Wednesday, September 19, 2012

মনের কথা বুঝতে পারলে কেমন হত ?

 


মনের কথা এমন এক জিনিস যা সহজে বোঝা যায় না। কত শত সমস্যা আমাদের সামনে হাজির হয় শুধুমাত্র অন্যের মনের কথা না বোঝার কারনে .. মনের কথা বুঝতে পারা ও যে খুব একটা সুখকর হবে তাও মনে হয় ঠিক না।

কেমন হবে যদি একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখা গেল.. সামনের সবার মনের কথা বোঝা যাচ্ছে ?

চিত্রটা হয়ত এমন হতে পারে --- >>

ঘুম থেকে ছোট বোন জাগিয়ে দিল এই বলে যে -- ভাইয়া ওঠো, অনেক বেলা হয়েছে (মনে মনে -- আমার ভাই কেমন করে কুম্ভকর্ন হয়েছে কে জানে, প্রতিদিন তাকে সকাল সকাল জাগাতে মেজাজটাই খারাপ হয়ে যায়)

মা ডাকছেন নাশতা খেতে -- >> জলদি আয় খেয়ে নে, নাশতা ঠান্ডা হয়ে গেল যে ( মনে মনে -- বাপ বেটা ২টা তো আমার জীবনটা জালিয়ে খেলো..... একটা কাজ যদি ঠিকমত করতে পারতো .....।)

বাবা -- >> (মনে মনে -- এ তো দেখি আমার চেয়ে নিকাম্মা হবে, আল্লাই জানে এই ছেলে বৌ এর হাতে প্রতিদিন ..... নাহ থাক ! এমন অলুক্ষনে কথা চিন্তা করবো না )

কোন রকমে নাশতা খেয়ে রাস্তায় বের হতেই রাস্তার ওপারে বসে হাপাতে থাকা কুকুরের মনের কথা শুনে চমকে ও যেতে পারেন...... (কুকুর মনে মনে বলছে -- উফ: কোন দু:খে যে দারোগা বাড়ীর পাপ্পীটাকে দেখটে গিয়েছিলাম, না হলে তো জান বাচানোর জন্য এমন দৌড় দিতে হত না ।)

রাস্তার যানজটের কারনে ২ ঘন্টা দেরিতে ডেটিং স্পটে পৌছানোর পরে জান এর অভিমান শুরু হল -- >> হাতে ঘড়ি দিয়েছ কেন যদি সময়মত পৌছাতে না পার ? (মনে মনে --- উফ : আজকে বড্ডো বেচে গিয়েছি, আমিই তো আসলাম ৫ মিনিট আগে)

তোমার হাত ঘড়ি দাও আমি নিজের হাতে ভেংগে ফেলবো (মনে মনে - ইশ: এত শখ করে কিনে দেয়া ঘড়ি নিজের হাতে ভাংবো আমার কি মাথা খারাপ? পাগলটা আবার না ঘড়িটা খুলে দেয় ভাংতে ,তাহলে তো আমিই বিপদে পড়ে যাব )

কি, মুখ দিয়ে কোন কথা বের হয়না কেন?... যাও তোমার সাথে আমি কথা বলবনা... (মনে মনে -- ও আল্লাহ !! আজকে অনেক বকা দিচ্ছি আমার জানটা কে, প্লিজ ও যেন কথা বন্ধ না করে.... তাহলে যে আমি কানতে কানতে শেষ হয়ে যাব)

তোমার মত অসভ্যের সাথে আমি কোন সম্পর্ক রাখব না (মনে মনে - একটু হাত ধরে মিষ্টি করে সরি বল্লেই তো আমি ঠিক হয়ে যাব .... একটু আদর পাব বলে এত কিছু করছি ... বোকাটা বুঝতে পারছেনা কেন ?)




০২ রা জুলাই, ২০০৮ বিকাল ৩:৫৮


বসে আছি সেই প্রতীক্ষায় .....

 


দু চোখ মেলে তাকাই
ঐ নীল দিগন্ত পানে 
এক টুকরো মেঘের প্রতীক্ষায়....

হয়তো আসবে সে দিন
ফুরাবে প্রতীক্ষার প্রহর
মিলন হবে এক দল মেঘদূতের সাথে...

চারিদিকে তীব্র আলোকের ছড়াছড়ি
সেই সাথে দেখি ধূ ধূ বালু চর
অনন্ত অসীম অনাকাংক্ষীত সত্য...

অবসন্ন মনে বসে থাকা
অপ্রত্যাশিত সত্য নিয়ে 
কাল্পনিক ভবিষ্যতের আশায় ...

কবে পাব সেই মেঘ দূতের দেখা ?
কবে দেখব ধূ ধূ বালুচরে বসন্তের হাজার রং এর খেলা ?
কবে হবে এক পশলা বৃষ্টি ...... আমার জীবনে .....

বসে আছি সেই প্রতীক্ষায় ........


০১ লা জুলাই, ২০০৮ রাত ১১:০২




মিষ্টি মুখের হাসি ......







আজকে অনেক সকালে ঘুম থেকে জেগেছি। কাল রাতে ঠিকমত ঘুম হয়নি। মনটা একটু খারাপই ছিল। আসলে একটু না বেশখানিকটা খারাপ ছিল.... যাই হোক ..... সকালে দেখি ঘরে নাস্তা করার মত কিছুই নাই, আসলে যা ছিল তা খেতে ইচ্ছা করছিল না। চলে গেলাম সোজা বেকারীতে .... সেখানে গিয়ে দেখি বিশাল লাইন....এতই লম্বা যে বেকারীর ভিতর থেকে লাইন শুরু হয়ে রাস্তার উপরে এসে পড়েছে.... 

অন্য কোথাও যেতে হলে বেশখানিকটা দুরে যেতে হবে... তার জন্য আবার বাসায় গিয়ে গাড়ীর চাবি নিতে হবে, ড্রাইভ করে যেতে হবে, তারপর ও সেখানে এরকম লম্বা লাইন দেখলে আমার কি অবস্হা হবে চিন্তা করতেই মনের সাথে এইবার মেজাজটাও বিগড়াতে শুরু করলো... 

হঠাৎ আমার চিন্তায় বাধা পড়ল যখন দেখলাম আমার পিছনে এক মহিলা বুগিতে (বাচ্চাদের জন্য যে গাড়ি ব্যাবহার করা হয়) করে তার ছোট্ট একটা ফুটফুটে বাচ্চা নিয়ে দাড়িয়েছে। গুড মর্নিং বলতেই তিনি সুন্দর একটি হাসি উপহার দিয়ে প্রতিউত্তর দিলেন। তারপরই মনযোগ দিলেন তার বাচ্চার দিকে.... কি সুন্দর বাচ্চা, দেখলেই মনটা ভাল হয়ে যায় এমন আদুরে , গুল্লু গুল্লু চেহারা, ...... 

এইবার সত্যই আমার মনটা ভাল হওয়ার পরিবর্তে খারাপ হতে শুরু করল...... কারন বাবা মায়ের একমাএ আদরের ছেলে যে তাদেরকে ছেড়ে থাকবে তা কখনো চিন্তাও করতো না... তাকে আজ এত দুর একলা..... নাহ এ নিয়ে চিন্তা করলে আজকের দিনটাই খারাপ যাবে.... তাই নিজের চিন্তার ঘুড়িকে আর উড়তে না দিয়ে, টেনে নামানোর কাজ শুরু করে দিতেই আবারও চোখ পড়ল অনিন্দ্য সুন্দর সেই মুখটির উপর।খুব ইচ্ছা হল তাকে একটু আদর করতে.... 

মায়ের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে কিছুক্ষন তার দিকে হাত আর চোখ মুখ আকাবাকা করে ফোকলা মুখে হাসির ফোয়ারা দেখতেই ইচ্ছা হল আরেকটু বেশি হাসি না দেখলে আমার চলবেনা...... যে ভাবা সেই কাজ..... সকালের নাস্তা কেনার কথা ভুলে গিয়ে শুরু করে দিলাম সেই অতি পরিচিত খেলা .....হাতের তালুতে -- দুধ দেই, ভাত দেই, কলা দেই, চিনি দেই , এবার সবটুকু সুন্দর করে মেখে নিয়ে তুমি একটু খাও, আমি একটু খাই, ...... এবার রাজার বাড়ীর বিড়াল এসে চুপি চুপি সব খেয়ে ফেললো তারপর ও তার খিদে মিটলোনা ..... সে আরও খাবার খুজতে শুরু করলো.... মিয়াঁও মিয়াঁও মিয়াঁও মিয়াঁও ........এইভাবে আমি বাচ্চাটার হাতে কাতুকুতু দেওয়ার চেস্টা করতেই ..... ফোকলা বুড়োর মুখে যেন হাসির বন্যা শুরু হল.....

হঠাৎ খেয়াল হল আমার চারপাশে বেশ মানুষের ভীড় জমে গিয়েছে ..... সবার মুখে এক কথা.. বাহ, সুন্দর খেলা তো ..... আরেকবার খেলো প্লিজ..... এক সময় দেখি বেকারীর মালিক ও বিক্রি বন্ধ করে খেলা দেখছে....... 

আরও কিছুক্ষন খেলা করে একটা কিং সাইজের তুর্কি ব্রেড কিনে বাসার পথে রওনা হতেই খেয়াল হল আরে, আমার মনটা তো খুব ভাল লাগছে ( অনেক ধন্যবাদ সেই করুনাময়ী মা কে যিনি তার বাচ্চার সাথে আমাকে খেলতে অনুমতি দিয়েছেন ). .... যাক উইকএন্ড এর প্রথম দিনটা খুব সুন্দর ভাবে শুরু হল.... 

বাসায় এসে খেয়াল হল,নিজের অজান্তেই আমি এখনো হাসছি..... কারন এখনো আমার চোখের সামনে ভাসছে সেই মিস্টি মুখের দুস্টু হাসি .. হা হা হা হা....... হি হি হি .... এ এ এ হা হা হা .. উ উ উ হু হু হু ..... হাহ হা হা......



২৮ শে জুন, ২০০৮ বিকাল ৩:৫৬



Tuesday, January 26, 2010

আমার পাক্কা গিন্নী দেড়ফুটি কোকড়াচুলওয়ালী

আমার পাক্কা গিন্নী

দেড়ফুটি কোকড়াচুলওয়ালী

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১২:১২






রোদে ঝলমল সাত সকালে চোখ খুলতেই বাইরে দেখি তুষারপাত হচ্ছে ... জ্বরের কারনে সারা রাত ঘুম না হওয়ায় ক্লান্তির রেশ থাকলেও দৃশ্যটা দেখতে দেখতে মনটা আনন্দে ভরে যাচ্ছিলো ... তুলতুলে বরফগুলোকে কেন যেন বড় আদর লাগছিলো ... আর মনে হচ্ছিল এমন সময় যদি সুস্হ থাকতাম তবে দেড়ফুটি কোকড়াচুলওয়ালীকে নিয়ে আজকে একটা মস্ত বড় স্নোম্যান বানাতে চলে যেতাম ... কথাগুলো মনে মনে বলতে না বলতেই যেন ... না চাইতেই বৃষ্টি নামলো ... ডিং ডং শব্দে দরজা খুলতেই দেখি পুরা প্যাকেট হয়ে ঘরের সামনে দাড়িয়ে আছে আমার জানের টুকরা কোকড়াচুলওয়ালী আর ওর আম্মু .... আমার হাতে বেশ বড় একটা হটপট বক্স ধরিয়ে দিয়ে বললো - নাও তোমার রাজকন্যার আজকে ছুট্টি তাই সে নাকি তোমার সাথে সারাদিন থাকবে , খেলবে ... তোমাদের জন্য ভুনা খিচুড়ি রান্না করে দিয়ে অফিসে গেলাম... বিকেলে এসে যদি দেখি বক্স শেষ হয়নি তবে কিন্তু তোমাদের দুইটার ই খবর আছে ...

লক্ষী বাচ্চার মত আমরা দুজন ওকে বিদায় দিয়ে দরজা বন্ধ করতেই দু জন একবার দুজনের দিকে আরেকবার হটপটের দিকে তাকাই ... এর পরে হঠাৎ খিক খিক করে হেসে উঠে কোকড়াচুলওয়ালী বলে -- আম্মু মনে হয় আমাদেরকে রাক্কস মনে করসে .... ওর কথা শুনে ... হাসতে হাসতে গড়াগড়ি যাকে বলে আমরা দুজনেই আক্ষরিক অর্থে সেটাই শুরু করে দিলাম ,কিছুক্ষন পর দুজনেই একটু শান্ত হয়ে আলোচনা শুরু করলাম ... প্রথম কথা যতটা খিচুড়ী এখানে আছে আমরা দুজনে সকাল ~ দুপুর ~ বিকাল তো দুরের কথা, দু দিনেও শেষ করতে পারবো না, সুতরাং নতুন কোন বুদ্ধি বের করা লাগবে ... অনেক ভেবে চিন্তে বের করা হলো , বাসায় একটা পার্টি করি আরো এক দু জনকে আসতে বলি এর পরে একসাথে সবাই মিলে খেলে খিচুড়িও শেষ হবে আর একটা ছোটখাট পিকনিক ও হয়ে যাবে ... যে ভাবা সেই কাজ... ফোন করে আরিফ আর মাসুদকে আসতে বলতেই একজন বললো কাজে যাচ্ছে আরেকজন বললো আসছি ...

ঘন্টাখানিকের মধ্যে আরিফ এসে পড়তেই আমাদের রান্না বান্না পর্ব শুরু হলো ... জ্বরের মাঝে রান্না করতে ইচ্ছে করে না আর আরিফ ও রান্নাঘরে কখনো ঢুকেনি, সুতরাং একটা নরমাল ডিম ভুনা করে খিচুড়ীর সাথে খাওয়ার প্ল্যান করে দিলাম চুলায় পানি চড়িয়ে .... একটু পরে ফ্রিজ থেকে গোটা দশেক ডিমের একটা প্যাকেট বের করে ওটা খুলতেই আরিফ বলে -- ডিমের ভুনা কিভাবে করতে হবে ?

আমি বললাম -- আগে এটাকে পানিতে দিয়ে সিদ্ধ করতে হবে
আরিফ - এর পরে ?
কোকড়াচুলওয়ালী -- এপ্পর নান্না বানাতে হবে ....
আরিফ - কি ?
আমি -- ওটাকে রান্না করতে হবে.... দেখ তুমি জানো না কি করতে হবে আর আমার জানের টুকরাটা জানে ...
এই শুনে আরিফ বিজ্ঞের মত বললো -- যে কোন জিনিসের স্বাদ লবনের উপর নির্ভর করে, ডিম সিদ্ধেরও নিশ্চয়ই এমনটাই হবে কি বলো ? পানির মধ্যে লবন দেই ?
কোকড়াচুলী আমাকে খোঁচা মেরে বলে -- আংকেল পানিতে লবন দেবে...
আমি আরিফকে বলি -- ঠিক বলসো, এই নেও লবন .....

বিষ্ফোরিত চোখে আমি আর কোকড়াচুলওয়ালী দেখলাম আরিফ সত্যি সত্যি বেশ কয়েক চামচ লবন পানিতে দিয়ে ফেললো ... এর পর জিজ্ঞেস করে -- এখন কি করতে হবে ?
আমি পুসকিকে জিজ্ঞেস করি -- তুমি বলো , এখন কি করা লাগবে ?
কোকড়াচুলওয়ালী বলে -- ওকানে ডিম দেও ..
ওর বলা শেষ হতে না হতেই আরিফ বলে উঠলো -- ডিম কি আস্ত দিবো নাকি খোশা ছিলে দিতে হবে ? .....

জলদি জলদি কোকড়াচুলওয়ালী ডিমের প্যাকেট টা থেকে একটা ডিম নিয়ে আরিফের হাতে দিয়ে বলে -- আংকেল, আমরা আগে এইগুলো আস্ত দেই আপনি পরে ভেঙ্গে দিয়েন ......

এক পশলা বৃষ্টির আর্তনাদ

এক পশলা বৃষ্টির আর্তনাদ

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৩১





বৃষ্টি হলেই ওদের এই কমন একটা সমস্যা থাকবেই ... চোখের চশমার উপরে পানি পড়লে তা খুলে বার বার মুছতে হবে ... আবার একটু পরেই সেটা যা তাই হয়ে যাবে ... অবশ্য চশমার উপরে গাড়ির হুইপার টাইপ কিছুর ব্যাবস্হা থাকলে মন্দ হতো না ... ব্যাপারটা হঠাৎ করে মনে আসতেই ফিক করে হেসে দিলো অর্পিতা ... ধুর, কি সব চিন্তা আসছে আজকে তার মনে ... বাবা মায়ের একমাত্র আদরের মেয়ে, পড়ালেখায় যেমন মেধাবী চন্চলতায় তেমনি হরিন শাবকের মতই ছটফটে ... জীবনে যার আনন্দ আর দুষ্টুমি ছাড়া যেন কিছুই করার নাই, পড়ালেখা, খেলাধুলা, দুষ্টুমি সব কিছুতেই তাকে প্রথম হওয়া চাই ই চাই ... এ সব ভাবনা যার জন্য স্বপ্নাতীত কোন কাজ সেই আজকে এমন উদ্ভট চিন্তা করছে ভাবতেই নিজেকে কেমন জানি বোকা বোকা লাগছে .... জানালা ভেদ করে বৃষ্টির ছটায় ভিজে যাচ্ছে দেখেও আজ ক্লাসের বারান্দা থেকে সরতে ইচ্ছে করছে না .... মনে মনে বলছে - প্রকৃতির এমন অপার সৌন্দর্য এতদিন কেন দেখিনি আমি ...

কারেন্টের তারের উপরে ভিজে কাকগুলো কেমন জড়সড় হয়ে বসে আছে চুপচাপ .... কয়েকটি রিক্সা দ্রুত হুস করে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের যাত্রীদের নিয়ে যারা সবাই হুড ফেলে সামনে পলিথিন দিয়ে নিজেকে রক্ষা করে চলেছে ... রাস্তায় হাটু সমান পানি জমেছে , সেখানে ছোট ছোট কিছু ছেলেরা লাফালাফি করেই চলেছে ... এক সবজি ফেরিওয়ালা তার সবজির ঝুড়ি মাথায় নিয়ে ডাকাডাকি করতে করতে হেটে চলেছে ... হঠাৎ দেখা গেল একটি ছেলে, চোখে চশমা কাধে ব্যাগ আনমনে ভিজে চলেছে হাটু পানির মধ্য দিয়ে ... ওর চোখের চশমা দেখেই অর্পিতার মনে হঠাৎ করেই এমন অদ্ভুত চিন্তা বাসা বেধেছিলো ... ছেলেদের সে ঘৃনা করে, তা সে যেই হোক না কেন ... "বিশ্বাস" কি জিনিস তা ছেলেরা জানে না ... জানলে তমাল তাকে এভাবে ছেড়ে যেতে পারতো না ... যাক সে কথা, তমালের নাম সে মনে আনতে চায় না ... তার কারনেই আজ সে সব পুরুষের ঘৃনা করতে শিখেছে ... কিন্তু তবুও আজকে ঐ ক্যাবলাকান্ত ছেলেটাকে এভাবে ভিজতে দেখে কেন যেন তাকে ঘৃনা করতে ইচ্ছে করছে না ... কিন্তু বিশ্বাস ? উহু ... তা সম্ভব নয় ... তার বদলে মনের কোন কিছু ভাবনা আসতেই ঠোটের কোন ফুটে উঠলো এক রহস্যময় হাসির রেখা ....

ক্লাসের বন্ধু বান্ধবীরা আজকে অনেক ডাকাডাকি করছে ওদের সাথে আড্ডা দিতে , কিন্তু ওর ভাল্লাগছে না বলে যাচ্ছে না সেখানে ...এখানে দাড়িয়ে থাকলে একটু পর পর ওরা এসে ডাকাডাকি করবে বলে ধীর পায়ে সে নেমে গেল গ্রাউন্ড ফ্লোরে ... সেখানে যেতেই আকষ্মিতভাবে মনের মাঝে অন্যরকম সুর বেজে উঠলো ... আরে, ঐ তো সেই ক্যাবলাকান্ত দাড়িয়ে আছে ... পাশে গিয়ে দাড়াতেই ছেলেটা যেন লজ্জায় কুকড়ে গেল, আকুপাকু মনে যেন মানে মানে সরে পড়তে চাইছে ... তার নাম জিজ্ঞেস করতেই কোনরকমে "সন্তু" বলেই যেন পালাতে পারলে বাঁচে এমনটা করতে লাগলো অথচ সেখান থেকে এক চুল নড়লো না ... এবার এতে আরো মজা পেয়ে অর্পিতা বললো :: আমার একটা কাজ করে দিবেন প্লিজ ?
> কি কাজ ?
:: আমার খুবই ক্ষিদে পেয়েছে, কিন্তু বৃষ্টির জন্য ক্যান্টিনে যেতে পারছিনা ... আপনি কি আমার জন্য কয়েকটা জিনিস নিয়ে আসবেন প্লিজ ?
> কিন্তু ওদিকে যে ....
:: প্লিজ.... আমি বৃষ্টির মধ্যে তো যেতে পারছি না ... এ জন্যই তো ...... তবে আপনি না যেতে চাইলে থাক, বৃষ্টি কমলে আমি নিজেই যাবো...
> আরে না না , আমি তো এমনিতেই ভিজে আছি, আমি যাচ্ছি ... আপনার কি কি লাগবে বলেন ...

অর্পিতার কাছ থেকে কি আনতে হবে তা শুনে আর টাকা নিয়ে ইতস্তত ভঙ্গিতে সন্তু আবার বৃষ্টিতে নেমে গেল ক্যান্টিনের দিকে ...পিছন ফিরলে হয়তো দেখতে পেত ক্যাবলাকান্তকে আবার বৃষ্টিতে নামানোর বিজয়ে অর্পিতার মুখে ফুটে ওঠা দুষ্টুমির হাসির রেখা ...
হঠাৎ পাশ থেকে সিমি বলে উঠলো -- কিরে একলা একলা হাসছিস কেন এমন করে? .... ক্যাবলা সন্তুকে বোকা বানিয়ে বৃষ্টিতে নামানোর কথা শুনিয়ে হেসে উঠতেই সিমি আৎকে উঠে বললো -- জানিস না আজ সকাল থেকেই ক্যান্টিনে বড় ভাইয়ারা নিজেদের মাঝে গোলমাল করছে ? এ জন্য সেখানে কেউ যাচ্ছে না আর তুই কিনা বোকা ছেলেটাকে .... সিমির কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই কোন এক মৃত্যু পথযাত্রীর আর্তনাদের সাথে ভেসে আসে তীব্র বারুদের গন্ধ ....

হৃদয়ের কথোপকথন

হৃদয়ের কথোপকথন

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ৩:৫৫





:: আচ্ছা , আমি যদি ঘুড়ি হতাম তবে কি করতি ?
> রাঙ্গা সুতোয় তোকে বেধে রাখতাম, সারা জীবনের তরে ...
:: যদি অন্য সুতো এসে কেটে দিতে চাইতো সে বাঁধন?
> হতেম তবে আমি কাঁচ ভাঙ্গা মান্জা দেয়া, শক্ত সুতো...

:: হুমম , আমি যদি নদী হতেম তবে কি করতি ?
> নৌকো হয়ে থেকে যেতাম তোর কোলে, চিরকালের তরে ...
:: যদি সাগরের ডাকে উথাল পাতাল হয়ে উঠতো আমার মন ?
> তোর বুকে নোঙ্গর করে আকড়ে থাকতাম, শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ...

:: আচ্ছা , আমি যদি মেঘ হতাম তবে কি করতি ?
> তোর নীল রঙ গায়ে মেখে হারিয়ে যেতাম দিগন্তে ...
:: যদি হয়ে যেতাম মন খারাপ করা কালো মেঘের দল ?
> অপেক্ষা করতাম, কবে বৃষ্টি হয়ে ঝরবি আমার উপরে ...

:: যদি হতাম পাগলা হাওয়া, তবে কি হতো ?
> উড়ে যেতাম তোর সাথে , ছেড়া কাগজের মত ...
:: যদি তোকে ছেড়ে হারিয়ে যেতাম দুরে কোথাও ?
> তবে অপেক্ষা করতাম ঠিক সেই বিন্দুতে, আমৃত্যু ...

:: আর যদি হতেম আমি কদম ফুল, তবে ?
> বৃষ্টি হয়ে ধুয়ে দিতাম তোর সব কষ্টের দাগ ...
:: আর যদি হতেম কোন ক্ষনজন্মা ফুল ?
> তবে বিধাতার থেকে বদলে নিতেম, তোর আয়ুষ্কাল ....

দেড়ফুটি কোঁকড়া চুলওয়ালী আর লাল সবুজের স্বপ্ন ..

দেড়ফুটি কোঁকড়া চুলওয়ালী

আর লাল সবুজের স্বপ্ন ..

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ দুপুর ২:২৬





ক'দিন পরে প্রেজেন্টেশন, তাই প্রজেক্টের বিষয়গুলোর মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে চিন্তার সাগরে হাবুডুবু খেতে থাকা অবস্হায় হঠাৎ করেই বাস্তবে ফিরে আসতে হলো ছোট্ট দুটো গুল্লু গুল্লু হাতের খামচি খেয়ে ...ওটাকে আসলে ঠিক খামচি বলে না, ওটা এক ধরনের আদর; আমরা যার নাম দিয়েছি শক্ত আদর... আমরা মানে বুঝেছেন তো ? .... হ্যা ঠিক ধরেছেন ... আমি আর আমার দেড় ফুটি জানের টুকরা কোঁকড়াচুলওয়ালী ... আমি বাসায় বসে কাজ করছি শুনে স্কুল থেকে ফেরার পথে ওর মা এখানে তাকে রেখে গিয়েছে কয়েক ঘন্টার জন্য ... আর যাওয়ার সময় বলে গিয়েছে এসে যেন একটা লক্ষী ঘুম বাবু দেখতে পায় ... যে আমি তাকে ফোনে গল্প শুনিয়ে ঘুম পাড়াই , সেই আমি আজ নিজেকে কোল বালিশ বানিয়ে, ওকে আমার বুকের উপরে শুইয়ে রাখার পরেও গল্প বলছিনা বলেই এমন করে আমাকে চিন্তা সাগর থেকে খামচি মেরে বাস্তবে ফিরিয়ে আনার ব্যাবস্হা নেয়া হলো ...


:: এট্টা গপ্প বলো
> তুমি নাকি আম্মু কাছ থেকে ছড়া শিখেছ তাই শুনাও আগে
:: আমি ঘুম বাবু হবো, একন বলবো না
> আমি তো আগে তোমার শেখা নতুন ছড়া শুনবো , এর পর গল্প বলবো
:: আমি আগে গপ্প শুমবো ...
> উহু, আগে ছড়া ...
:: তুম শিখাই দেও, আমা মন নাই
> আচ্ছা তাহলে বলো তো ... হাম্বার শিং কট কট, হাম্বার কান লটপট ...
:: বলবো না,
> ক্যান ?
:: আম্মু আমাকে নতুন নতুন ছড়া শিকাইসে , ঐটা বলবো
> আচ্ছা বলো
:: নতন নতন তায়রা, মাতায় দিয়ে পায়রা ....
> (খিক খিক) ওরে সোনামনিটা, ওটা হবে নটন নটন পায়রা, মাথায় দিয়ে টায়রা ...
:: তুম পারো ?
> পারি তো ...
:: তাহলে তুম বলো আমি শুমবো
> কিন্তু আমি যে তোমার কাছে শুনতে চাই ...
:: তুম একন আমা কি হইসো ?
> কোল বালিশ
:: উহু, তুম আমা গপ্প বালিশ হইসো, একন গপ্প শুমবো .... নাহলে কিন্তু আমি ঘুম বাবু হবো না
> ঠিকাছে, কিসের গল্প শুনবা ?
:: (কি মনে করে দেয়ালে টানানো একটা ছবি দেখিয়ে বললো ) ঐ ছবিটার গপ্প ....

সেদিক তাকাতেই দেখি ... অনেক বছর আগে তোলা আমার নিজের ছবি, যেখানে অনেকের সাথে আমার মাথায় ও বাংলাদেশের পতাকার মতো লাল সবুজ কাপড় বাধা আছে ... মুচকি হেসে বললাম ...

> আমার মাথায় বাধা ঐ লাল সবুজ কাপড়টার গল্প শুনবা ?
: হু ...
> আচ্ছা শুনো তাহলে ....

অনেক বছর আগের কথা, তখন ঐ লাল সবুজ পতাকা ছিল না ... আমাদের বাংলাদেশ ও ছিল না ... তখন সেখানে অনেক পচা লোক ছিল ... ওরা কি বলতো জানো ... ওরা বলতো এখন তুমি যেমন আম্মু কাছে বাংলা ছড়া শিখছ, আমার সাথে বাংলায় কথা বলছো, গল্প শুনছো এগুলো করা যাবে না... পচা কাজ হোক বা ভালো, ওরা যা বলবে শুধু তাই শুনতে আর করতে হবে ... নিজে নিজে কিছু বলা যাবে না, কিছু করা যাবে না ... কেউ যদি নিজে কিছু ভাল কাজ ও করতে যেত তাহলে পচা মানুষগুলো অনেক কষ্ট দিতো ... এমন করে অনেক দিন হয়ে গিয়েছিলো আর পচা মানুষগুলোও আস্তে আস্তে বেশী পচা হয়ে যাচ্ছিলো ... আরো বেশী বেশী কষ্ট দিচ্ছিলো ভাল মানুষগুলোর সব কিছু জোর করে কেড়ে নিচ্ছিলো ... তখন যারা এমন কষ্ট পাচ্ছিলো সবাই মিলে এই পতাকা তৈরি করেছিল আর বলেছিল আমরা ঐ সব পচা মানুষদের সাথে থাকবো না ... আমরা একলা একলা অনেক বেশী কষ্ট করতে পারবো কিন্তু পচা মানুষদের পচা পচা কথা শুনবো না ... ওদের কাছে থেকে পাওয়া কষ্ট আর সহ্য করবো না ... এই কথা শুনে ঐ পচা মানুষগুলো ভাল মানুষগুলোকে অনেক অনেক বেশী কষ্ট দেয়া শুরু করেছিল, তাই একসময় কষ্টে থাকা ভালো মানুষগুলো আর সহ্য করতে না পেরে ওদের সাথে যুদ্ধ শুরু করে ... তাদের সবার চোখে এমন স্বপ্ন ছিলো -- সকাল বেলা সূর্য উঠলে যেমন রাতের অন্ধকার নাই হয়ে যায়, সে রকম ভাবে ঐ সব পচাদেরকে যুদ্ধে হারিয়ে দিতে পারলে নিজেদের এমন কষ্টের দিন শেষ হয়ে যাবে , তখন সবাই অনেক আনন্দে থাকবে, কোন দুঃখ থাকবে না আর তোমার মত লক্ষী বাবুরা এই লাল সবুজ পতাকা নিয়ে খোলা মাঠে মনের আনন্দে স্বাধীনভাবে উড়ে বেড়াবে ...

:: এপ্পলে কি হইসে ?
> এর পরে ভাল মানুষগুলো যুদ্ধে জিতে গেসে আর পচা মানুষগুলো লজ্জায় মাথা নীচু করে চলে গেছে ...
:: কিসে জিতে গেসে ?
> ওটাকে বলে স্বাধীনতার যুদ্ধ ... তুমি যখন আরেকটু বড় হবে তখন তোমাকে সেই যুদ্ধের গল্প শুনাবো ,ঠিকাছে ? ...
:: আচ্ছা , থিকাসে ... (আঙ্গুল দিয়ে আমার মাথায় বাধা লাল সবুজ পতাকার দেখিয়ে বলে) তুমি আমাক ঐ রকম এট্টা কিনে দিবা ?
> অবশ্যই কিনে দিবো ... বাংলাদেশে গিয়ে তোমাকে অনেক বড় একটা লাল সবুজ পতাকা কিনে দিবো ... কিন্তু, সেটা নিয়ে তুমি কি করবে বলো তো ?
:: (ঘুমে টলটল চোখে তাকিয়ে সে বললো) উমম ..... তুম বলো
> একদিন ভোর বেলা তোমাকে খালি পায়ে নরম নরম ঘাসের উপর দাড় করিয়ে দিবো ... এর পর যখন আমরা দেখবো সূর্য উঠছে, তখন তুমি এই লাল সবুজ পতাকা দুই হাতে মাথার উপরে ধরে পাখির মত উড়ে বেড়াবে ...

এর পর কোন সাড়া নেই দেখে বুকের দিকে একটু ঝুকে দেখি আমার জানের টুকরা কোঁকড়াচুলওয়ালী ততক্ষনে মিষ্টি মিষ্টি হাসিমুখ নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে ... ওর কপালে ছোট্ট করে একটা চুমু দিয়ে ফিসফিস করে ওর কানে বললাম -- আমার জীবনের অনেক চাওয়া পুরা হয়নি, হয়ত ভবিষ্যতে হবেও না ... তুমি আমার এই লাল সবুজের স্বপ্নটা পুরন কোরো ...

দোতালার কাজে হাত দিবেন না, প্লিজ !!!

দোতালার কাজে হাত দিবেন না, প্লিজ !!!

১০ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:২২





হতভম্ব হয়ে তুহিনের বাবা কিছুক্ষন দাড়িয়ে রইলেন আর চিন্তা করতে লাগলেন, এটা কি শুনলেন তিনি ? যে ছেলে সকালে ঘর থেকে বের হয়ে যায় আর রাতে ফেরে ... তার নিজের সাথেই যার ঘুম থেকে ওঠার সময় অথবা গভীর রাতে বাড়ী ফেরার পরে দেখা হয় সে এমন কাজ করবে কখন ? .... কিন্তু প্রতিবেশীর অনুরোধ বলে কথা ... কি করা উচিত তার এখন ? ....




কদিন ধরে গিন্নী বলছিল আশে পাশে যেভাবে উঁচু উঁচু বাড়ী তৈরী হচ্ছে তাতে দোতালার কাজে হাত না দিলে ক'দিন পরে দেখা যাবে আমরা খোলা বাতাস কি জিনিস তাই ভুলে যাব, সেই সাথে এখন যে কটা রুম আছে তাতে নিজেদের তো কাজ চলে কিন্তু বেশী গেষ্ট আসলে ওদের জন্য রুম শেয়ার করা লাগে ... সব মিলিয়ে দোতালায় হাত দেয়াটা এই মুহুর্তে জরুরী .... তাই তিনি সবকিছু ঠিক ঠাক করে কেবল মাত্র ঘরের সামনের খোলা যায়গাটাতে ইট বালি সিমেন্ট আর রড আনানো শুরু করেছিলেন ... দু-এক দিনের মধ্যে দোতালার কাজে হাত দিবেন ঠিক করে আজ সকালে গিয়েছিলেন নিজের পরিচিত রাজমিস্ত্রীর সাথে কথা বলতে ... সে ই এ বাড়ীর শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সব কার করেছে ... এর পর গেলেন কারেন্টের মিস্ত্রীর কাছে ... তার সাথেও শিডিউল করে বাসায় ফিরতেই শুনলেন পাশের বাড়ীর বাড়ীওয়ালা সকাল থেকে দুবার ঘুরে গিয়েছেন ... ব্যাপারটা তাইলে গুরুতর হবে মনে হয় ... তা না হলে এত সকালে দু বার এখানে এসে খোজ নেয়া ... ঘটনা সুবিধার মনে হলো না ... গিন্নির কাছে বিস্তারিত শুনতে চাইলে তিনি বললেন -- উনাকে বেশ অস্হির দেখাচ্ছিল ... হয়ত কোন গুরুতর ব্যাপার হবে ... তুমি কি যাবে উনার ওখানে ? ... একটু চিন্তা করে তিনি বললেন -- ঠিকাছে, একটু ফ্রেস হয়ে যাচ্ছি ...

বাথরুমে ঢুকে তিনি ফ্রেস হচ্ছেন এমন সময় কলিংবেলের আওয়াজ ... ডিং ডং

(তুহিনের বাবা দরজা খুলে বললেন) >> আসসালামুআলাইকুম ভাই কেমন আছেন ?
(প্রতিবেশী) > ওয়ালাইকুম আসসালাম ... এইতো ভাই আছি কোনোরকমে ...

>> কেন , কি হয়েছে ? সকাল থেকে বেশ কয়েকবার আমাকে নাকি খুজে গিয়েছেন শুনলাম
> জ্বি ভাই, একটু চিন্তার মধ্যে আছি ... তাই আপনার কাছে এসেছিলাম

>> ঘটনা খুলে বলুন তো , আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না
> আপনি শুনলাম দোতালার কাজে হাত দিচ্ছেন ?

>> জ্বি, ঠিকই শুনেছেন, দেখেন না চারিদিকে এত উচু বিল্ডিং তৈরী হচ্ছে, এর মাঝে অন্তত দোতালা না তুললে তো মুক্ত বাতাস কি জিনিস তাই ভুলে যাব বলেই মনে হচ্ছে, এছাড়া কয়েকজন গেস্ট একসাথে আসলে থাকার যায়গার সমস্যা হয় ... এজন্যই শুরু করতে যাচ্ছি....
> হুমম ... ইট, বালি, সিমেন্ট, রড এনে ফেলেছেন দেখছি ...

>> জ্বি ভাই, আশা করছি দু-এক দিনের মধ্যেই কাজ শুরু করে দিতে পারবো
> আসলে ভাই সাহেব, সকাল থেকে এ জন্যই আপনার কাছে আমি বার বার আসছিলাম ... একটা অনুরোধ করতে চাই ...

>> জ্বি বলুন, কি অনুরোধ করতে চান ...
> আপনি প্লিজ দোতালার কাজে হাত দিবেন না...

>> কিন্তু কেন ?
> দেখেন আপনার আমার বড় ছেলে মেয়ে আছে, আপনি দোতালা বানালে আমার বাড়ীর বরাবর হয়ে যাবে, তারমানে আপনার ছাদ আমার ছাদের পাশাপাশি আর বরাবর হয়ে যাবে ... আর আমাদের ছেলেমেয়েরা সেই সুযোগে ফুল , চিঠি দেয়া নেয়া শুরু করে দিবে ... তখন কি হবে ভেবে দেখেছেন ? .... তাই বলছিলাম প্লিজ ভাই , আপনি দোতালা টা বানাবেন না ...

অতঃপর ......

Thursday, November 19, 2009

অক্ষর দাহে আত্মাহুতি !

অক্ষর দাহে আত্মাহুতি !

১৫ ই নভেম্বর, ২০০৯ সকাল ১০:৩৫





আলতো করে ধরে চোখের সামনে রাখতেই অসামান্য উজ্জলতায় আজো জ্বল জ্বল করে জ্বলে ওঠে চিঠি গুলোর প্রতিটি অক্ষর ... ঠিক যেমনটি জ্বলে উঠতো এত দিন এতটা বছর ধরে প্রতিটি দিন, প্রতিটা ক্ষন, প্রতিটি মুহুর্তে ...ভালবাসার কোমল স্পর্শে আজো যেন অক্টোপাশের মত জড়িয়ে ধরতে চায় সেই প্রথম দিনটির মতো ... এক মুহুর্তে মিটিয়ে ফেলতে চায় দুই দেহ মাঝের অনন্ত দুরত্ব... মনের মতই দেহের ক্ষেত্রেও দুজনের মাঝে তৈরি করতে চায় অদ্বিতীয় স্বত্তা ... ভালবাসায় ভরা মুগ্ধ চোখে দেখতে থাকা চিঠির উপর হঠাৎ কোথা থেকে দু-ফোটা পানি পড়াতে, সম্বিৎ ফিরে পেতেই কঠিন বাস্তবতার চরম স্বার্থপরতার সামনে দাড়িয়ে পড়তেই হলো ... এই চোখটাই আসলে যে তার চরম এবং পরম শত্রু... এটা না থাকলেই তাকে আজ এ দিনটি দেখতে হতো না ... আর এই মুহুর্তের জন্মও নিত না কখনো ...


ধীর পদক্ষেপে উঠে দিয়াশলাই এর একটি কাঠি বের করে আগুন জ্বালাতেই একটুকরো আগুনের দেখা পাওয়া গেল.... নাহ ! এটা ঠিক সেরকম আগুন না যেমনটি সে চায়... তার চাই আগুনের লেলিহান শিখা, ঠিক যেমনটি জ্বলছে তার বুকের ভিতর ...দিয়াশলাই এর বাক্স খুলে এর ভিতর কাঠিটির আগুন অন্য বারুদের গায়ে লাগতেই অসামান্যভাবে সেই আগুনেরই সন্ধান পাওয়া গেল যার অপেক্ষা সে করে চলেছিল বেশ কিছুক্ষন ধরে ... দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠা আগুনের শিখার কাছে চিঠিটির একাংশ ধরতেই যেন চাতকের মতই আত্মাহুতির অভিপ্রায়ে অক্ষরগুলো ওকে বুকে টেনে নিলো ...


আস্তে আস্তে পুড়তে থাকা চিঠির প্রতিটি অংশে আজ যেন সে দেখতে পাচ্ছে সেই সব দিনের দৃশ্য যখন ওরা দুজনে উদ্দাম আনন্দে উপভোগ করেছিলো সূর্যকীরণের উত্তপ্ত প্রেম আর রাতের নিঃশব্দ ভালবাসা ... আশা নিরাশার হাজারো দ্বন্দকে দুরে ঠেলে দিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সাথে থাকার , সবসময় ... হঠাৎ জ্বলতে থাকা আগুনের শিখায় চিঠি ধরা হাতের চামড়াগুলো একটু একটু পুড়তে থাকায় যেন চলমান ছবিগুলো একে একে পরিবর্তিত হতে থাকলো ... সন্ধ্যার মিষ্টি আলোয় আজ ওর হাতে অন্য কারো হাত, যে হাত এক সময় তাকে ধরে বলেছিল -- কখনো ছেড়ে যাবনা ... টানা টানা মায়াময় সেই দু চোখে আজ অন্য কারো প্রতিচ্ছবি উদ্ভাসিত ... আর তখনি বাতাসে ভেসে আসলো নিজের কন্ঠস্বর - তোমাকে আমি কখনোই আমার অপরাধী হতে দিব না ... কারন ... আমি যে তোমাকে ভালবাসি ....



ছোট্ট বাবুদের মিষ্টি কথা

ছোট্ট বাবুদের মিষ্টি কথা

১১ ই নভেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৫:০৪




আমার দুই ছোট্ট কাজিন আছে এখানে ... একজন ৫ অন্যজন ৭ বছর বয়স ... স্কুলে আর বাইরে ওদের দিনের বেশীরভাগ সময় কাটে অন্য ভাষায় কথা বলে অথবা শুনে, বাসায় এসে বেশীরভাগ সময় "আভাটার" "বেন ১০" জাতীয় কার্টুন দেখে , তাও আবার সেই ভাষায় ... বাংলা শুধু বলতে পারে ঘরের মানুষগুলোর সাথে ... আমার আংকেল আন্টি কখনোই ওদের সাথে বাংলা ছাড়া অন্য ভাষায় কথা বলেন না, উনাদের কথা হলো -- আমরাও যদি ওদের সাথে বাংলা না বলি তাহলে ওরা কখনোই নিজের ভাষা শিখবে না ... যা শেখাটা ওদের জন্য অনেক জরূরী।


প্রথমে আমার ৭ বছরের কাজিনের গল্প বলি ...

একদিন তাকে বলা হলো
-- যাও তো কিচেনের কাস্টের ভিতরে দেখ চকলেট আছে , নিয়ে এসো আর অন্য ভাইয়া আপুদেরকেও দাও ... ( সেদিন বাসায় গেষ্ট আর তাদের কয়েকজন বাচ্চা ছিলো)
একটু পরে সে ফিরছে না দেখে আন্টি বললেন -- কৈ তুমি , খুজে পাইসো চকলেট গুলো ?
ওদিক থেকে সাথে সাথে ফিরে এসে সে উত্তর দিলো -- আম্মু আমি অনেক খুজসি কিন্তু কোন চকলেট পাইসিলাম না :|

আরেক দিনের গল্প ....
আংকেল আর আন্টি ওকে নিয়ে একটা মজার খেলা খেলছিলো ... ওর হাতে একটা চিপস এর প্যাকেট দিয়ে আংকেল বলেছিলেন -- সামনে যাও তো কয়েকটা চিপস তোমার আম্মুকে দিয়ে আসো, (তাকে দেয়ার পরে) এবার পিছনে এসে আমাকে দাও ...
এভাবেই তাকে শিখানো হচ্ছিলো নিজের যে কোন জিনিস সবাইকে দিয়ে খেলে কেমন আনন্দ পাওয়া যায় ... সেদিন বিকেলে আংকেল ঘুমিয়ে আছেন , আন্টি ওকে নিজে সুপার মার্কেটে গিয়ে কিছু বাজার করে আবার ঘরে ফিরেছেন ... এমন সময় আংকেল ঘুম থেকে জেগে বললেন -- তোমরা কোথায় গেসিলা, কখন আসলা ?
তখন আমার ঐ কাজিন জবাব দিলো -- আমরা কালকে বাজার কত্তে গেছিলাম একটু পরে পিছনে আসছি ...
(সে সময় সে আজকে / কালকে ... আগে/পরে এর মানে ঠিক মতো জানতো না)


এবার বলি ছোট কাজিনের গল্প

একদিন উপরের নিজেদের ফ্ল্যাট থেকে আমার এখানে এসে পিচ্চিটা কয়েকটা চকলেট দিলো, দেয়ার পরে বললো -- এইগুলো তোমার আর (হাতের কয়েকটা দেখিয়ে বললো) এইগুলো আমার জন্য...
আমি তখন দুষ্টুমি করে ওর গুলোও নিয়ে বললাম ... থ্যাংকু, এইবার যাও
সে এমনভাবে আমার দিকে তাকালো যেন সে চলে গেলে আমার মহা বিপদ হবে ... দরজার দিকে একটু যাবো যাবো ভাব দিয়ে আমাকে বলতে থাকলো -- আমার চকলেট গুলো ফিরায়ে দিবা ? নালে আমি যালাম কিন্তু ... কৈ দেও ... নালে আমি এক্কুনি যালাম কিন্তু....


আবার কয়েকদিন আগে স্কুল থেকে ফিরে নিজেদের ঘরে না গিয়ে দুই ভাই আমার ড্রইংরুমে এসে ধপাস করে বসে পড়েছে ...ঢুকেই কথা নেই বার্তা নেই ব্যাগ একদিকে, মোজা আরেকদিকে চেলে ফেলে দিয়ে শুয়ে পড়লো সোফার উপরে ...
আমি জিজ্ঞেস করলাম -- কি হইসে এমন করছো কেন ?
পিচ্চি বলে -- আজকে স্কুলে সারা দিন তুর্নঈ (স্পোর্টস) করাইসে তাই আমি ভেঙ্গে গেছি ...
আমি বলি -- কি হইসে ?
সে আবার বলে --
সারা দিন তুর্নঈ করে আমি অনেক ম্যু (ক্লান্ত) মানে .... ভেঙ্গে গেছি