু মায়ের চিল্লাপাল্লায় কি আর ঘরে থাকা যায় ? :(

সকাল হতে না হতেই শুরু করে দিবে -- কিরে আজকে ক্লাস নাই ? ...
কে তাকে বুঝাবে শীতের সকালের এমন আরামের ঘুমের জন্য একটা দুইটা ক্লাস মিস দিলে এমন কোন ক্ষতি হয়না :| ... কি আর করা ... বাধ্য হয়েই উঠে পড়তে হলো ফ্রেস হয়ে নাস্তা খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম ক্লাসের উদ্দেশ্যে X(

ক্লাস শেষে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে ঘরে ফিরে একটু নাকে মুখে কিছু গুজেই আবার বাইরে দৌড় দিব ... ৪টা বেজে গেছে চৌরাস্তার নির্দিষ্ট দোকানের সামনে তো এতক্ষনে সবাই এসে হাজির হয়ে গিয়েছে আড্ডা দিতে ... এখন কি দেরী করা যায় ? ... কিন্তু বিধিবাম ! ... ঝনঝন শব্দে বেজে উঠলো টেলিফোন ... কি মনে করে দরজা থেকে ফিরে ফোন ধরলাম ...

বললাম -- হ্যালো
অপরপ্রান্ত থেকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম ...
আবার বললাম -- হ্যালো ... কে বলছেন প্লিজ ?
সে বললো -- আমি (মুহুর্তেই বুঝলাম এটা কার গলা)
আমি বললাম -- কিরে কি হয়েছে ?
সে বললো -- তুই কি একটু আসতে পারবি ?
বললাম -- আচ্ছা আমি আসছি ....

ঘন্টাখানিকের মধ্যে ওদের বাসায় পৌছানোর পরে জানলাম... কোন এক অজানা কারনে সে কাল রাত থেকে কিছুই খাচ্ছে না... শুধু কেঁদেই চলেছে ...

আন্টিকে জিজ্ঞেস করতেই বললেন -- জানিনা বাবা, ওর কথা তো ও আর আমাদের কাউকে বলে না ... যতদুর জানি ও তোমাকে অনেক কিছুই বলে ... তাই ওকে বুঝিয়ে বলেছিলাম তোমাকে ডেকে এনে একটু গল্প করলে ,তাতে করে ওর মনের কথাগুলো তোমায় বলতে পারলে হয়তো একটু হালকা হতে পারবে ...

ওর রুমের ভিতরে ঢুকতেই দেখি এলোকেশী বান্দরনীটা কাজলকালো ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে ... বললো -- ৩ দিন ৮ ঘন্টা .... উমমম (দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে) ৩৫ মিনিট।

আমি বললাম -- মানে কি রে ? :|

সে বললো -- তুই বুঝবি না ... চুপ থাক X( .... আচ্ছা তুই পড়ালেখা, আড্ডা, খেলা ছাড়া আর কি করতে ভালোবাসিস ?
আমি মনে মনে বলি, আসলাম ওর মন খারাপের কাহিনী জানতে সে দেখি আমার খবর নেয়া শুরু করেছে ... তবুও এ মুহুর্তের আসল কথা হলো ওর মন ভালো করতে হবে,

তাই বললাম -- দেখ, এর বাইরে যা করা যায় তা হলো রাজনীতি অথবা প্রেম ... অন্তত আমাদের বয়সের সবাই তাই করে, তাই না ?
সে বললো -- রাজনীতি করিস না কেন ?
আমি বললাম -- তুই তো জানিস, আমি একজন সচেতন মানুষ হিসেবে রাজনীতির যতটুকু জানা দরকার জানি এবং জানতে চেষ্টা করি ... কিন্তু নিজের কাছের বন্ধুদের কাছে এর অন্ধকার দিকটাও তো জেনেছি এবং জানছি ... তুই ও তো কিছুটা হলেও জানিস ... এখন তুই বল ... এসব দিকে আমি কি যাবো ?

সে বললো -- ঠিক আছে রাজনীতি না হয় নাই করলি, কিন্তু প্রেম ? ওতে দোষ কি ?
অনেকটা মজা করেই বললাম -- হুমম ... ঐ সব আজাইরা কাজ আমাকে দিয়ে হবে না, আর আমি যদি শুধু একজনের সাথেই আহেম আহেম করি তাহলে আমার লেডি কিলার টাইটেলের কি হবে বল ? :P

আমি আবার বললাম -- শোন ... আজাইরা প্যাচাল বন্ধ করে বল তোর মন খারাপ হইছে ক্যান ?
সে বললো -- আমার মন খারাপ কোথায় ?
আমি বললাম -- তাহলে খাসনি ক্যান কালকে থেকে ? আমাকে ফোন করার সময় কান্না করছিলি কেন ?
সে বললো -- আরে ও এমনি একটু মন খারাপ ছিল এ জন্য... এখন আমি এক্কেবারে ঠিক আছি ... চিন্তা করিস না তো ...

আমি বললাম -- হুমম ... আচ্ছা ...তুই তাহলে এখন খাবার খেয়ে নে...আর আমি ভাগি ?
সে বললো -- আরেকটু বসবি না ? আর বেশী না ৩০ টা মিনিট থাক না, প্লিজ ...
আমি বললাম -- থাকতে পারি, যদি তুই নিজের হাতে আমার জন্য চা বানায়ে দিস ...

৫ মিনিটের মধ্যে সে নিজে ট্রে ভর্তি খাবার আর চা এনে হাজির করলো ...
আমি বললাম -- চা আমি এক শর্তে খেতে পারি, তুই যদি আমি যতটা বলবো ততটা খাবার খাস ...
সে বললো -- তথাস্তু ...

আমার জানামতে সে একবেলা যা পরিমান খাবার খায় তার দ্বিগুনের বেশী খাবার ভর্তি করা প্লেট তার সামনে দিয়ে বললাম -- নে এবার তুই খাওয়া শুরু কর ... আমিও চা খাই।

সে খাবার খাওয়া শুরু করতেই আমি চায়ের কাপ হাতে নিলাম ... দেখলাম কি সুন্দর করে খাচ্ছে আমার বান্দরনী দোস্তটা ...
সে সময় হঠাৎ করেই সে জিজ্ঞেস করলো -- তোর সাথে আবার কখন দেখা হবে ?
আমি আমার কাজের সিডিউল টা হিসাব করে বললাম -- কাল দুপুরে ... ৩টায় আসিস "ডাস" এর সামনে ... আমি ওখানে থাকবো .... ও কে ?

এমন সময় সে বলে উঠলো -- সাড়ে ১৭ ঘন্টা ...
আমি বললাম -- মানে ? :|
সে বললো -- এখন টাইম দেখ ... এখন তুই চলে গেলে তোর সাথে আমার দেখা হবে সাড়ে ১৭ ঘন্টা পরে ....

ওর হাতে বানানো ধুমায়িত চায়ের কাপে কেবল আরেকটা চুমুক দিয়েছিলাম মাত্র ... হঠাৎ চমকে উঠতেই গরম চায়ে জিভটি অল্প পুড়ে গিয়েছিল.... কারন ঐ মুহুর্তেই আমি আরেকটি অজানা সংখ্যার মর্মার্থ বুঝতে পেরেছিলাম ... আর তা হলো --- ৩ দিন ৮ ঘন্টা ৩৫ মিনিট:|