Tuesday, January 26, 2010

এক পশলা বৃষ্টির আর্তনাদ

এক পশলা বৃষ্টির আর্তনাদ

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৩১





বৃষ্টি হলেই ওদের এই কমন একটা সমস্যা থাকবেই ... চোখের চশমার উপরে পানি পড়লে তা খুলে বার বার মুছতে হবে ... আবার একটু পরেই সেটা যা তাই হয়ে যাবে ... অবশ্য চশমার উপরে গাড়ির হুইপার টাইপ কিছুর ব্যাবস্হা থাকলে মন্দ হতো না ... ব্যাপারটা হঠাৎ করে মনে আসতেই ফিক করে হেসে দিলো অর্পিতা ... ধুর, কি সব চিন্তা আসছে আজকে তার মনে ... বাবা মায়ের একমাত্র আদরের মেয়ে, পড়ালেখায় যেমন মেধাবী চন্চলতায় তেমনি হরিন শাবকের মতই ছটফটে ... জীবনে যার আনন্দ আর দুষ্টুমি ছাড়া যেন কিছুই করার নাই, পড়ালেখা, খেলাধুলা, দুষ্টুমি সব কিছুতেই তাকে প্রথম হওয়া চাই ই চাই ... এ সব ভাবনা যার জন্য স্বপ্নাতীত কোন কাজ সেই আজকে এমন উদ্ভট চিন্তা করছে ভাবতেই নিজেকে কেমন জানি বোকা বোকা লাগছে .... জানালা ভেদ করে বৃষ্টির ছটায় ভিজে যাচ্ছে দেখেও আজ ক্লাসের বারান্দা থেকে সরতে ইচ্ছে করছে না .... মনে মনে বলছে - প্রকৃতির এমন অপার সৌন্দর্য এতদিন কেন দেখিনি আমি ...

কারেন্টের তারের উপরে ভিজে কাকগুলো কেমন জড়সড় হয়ে বসে আছে চুপচাপ .... কয়েকটি রিক্সা দ্রুত হুস করে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের যাত্রীদের নিয়ে যারা সবাই হুড ফেলে সামনে পলিথিন দিয়ে নিজেকে রক্ষা করে চলেছে ... রাস্তায় হাটু সমান পানি জমেছে , সেখানে ছোট ছোট কিছু ছেলেরা লাফালাফি করেই চলেছে ... এক সবজি ফেরিওয়ালা তার সবজির ঝুড়ি মাথায় নিয়ে ডাকাডাকি করতে করতে হেটে চলেছে ... হঠাৎ দেখা গেল একটি ছেলে, চোখে চশমা কাধে ব্যাগ আনমনে ভিজে চলেছে হাটু পানির মধ্য দিয়ে ... ওর চোখের চশমা দেখেই অর্পিতার মনে হঠাৎ করেই এমন অদ্ভুত চিন্তা বাসা বেধেছিলো ... ছেলেদের সে ঘৃনা করে, তা সে যেই হোক না কেন ... "বিশ্বাস" কি জিনিস তা ছেলেরা জানে না ... জানলে তমাল তাকে এভাবে ছেড়ে যেতে পারতো না ... যাক সে কথা, তমালের নাম সে মনে আনতে চায় না ... তার কারনেই আজ সে সব পুরুষের ঘৃনা করতে শিখেছে ... কিন্তু তবুও আজকে ঐ ক্যাবলাকান্ত ছেলেটাকে এভাবে ভিজতে দেখে কেন যেন তাকে ঘৃনা করতে ইচ্ছে করছে না ... কিন্তু বিশ্বাস ? উহু ... তা সম্ভব নয় ... তার বদলে মনের কোন কিছু ভাবনা আসতেই ঠোটের কোন ফুটে উঠলো এক রহস্যময় হাসির রেখা ....

ক্লাসের বন্ধু বান্ধবীরা আজকে অনেক ডাকাডাকি করছে ওদের সাথে আড্ডা দিতে , কিন্তু ওর ভাল্লাগছে না বলে যাচ্ছে না সেখানে ...এখানে দাড়িয়ে থাকলে একটু পর পর ওরা এসে ডাকাডাকি করবে বলে ধীর পায়ে সে নেমে গেল গ্রাউন্ড ফ্লোরে ... সেখানে যেতেই আকষ্মিতভাবে মনের মাঝে অন্যরকম সুর বেজে উঠলো ... আরে, ঐ তো সেই ক্যাবলাকান্ত দাড়িয়ে আছে ... পাশে গিয়ে দাড়াতেই ছেলেটা যেন লজ্জায় কুকড়ে গেল, আকুপাকু মনে যেন মানে মানে সরে পড়তে চাইছে ... তার নাম জিজ্ঞেস করতেই কোনরকমে "সন্তু" বলেই যেন পালাতে পারলে বাঁচে এমনটা করতে লাগলো অথচ সেখান থেকে এক চুল নড়লো না ... এবার এতে আরো মজা পেয়ে অর্পিতা বললো :: আমার একটা কাজ করে দিবেন প্লিজ ?
> কি কাজ ?
:: আমার খুবই ক্ষিদে পেয়েছে, কিন্তু বৃষ্টির জন্য ক্যান্টিনে যেতে পারছিনা ... আপনি কি আমার জন্য কয়েকটা জিনিস নিয়ে আসবেন প্লিজ ?
> কিন্তু ওদিকে যে ....
:: প্লিজ.... আমি বৃষ্টির মধ্যে তো যেতে পারছি না ... এ জন্যই তো ...... তবে আপনি না যেতে চাইলে থাক, বৃষ্টি কমলে আমি নিজেই যাবো...
> আরে না না , আমি তো এমনিতেই ভিজে আছি, আমি যাচ্ছি ... আপনার কি কি লাগবে বলেন ...

অর্পিতার কাছ থেকে কি আনতে হবে তা শুনে আর টাকা নিয়ে ইতস্তত ভঙ্গিতে সন্তু আবার বৃষ্টিতে নেমে গেল ক্যান্টিনের দিকে ...পিছন ফিরলে হয়তো দেখতে পেত ক্যাবলাকান্তকে আবার বৃষ্টিতে নামানোর বিজয়ে অর্পিতার মুখে ফুটে ওঠা দুষ্টুমির হাসির রেখা ...
হঠাৎ পাশ থেকে সিমি বলে উঠলো -- কিরে একলা একলা হাসছিস কেন এমন করে? .... ক্যাবলা সন্তুকে বোকা বানিয়ে বৃষ্টিতে নামানোর কথা শুনিয়ে হেসে উঠতেই সিমি আৎকে উঠে বললো -- জানিস না আজ সকাল থেকেই ক্যান্টিনে বড় ভাইয়ারা নিজেদের মাঝে গোলমাল করছে ? এ জন্য সেখানে কেউ যাচ্ছে না আর তুই কিনা বোকা ছেলেটাকে .... সিমির কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই কোন এক মৃত্যু পথযাত্রীর আর্তনাদের সাথে ভেসে আসে তীব্র বারুদের গন্ধ ....

No comments: