Thursday, November 19, 2009

অক্ষর দাহে আত্মাহুতি !

অক্ষর দাহে আত্মাহুতি !

১৫ ই নভেম্বর, ২০০৯ সকাল ১০:৩৫





আলতো করে ধরে চোখের সামনে রাখতেই অসামান্য উজ্জলতায় আজো জ্বল জ্বল করে জ্বলে ওঠে চিঠি গুলোর প্রতিটি অক্ষর ... ঠিক যেমনটি জ্বলে উঠতো এত দিন এতটা বছর ধরে প্রতিটি দিন, প্রতিটা ক্ষন, প্রতিটি মুহুর্তে ...ভালবাসার কোমল স্পর্শে আজো যেন অক্টোপাশের মত জড়িয়ে ধরতে চায় সেই প্রথম দিনটির মতো ... এক মুহুর্তে মিটিয়ে ফেলতে চায় দুই দেহ মাঝের অনন্ত দুরত্ব... মনের মতই দেহের ক্ষেত্রেও দুজনের মাঝে তৈরি করতে চায় অদ্বিতীয় স্বত্তা ... ভালবাসায় ভরা মুগ্ধ চোখে দেখতে থাকা চিঠির উপর হঠাৎ কোথা থেকে দু-ফোটা পানি পড়াতে, সম্বিৎ ফিরে পেতেই কঠিন বাস্তবতার চরম স্বার্থপরতার সামনে দাড়িয়ে পড়তেই হলো ... এই চোখটাই আসলে যে তার চরম এবং পরম শত্রু... এটা না থাকলেই তাকে আজ এ দিনটি দেখতে হতো না ... আর এই মুহুর্তের জন্মও নিত না কখনো ...


ধীর পদক্ষেপে উঠে দিয়াশলাই এর একটি কাঠি বের করে আগুন জ্বালাতেই একটুকরো আগুনের দেখা পাওয়া গেল.... নাহ ! এটা ঠিক সেরকম আগুন না যেমনটি সে চায়... তার চাই আগুনের লেলিহান শিখা, ঠিক যেমনটি জ্বলছে তার বুকের ভিতর ...দিয়াশলাই এর বাক্স খুলে এর ভিতর কাঠিটির আগুন অন্য বারুদের গায়ে লাগতেই অসামান্যভাবে সেই আগুনেরই সন্ধান পাওয়া গেল যার অপেক্ষা সে করে চলেছিল বেশ কিছুক্ষন ধরে ... দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠা আগুনের শিখার কাছে চিঠিটির একাংশ ধরতেই যেন চাতকের মতই আত্মাহুতির অভিপ্রায়ে অক্ষরগুলো ওকে বুকে টেনে নিলো ...


আস্তে আস্তে পুড়তে থাকা চিঠির প্রতিটি অংশে আজ যেন সে দেখতে পাচ্ছে সেই সব দিনের দৃশ্য যখন ওরা দুজনে উদ্দাম আনন্দে উপভোগ করেছিলো সূর্যকীরণের উত্তপ্ত প্রেম আর রাতের নিঃশব্দ ভালবাসা ... আশা নিরাশার হাজারো দ্বন্দকে দুরে ঠেলে দিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সাথে থাকার , সবসময় ... হঠাৎ জ্বলতে থাকা আগুনের শিখায় চিঠি ধরা হাতের চামড়াগুলো একটু একটু পুড়তে থাকায় যেন চলমান ছবিগুলো একে একে পরিবর্তিত হতে থাকলো ... সন্ধ্যার মিষ্টি আলোয় আজ ওর হাতে অন্য কারো হাত, যে হাত এক সময় তাকে ধরে বলেছিল -- কখনো ছেড়ে যাবনা ... টানা টানা মায়াময় সেই দু চোখে আজ অন্য কারো প্রতিচ্ছবি উদ্ভাসিত ... আর তখনি বাতাসে ভেসে আসলো নিজের কন্ঠস্বর - তোমাকে আমি কখনোই আমার অপরাধী হতে দিব না ... কারন ... আমি যে তোমাকে ভালবাসি ....



ছোট্ট বাবুদের মিষ্টি কথা

ছোট্ট বাবুদের মিষ্টি কথা

১১ ই নভেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৫:০৪




আমার দুই ছোট্ট কাজিন আছে এখানে ... একজন ৫ অন্যজন ৭ বছর বয়স ... স্কুলে আর বাইরে ওদের দিনের বেশীরভাগ সময় কাটে অন্য ভাষায় কথা বলে অথবা শুনে, বাসায় এসে বেশীরভাগ সময় "আভাটার" "বেন ১০" জাতীয় কার্টুন দেখে , তাও আবার সেই ভাষায় ... বাংলা শুধু বলতে পারে ঘরের মানুষগুলোর সাথে ... আমার আংকেল আন্টি কখনোই ওদের সাথে বাংলা ছাড়া অন্য ভাষায় কথা বলেন না, উনাদের কথা হলো -- আমরাও যদি ওদের সাথে বাংলা না বলি তাহলে ওরা কখনোই নিজের ভাষা শিখবে না ... যা শেখাটা ওদের জন্য অনেক জরূরী।


প্রথমে আমার ৭ বছরের কাজিনের গল্প বলি ...

একদিন তাকে বলা হলো
-- যাও তো কিচেনের কাস্টের ভিতরে দেখ চকলেট আছে , নিয়ে এসো আর অন্য ভাইয়া আপুদেরকেও দাও ... ( সেদিন বাসায় গেষ্ট আর তাদের কয়েকজন বাচ্চা ছিলো)
একটু পরে সে ফিরছে না দেখে আন্টি বললেন -- কৈ তুমি , খুজে পাইসো চকলেট গুলো ?
ওদিক থেকে সাথে সাথে ফিরে এসে সে উত্তর দিলো -- আম্মু আমি অনেক খুজসি কিন্তু কোন চকলেট পাইসিলাম না :|

আরেক দিনের গল্প ....
আংকেল আর আন্টি ওকে নিয়ে একটা মজার খেলা খেলছিলো ... ওর হাতে একটা চিপস এর প্যাকেট দিয়ে আংকেল বলেছিলেন -- সামনে যাও তো কয়েকটা চিপস তোমার আম্মুকে দিয়ে আসো, (তাকে দেয়ার পরে) এবার পিছনে এসে আমাকে দাও ...
এভাবেই তাকে শিখানো হচ্ছিলো নিজের যে কোন জিনিস সবাইকে দিয়ে খেলে কেমন আনন্দ পাওয়া যায় ... সেদিন বিকেলে আংকেল ঘুমিয়ে আছেন , আন্টি ওকে নিজে সুপার মার্কেটে গিয়ে কিছু বাজার করে আবার ঘরে ফিরেছেন ... এমন সময় আংকেল ঘুম থেকে জেগে বললেন -- তোমরা কোথায় গেসিলা, কখন আসলা ?
তখন আমার ঐ কাজিন জবাব দিলো -- আমরা কালকে বাজার কত্তে গেছিলাম একটু পরে পিছনে আসছি ...
(সে সময় সে আজকে / কালকে ... আগে/পরে এর মানে ঠিক মতো জানতো না)


এবার বলি ছোট কাজিনের গল্প

একদিন উপরের নিজেদের ফ্ল্যাট থেকে আমার এখানে এসে পিচ্চিটা কয়েকটা চকলেট দিলো, দেয়ার পরে বললো -- এইগুলো তোমার আর (হাতের কয়েকটা দেখিয়ে বললো) এইগুলো আমার জন্য...
আমি তখন দুষ্টুমি করে ওর গুলোও নিয়ে বললাম ... থ্যাংকু, এইবার যাও
সে এমনভাবে আমার দিকে তাকালো যেন সে চলে গেলে আমার মহা বিপদ হবে ... দরজার দিকে একটু যাবো যাবো ভাব দিয়ে আমাকে বলতে থাকলো -- আমার চকলেট গুলো ফিরায়ে দিবা ? নালে আমি যালাম কিন্তু ... কৈ দেও ... নালে আমি এক্কুনি যালাম কিন্তু....


আবার কয়েকদিন আগে স্কুল থেকে ফিরে নিজেদের ঘরে না গিয়ে দুই ভাই আমার ড্রইংরুমে এসে ধপাস করে বসে পড়েছে ...ঢুকেই কথা নেই বার্তা নেই ব্যাগ একদিকে, মোজা আরেকদিকে চেলে ফেলে দিয়ে শুয়ে পড়লো সোফার উপরে ...
আমি জিজ্ঞেস করলাম -- কি হইসে এমন করছো কেন ?
পিচ্চি বলে -- আজকে স্কুলে সারা দিন তুর্নঈ (স্পোর্টস) করাইসে তাই আমি ভেঙ্গে গেছি ...
আমি বলি -- কি হইসে ?
সে আবার বলে --
সারা দিন তুর্নঈ করে আমি অনেক ম্যু (ক্লান্ত) মানে .... ভেঙ্গে গেছি



জীবন বদলে দেয়া চিরকুট

জীবন বদলে দেয়া চিরকুট

০৫ ই নভেম্বর, ২০০৯ দুপুর ২:০৪






উফফ !! অসহ্য এক বিশ্রী গন্ধে কেবিন টা ভরে রয়েছে, প্রথম দিন ডেটল দিয়ে মেঝে মুছে দেবার পরেই কেমন যেন গা গুলিয়ে আসছিল ওর তাই সাথে সাথে নার্সদেরকে ডেকে বলেছিল তার কেবিনে যেন এমন জীবানু নাশক ব্যাবহার করে যাতে এমন গন্ধ থাকবে না, এর পরে আজকে ওরা এমন কিছু লিকুইড মিশিয়ে ঘর পরিষ্কার করেছে যে তার গন্ধে এ কেবিনে টেকা দায় হয়ে পড়েছে .... এক কেবিনে ভারী পর্দা দিয়ে আলাদা করা দুজন রুগীর জন্য ... এমনিতেই অস্বস্হিকর পরিবেশ তার উপর বিশ্রী গন্ধ (এটাকে দুর্গন্ধ বলাই উত্তম) ... এ অবস্হার মধ্যে মরার উপরে খাড়ার ঘা হিসেবে হাসতে হাসতে সুমনার কেবিনে প্রবেশ করলো শুভ্র ... শুভ্র একই কেবিনের অন্য পাশের রোগী, খিটমিটে সুমনার রাগে গজ গজ করা শুনেই উৎসুক দর্শকের মত উকি দিয়েছে ওর এখানে ... আর ঢুকেই পাগলের মত খিটমিট করতে দেখে নিজর চুপ থাকা কে সামলাতে না পেরে ফিক করে হেসে দিয়েছে ... ব্যাস , শুরু হয়ে গেল সুমনার কেয়ামত ... চেনা নেই জানা নেই এভাবে এসে হাসবে কেন সে ? ... নক করে ঢুকে পড়েছে বলেই তাকে ভদ্র বলা যায়না তো ... কোথায় যে তাকে নিয়ে আসা হলো ... আব্বু আম্মুর উপর এখন তার আরো অনেক বেশী রাগ হতে লাগলো ....সব দোষ তাদের... ওদের জন্যই তো আজকের তার এইখানে আসতে হইসে ....

ঘটনার সূত্রপাত কয়েকদিন আগে ... সেমিষ্টার ফাইনালের চাপে অস্হির সুমনা ... বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান সেই সাথে ইনস্টিটিউটের অন্যতম মেধাবী শিক্ষার্থী , সুতরাং দুদিকের প্রত্যাশাকে পূরনের লক্ষ্যে রাত দিন এক করে পড়ছিল সে ... মাঝে মাঝে পড়ার চাপে চিড়েচ্যাপ্টা সুমনা কয়েক ঘন্টা ঘুমিয়ে রেষ্ট নেয় অথবা পাপ্পুর সাথে গল্প করে মাথাটা ফ্রেশ করে নেয় ... পাপ্পু ওর খুব কাছের একজন বন্ধু, ওর কথা বলার ধরনটাই এমন যে শুনতে থাকলে শুধুই শুনতে ইচ্ছে করে ... সেও গল্প শুনিয়ে মজা পায়, তাই ওকে গল্প বলে যায় একের পর এক ... অনেক দিন ওর কাছে গল্প শুনতে শুনতে সে ঘুমিয়ে পড়েছে ... এভাবে চলতে চলতে এক রাতে ওর আব্বু এসে দেখে বিছানায় বই খুলে সুমনা কার সাথে যেন গল্পে মশগুল হয়ে আছে ... এই অবস্হা দেখে তিনি দিগ্বিদিক জ্ঞানশুন্য হয়ে বকে গেলেন কিছুক্ষন তারই আদরের মেয়েকে ... সবসময় তার সব কাজকে তিনি প্রশ্রয় দিলেও সেমিষ্টার ফাইনালের সময় তার এমন কাজকে তিনি কখনোই সমর্থন করেন না ... এদিকে পাপ্পু ফোনে থাকা অবস্হায় এমন বকা খাওয়ায় অপমানিত আর সেই সাথে সবচেয়ে প্রিয় মানুষটার কাছ থেকে শোনা কঠিন কথাগুলো সুমনার জন্য সহ্য করা সত্যি কষ্ট কর হয়ে পড়েছিল ... তাইতো সে রাগে, অপমানে, অভিমানে মায়ের ড্রয়ার থেকে চুরি করে আনা দু পাতা ঘুমের ঔষুধ খেয়ে শুয়ে পড়েছিল চির নিদ্রার অভিপ্রায়ে ... এর পরে কি হয়েছে সে নিজেও জানে না , গতকাল যখন চোখ খুলেছে তখন নিজেকে পেয়েছে এই কেবিনের ভিতরে ...

দরজায় ঠক ঠক নক ভিতরে আসতে পারি বলতে বলতেই পর্দা সরিয়ে কেবিনের ভিতর শুভ্র প্রবেশ করেই খিক খিক করে গা জ্বালানো হাসি দিয়ে বললো ... আমি শুভ্র (সুমনা মনে মনে বলে -- তোর নাম জানতে চেয়েছি নাকি ), এ কেবিনের ও পাশের বেডটাই আমার (সুমনা মনে মনে -- আমায় উদ্ধার করেছিস পাশে থেকে), এখানে কয়েকদিন থাকলেই এ গন্ধ আপনার সহ্য হয়ে যাবে (সুমনা মনে মনে -- তোকে এই দুর্গন্ধের উকালতি করতে বলেছে কে ?), আপনার কোন কিছুর প্রয়োজন হলে আমাকে ডাকতে পারেন (সুমনা মনে মনে -- গলায় দড়ি দিতে ডাকবো, চলবে ?)... এখন আসি , পরে কথা হবে (সুমনা মনে মনে -- দুর হ ! তোর মুখ আমি দেখতে চাইনা) ... কথাগুলো মনে মনে বললেও মুখে বলার মত অভদ্রতা করতে পারলোনা শুধু মাত্র দুটো মায়াভরা চোখের দিকে তাকিয়ে , তবে শুভ্র চলে যাওয়ার পরেই সে নার্সকে ডেকে বলে দিয়েছিল ওকে যেন মানা করে দেয়া হয় তার সাইডে আসতে .... কথাটি নার্স শুভ্রকে জানিয়ে দেয়ার পরে সেখান থেকেই চিৎকার বলে উঠেছিল .... জলদি সুস্হ হয়ে উঠুন তবেই আমার এ যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পাবেন ....

এমনিতে সকাল থেকেই মেজাজ খারাপ তার উপরে শুভ্রর এই ফালতু আচরন মেজাজটা আরো বিগড়ে দিয়েছে ...ম্যুড ভয়ংকর খারাপ অথবা রাগ হলেই সুমনার না খাওয়ার একটা পুরোনো অভ্যাস আছে সেই সাথে এই মুহুর্তে ঔষধ না খাওয়ার এক রকম পণ করেছে সে, দরকার নেই তার ভাল হওয়ার; এমন অপমান আর বকা খাওয়ার পরে বেচে থাকারই ইচ্ছে নেই তার ... সে কারনেই সকালের নাশ্তা আর তার পর খেতে দেয়া ঔষধগুলো এখনো টেবিলের উপরেই পড়া আছে ... আগে আর কেউ না হোক আব্বুর মন খারাপ দেখে সে খেয়ে নিতো ... কিন্তু এবার সেই আব্বুই এমনভাবে তাকে বকা দিয়েছে, সুতরাং সে খাবেই না ... এবার সে দেখে নিতে চায় দুনিয়ায় কে আছে যে তাকে খাবার আর ঔষধ খাওয়াতে পারে ....

হাসপাতালের নার্সদের অনেক ধৈর্য্য, না হলে ওর মতো সব কিছুতে না বলা রুগীদের সাথে এমন করে সুন্দরভাবে কথা কেউ বলার কথা না ... ওর ঘুম ভাঙ্গার পর, সকাল থেকে দু জন ডাক্তার এসেছেন আর গোটা তিনেক নার্স ... সবার মুখেই হাসি... অমায়িক ব্যাবহার ... এদের মাঝে ডাক্তার দুজন আর দুজন নার্সকে ওর বেশ লেগেছে ... ঘর পরিষ্কার করতে আসা মহিলাটাও ওর বকা খেয়েও হাসি মুখে নিজের কাজ শেষ করে গিয়েছে, তার আচরনও ওর বেশ ভাল লেগেছে ... ডাক্তার দুজন সকাল থেকে কয়েকবার ওকে দেখে গিয়েছে ... দুজনেই বেশ সুদর্শন, মিষ্টিভাষী ... আর বেশ জলদি মিশতে পারেন ... অনেক ভাবে বুঝিয়েছেন উনারা, এই মুহুর্তে খাবার আর ঔষধ খাওয়াটা ওর জন্য খুবই জরুরী, কেবল মাত্র বেশ বড় একটা বিপদ কাটিয়ে উঠেছে সে, এখন যদি তার শরীরের ঠিকমত যত্ন না নেয়া হয় তবে আরো অসুস্হ হয়ে পড়বে ... উনাদের দুজনের কথা শুনতে তার বেশ ভাল লাগে, কিন্তু সে তো রাগ করে আছে না হলে কখন উনাদের কথা মত খাবার আর ঔষধ খেয়ে ফেলতো ... উনাদের দুজনেরই কয়েকটা কমন মুদ্রাদোষ আছে, যেমন " ঠিকাছে" " বুঝতে পারছেন" " তাইনা" "তাহলে" ... এগুলো যখনই ওরা বলে তার খুবই হাসি পায় কিন্তু অভিমানের সময় হাসতে নাই এ জন্য হাসি চাপতে সে ঐসময়গুলো উনাদের কথার উত্তর হ্যা, হু বলে দেয় ... যে দুজন নার্সকে ওর ভাল লেগেছে উনারা একেবারে গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে আম্মুর মতই আদর করে বুঝাতে চেয়েছেন , অন্য সময় হলে যে আদর উনারা করেছেন তার একশভাগের একভাগ করলেই সে যে কোন কাজ করতে রাজি হয়ে যেত ... আরেকজন খুবই সল্পভাষী, খেয়ে নিন না খেলে শরীর খারাপ করবে বলে চলে গিয়েছে ... তাকে তার সেইভাবে পছন্দ না হলেও অপছন্দ হয়নি ... তবে একটা ব্যাপার সবাই আলাদা আলাদাভাবে ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে তাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করেছে ... এবং শেষ পর্যন্ত বিফল মনোরথে ফেরত গিয়েছে ...

কিছুক্ষন থেকে তার মনের অবস্হা আরো খারাপ হয়ে আছে , তার প্রিয় মানুষ, তার আব্বু যিনি তার পাশে থাকার জন্য হাসপাতালে এসেছেন উনাকে শুভ্রর ডিস্টার্ব করার কথা বলাতে সেই যে ঐপাশে গিয়ে বসেছেন আর উঠে আসার নামই নাই ... একটু পর পর আবার ওরা দুজন কি নিয়ে যেন হো হো করে হেসে উঠছে, এমন অসভ্য একটা ছেলের পাশে বসে কি যে গল্প করে চলেছে আল্লাহ ই জানে ... এর মাঝে ৫ - ৭ মিনিটের জন্য তার পাশে এসে ওকে দেখে আব্বু বললেন -- মা, তুই কিছু খাবি ? ... ঝটকার সাথে "না" বলার পরে উনি দ্বিতীয়বার আর জিজ্ঞেস না করে ফলের ঝুড়ি থেকে ছুরি আর কয়েকটা আপেল, আঙ্গুর, বেদানা, কমলা নিয়ে আবার বেরুচ্ছেন দেখে সে জিজ্ঞেস করলো কৈ যাও ? তিনি একমুখ হাসি দিয়ে বললেন -- শুভ্রকে খাওয়ায়ে আসি ... চট করে যেন মাথায় রক্ত চড়ে গেল সুমনার ... ধীরে ধীরে সেটা ভয়ংকর রাগে পরিনত হতে থাকলো যখন ঐপাশ থেকে দুজন মিলে খাওয়ার কথা বলতে শুনলো ... উফফ ! এমন মিষ্টি কমলা খুব কমই খেয়েছি আংকেল ... আরে কালো আঙ্গুর, আমার খুব প্রিয় আপনিও নেন আঙ্কেল ... বেদানা এখন না পরে খাই, এমন খেলে তো আমার পেট ফেটেই যাবে, সুমনার বাবা বলেন -- আরে খাওতো, না হলে পিট্টি দিয়ে খাওয়াবো তোমাকে ... এ সবের মাঝেই দুপুরের খাবার নিয়ে স্বল্পভাষী নার্সটা হাজির হলো সুমনার কাছে, খাবারের ট্রে টা টেবিলের উপরে রেখে যাওয়ার সময় বলে গেল, একটু পরে আপনার ঔষধ দেয়া হবে ... বলেই সে চলে গেল

বেশ কিছুক্ষন থেকে সুমনার কাছে কেউ আসছে না, কোন ডাক্তার নার্স কেউ না, ওর বাবাও শুভ্রর কাছে বসে আছে ... জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতে তাকাতে চোখ ব্যাথা হয়ে গিয়েছে মনে হয়, টিভি চালিয়ে ৩৭টার মধ্যে দেখার মত একটাও চ্যানেল খুজে পেল না বলে বিরক্তে চোখ কুঁচকে পাশে রাখা খাবারের ট্রের দিকে তাকাতেই এতক্ষনে খেয়াল করলো সেখানে খাবারের সাথে একভাজ করে রাখা একটা ছোট্ট চিরকুট পড়ে আছে ... কি মনে করে সেটা তুলে চোখ বুলাতেই দেখলো, তাতে লেখা --

" মেয়েটার নাম তনু, পড়তো শহরের নামী একটা স্কুলে ক্লাস টু তে, বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে হওয়াতে তারা কখনোই তার কোন কিছুর অভাব না রাখার চেষ্টা করেছেন, তবুও তার মনে সারাক্ষন এক বিষাদের ছায়া লেগেই থাকতো, স্কুল আর মায়ের সাথে শপিং ছাড়া তার বাকিটা সময় কেটে যেতে নিজেদের ফ্ল্যাটেই ... হয়ত কাছের কোন বন্ধু অথবা খেলার সাথী না থাকার কারনে অথবা ছোট্ট একটি গন্ডিতে আবদ্ধ হয়ে থাকার কারনেই সে আস্তে আস্তে বিষন্নতা নামক কঠিন অসুখে পতিত হচ্ছিল ....

পরবর্তি খাবারের ট্রেতে পাঠানো চিরকুটে জানতে পারবেন এরপর তনুর অবস্হাটা ঠিক কতটা খারাপ হয়েছিল, ঠিকাছে ?"


গল্পের বই এর পাগল সুমনার জন্য এটা কি পরিমান ভয়ংকর টর্চার তা সে ছাড়া আর কেউ জানে না, বুঝবেও না ... হঠাৎ করে দেখলো তার কুঁচকানো ভ্রু দুটো আরো বেকে রয়েছে, মাথাটা ভয়ংকর রকমভাবে ধরেছে , জানালা দিয়ে তাকাতেই যেন আকাশ পাতাল এক করে ঘুরে উঠলো সবকিছু .... কেন এমন হচ্ছে তার সাথে ... এ কি না খাওয়ার কারনে নাকি তনুর পরবর্তিতে কি হয়েছে তা জানার জন্য ? নাহ ! তার আর অপেক্ষা সহ্য হচ্ছে না ... বেল বাজিয়ে নার্সকে ডেকে বললো খাবার ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে আরেকবার দেয়া যাবে প্লিজ ? ... হাসিমুখে স্বল্পভাষী নার্স কয়েক মিনিটের মধ্যে তাকে গরম খাবারের ট্রে দিয়ে বের হওয়ার সাথে সাথে সেখান থেকে ছোঁ মেরে পরবর্তি চিরকুট টা তুলে নিয়ে খুলতেই সুমনার মেজাজটা চরমরকম খারাপ হয়ে গেল, সেখানে লেখা আছে

" একটুও খাবার না খেলে তো তনুর পরবর্তি ঘটনাগুলো বলা যাবেনা তাই কিছুটা হলেও আপনাকে খেতে হবে ... কিছু না হলেও অন্তঃত চিকেন স্যুপ এক গ্লাস পানি আর ঔষধগুলো যদি খান তো পরের অংশটা দেয়া যেতে পারে, ঠিক না ? "


এটা পড়তে পড়তে সুমনার যেন কান্না চলে এল, কি করবে সে ... একদিকে পাহাড়ের ন্যায় অটল অভিমান অন্যদিকে তনুর কি হয়েছিল জানতে অসম্ভব ইচ্ছে করছে ... অগত্যা হাফ বাটি স্যুপ, হাফ গ্লাস পানি আর ঔষধগুলো খেয়ে বাকি খাবার ফেরত দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলো ... পরের খাবার কখন দেয়া হবে ? স্বল্পভাষী নার্সটা বললো -- বিকেলে নাশতা দেয়া হবে .... অতঃপর কি হলো তনুর সে চিন্তা করতে করতে কখন যে সে ঘুমিয়ে পড়েছে নিজেও জানে না ... তার ঘুম যখন ভাঙলো তখন বিকেলের নাশতা দিয়ে একজন নার্স আস্তে আস্তে চলে যাচ্ছিলেন ... ট্রের উপরে রাখা ছোট্ট চিরকুট টা দেখতে পেয়েই সে আবার এক নিঃশ্বাসে পড়া শুরু করে দিলো --

" তনুর বিষন্নতা আস্তে আস্তে বাড়তেই লাগলো, দিনের পর দিন এভাবে চলতে চলতে এক সময় দেখা গেল তার খাওয়া দাওয়া, ঘুম, পড়ালেখা সবকিছুর উপর অনিহা চলে এসেছে... দিনে দিনে তার ওজন কমতে লাগলো, নিজের ঘর থেকে বের হতো না, ঘরের লাইট ও জ্বালাতে দিতো না, সেই সাথে সবার সাথে কথা বলাও বন্ধ করে দিয়েছিল ... কত ডাক্তার, প্রফেসর দেখানো হলো কেউ বুঝেই উঠতে পারছিলো না ওর কি হয়েছে, কেন হয়েছে... এমনকি একদিন একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বলেই বসলেন এমনটা চলতে থাকলে হয়ত তাকে আর বেশি দিন বাঁচিয়ে রাখাই সম্ভব হবে না ... তনুর জন্য দুঃশ্চিন্তায় অস্হির বাড়ির প্রতিটি লোক ... ওর বাবা মা থেকে শুরু করে কাজের লোক, বাবুর্চি, ড্রাইভার এমনকি দারোয়ানও ... এমন একদিন, উদ্ভ্রান্তের মত ছুটতে ছুটতে মায়ের কাছে এসে সে বললো -- মা আমদের অনেক খাবার তো ফেলে দেয়া হয় সেখান থেকে কিছুটা আমাকে দিবা ? .....

এর পরে কি হয়েছিল জানতে পারবেন পরের চিরকুটে, তবে এর জন্য আপনাকে অবশ্যই বিকেলের নাশতার পুরোটুকু খেতে হবে, ঠিক আছে?"

মায়ের কাছে এভাবে ফেলে দেয়া খাবার চাওয়ার কথাটা পড়তে পড়তে সুমনার চোখ দিয়ে কখন যে টপ টপ করে পানি পড়তে শুরু করেছে সে নিজেও বুঝে উঠতে পারেনি ... এমন সুন্দর টুকটুকে আদুরে মেয়েটা কি শেষ পর্যন্ত মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়লো যে ভালো খাবারের পরিবর্তে ফেলে দেয়া খাবারের সন্ধান করছে ? ... এমন একটা ফুটফুটে বাবুকে সুস্হ করতে জান দিয়ে হলেও চেষ্টা করতো , তাইতো এরপর তনুর কি হয়েছে জানার জন্য সে এখনি আহত পাখির মত ছটফট শুরু করে দিয়েছে ... গোগ্রাসে বিকেলের খাবার সব শেষ করে বেল বাজিয়ে নার্সকে ডেকে জিজ্ঞেস করবো রাতের খাবার কখন দিবে ... রাত ৮ টার সময় রাতের খাবার সার্ভ হয় শুনে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আৎকে উঠলো সুমনা ... এখনো ৩ ঘন্টা পরে ? .... সে জিজ্ঞেস করলো -- তার যদি জলদি ক্ষিধে পায় তবে কি কিছু পাওয়া সম্ভব ? ... মায়ের মত আদর করা ওর অন্যতম প্রিয় নার্সটি ওর কপালে একটা ছোট্ট চুমু দিয়ে বলে, তোমার যখনই খেতে মন চাইবে খালি বেল বাজিয়ে বললেই তোমাকে সার্ভ করা হবে ... ঠিকাছে ? ... সে চলে যেতেই এতক্ষনে সুমনা চোখ পড়লো ওর বাবার উপরে, কখন যে উনি মা কে নিয়ে তার বিছানায় পাশে দাড়িয়েছেন বুঝতেই পারেনি... জ্বরে অসুস্হ মা মেয়েকে দেখতে ছুটে চলে এসেছেন হাসপাতালে, ওদিকে কিছুক্ষন সুমনার খোজ খবর নিয়ে ওর বাবা চলে গেলেন শুভ্রর কাছে, এই না দেখে সুমনা এক গাদা অভিযোগ করে বসলো মায়ের কাছে, মেয়েকে আদরে আদরে ভরিয়ে দিতে দিতে তিনিও বাবাকে অনেক বকা দিলেন ... ঘন্টা খানিক পরে ভিজিটিং আওয়ার শেষ হলে তিনি চলে গেলেন বাসায় ... আম্মু চলে যাওয়ার পরে পরেই তনুর কথা মনে পড়তেই রাজ্যের ক্ষিদে যেন সুমনার পেটে এসে বাসা বাধলো ... সাথে সাথে ডিং ডং করে ঘন্টা বাজিয়ে কিছু একটা খাবে জানাতেই হাসিমুখে স্বল্পভাষী নার্সটা চলে গেল খাবার আনতে ... যাওয়ার সময় বলে গেল - রাতের খাবারের সময়ের অনেক আগেই চাওয়া হয়েছে বলে আসতে একটু দেরী হতে পারে...

আধ ঘন্টার মাথায় খাবারের ট্রে হাতে প্রিয় এক নার্সকে আসতে দেখে সুমনা খাবারের চেয়ে ট্রে তে কোন চিরটুক আছে কি না দেখার জন্য রীতিমত দাড়িয়ে পড়লো ... ছোট্ট একটা আদর দিয়ে নার্স ওর হাতে চিরকুট টা দিয়ে বললো এটার জন্যই দুষ্টুটার ক্ষিদে পেয়েছিল তাই না ? ... চিরকুট টা পেয়ে আর এমন আদুরে কথা শুনে সুমনা যেন আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল ... আর কাল ক্ষেপন না করেই ও পড়তে শুরু করলো এবারের বেশ বড় চিরকুট টা ...

" অবাক চোখে মেয়ের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে মা বললেন কেন মামনি, ও খাবার কেন , তোমাকে টাটকা কিছু বানিয়ে দিতে বলি ? ... কিন্তু তনুর না সূচক ঘাড় নাড়িয়ে বললো - ওগুলো তো ফেলেই দিবে, এর চেয়ে আমাকে দাও না প্লিজ ... মেয়ের কথা ফেলতে না পেরে কাজের বুয়াকে দিয়ে তিনি বাসি ভাত পাঠিয়ে দিয়ে দরজার আড়াল থেকে শোনার চেষ্টা করতে লাগলেন তার মেয়ে কি করে ... ততক্ষনে খবর পেয়ে তনুর বাবাও অফিস থেকে ছুটে এসেছেন দেখতে তার মেয়ে কি করে , কিছুক্ষন পরে ঘরের বাইরে থেকে তনুকে একমনে নিজে নিজে কথা বলতে শুনে একসাথে দুজনেই ভিতরে গিয়ে দেখে তনু খাবারগুলো একটু একটু করে বাইরে ফেলছে আর বলছে -- আসো আসো খাও, আরেকটু খাও ... বাবা মা কে ঘরে ঢুকতে দেখেই ঠোটে আঙ্গুল দিয়ে চুপ থাকতে বলে হাতের বাটির সবটুকু ভাত বাইরে ফেলে একটু পরে ইশারায় বললো -- এদিকে আসো। আস্তে আস্তে উনাদের হাত ধরে জানালার কাছে আনতেই অবাক নয়নে তারা দেখলেন কার্নিসের কোনায় একটা ছোট্ট চড়ুই পাখির বাসা... সেখানে এক মা চড়ুই পাখি তনুর দেয়া খাবার গুলো খুটে খুটে তুলে নিয়ে বাচ্চাদেরকে খাওয়াচ্ছে ... তাই দেখে আনন্দে ও মুখ টিপে হেসে চলেছে, শব্দ করছে না, পাছে যদি ওদের ডিস্টার্ব হয় .... এর পর থেকে প্রতিদিন সময় মত তনু ঐ পাখির বাচ্চাদের সাথে গল্প করা আর খাবার খাওয়াতে শুরু করলো, এভাবে চলতে চলতে কিছুদিনের মধ্যেই দেখা গেল সবগুলো চড়ুই আর কার্নিস থেকে না, বরং তনুর জানালায় বসে খাবার খাচ্ছে ... সেই সাথে তনুও কিছু দিনের মধ্যেই একেবারে ঝরঝরে সুস্হ হয়ে উঠলো ... আগের যে কোন সময়ের চেয়ে উচ্ছল আনন্দে নিজের সব কাজ উৎসাহের সাথে শেষ করার পাশাপাশি সময়মত চড়ুইদের খাবার খাইয়ে, ওদের সাথে নিজের সারাদিনের গল্প করে বেশ কাটছিল দিন গুলো .... হঠাৎ একরাতে অন্ধকার মেঘে ভর করে দুরন্ত গতিতে ছুটে এলো কালবৈশাখী ঝড়, উড়িয়ে তাড়িয়ে ধ্বংস করে দিলো অনেকের সাজানো সংসার ... সেই সাথে কার্নিসে বানানো চড়ুই পাখির সাজানো ছোট্ট ঘর আর তনুর মুখে এতদিন লেগে থাকা আনন্দের হাসিটি ...

এবার সত্যি সুমনার কান্না পেতে লাগলো ... সামনে রাখা ডিনার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে কিন্তু তনুর কি হলো না জানলে যে খেতেও পারছে না, অন্যরকম এক মায়ার বাধনে জড়িয়ে পড়েছে সে তনুর সাথে ... যেভাবেই হোক ওকে জানতে হবে এর পরে তনুর সাথে কি হয়েছিল ... মনে মনে নতুন এক বুদ্ধি এঁটে সে গপাগপ খেয়ে নিলো ঠান্ডা হয়ে যাওয়া ডিনার ... ডিং ডং ঘন্টা বাজিয়ে খাবারের ট্রে ফেরত পাঠানোর সময় নার্সকে জিজ্ঞেস করলো রাতে ক্ষিদে পেলে কি সে কিছু চাইতে পারে ? ... হাসিমুখে হ্যা বলেই স্বল্পভাষী নার্সটা চলে গেল ... সে যেতে না যেতেই ওর কেবিনে বাবা ঢুকে ওর শরীরের অবস্হার কথা যেনে বসেই রইলেন ওর পাশে ... তনুর জন্য অস্হিরতা অথবা অন্য কোন কারনে এখন কেন যেন বাবার সাথে অভিমান করতে মন চাইছে না সুমনার ... শুধু একবার জিজ্ঞেস করলো -- তুমি এখানে ? ওপাশের মানুষটা কি ঘুমিয়ে পড়েছে নাকি ? ... ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আদরের মেয়েটিকে বুকে টেনে নিয়ে কিছুক্ষন বসে থাকার পরে বললেন -- শুভ্রর অবস্হা বেশী ভাল না, এজন্য ওকে ইন্টেনসিভ কেয়ারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ... সুমনা এই প্রথম শুভ্রর জন্য হঠাৎ করেই বেশ কষ্ট অনুভব করতে লাগলো ...

কিছুক্ষন পর রাউন্ডে আসা ডাক্তার ওকে পরীক্ষা করে বেশ খুশী মনে বললেন, আপনার শরীরের যথেষ্ট উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করার কারনেই আপনি অনেক সুস্হ হয়ে উঠেছেন, আশা করি কাল সকালেই আপনি বাড়ী যেতে পারবেন ... কথাটা শুনে যে কারো মনে আনন্দের সূচনা হওয়াটা স্বাভবিক হলেও সুমনার ঘরে ফেরার এক বিন্দু ইচ্ছে নেই ... বরং মনে মনে সে ঠিক করে ফেলেছে, এর পর তনুর কি হয়েছিল না জেনে সে এখান থেকে বেরুবে না ... আদরের মেয়েটাকে এভাবে চুপ করে মন খারাপ করতে দেখে ওর বাবা জিজ্ঞেস করলেন, কি হয়েছে মা এমন করে আছিস কেন ? ... কষ্টগুলোকে আর ধরে রাখতে না পেরে বাবার বুকে ঝাপিয়ে পড়ে হু হু করে কেঁদে উঠে সুমনা তাকে সব ঘটনা খুলে জানালো ... সেই সাথে এটাও বললো - তনুর কি হয়েছে আর কে এই গল্প লিখে লিখে তাকে খাইয়েছে না জানা পর্যন্ত সে হাসপাতাল ছেড়ে যাবে না ... মেয়ের এই ইচ্ছেটাকে পূরনের লক্ষ্যে সুমনার বাবা চললেন এ দুটি প্রশ্নের খোজে ... কিছুক্ষন পর ফিরে এসে বললেন , তোমার দুটি উত্তর পেয়েই তুমি কাল সকালে বাড়ী ফিরতে পারবে ...

তখন মধ্যরাত পাশের চেয়ারে বসে ওর বাবা ঘুমুচ্ছেন ... কিন্তু সুমনার চোখে ঘুম নেই, তনুর কি হয়েছিল এর পরে ? ... না জানলে যে ওর ঘুমই আসবে না আজ রাতে ... ডিং ডং ঘন্টা বাজিয়ে কিছু হালকা খাবারের কথা জানানোর কিছুক্ষন পরেই এক মমতাময়ী নার্স এসে ট্রেতে কিছু কুকিজ আর এক গ্লাস গরম দুধ দিয়ে গেল, যাওয়ার সময় ওর কপালে চুমু দিয়ে যেতে যেতে বললো -- শুনলাম কাল সকালে চলে যাবে তুমি ... আর কখনো যেন এমন কোরোনা , আচ্ছা ? ... কথা শেষ হওয়ার আগেই ডিউটিতে থাকা ডাক্তার এসে বললেন -- আপনি রাতে ঘুমানোর চেষ্টা করেন, তা না হলে আপনার শরীরের যতটুকু উন্নতি হয়েছে তার চেয়ে বেশী খারাপ হয়ে যেতে পারে ... ট্রের দিকে তাকিয়ে এরপর তিনি বললেন -- ওগুলো খেয়ে শুয়ে পড়ুন, ঠিকাছে ? শুভরাত্রী .... ওরা দুজনেই চলে যাওয়ার সাথে সাথে ট্রে তে রাখা চিরকুট টা তুলে নিয়ে ও পড়তে লাগলো ...

"ঝড়ের পর থেমে তনুর মনে এক ফোটা আনন্দ নেই, নেই সেই আনন্দের উচ্ছলতা ... ভেজা চোখে চুপচাপ বসে থাকা জানালায় ... কারো সাথে কথা বলে না ... পাখিদের ঠিক যে সময় খাবার দিতো , অভ্যাস বশত রান্নাঘর থেকে কিছু খাবার এনে জানালায় ছড়িয়ে দিয়ে চুপ চাপ অপেক্ষা করতে লাগলো কখন আসবে ওরা, কখন খাবে ওর দেয়া খাবারগুলো ... মেয়ের এই কান্ড দেখে আর বাবা মা কারো সহ্য হয় না ... ফুপিয়ে কেদে উঠে দুজনেই অন্য রুমে চলে যায় ...যেখানে নিরবে ফেলতে পারবে ওদের দু ফোটা চোখের জল ... হঠাৎ ছোট্ট দুটি হাতের ছোয়ায় দুজনেই চমকে উঠলো তাকিয়ে দেখলো হাসিমুখে দাড়িয়ে আছে তনু ... ওরা তার দিকে তাকাতেই ফিসফিসিয়ে বললো -- এদিকে এসো, দেখে যাও ... গুটি গুটি পায়ে ওরা তিনজনে তনুর ঘরের দরজার দাড়িয়ে দেখতে লাগলো এক অপূর্ব দৃশ্য ... জানালার উপরে বসে একমনে টুক টুক করে খেয়ে চলেছে কয়েকটি ছোট্ট চড়ুই পাখি ।।"

আপনি জানতে চেয়েছেন -- গল্পটা আপনাকে কে শুনালো, এর উত্তর পাবেন কাল সকালে... ডিসচার্জ হওয়ার সময় আমার শেষ চিরকুটে... শুভ রাত্রী ।"


চিরকুট টা পড়ে সুমনার মনে যেন আর আনন্দ ধরে না ... তনুর গল্পটা শেষ হয়েছে, সকালে যে জানতেও পারবে কে তাকে গল্পটা শুনিয়েছে ... এই খুশীতে কখন যে তার চোখ লেগে এসেছিল সে নিজেই জানেনা , সকালে তার আব্বুর ডাকাডাকিতে চোখ খুলতেই তিনি বললেন ,সকাল হয়ে গিয়েছে নাও চলো বাসায় যাই ... সে উঠে ফ্রেস হয়ে আসতে না আসতেই ওর বাব বললেন , তোমার ডিসচার্জের সব পেপার রেডি করে এনেছি ... এবার চলো যাই ... বাবার পাশে দাড়িয়ে সুমনা বললো, এর মাঝে কোন চিরকুট নেই বাবা ? শেষ একটা আসার কথা ছিল ... খুশীর ঝিলিক তোলা চোখে ফাইলের ভিতর থেকে সুমনার জন্য আসা শেষ চিরকুট টা সুমনার হাতে দিয়ে তিনি দাড়ালেন তার অতি আদরের মেয়ের পাশেই ... আর সুমনা পড়তে থাকলো --

" ছোটবেলায় তোকে যে প্রতিদিন গল্প শুনাতাম আর তুই মায়ের হাতে ভাত খেতি মনে আছে ? না হয় অনেক দিন তোকে গল্প শুনাইনি, তাই বলে কি ভেবেছিস বাবা টা অনেক বোকা হয়ে গিয়েছে ? সে কি পারবে না তার মেয়ের অভিমান ভাঙ্গিয়ে গল্প শুনাতে শুনাতে খাবার খাইয়ে দিতে ? এবার বল, এমন একটা গল্প লেখার জন্য আমাকে কত নম্বর দিবি ? "


চিরকুট টা পড়া শেষ করতেই বাবার বুকে ঝাপিয়ে পড়ে তার সেই ছোট্ট আদরের মেয়েটা ফিক করে হেসে বলে উঠলো -- তোমাকে একশ তে একশ দশ দিলাম বাবা....




পূর্নতার পথে একটুকরো ভালবাসা

পূর্নতার পথে একটুকরো ভালবাসা

২৯ শে অক্টোবর, ২০০৯ বিকাল ৫:৩৯





জানালার গ্রীল ধরে ঠিক কতক্ষন দাড়িয়ে আছে কান্তারীর ঠিক মনে নেই, এই পড়ন্ত বিকেলে বৃষ্টির ঝাপটায় পুরো ভিজে গেলেও আজ কেন যেন ঠান্ডা লাগার চিন্তা মনেও আসছে না ওর ... দুর আকাশের মেঘের ভেলায় আজ যেন ওর চিন্তা ঘুড়ি উড়ে চলেছে সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত দুরন্ত কোন কিশোরীর মত ... এত বছরের মন খারাপ করা অন্ধকারাচ্ছন্ন মেঘগুলোকে আজ যেন ছুয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে এক্কেবারে কাছ থেকে, আদরে আদরে হাত বুলিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে ওদের তুলতুলে ভেজা শরীরের প্রতিটি অনু পরমানুগুলোকে ... বৃষ্টিকে যার এতদিনের ভয় অল্প এক্টু ভিজলেই ঠান্ডা লাগে বলে, সেই বৃষ্টির হাত ধরেই আজ সব ভয় কাটিয়ে উচ্ছল আনন্দে নেচে উঠতে মন চাইছে হৃদয়ের প্রতিটি সুক্ষাতিসুক্ষ আবেগ অনুভূতি ... ওপাশের বিল্ডিং এর কার্নিসে ভিজে চুপ চাপ বসে থাকা কুচকুচে কালো কাক গুলোকে আজ কেন যেন অন্যদিনের মত তাড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করছে না , বরং পরম মমতায় এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে মনের মাঝে একটুকরো অন্যরকম ইচ্ছের জন্ম নিচ্ছে - ইশ ! ওদেরকে যদি এক টুকরো কাপড় দিয়ে মুছে দেয়া যেত .... বারান্দায় রাখা ফুল গাছগুলোকে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ভিজতে দেখে আজ কেন জানি ফিক করে হেসে উঠতে মন চাইলো, কারন আজ সে ওদের মত নিজেও ভিজছে জানালায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে,তবে ওদের ডালে ডালে অসংখ্য কলি দেখতেই কেন যেন লজ্জায় লাল টুকটুক হয়ে উঠলো ওর ফর্সা গাল দুটো ... রাস্তার উপর জমে থাকা বৃষ্টির পানিগুলো প্রতিদিন ওর বিরক্তের কারন হলেও আজ যেন মন চাইছে -- ইশ ! ঐ পানিগুলোর মধ্যে যদি একটু দাপিয়ে আসা যেত, কি মজাই না হতো ... বৃষ্টির মাঝে রাস্তায় হাটতে থাকা স্কুল ফেরত এক বাচ্চা তার মায়ের মেলে ধরা ছাতার বাইরে বেরিয়ে ভেজার যে কি প্রানান্তর চেষ্টা করে চলেছে দেখতেই মনে অজান্তেই ফিক করে হাসি দিয়ে মনে মনে প্রার্থনা শুরু করলো - আমি চাই তুমি বিজয়ী হও, শুধু আজকে নয় সারাটা জীবন তুমি সকল বাধা পার করে বিজয়ী বেশে আবির্ভুত হও সেই মমতাময়ী মায়ের সামনে যে তোমাকে একটুকরো কাপড় দিয়ে তোমাকে তুমুল বর্ষনের হাত থেকে রক্ষা করে চলেছে ... হঠাৎ করেই যেন তার অনুভুত হলো গত রাতে আবিষ্কৃত নিজের ভিতরে ক্রমে ক্রমে বেড়ে ওঠা কেউ একজন আন্দোলিত করে নিজের অস্তিত্বের জানান দিয়ে জিজ্ঞেস করছে -- আর আমি ? ... পরম মমতায় ওর উপরের চামড়ার আবরনে ভালবাসা মাখা আদরে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে সে বলে উঠলো -- ওরে দুষ্টু, আমার সব ভালবাসা আর শুভকামনা যে শুধু তোরই জন্য !!!


ভালবাসায় ভরা ছোট্ট একটি টেক্সট : ফাইন্ড মি

ভালবাসায় ভরা ছোট্ট একটি টেক্সট : ফাইন্ড মি

১৬ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ৯:২৩





সামনের বাঁকটা পার হলেই ওদের বাড়ী, এইখানে আসলে কেন জানি ওর কথা খুব বেশী মনে পড়ে, সারাদিন যদিও ওকে অনেক মিস করা হয় তবুও এইখানে আসলেই মনে হয় যেন , ইশ ! ওকে যদি এই মুহুর্তে দেখা যেত ....তখন থেকেই দেড়শ মিটারের এট্টুক পথটা যেন হাজার মাইলের চেয়ে দীর্ঘ মনে হতে থাকে ... মোড়টা পার হয়ে বাড়ীর সামনে আসতেই দারোয়ানকে দেখা গেল গেট খুলছে ... খুবই আন্তরিক মানুষ, বয়সে বড় বলেই তাকে সে সম্মান করে কথা বলে, এই এতটুকু ভাল ব্যাবহার পাওয়ার পরে লোকটার কাজকর্ম দেখে মনে হয় ওর জন্য যেন লোকটি জীবন দিয়ে দিতে পারবে , পার্কিং এ গাড়ী রাখতেই সামনে রাখা ফোনে বেজে উঠলো মনকাড়া সেই নির্দিষ্ট টেক্সট টোন ... আলতো আদরে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখতে পেল এসে গিয়েছে সেই কাঙ্খিত টেক্সট -- ফাইন্ড মি ...

দরজার কাছে আসতেই দেখা গেল ওটা আগে থেকেই খোলা রাখা আছে , তার মানে সে আজকে ধারে কাছে নাই ... তাই ঘরে ঢুকেই প্রথমে সোফার পিছে দেখতে দেখতে বলে উঠলো -- আজকে তুমি কাছেই আছ জানি, চুপ করে থাকলে কিন্তু আমার সাথে দু মিনিট কথা কম বলতে পারবে ... তুমি কি তাই চাও ? চাইলে চুপ থাকো, নাইলে কথা বলো তো ?

নাহ ! সেখানে ওকে পাওয়া গেলনা ... তবে কোথায় খোজা যায় ... পর্দার পিছনে ? .... গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে একটানে জানালা থেকে পর্দা সরিয়ে দিয়ে দেখা গাল ... নাহ !! নাই তো ... তবে ? .... কিচেনে ? .... ওখান থেকে কেমন একটা সুগন্ধ আসছে , আবার দরজাও চেপে দেয়া ... সে নিশ্চই ওখানে আছে ... ধীর গতিতে সন্তর্পনে কিচেনের দরজা আস্তে আস্তে করে অর্ধেক খুলতেই দেখা গেল ঢিমে আঁচে গ্যাসের চুলায় রান্না হচ্ছে ওর খুবই প্রিয় গলদা চিংড়ী ফ্রাই ... সে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো -- আমি জানি এখানেই তুমি আছ... এবার সে কি আমার সামনে আসবে , নাকি আমাকেই তাকে খুজে বের করতে হবে শুনি ? ...... কিন্তু নাহ ! কেউ তো সামনে আসছে না ... দরজাটা পুরো খুলে ভিতরে দেখা হলো , দরজার কোনায় দেখা হলো ... নাহ, সে নাই এখানেও ... তাহলে কোথায় গেল সে ? .... বাথরুমে ? ...

আস্তে আস্তে বাথরুমের পাশে দাড়াতেই ভিতরে পানি পড়ার শব্দ পাওয়া গেল ... তার মানে এখানে সে এসেছিল ...দরজায় একটু ধাক্কা দিতেই দেখা গেল সেটা খোলা, ধুম করে পুরোটা খুলে দেখা গেল বালতিতে কয়েকটা ছোট ছোট হাতে ধোয়ার কাপড় পড়ে আছে আর তার উপরে অল্প করে পানি ছেড়ে দিয়ে রাখা আছে সেটারই শব্দ বাইরে থেকে শোনা যাচ্ছিলো .... ভিতরে চারিদিকে চোখ বুলিয়ে মনে মনে হেসে এবার ও বলে উঠলো -- আচ্ছা, তাহলে তুমি বেডরুমে না হয়েই পারো না ... আসছি আমি ...

বেডরুমের দিকে যেতে যেতেই দেখা গেল সেটা আস্তে করে বন্ধ হয়ে গেল ... এর পরে আর বুঝার কিছু বাকি নাই, তবুও সে -- কোথায় তুমি, তোমাকে এখনো খুজে পেলাম না , কোথায় লুকালা, বের হয়ে আসো বলতে বলতে বেডরুমের দরজা খুলে সোজা বেডের পাশে গিয়ে দাড়ালো ... সুন্দর করে সাজানো বেডের উপরে লম্বা কেউ ব্লাংকেট মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে ... ওটার কাছে যেতে যেতেই আদর আদুর গলায় সে বলে উঠলো -- আমি জানি তুমি এখানে আছ, এখানে ছাড়া তুমি আর কোথাও নাই ... আর পরে ব্লাংকেটে হাত দিতে গিয়ে হঠাৎ চোখে পড়লো জানালার পর্দার নিচে দুটো সুন্দর পা ছটফট করতে করতে অনেক চেষ্টায় নিজের দুষ্টুমি লুকিয়ে চলেছে ... এই না দেখে ও হাত সরিয়ে দু হাত কোমরে দিয়ে বলে উঠলো ... এবার কি তোমার উপর থেকে নিজে নিজে ব্লাংকেট সরাবে নাকি আমাকেউ সরাতে হবে, হু ? .... সারা ঘর খুজে এখন পেয়েছি তাকে, এবার কিন্তু তাকেই আমার সামনে আসতে হবে... সে যতক্ষন সামনে না আসবে আমি কিন্তু জানালার পাশে দাড়িয়ে থাকবো ? ..... এরপরে জানালার দিকে পিঠ ফিরিয়ে মুখে একটু দুষ্টু হাসি নিয়ে সে "টুক্কিঈঈঈঈই" বলতে না বলতেই পর্দা সরিয়ে পরীর বাচ্চাটা ওর পিঠের উপর ঝাপিয়ে পড়তেই সেখান থেকে ওকে বুকে টেনে নিয়ে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো - তুমি কি জানো , তোমার আমি কত্ত ভালোবাসি ? ... এরপর, গোলাপী অধরের অস্ফুট সম্মোহনী শব্দে নিজের জবাব খুজতে হারিয়ে গেল , এক অন্য জগতে ...



অন্ধকারের পূনরাবৃত্তি

অন্ধকারের পূনরাবৃত্তি

১২ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১০:৪৫




সুনসান চারিদিক নিরব নিস্তব্ধ অন্ধকার গলিতে একলা হেটে চলেছে ছেলেটি রাতের বেলার অতি পরিচিত পথটিতে খুব প্রয়োজন না হলে দিনের বেলা তার চলাচল নেই বললেই চলে ... তাইতো রাতের অন্ধকার রাস্তাটি যেন অতি আপন জনের মতো আকড়ে ধরে রেখেছে হৃদয়ের কাছাকাছি .... সেদিন রাতে ঐ পরিচিত রাস্তায় চলতে গিয়ে হঠাৎ শুনতে পেল যেন করুন কোন আর্তনাদের সুর ... যেন চাপা স্বরে কেউ কেঁদে চলেছে এক টুকরো সাহায্যের প্রত্যাশায় ... বিভীষিকাময় অন্ধকারের পর্দা ভেদ করে করুন শব্দের উৎসে পৌছাতেই দেখতে পেল এক আহত চড়ুই পাখির বাচ্চা কাতর কন্ঠে আর্তনাদ করে চলেছে ... কোনো দুষ্টু ছেলের দল তার ডানা ভেঙ্গে দিয়েছে ... ডানা ভাঙ্গার অসহ্য যন্ত্রনায় ছটফট করছে দেখে অন্ধকার মানুষটি তাকে আলতো করে পরম মমতায় কোলে তুলে নিলো ... একটু খানিক স্নেহের ছোঁয়া চড়ুই বাচ্চাটির হৃদয়ে যেন ভরিয়ে দিলো অনাবিল প্রশান্তির উষ্মতা ... চকিতে নজর পড়লো রাস্তার ওপারে দেয়াল ঘেষে কুকড়ে থাকা এক মানবীয় ছায়া মুর্তির উপর ... থরথর কাঁপতে থাকা ছায়ামুর্তির কাছে যেতেই শুনে গেল তার ফুঁপিয়ে কান্নার চাপা আর্তনাদ ... কাছে গিয়ে দাড়াতেই স্পষ্ট দেখা গেল তার ক্ষীন শরীরে আতংকে শিউরে ওঠা কাপুনি ... অস্ফুট গোঙ্গানীতে স্পষ্ট হলো তার নিরাপত্তাহীনতা ... হয়ত সে ভেবেছিলো এও ঐ সব শকুনের মতই আরেক নরখাদক ... শীতল কন্ঠের সাহায্য প্রদানে আগ্রহী কন্ঠস্বরটিকে যেন অথৈ সাগরে ডুবতে থাকা সাতার না জানা কারো কাছে পাশ দিয়ে ভেসে যাওয়া খড়কুটো মনে হতেই শত দ্বিধায় আন্দোলিত হৃদয়ে হাতটি ধরে দাড়িয়ে পড়লো এক টুকরো আলোর প্রত্যাশায় ....

ঘরটি বেশ অগোছালো, জানালা গুলো ভিতর থেকে শক্ত করে আটকানো আর তার উপরে ভারী পর্দা দিয়ে ঢাকা ... দেয়ালগুলো নোংরা না হলেও অযত্নের ছাপ বিদ্যমান , ঘরের প্রতিটি কোনা যেন মাকড়সাদের নিজস্ব সম্পত্তি ... ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ঘরের প্রতিটি জিনিস যেন চিৎকার করে এক এলোমেলো জীবনের বর্ননা দিয়ে চলেছে ... একটা মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই এ বাড়ীতে বিদ্যমান তবে একটা বিষর স্পষ্ট যে এখানে মাত্র একজন ছাড়া আর কারো প্রবেশাধিকার নেই ... কিচেনে আসবাব পত্র সবই আছে শুধু একটি করে গ্লাস প্লেট আর চায়ের মগ ... বাথরুমটা বেশ সাজিয়ে গুছিয়ে বানানো হয়েছিল কিন্তু চরম অবহেলার ছাপ পড়ে রয়েছে যত্রতত্র ... চারিদিকে এক নজর চোখ বুলালেই যে কারো মনে একটা কথাই উদিত হতে বাধ্য , আর তা হলো -- এই লোকটির জীবন যাত্রা একেবারে অন্যরকম .... বড়ই অদ্ভুত ....

কয়েক সপ্তাহ পরের ঘটনা,

চড়ুই পাখিটা এখন নিজে নিজে হেটে হেটে সারা বাড়ি ঘুরে বেড়ায়, যেন তার নিজের বাড়ির মতই ... ওর জন্য একটা জানালা সবসময় খুলে দিয়ে রাখা আছে যেখানে কয়েকদিন ধরে কিছু চড়ুই পাখির আসা যাওয়া লক্ষ্য করা যায় ... ওরা একসাথে সারাদিন খেলা করে ... আর সন্ধ্যা হলেই আহত চড়ুই এক বাচ্চাকে রেখে চলে যায় নিজেদের ঘরে ... অন্ধকার মানুষটি পরম মমতায় একদিন কাচা হাতে বেধে দেয়া ব্যান্ডেজ খুলে দেখে ভিতরের আহত অংশটা শুকিয়ে গিয়েছে ... এখন চড়ুই বাচ্চাটা একটু একটু করে উড়তেও পারে ... তবে কোন এক কারনে সে ঘরের বাইরে কখনো যায় না ... সবাই একসাথে খেতে বসলে অন্ধকার মানুষটির প্লেট থেকে টুক টুক করে খাওয়াটা যেন তার অভ্যাসে পরিনত হয়েছে ... পাশে একটু খাবার ছিটিয়ে দিলেও সেখান থেকে সে খায় না ... ওদিকে ভয়ে কাতর মেয়েটিও বেশ গুছিয়ে নিয়েছে নিজেকে ... বাড়ীর প্রতিটি কোনে নিজের হাতে পরিষ্কার করেছে সে ... ঘরের প্রতিটি জিনিসকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে ঠিক ঠিক যায়গা মতো ... নিজের ঘরের মতই নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে ঘরের অন্য দুটি প্রানীর সাথে ... প্রথমে প্রথমে একটু ভয় করলেও এখন সে অল্প বিস্তর বাইরের কাজও শুরু করে দিয়েছে ... টুকিটাকি জিনিস আর প্রতিদিনের বাজার করা সে নিজের কাজ মনে করেই করছে নিয়মিত .... আর অন্ধকার মানুষটি, অনেক বছর পর যেন সেই আগের রুপে দেখতে পাচ্ছে তার অতি পরিচিত এই বাসাটিকে ... অনেক বছর আগের মতই বাইরে একবেলাও না খেয়ে নিজের বাসাতেই আজকাল তারা তিনজনে একসাথে খাচ্ছে, দিনের বেলা সে বাইরে আগের মত কাজে যাচ্ছে ... রাতের জীবনকে ছুটি দিতেই আজ যেন খুজে পেয়েছে নিজের সেই হারিয়ে যাওয়া স্বকীয়তা .... এরপরে একদিন, অনেক চিন্তার পর অন্ধকার থেকে নিজেকে বের করে আনা মানুষটির আবার নতুন করে বাঁচতে ইচ্ছে হলো, আবার ইচ্ছে হলো নতুন করে জীবনটাকে সাজাতে ... ঠিক সেইভাবে শুরু করতে যেভাবে সে একসময় শুরু করেছিলো তার জীবনের এক নতুন অধ্যায় ... সারাদিনের কর্মব্যাস্ততার পরে নিজের ভিতরটাকে ঠিকঠাক গুছিয়ে, এক হাতে একটি চড়ুই বাচ্চাটার জন্য নতুন একটা প্লেট আর মনের কোনে উকি দেয়া ফুটফুটে মেয়েটির জন্য একটি লাল টুকটুকি শাড়ী নিয়ে ঘরের দরজার দাড়াতেই আজ যেন সেই অনুভুতির ছওয়া পেল, যা আরো একদিন পেয়েছিল, অনেক বছর আগে .... এর পর দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই তার সাজানো গোছানো বিছানার উপর দেখতে পেল পাশাপাশি দুটি জিনিস ... চড়ুই পাখিটির খুলে ফেলা ব্যান্ডেজ আর একখানা কৃতজ্ঞতাপত্র ...



বাসর রাতের গল্প : ঘটনার পিছনের ঘটনা

বাসর রাতের গল্প :

ঘটনার পিছনের ঘটনা

০৭ ই অক্টোবর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:২৮






গ্রামের বাড়ির বিয়ে গুলোতে আসলেই অন্যরকম মজা হয় ... একবার মনে আছে একজনের গায়ে হলুদে তার গায়ে কি পরিমান কাদা মাখানো হয়েছিল, সেই সাথে দু বাড়ীর মানুষ একে অপরকে কাদা মাখিয়ে একসাথে পুকুরে গোসল করতে নেমেছিলো ... আমি তখন অনেক ছোট তাই সে দুরে দাড়ায়ে এ সব দেখেছিলাম ... তবে বড় হয়ে একটু আধটু মজা যে করেছিলাম ... তবে খুব বেশী কিন্তু না :P বিয়ে অনুষ্ঠানের অনেক কাহানী আগেও বলেছি আজকে বরং বাসর ঘরের একটা কাহানী বলি ...

শীতকালের কোন এক সময়ে আমার দুর সম্পর্কের এক চাচাতো ভাই এর বিয়েতে গিয়েছি, এমনিতে গ্রামে শীত বেশী তার উপরে এতটা পরিচিত না সবার সাথে , আর বয়স ও খুব একটা বেশী না ... ক্লাস ৬ - ৭ এ পড়ি , সুতরাং কেউ সেই টাইপ পাত্তা দেয় না , কি আর করা সারা দিন খাওয়া দাওয়া আর পরিচিতদের সাথে ঘুরে ফিরে সময় কাটিয়ে দেয়ার পরে যখন জানলাম আজকে তাদের বাসর রাত, আর বড়দের অনেক কে দেখালম কি করা হবে আজকের রাতে তাই নিয়ে নিজেদের মাঝে ফিসফিস করছে, তাই দেখে নিজেরও ইচ্ছে হলো ওদের সাথে মজা করতে, কিন্তু অন্তুরে কেউ নিজেদের দলে নিলো না, বিশেষ করে একটা বড় আপু আর ওর বোনেরা (যার বাসর রাতে এইটার শোধ নিয়েছিলাম সেই রকম ভাবে ;) ) ... ওরাই কে কি করবে তাই ঠিক করছিলো বাগানে বসে বসে ...

এর পরে কি আর করা, বন্ধুদের সাথে নিয়ে স্কুলের মাঠে চলে গেলাম বিকেলের দিকে অন্যদের খেলা দেখতে দেখতে মুড়ি চানাচুর মাখা খাচ্ছিলাম একটা দোকানে বসে ... হঠাৎ দোকানদার বলে -- আপনারা নতুন আসছেন এইখানে, পটকা লাগবে ?
আমি বলি -- পটকা কি জিনিস ?
আমার সাথে একজন বলে -- আতশবাজী ...
সাথে সাথে মাথার মধ্যে একখান হিটলারী বুদ্ধি এসে গেল ... নগদে এক প্যাকেট চকলেট বাজী কিনে সন্ধ্যার সময় রওনা হলাম বিয়ে বাড়ীর দিকে ....

রাতের বেলা, সবাই ঘুমুতে যাবে ... এমন সময় আপুরা দেখি বর-বৌ এর বাসর ঘরে বসে বসে ওদের সাথে দুষ্টুমি করছে, আমাদের ছোট্ট দলটাও ওদের সাথে যোগ দিতে ও ঘরে সুন্দর করে সাজানো বেডটার চারপাশে দাড়াতেই ওরা আবার ক্যাচাল শুরু করে দিলো , ছোটরা এখানে কি করে রে , যাও ঘুমুতে যাও ... আবার এমনভাবে অপমানিত হয়ে ফেরত আসছি এমন সময় একজন বললো , আজকে দেখি অনেক মশা.... তোদের কেউ একজন দুটো মশার কয়েল নিয়ে আসিস তো এই ঘরে ... আচ্ছা আনছি বলে বের হতেই দুজন কে পাঠিয়ে দিলাম আন্টিদের কাছ থেকে কয়েল আনতে আর আমরা অপেক্ষা করতে লাগলাম ঘরের বাইরে ...

কিছুক্ষন পরের দৃশ্য .... বাসর ঘরে দুটো কয়েল হাতে অন্তু আর তার এক কাজিনের প্রবেশ, একটা কয়েল ঘরের এক অন্ধকার কোনায় আরেকটা কয়েল বেডের নীচে রেখে দুজনের প্রস্হানপূর্বে আরেকবার আপুদের খিকখিকানী হাসির সাথে টিপ্পুনি খাওয়া -- আজকে আমরা ওদের সাথে সারা রাত গল্প করবো, তোমরা যাও ঘুমাও ...এ কথা শুনে নিরব হাসি দিয়ে ওদের দুজনের প্রস্হান .... ঘন্টা খানিক পরে, বাসর ঘর থেকে মেয়েগুলোর খিক খিক হাসি আর হট্টোগোলের আওয়াজ ছাপিয়ে একটু অন্যরকমের আওয়াজ পাওয়া গেল ... বুম !!!! :P :P






অলস মস্তিষ্কের আকথা

অলস মস্তিষ্কের আকথা

০৮ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ৮:৪৯






বুদ্ধিমত্বা মানুষের জীবনকে সুন্দরভাবে পরিচালনায় সহায়ক হলেও কখনো কখনো তা জীবনকে করে তোলে অপেক্ষাকৃত জটিল আর দ্বন্দে ভরপুর ... অপেক্ষাকৃত কম বুদ্ধিমত্তা কোন পাপ নয় বরং সরল সহজ জীবনযাপনের অন্যতম উপকরণ বলেই আমার ধারনা... যদিও বেশীরভাগ মানুষ এর বিরোধীতা করতে পারে তবুও আমি বলবো এটাই ঠিক, যত কম বুঝবে তত কম কষ্ট পাবে ততই সহজ ও নির্বিঘ্নে জীবনকে পরিচালিত করা যাবে ...


*************************

দৃষ্টিশক্তি মানুষের জীবনের জন্য একান্ত প্রয়োজনীয় .... তবে শুধু চর্মচোখের দৃষ্টি নয় জীবন চলার পথকে সহজ করতে মনের দৃষ্টিশক্তিও অপরিহার্য, কারন মনের প্রখর দৃষ্টি বিনা জীবন চলার পথ বন্ধুর হওয়াটা শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র ... তবে মনের সেই প্রখর দৃষ্টিশক্তি যখন অনেক অপ্রিয় সত্যের মুখোমুখি দাড় করায় যা চর্মচক্ষু দ্বারা অবলোকন করা যায় না, তখনি মানসপটে ভেসে ওঠে একটিই অস্ফুটবানী -- ধরনী তুমি দিখন্ডিত হও... হারিয়ে যাই আমি তোমার ভিতর ....

************************

ঘ্রানের পারদর্শিতা অনেক দুরের বিপদকে সময় থাকতেই সতর্ক করে দিয়ে থাকে বলে তার অপরিহার্যতা প্রশ্নাতীত ... সে দিক থেকে উন্নত নাসিকা বস্তু জগতের অবস্হার নির্দেশিকা এবং অবশ্যাম্ভাবী বিপদমুক্তির কারন হলেও এর অযাচিত ব্যবহার সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনা নিশ্চিত করে থাকে ... তাইতো যেখানে সেখানে নাক গলানোর অভ্যাসকে বদঅভ্যাস নামেই সকলের নিকট পরিগনিত হয়ে থাকে ...

***********************

মুদ্রার এক পাশ দেখে অন্য পাশকে মুল্যায়ন না করে সবদিক অবলোকন করার পরেই একটি নির্দিষ্ট ধারনায় পৌছানো আবশ্যক, অন্যথায় অনর্থ অবশ্যম্ভাবী না হলেও এর যথেষ্ট সম্ভাবনা থেকেই যায় ....