Saturday, January 17, 2009

~ Protikkhar Prohore ~ (Bangla blog)

.... প্রতীক্ষার প্রহরে ....

১৭ ই জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১০:৪৫







জ্বলন্ত সিগারেট হাতে নিয়ে আনমনে ধুমায়িত চায়ের কাপে চুমুকটি দিতেই.... উফফফ.... জিভটি যেন পুড়েই গেল, সাথে সাথে এক মূহুর্তে ফিরে গেলাম ১০-১২ বছর আগের এক আলো আধারীর সন্ধ্যাবেলায়...

তখন শীতকাল, এমন সকালের মিষ্টি মধুর ঠান্ডায় নাক মুখ লেপের ভিতরে ঢুকিয়ে দিয়ে ঘুমানোর আনন্দই আলাদা ... কিন্তু মায়ের চিল্লাপাল্লায় কি আর ঘরে থাকা যায় ? :(

সকাল হতে না হতেই শুরু করে দিবে -- কিরে আজকে ক্লাস নাই ? ...
কে তাকে বুঝাবে শীতের সকালের এমন আরামের ঘুমের জন্য একটা দুইটা ক্লাস মিস দিলে এমন কোন ক্ষতি হয়না :| ... কি আর করা ... বাধ্য হয়েই উঠে পড়তে হলো ফ্রেস হয়ে নাস্তা খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম ক্লাসের উদ্দেশ্যে X(

ক্লাস শেষে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে ঘরে ফিরে একটু নাকে মুখে কিছু গুজেই আবার বাইরে দৌড় দিব ... ৪টা বেজে গেছে চৌরাস্তার নির্দিষ্ট দোকানের সামনে তো এতক্ষনে সবাই এসে হাজির হয়ে গিয়েছে আড্ডা দিতে ... এখন কি দেরী করা যায় ? ... কিন্তু বিধিবাম ! ... ঝনঝন শব্দে বেজে উঠলো টেলিফোন ... কি মনে করে দরজা থেকে ফিরে ফোন ধরলাম ...

বললাম -- হ্যালো
অপরপ্রান্ত থেকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম ...
আবার বললাম -- হ্যালো ... কে বলছেন প্লিজ ?
সে বললো -- আমি (মুহুর্তেই বুঝলাম এটা কার গলা)
আমি বললাম -- কিরে কি হয়েছে ?
সে বললো -- তুই কি একটু আসতে পারবি ?
বললাম -- আচ্ছা আমি আসছি ....

ঘন্টাখানিকের মধ্যে ওদের বাসায় পৌছানোর পরে জানলাম... কোন এক অজানা কারনে সে কাল রাত থেকে কিছুই খাচ্ছে না... শুধু কেঁদেই চলেছে ...

আন্টিকে জিজ্ঞেস করতেই বললেন -- জানিনা বাবা, ওর কথা তো ও আর আমাদের কাউকে বলে না ... যতদুর জানি ও তোমাকে অনেক কিছুই বলে ... তাই ওকে বুঝিয়ে বলেছিলাম তোমাকে ডেকে এনে একটু গল্প করলে ,তাতে করে ওর মনের কথাগুলো তোমায় বলতে পারলে হয়তো একটু হালকা হতে পারবে ...

ওর রুমের ভিতরে ঢুকতেই দেখি এলোকেশী বান্দরনীটা কাজলকালো ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে ... বললো -- ৩ দিন ৮ ঘন্টা .... উমমম (দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে) ৩৫ মিনিট।

আমি বললাম -- মানে কি রে ? :|

সে বললো -- তুই বুঝবি না ... চুপ থাক X( .... আচ্ছা তুই পড়ালেখা, আড্ডা, খেলা ছাড়া আর কি করতে ভালোবাসিস ?
আমি মনে মনে বলি, আসলাম ওর মন খারাপের কাহিনী জানতে সে দেখি আমার খবর নেয়া শুরু করেছে ... তবুও এ মুহুর্তের আসল কথা হলো ওর মন ভালো করতে হবে,

তাই বললাম -- দেখ, এর বাইরে যা করা যায় তা হলো রাজনীতি অথবা প্রেম ... অন্তত আমাদের বয়সের সবাই তাই করে, তাই না ?
সে বললো -- রাজনীতি করিস না কেন ?
আমি বললাম -- তুই তো জানিস, আমি একজন সচেতন মানুষ হিসেবে রাজনীতির যতটুকু জানা দরকার জানি এবং জানতে চেষ্টা করি ... কিন্তু নিজের কাছের বন্ধুদের কাছে এর অন্ধকার দিকটাও তো জেনেছি এবং জানছি ... তুই ও তো কিছুটা হলেও জানিস ... এখন তুই বল ... এসব দিকে আমি কি যাবো ?

সে বললো -- ঠিক আছে রাজনীতি না হয় নাই করলি, কিন্তু প্রেম ? ওতে দোষ কি ?
অনেকটা মজা করেই বললাম -- হুমম ... ঐ সব আজাইরা কাজ আমাকে দিয়ে হবে না, আর আমি যদি শুধু একজনের সাথেই আহেম আহেম করি তাহলে আমার লেডি কিলার টাইটেলের কি হবে বল ? :P

আমি আবার বললাম -- শোন ... আজাইরা প্যাচাল বন্ধ করে বল তোর মন খারাপ হইছে ক্যান ?
সে বললো -- আমার মন খারাপ কোথায় ?
আমি বললাম -- তাহলে খাসনি ক্যান কালকে থেকে ? আমাকে ফোন করার সময় কান্না করছিলি কেন ?
সে বললো -- আরে ও এমনি একটু মন খারাপ ছিল এ জন্য... এখন আমি এক্কেবারে ঠিক আছি ... চিন্তা করিস না তো ...

আমি বললাম -- হুমম ... আচ্ছা ...তুই তাহলে এখন খাবার খেয়ে নে...আর আমি ভাগি ?
সে বললো -- আরেকটু বসবি না ? আর বেশী না ৩০ টা মিনিট থাক না, প্লিজ ...
আমি বললাম -- থাকতে পারি, যদি তুই নিজের হাতে আমার জন্য চা বানায়ে দিস ...

৫ মিনিটের মধ্যে সে নিজে ট্রে ভর্তি খাবার আর চা এনে হাজির করলো ...
আমি বললাম -- চা আমি এক শর্তে খেতে পারি, তুই যদি আমি যতটা বলবো ততটা খাবার খাস ...
সে বললো -- তথাস্তু ...

আমার জানামতে সে একবেলা যা পরিমান খাবার খায় তার দ্বিগুনের বেশী খাবার ভর্তি করা প্লেট তার সামনে দিয়ে বললাম -- নে এবার তুই খাওয়া শুরু কর ... আমিও চা খাই।

সে খাবার খাওয়া শুরু করতেই আমি চায়ের কাপ হাতে নিলাম ... দেখলাম কি সুন্দর করে খাচ্ছে আমার বান্দরনী দোস্তটা ...
সে সময় হঠাৎ করেই সে জিজ্ঞেস করলো -- তোর সাথে আবার কখন দেখা হবে ?
আমি আমার কাজের সিডিউল টা হিসাব করে বললাম -- কাল দুপুরে ... ৩টায় আসিস "ডাস" এর সামনে ... আমি ওখানে থাকবো .... ও কে ?

এমন সময় সে বলে উঠলো -- সাড়ে ১৭ ঘন্টা ...
আমি বললাম -- মানে ? :|
সে বললো -- এখন টাইম দেখ ... এখন তুই চলে গেলে তোর সাথে আমার দেখা হবে সাড়ে ১৭ ঘন্টা পরে ....

ওর হাতে বানানো ধুমায়িত চায়ের কাপে কেবল আরেকটা চুমুক দিয়েছিলাম মাত্র ... হঠাৎ চমকে উঠতেই গরম চায়ে জিভটি অল্প পুড়ে গিয়েছিল.... কারন ঐ মুহুর্তেই আমি আরেকটি অজানা সংখ্যার মর্মার্থ বুঝতে পেরেছিলাম ... আর তা হলো --- ৩ দিন ৮ ঘন্টা ৩৫ মিনিট:|

No comments: