Monday, February 23, 2009

~গোপন কথা ~

গোপন কথা

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ সকাল ৮:৩২






"চুপি চুপি বলো কেউ জেনে যাবে ..... " গানটা শুনতে শুনতে মনে পড়লো আমার আর কোকড়া চুলওয়ালীর (ব্লগে) কিছু না বলা ঘটনা ... অনেক সময় ওর আম্মু এখানে ঢুঁ মারে তার মেয়েকে নিয়ে কিছু লিখলাম কিনা ... উনি আপাতত ব্যাস্ত আছেন, তাই সাহস করে এটা লিখছি, তবে সাবধানের মার নেই.... সুতরাং, উনি কিছু জেনে যাওয়ার আগেই জলদি জলদি পড়ে ফেলুন :P

কোকড়া চুলওয়ালীর আম্মুর ফাইনাল পরীক্ষা থাকায় দেড়-ফুটির জন্য একজন খেলার সাথী দরকার ছিল (সেদিন তার অল্প জ্বর থাকায় সে স্কুলে যায়নি)... সেদিন আমি ফ্রি থাকায় দায়িত্বটা আমাকেই পালন করতে হয়েছিল ... অবশ্য আমার কাজ থাকলেও পুসকির জন্য ছুটি নিয়ে হলেও যেতাম ... যাই হোক, সকাল বেলা ওখানে গিয়ে দেখি পুসকি ঘুম থেকে উঠে রেডী হয়ে বসে আছে ... চোখে মুখে কিছু একটা দুষ্টুমী খেলছে ... মনে মনে বলি আজকে এমন কিছু একটা হবে যার জন্য হয় ওর বকা খেতে হবে অথবা ওর আম্মুর ... এইটা বুলেট প্রুফ অবস্হা ... বুলেট মিস হলেও যে কোন এক জনের বকা আজকে মিস হবে না .... :|

যাই হোক তার আম্মু পরীক্ষার জন্য চলে যেতেই কোকড়া চুলওয়ালী বলে বসলো চলো আজকে আমরা অন্য রকম খেলা করবো ... ওর কথা শুনে তো মনে একটু খটকা লাগলো .... কারন সাধারনত আমরা বিভিন্ন সাইকোলোজিক্যাল গেম অথবা কাগজ-কলম দিয়ে খেলা যায় এমন কিছু খেলি আজকে তার মনে কি দুষ্টুমী খেলছে বুঝতে না পেলে বললাম -- কি খেলা খেলবো আজকে ?

ও বললো -- ক্রিকেট :)
আমি বলি -- কি ? .... এই খেলার কথা কোথা থেকে জানলা ? :|
ও বললো -- আম্মু সেদিন ইন্টারনেটে খেলা দেখছিল আর আমাকে বলছিল কিভাবে খেলে ... আজকে তুমি আমাকে ঠিকমতো শিখায়ে দিবা আর আমরা খেলবো , ঠিকাছে ?

কোকড়া চুলওয়ালীর মা একজন কঠিন ক্রিকেটের পাগলী, একসময় নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে খেলা দেখতো ... আজকাল সময়ের অভাবে অতটা পাগলামী না করলেও খুব একটা কম ও করে না ... খেলা হলে সেদিন রান্না ঘরে তার যাওয়া হয়না, সময়মতো খাওয়া হয়না ... পরিক্ষা থাকলেও পড়তে বসতে চায় না ... বড়ই যন্ত্রনা (এটা আমার কথা না , কোকড়াচুওয়ালী বলেছে এটা :P)

আমি বললাম -- খেলবো কিভাবে, ব্যাট, বল লাগবে তো ... :|
ও বললো -- আমার একটা বল আছে তো (এই বলে কোথা থেকে জানি একটা টেনিস বল আনলো)

আমি বললাম -- এখন ব্যাট লাগবে

ওর কান্ড দেখে অবার না হয়ে পারলাম না .... ইন্টারনেটে খেলা দেখে সে ব্যাট ও চিনে ফেলেছে .... তখন দেখি সে গুটি গুটি পায়ে স্টোর রুম থেকে একটা ছোট্ট কাঠের টুকরা তুলে এনেছে ...

তা দেখে আমি বললাম -- এক কাজ করো ওটা দিয়ে খেলতে গেলে হাতে ব্যাথা পাবে ... তোমার ব্যাডমিন্টনের একটা র‌্যাকেট নিয়ে এসো

নিজের রুম থেকে র‌্যাকেট এনে এবার সে বললো -- এবার বলো কিভাবে খেলতে হয়?
তাকে নিয়ে টেবিলে বসে কাগজে স্টেডিয়াম , ক্রিজ , বাউন্ডারী একে সাদামাটা ভাবে বুঝিয়ে দিলাম এর নিয়ম কানুন গুলো ... এর মাঝে দেখি তার সবচেয়ে পছন্দ লেগেছে ওভার বাউন্ডারী / ছক্কা মারা আর বোল্ড আউটের ব্যাপার গুলো ...

এবার শুরু হলো আমাদের খেলা ------- বাইরে বরফ পড়ছিল তাই ঘরের ভিতরেই ইনডোর গেম খেলব বলে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ...

বেশ বড় ড্রইংরুমে টি টেবিল আর ২টো সিঙ্গেল সোফা আর এক পাশের ডাইনিং টেবিল সরিয়ে দেখি আমাদের স্টেডিয়ামটা খুব একটা খারাপ হয়নি ... একটা চেয়ার কে স্টাম্প বানিয়ে খেলা শুরু করার প্ল্যান করলাম .... এবার দু জনের মধ্যে টস হলো ... কে ব্যাট করবে আর কে বল ... টস হেরে আমার ভাগ্যে ব্যাট করার নির্দেশ দেয়া হলো ... যথাবিহীত আজ্ঞা সহকারে আমি চলে গেলাম ক্রিজে ... কোকড়াচুলওয়ালী এবার বল করা শুরু করলো ....

প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় বল ঠেকিয়ে দিলাম বলে আমাকে বলা হলো এভাবে না ... স্ট্রোক খেলতে হবে ... চতুর্থ বল খেললাম হালকা ড্রাইভ ...

এবার পুসকি চোখ রাঙ্গিয়ে বলে --- পরের দুটো বলে দুটো ছক্কা মারবে কিন্তু
আমি বললাম -- তুমি এত ভাল বল করছো আমি কিভাবে মারবো বলো ?
ও বললো -- তা জানি না , মারতে বলেছি তুমি জোরে মারবে ব্যাস ...

(আশে পাশের কাচের জিনিশ গুলোর কথা চিন্তা করে)পঞ্চম বলকে ওভার বাউন্ডারী না মারতে পারায় কটমট করে তাকিয়ে গটগট করে সে ফিরে গেল ওভারের শেষ বলটি করতে .... একটু পরে দেখি ৬ষ্ঠ বল আমার দিকে না এসে নিজেই ওভার বাউন্ডারী ক্রস করতে যাচ্ছে ... এবং ফলাফল হিসেবে তার অব্যার্থ নিশানায় বলটি শোকেজের গায়ে লাগতেই বুকের ভিতর ছ্যাৎ করে উঠলো ... আরে এইটা ভাঙ্গলে ওর মা তো আমার মাথা ফাটাবে ... এবার পুসকিরে বললাম --- এবার সুন্দর করে বল করো আমি ছক্কা মারি ...

ওভারের শেষ বলে ডাইনিং টেবিলের উপর দিয়ে জানালার গ্লাসে বলটা গিয়ে লাগতেই জীবনে প্রথম দেখলাম ব্যাটসম্যানের চেয়ে বোলার অনেক বেশী খুশী হলো

এবার বোলার নিজেই আম্পায়ার হয়ে আমাকে আউট ঘোষনা দিয়ে বললেন যাও বল করো এবার আমি ব্যাট করবো :| .... আমি বললাম -- তথাস্ত !

প্রথম বল করতেই দেখি কোকড়া চুলওয়ালী শচীনের মতো ব্যাট ঘুরিয়ে নিজেও ঘুরে গেল কিন্তু বল ব্যাটে না লাগায় কোন রান হলো না .... আমি ভাবলাম এমন করে আস্তে বল করলে আজকে নির্ঘাত একটা এক্সিডেন্ট হবে.... তাই একটু জোরে ছুড়লাম দ্বিতীয় বলটি ... এবারও পুরা ব্যাট ঘুরিয়ে দিলেও বল - ব্যাট একসাথে না হওয়ায় কোন রান হলো না ...

আমি বললাম -- শোনো , তুমি আগে ঠেকিয়ে ঠেকিয়ে বল ব্যাটে লাগাও এর পরে অমন করে ছক্কা মারতে পারবে ... ঠিকাছে ?

তৃতীয় আর চতুর্থ বলটি সে খুবই সুন্দর মতো জায়গাতে দাড়িয়ে হালকা করে ঠেকিয়ে দিলো .... পঞ্চম বলটি ও ঠেকাবে ভেবে আস্তে করে ডেলিভারী দিতেই বিদ্যুৎ চমক খেলে গেল পুসকীর হাতে , বলে ব্যাটে এক হয়ে দুর্দান্ত গতিতে বল দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে গিয়ে দেয়ালে লাগলো - ছক্কা ! অমনি তার আনন্দ আর কে দেখে ... যেন বিশ্বকাপ জয় করেছে এমন আনন্দে লাফাতে শুরু করে দিলো আর বললো --- ছক্কা ছক্কা ছক্কা মেরেছি :) .... আমি ওকে বললাম -- এত জোরে মারলে ঘরের কাচের জিনিস কিছু ভেঙ্গে গেলে আম্মু এসে কিন্তু বকা দিবে ...

তার সাফ কথা -- আমি ছক্কা মারবো .... এখানে সমস্যা হলে বাইরে বরফে খেলবো ... চলো ...

আমি বললাম -- তোমার না শরীর খারাপ ? আজকে ভিতরেই খেলি
ও বললো -- তাহলে আমাকে ছক্কা মারতে দিতে হবে এখানেই ....
আমি বললাম -- (কি আর করা) আচ্ছা ঠিকাছে :|

এবার আমি কিছুক্ষন বল করছি এমন করে যেন ও মারতে না পারে ... কখনো বলছি এবার তুমি ঠেকাও ... কখনো বলছি এবার গ্রাউন্ড শট দিয়ে চার রান নাও .... এভাবে চলতে চলতে একসময় মনে হলো ছক্কার ভুত মনে হয় ওর মাথা থেকে নেমেছে ... দুটো বল আসতে করার পর তৃতীয় বলটি আবার আস্তে করার পরেই দেখি আবার সেই দুর্দমনীয় ব্যাটিং ...

ঝড়ের বেগে ব্যাট ঘুরলো, বল-ব্যাট এক হলো এবং আকাশ ছোয়া শটের শেষ পরিনতি হিসেবে আমাদের স্টেডিয়ামের একপাশের ফ্লাড লাইট (এনার্জি সেভার লাইট) প্রচন্ড বিষ্ফোরনের শব্দে (;)) ভেঙ্গে গেল ... এইবার দুই ক্রিকেটারের মানসপটে এমন একজনের চেহারা ফুটে উঠলো যে এই অবস্হা দেখলে আমাদের দুজনকে পিটিয়ে তক্তা বানাবে :| ....

জলদি জলদি হোল্ডার থেকে ভাঙ্গা লাইট খুলে গারবেজে ফেলা হলো, কাচের টুকরোগুলো প্রথমে ব্রাশ দিয়ে একসাথে করে এর পরে গুড়োগুলো ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে পরিষ্কার করে টি টেবিল আর সোফা জায়গা মতো রেখে দেয়া হলো ... এর পরে দু-জনে এক দৌড়ে রাস্তার ওপাশের দোকান থেকে একই রকম এনার্জি সেভার লাইট কিনে ঘরে ঢুকে জায়গা মতো লাগিয়ে দেখা হলো ঠিকঠাক জ্বলছে কি না ... এর পরে আমরা কেবল মাত্র লাইট অফ করে টিভি অন করে "ড্রাগন বল জি" দেখা শুরু করেছি .... অমনি দেখি কোকড়া চুলওয়ালীর আম্মু বাসায় এসে হাজির ।

এসে হাসি মুখে বললো --- কি ব্যাপার মানিক জোড় আজকে এত লক্ষি হয়ে গেলো কিভাবে ? আজকে সূর্য কোন দিকে দিয়ে উঠেছিল ? আমি তো ভেবেছিলাম বাসায় এসে দেখবো লঙ্কাকান্ড হয়ে গিয়েছে .... এখন তো সব দেখি ঠিকঠাক আছে .... এদিক ওদিক ফিরে সব কিছু ঠিকঠাক পেয়ে উনি বেশ আশ্বস্হ বোধ করলেন মনে হলো ..... এদিকে আমরা এক জন আরেক জনের দিকে তাকিয়ে খালি একটু হাসি দিলাম .... তবে মনে মনে প্রার্থনা করছিলাম গার্বেজের মধ্যের ভাঙ্গা টুকরাটা যেন ওর চোখে না পড়ে :|

পরম করুনাময় মনে হয় আমাদের দোয়া কবুল করেছিলেন , ন হলে এতো দিনে তো নির্ঘাত একটা কঠিন শাস্তি আমাদের দুজনের উপোরে আপতিত হতো সেই সাথে কিছু বকা ফ্রি পাওয়া যেত :( ... তবে এ যাত্রায় বেচে গেলাম মনে হয় :) ....

তবে যাই হোক না কেন আমরা দু জনেই কিন্তু সেদিন ছক্কা মেরেছিলাম B-)

Thursday, February 12, 2009

কোকড়া চুলওয়ালী আমাকে বেষ্ট ভ্যালেন্টাইন গিফট কিনে দিয়েছে

কোকড়া চুলওয়ালী আমাকে বেষ্ট ভ্যালেন্টাইন গিফট কিনে দিয়েছে

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ দুপুর ১২:৩৪







গত কয়েকদিন থেকেই ভাবছিলাম এবারের ভ্যালেনটাইনস ডে তে প্রিয় একজনকে কি গিফট দেয়া যায়... ভাবতে ভাবতে এখসময় ঠিক করলাম একটা নরম তুলতুলে টেডি-বিয়ার দিলে মন্দ হয় না ... ঐ রকম জিনিস তার বেশ পছন্দ যা সে মুখে না বললেও চোখের ভাষায় ঠিকই আন্দাজ করা যায় ... কিন্তু কিনতে গেলাম কি আর কিনে আনলাম কি ... থাক আর রহস্য না করে খুলে বলি ঘটনা কি হয়েছে ---

টেডি-বিয়ার কিনবো বলে মনস্হির করেছিলাম গতকাল রাতেই, সকালে কিছু কাজ ছিল - ভাবলাম সেগুলো সারবো আর সাথে সাথে ওটাও কিনে আনবো ... কাজ আর কখন করবো ঘর থেকে বের হয়ে সোজা চলে গেলাম গিফট কর্নারে ... সেখানে নানান রকম গিফটের সমারোহ ... একটা থেকে আরেকটা সুন্দর ... যেদিকে তাকাই সেদিকেই এত সুন্দর সুন্দর জিনিস তারা এবার তুলেছে ... দেখলে খালি কিনতে ইচ্ছা করে ... যাই হোক ... মনকে স্হির করলাম ... এসব দেখে কাজ নেই ... সোজা যাই টেডি-বিয়ারের সন্ধানে ...বিশাল দোকানটি ঘুরতে ঘুরতে একটা সেকশনে এসে দেখি ... ওমা ! এখানের কম করে হলেও ১০০ রকমের টেডি আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে ... সবগুলোই বলছে আমাকে কিনো, আমাকে কিনো .... আমি মনে মনে বলি -- হলো তো এইবার ? এত গুলোর মধ্যে থেকে কোনটা কিনবো আমি এখন ? :| ... আউলা মাথায় ভাবতে ভাবতে একবার এই মাথা থেকে ঐ মাথা যাই আরেকবার ঐ মাথা থেকে এই মাথায় আসি ... যেটা ধরি সেটাই পছন্দ হয় ... শেষমেষ ভাবলাম -- নাহ ! এভাবে চলতে পারে না, এখন ঠিকভাবে মনোযোগ দিয়ে যেটা বেশী পছন্দ হবে সেটাই কিনবো ....

জটিল রকম মনোযোগের সাথে আমি টেডি-বিয়ারের দুনিয়ার পা রাখার কিছুক্ষন পরেই হাতে একটা মৃদু ঝাকুনি অনুভব করলাম ... তাকিয়ে দেখি, আরে এইটা কে ? -- এ যে আমার দুষ্টু হাসির মিষ্টি বুড়ি কোকড়াচুলওয়ালী .... সে তার বড় বড় পাপড়ী ওয়ালা চোখ দিয়ে আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ...

ও জিজ্ঞেস করলো -- এই, তুমি এখানে কি করছো ? ...
আমি বললাম -- একটা টেডি কিনতে এসেছি :| :|

আমার কথা শুনে পুসকিটা যেন আরো একটা রাম-ধাক্কা খেল মনে মনে ... কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বললো -- ছেলেরা কি এগুলো দিয়ে খেলে নাকি, ওগুলো তো আমাদের জন্য ...
আমি কথা ঘুরাবার জন্য বললাম -- তা , তুমি এখানে কি করছো ?
ও বললো -- এখানে সুন্দর সুন্দর ডল এসেছে তো, তাই কিনতে এসেছি ... কিন্তু বল, তুমি টেডি কার জন্য কিনবা ?

আমি বুঝলাম এবার না বললে দেড়-ফুটি ক্ষেপে যাবে তাই বললাম -- না মানে , একজনকে গিফট দিবো তো, তাই ...
ও আবার জিজ্ঞেস করলো -- কিসের (উপলক্ষে) গিফট ?

পড়ে গেলাম না এইবার কঠিন পরীক্ষায় ? পুসকিরে বুঝাই ক্যামনে এইটা কি ? তাও তারে বুঝানোর চেষ্টা করলাম -- আমার একজন প্রিয় মানুষ আছে যাকে আমি একটা গিফট দিতে চাই ... ও তো অনেক দুরে থাকে, তাই এই গিফট টা পেলে ওর অনেক ভাল লাগবে, যখনই টেডি টা সে দেখবে মনে করবে আমি তার সাথে আছি ... (এর পরে ওরে আমি ক্যামনে বুঝাবো ভেবে পাচ্ছিলাম না :|)

কোকড়া চুলওয়ালী মুচকি হেসে বললো -- তাই বলো -- ভ্যালেনটাইন গিফট :)
আমি তো শুনে :-* ... এ তো দেখি সব জানে ...

এর পরে বললাম -- আচ্ছা তুমি দেখি সব জান , তাহলে আমাকে একটা গিফট সিলেক্ট করে দাও ...
ও বললো --- টেডি থেকে একটা ? নাকি অন্য যে কোন কিছু
আমি বললাম --- তুমি যেটা কিনতে বলবা সেটাই কিনবো ... এবার বলো কি কিনবো ...

পুসকি বলে -- তুমি ওকে এটা পাঠালে সে কি সময়মতো পাবে ?
আমি বললাম -- মনে হয় না , দেরী হতে পারে :|
ও আবার বললো -- হুম... তুমি ওর সাথে কথা বলো কিভাবে ?
আমি বললাম -- ফোনে আর অনলাইনে
ও বললো -- অনলাইনে কি লিখে লিখে কথা বলো ?
আমি বললাম -- হ্যা , ক্যান ?
ও বললো -- ওখানে কথা বললে তো ফোনে কথা বলা লাগে না, (ঠিক এই কথাটা গত ১ বছর ধরে আমি শুনছি তার কাছ থেকে, কিন্তু একবার রাগ করে হেডফোন-মাইক ভেঙ্গে ফেলার পরে আর এখনো পর্যন্ত কিনি নাই :|) .....আমি আম্মু কে দেখেছি ওভাবে আব্বুর সাথে কথা বলতে .... ওখানে ছবিও দেখা যায়।
আমি বললাম -- হু, তা ঠিক ... কিন্তু আমার হেডফোন নাই যে, এ জন্য ওখানে কথা বলতে পারি না ...

এবার কোকড়া চুলওয়ালী বললো -- তাহলে এক কাজ করো, তোমার গিফট তো এখন সময়মতো পৌঁছাবে না তার চেয়ে তুমি হেডফোন কিনো ... তাহলে সারা দিন ওর সাথে কথা বলতে পারবা :)

একে তো কোকড়াচুলওয়ালীর কোন কথা আমি ফেলতে পারি না, তার উপরে এখন তার কথা না রেখে উপায় নেই ... তাই একটা হেড-ফোন নিয়ে বাসায় ফেরার পরে ....

অনলাইন হয়ে তাকে ভ্যালেনটাইন গিফট হিসেবে ১ বছর পরে অনলাইনে আমার ভয়েস শুনে সে প্রথমে থমকে গেল, এর পরে অবাক হয়ে কিছুক্ষন প্রশ্নচোখে তাকিয়ে থাকলো ... এর পরে যখন ঘটনা খুলে বললাম ... বুঝতে পারিনি সে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আছে ... সব জানার পরে সে শুধু এতটুকু বলতে পারলো ---

আজকে সন্ধ্যা ৭:৫৮ মিনিটে আমি এমন একটা কথা জানতে পারলাম যা আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না ..... আমি এখানে তোমার আওয়াজ শুনছি, তুমি আজ আমার অনেক দিনের চাওয়া কে আজ পুরণ করে দিলে ... এখন যখন খুশী তোমার সাথে কথা বলতে পারবো ... তোমার গলার আওয়াজ শুনতে পাওয়া থেকে কি আমার জন্য আর কোন কিছু কি বেটার গিফট হতে পারে বলো ? .....

আমরা এবারের ভ্যালেনটাইনস ডে এর সব আনন্দ আমাদের দেড়-ফুটি কোকড়াচুলওয়ালীকে দিলাম


.

Wednesday, February 11, 2009

মেঘে ঢাকা মাঘী পুর্ণিমা

মেঘে ঢাকা

মাঘী পুর্ণিমা


১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ ভোর ৫:৫৩





আমার আকাশে আজ অনেক মেঘ...
বৃষ্টির ঘন পর্দা আর মাথা উঁচু করে থাকা স্কাই স্ক্র্যাপার গুলোর জন্য
আমার আজ আকাশ দেখা হয়নি
আমার আকাশ আজ মেঘে ঢাকা
তাই খুজে দেখা হয়নি আমাদের সেই তারাটাকে,
যাওয়া হয়নি কালপুরুষ কিংবা সপ্তর্ষির কাছে ...
তোমার মান ভাঙ্গাতে তাদের সাহায্য নিতে চেয়েছিলাম
আজ আমাদের অতি প্রিয় সঙ্গী চাঁদটার দেখা আমি পাইনি
যার হাতে তোমার জন্য চিঠি পাঠাবো...
আজ নাকি পূর্নিমা .....
ভেবেছিলাম তোমার পাশে বসে হাতে হাত রেখে
বুকে টেনে নিয়ে পূর্নিমা দেখবো ....
কিন্তু হলো না ...


শুনেছি তোমার ওখানে নাকি আজ বৃষ্টি হয়নি
কুয়াশাও নাকি আজ বেরোয়নি তাদের ডেরা থেকে
মাঘি পূর্নিমার রাতে তারা নাকি চাঁদকেই রাজত্ব করতে দিয়েছিল
সহস্র মাইল দুরে থাকা ঐ চাঁদ, কালপূরুষ আর সপ্তর্ষি যেন
তোমার মতই অভিমান করেছে আমার সাথে ...
তাই হাজার মাইল দুরের তোমার দিকে হাত বাড়াই ....
তোমার কাছেই যেহেতু আমার সব অন্যায় আবদার
তাই তোমাকেই বলি --

তোমার চোখে আমি আজকের পূর্নিমা দেখতে চাই ....





.

Monday, February 9, 2009

জীবনে লেখা একমাত্র প্রেমপত্র ... অতঃপর

জীবনে লেখা একমাত্র প্রেমপত্র ... অতঃপর

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১২:৫০












সামনেই ভ্যালেন্টাইনস ডে বলেই হয়তো চারিদিকে খালি প্রেমের আভাস, সুবাস যাই বলেন তাই পাচ্ছি ... এ কারনেই হয়তো সবার সামনেই একজনের সাথে লোটোপুটি হুটোহুটি করতে দেখেও তারই পুর্বপরিচিত আরেকজন আজকে আমারে প্রপোজ করে বসেছে ... আমি তো বলি লে - হালুয়া, কাহিনী কোন দিক দিয়ে প্যাচ খেলো নিজেই তো বুঝলাম না , যাই হোক ... ঘটনার ঘনঘটায় মনে পড়ে গেল জীবনের প্রথম প্রেমপত্র লেখার অভিজ্ঞতা :| (কাকতালীয়ভাবে সেটিও ছিল ফেব্রুয়ারীর ঘটনা) ........ ঘটনা সংক্ষেপে এইরকম ---

কলেজের কেবল ভর্তি হয়েছি ... বলতে গেলে পুরাই পাংখা অবস্হা ... সকালে ঘর থেকে বের হয়ে কলেজ, সেখান থেকে স্যারের বাসা, সেখান থেকে সংসদ ভবনে আড্ডা, অথবা খেলা করা এসব করে আনন্দে দিন পার করে দিয়ে রাতে বাসায় ফেরা ছিল দৈনন্দিন রুটিন ... সকালের কলেজে আমরা ৩ জন বন্ধু সবসময় একসাথে যেতাম ... সবাই আমরা স্কুল + এলাকার ফ্রেন্ড ছিলাম, একদিন এদের মাঝে একজন বললো দোস্ত আজকে রাতে তুই আমার বাসায় থাকিস একটু দরকার আছে ... জিজ্ঞেস করলাম ক্যান ? .... সে বললো --- আসিস এর পরে বলবো .... বাসায় বলে ওদের বাসায় বিকালেই পৌছে গেলাম, ইচ্ছে ছিল ওর কোন কাজ থাকলে জলদি শেষ করে রাতে বাসায় ফিরে আসবো (আমার আব্বু আম্মুর কথা ছিল,বাইরে যত রাতই কর না কেন, বাসায় ফিরবা) ... কিন্তু ওর বাসায় গিয়ে দেখি কাহিনী অন্য রকম .... বুঝলাম আজকে রাতে ফেরা হচ্ছে না ....

কাহিনী হলো খুবই সাধারন - ওর ছোট বোনের বান্ধবী থাকে পাশের বাসায় (নতুন এসেছিল), দু জনই পাশাপাশি বিল্ডিং এর চার তলায় ...তাকে তার অনেক পছন্দ হয়েছে ... এবার সে তাকে প্রোপোজ করতে চায় ... কিন্তু কিভাবে করবে বুঝতে পারছে না ... এ বিষয়ে সে নাকি আমার সাহাজ্য চায় ... আমি বলি, আরে বাবা আমি নিজে এ জিনিস থেকে ১০০ হাত দুরে থাকি আর আমি এসব কখনো করিওনি আমি তোকে কি পরামর্শ দিবো ? ... আর এ বিষয়ে আমাদের অন্য বন্ধুটা অনেক বেশী এ্যাডভান্স তাকে জিজ্ঞেস করিসনা ক্যান ? ... কিন্তু তার একই কথা ... তুই বল ... কি করা যায় .... এটা আর কাউকে বলা যাবে না ... আমি বললাম আচ্ছা দেখি চিন্তা করে কিছু করা যায় কিনা ...

ওদের বাসায় অবাধ যাতায়াতের কারনে আংকেল আন্টি ওর ভাই বোন সবাই আমাকে একরকম ফ্যামিলি মেম্বারের মতই দেখতো .... সেদিন বিকালে আমি আর আমার বন্ধু আর ওর ভাই বোন সবাই একসাথে ওদের ছাদে বসে আড্ডা দিচ্ছি এমন সময় দেখি ঐ মেয়ে তার ছোট বোন কে নিয়ে এসে হাজির ... বেশ জম্পেশ আড্ডা দেয়া হলো সেদিন , পাশাপাশি তার সাথে পরিচয় আর তার কিছু ভাল লাগা জিনিসের কথাও জেনে নিলাম কথায় কথায় ... সন্ধ্যা হতেই সে চলে গেল তার বাসায় আমরাও ঘরে আসলাম

(কাহিনী বলার সুবিধার্থে আমার বন্ধুর কাল্পনিক নাম দেয়া হলো অমিত আর তার পছন্দের মানুষটির নাম দিলাম পরী)

একটু রাত হতেই অমিত আমাকে বারান্দায় ডেকে নিয়ে বললো এদিকে আয়, অন্ধকার বলে লাইট জ্বালাতে বলতেই ও বললো নাহ ... চুপ চাপ দেখ - দেখলাম পরী ওদের বারান্দায় লাইট জ্বালিয়ে বসে পড়ছে ... মাঝে মাঝে এদিকে তাকাচ্ছে ... আমি বলি দোস্ত সেও মনে হয় তোরে ভাল পায় ... শুনে অমিতের গেল মাথা খারাপ হয়ে বললো আমি আর কিছু জানি না তোর সাথে তো আজকে ওর কথা হইছে তুই আমার হয়ে ওকে বল না প্লিজ ... আমি মনে মনে বলি -- ভাল বিপদে পড়া গেল দেখি ... বললাম দোস্ত ঐটা বাদে অন্য কিছু বল, সেইটা করে দেই ... সে অনেক চিন্তা করে বললো -- তাইলে একটা চিঠি লিখে দে ... আমি বলি -- তুই কি লেখা ভুলে গেছিস নাকি যে তোর কথা আমাকে লিখতে হবে ? ... তবুও সে জোরা জুরি শুরু করে দিলো , তার নাকি নার্ভাস লাগছে ... বললাম আমি তো জীবনে কখনো লিখিনি ... তারপরও অনুরোধে ঢেকি গেলার অবস্হায় কোন রকমে একটা চিঠি লিখে দিলাম তাতে যে জিনিস ছিল তা হলো -- অমিত ওকে প্রথম কোথায় কখন দেখেছিল, তাকে কি কারনে পছন্দ করে, সেদিন বিকালে জেনে নেয়া তার পছন্দের জিনিসগুলো দিয়ে সাজানো কিছু হাবিজাবি কথাবার্তা, আর কিছু পাম পট্টি ... সেদিন বিকেলে একটি জিনিস জানতে পেরেছিলাম পরীর অন্যতম দুর্বল সাবজেক্ট ছিল ইংরেজী ... তাই চিঠিটা কি মনে করে ইচ্ছা করেই ইংরেজীতে লিখেছিলাম ... আর অমিতকে বলেছিলাম একটা গিফট কিনে সেটার সাথে চিঠিটা দিতে।

এর কয়েকদিন পরে ....

কলেজে অমিতকে জিজ্ঞেস করলাম, কিরে চিঠি পেয়ে পরী কি বললো ? ও আমাকে বললো -- সে নাকি গিফট সিলেক্ট করতে পারেনি এখনো এ জন্য নাকি চিঠি ও দেয়নি ... আমি বললাম -- আয় আমার সাথে ... শাহবাগের মালঞ্চ থেকে তাকে কয়েকটা রজনীগন্ধার কিনে ওর হাতে দিয়ে বললাম -- এক্ষুনি যা, ওরে গিয়ে এগুলো আর চিঠিটা নিজে হাতে দে ...

এর পরের কাহিনী হয়েছে এরকম ---

অমিত চিঠি আর ফুল পরীর হাতে দেয়ার পর সে সুন্দর করে বলেছিল থ্যাংকু ... ফুলগুলোও খুব সুন্দর ... চিঠিটা হাতে নিয়ে ওর সামনে খুলে পড়েছিল ... এরপরে হঠাৎ নাকি জিজ্ঞেস করেছিল -- এটা আপনি লিখেছেন ? ... অমিত ছিল এমনিতে নার্ভাস এর উপরে হঠাৎ এ প্রশ্নে থতমত খেয়ে বলে ফেলেছে -- আমি না অনন্ত লিখেছে ... এর পরে নাকি পরী জিজ্ঞেস করেছে -- ফুলগুলো কে সিলেক্ট করেছে অনন্ত ভাইয়া ? ...। কিংকর্তব্যবিমুড় অমিত যন্ত্র মানবের মতো বলে বসলো -- হ্যা ...

অতঃপর ... অমিতকে নিয়ে সোজা পরী চলে এলো আমাদের কলেজে খুজে খুজে আমাকে আবিষ্কার করলো কলেজের ছাদে "ধোয়া উৎসবের" মাঝে ... এসে সোজা সুজি বলে বসলো -- অনন্ত ভাইয়া, উইল ইউ বি মাই ভ্যালেন্টাইন ? :|

Friday, February 6, 2009

পাগলা ঘন্টা.. ঢং ! ঢং ! (Bangla Blog)


পাগলা ঘন্টা.. ঢং ! ঢং !

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৫:২৮







ঘুম ঘুম চোখে তাকাতেই নিজেকে হাত পায়ে শিকল-বেড়ী পরা অবস্হায় দেখে অবাক হতেই হলো সময়ের স্বনামধন্য ব্যাবসায়ীর একমাত্র ছেলে মেধাবী স্টুডেন্ট অমিতকে ... কিন্তু তাকে এভাবে লম্বা শিকল-বেড়ী দিয়ে কেন বেধে রাখা হয়েছে, কিছুতেই মনে আসছে না কেন তার ? .... চারপাশে গভীর পর্যবেক্ষনের দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখলো কয়েকবার ... কিন্তু, নাহ ! ... এ জায়গা তো তার পরিচিত না ... এখানে সে আগে কখনো এসেছে বলে তো মনেও পড়ে না ... প্রায় অন্ধকার , স্যাতসেতে, ঠান্ডা একটি ঘর যেখানের একটি ছাড়া বাকি সব জানালা বন্ধ , একটি দরজা আছে কিন্তু সেটিও বন্ধ করা ... ঘরে আসবাব - পত্র বলতে তেমন কিছু নেই ... লোহার একটি বেড, টেবিল চেয়ার , দেয়ালে কেমন যেন কালচে রং এ বেশ কিছু আকিবুকি আছে তবে সেগুলো কি দিয়ে লেখা হয়েছিল তা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না ... মাথার উপরে একটি লাইট আছে , তবে সেটা এখন জ্বলছে না ... এ সব দেখতে দেখতে অমিতের চোখ চলে গেল জানালার বাইরে যেখান থেকে শুধুমাত্র দুর-দিগন্তের মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না ... মেঘের খেলা দেখতে দেখতে পুরোনো কিছু স্মৃতি মনে করতে চাইলো অমিত ...

প্রতিদিন অনেক রাত পর্যন্ত পড়ালেখা করার পরে সকালের ক্লাসে উপস্হিত থাকাটা কষ্টকর হলেও সেটার দায়িত্ব নিয়েছিল রাত্রী, কারন প্রতিদিন সে চোখ খুলতো রাত্রীর শুভসকাল শোনার মধ্যে দিয়ে ... এর পরে রেডি হয়ে নিজের রুম থেকে বের না হওয়া পর্যন্ত ফোনেই অপেক্ষা করতো মেয়েটা ... এর মাঝে একটা কথা মনে পড়তেই অজান্তেই হেসে উঠলো অমিত ... একবার রাত্রী ওকে ডেকে তুলে বলেছিল আমি একটু ব্যস্ত আছি তুমি বের হয়ে যেও সময় মতো ... এর পরে ফোনটা কেটে যেতেই ধপাস ! ... অমিতের আর খবর ছিল না ... চোখ খুলে দেখে দুপুর হয়ে গিয়েছিলো ... এটা জানার পর থেকে রাত্রী কখনো ওকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে ঘর থেকে বের না করে ফোন রাখে না .... শুধু তাই না ... নিজের প্রতিদিনের কর্মকান্ডের হিসাব তাকে রাতের বেলা দেয়া লাগতো রাত্রীকে ... ওর কারনেই তো সে রাজনীতি করতে পারে না, সিগারেট খেতে পারে না, বেশী রাত পর্যন্ত কোনখানে আড্ডা দিতে পারে না, খারাপ কোন ছেলেকে বন্ধু হিসেবে রাখতেও পারে না ... তার যেন একমাত্র কাজ - পড়ালেখা করে একটা খুব ভাল রেজাল্ট করতে হবে ... কেন সে এমন করে অমিতের খেয়াল রাখে, কেন সে এমন করে ওর প্রতিটি জিনিস কে নিয়ন্ত্রন করে, কেন তাকে এত ভাল রেজাল্ট করানোর চেষ্টা করছে সে ... জিজ্ঞেস করলে সে শুধু একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে আর কিছু বলতো না ... আর ঐ হাসি টা অমিতের খুব প্রিয় কয়েকটা জিনিসের মধ্যে অন্যতম ....

ঘরের মধ্যে ঘুর্নিঝড় বইয়ে দেয়াও অমিতের অন্যতম বদ-অভ্যাস ছিল ... এটাও রাত্রীর দেয়া শব্দ ... তার বই খাতা নোট সব টেবিল, ফ্লোর আর বিছানায় গড়াগড়ি করে, কাপর-চোপড় সব চেয়ার, সোফা, আর খাটের একাংশ দখল করে বসে থাকে ... তার ঘরের বেড, কোলকাস্ট, টেবিল আর পি সি ছাড়া এমন একটা জিনিস ও নেই যা ঠিক জায়গা তে থাকে না ... এ জন্য সপ্তাহে এক-দু দিন এসে সে নিজ হাতে ঘরের সব কিছু ঠিকঠাক করতে করতে বলতো -- ঘরে তো মনে হয় ঘুর্নিঝড় এসেছিল না হলে দুই দিনেই এমন ওলট-পালট হলো কিভাবে ....

এভাবেই চলছিল ওদের জীবন এর মাঝে চলে এল অমিতের ফাইনাল টার্মের পরীক্ষা ... নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে সে পরিক্ষার প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত ... রাত্রীও তার নজরদারী বাড়িয়ে দিলে অনেক বেশী... কিন্তু এর মাঝে বাধ সাধলো কিছু উটকো ঝামেলা ...

অমিতের বাবার ব্যাবসায়ীক প্রতিদন্ধীর কিছু আন্ডারগ্রাউন্ড কাজের তথ্য প্রকাশ হয়ে পড়াতে তার ব্যাবসাতে বেশ ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়, এর সাথেই তার বখাটে ছেলের জিদ তাদের পাড়ার ওসমান সাহেবের মেয়ে কে তার যে কোন মুল্যে চাই ... খোজ নিয়ে জানা গেল এই ওসমান সাহেবের মেয়ের নাম রাত্রী যে কিনা অমিতের খুব কাছের বন্ধু আর অমিত হলো সেই মানুষটার একমাত্র ছেলে যাকে উনি চির শত্রু বলে মনে করেন .... তাই আর সময় ক্ষেপন না করে ওসমান সাহেবকে তিনি চাপ দিতে লাগলেন তার মেয়ে কে ছেলের বৌ বানাবেন বলে .... এ দিকে ওসমান সাহেব আগে থেকেই অমিতকে চিনতেন এবং পছন্দ করতেন ... কিন্তু এমন অবস্হায় কি করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না ... আবার রাত্রীও সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছে সে অমিতকে ই বিয়ে করবে ঐ বখাটে ছেলে কে নয় .... ওসমান সাহেব বললেন ঠিক আছে অমিত ভাল রেজাল্ট করলে ওর সাথেই তোমার বিয়ে দেয়া হবে আর কারো কথা আমি শুনবো না, কারো হুমকীতে ভয় পাব না তবে ও যদি রেজাল্ট ভাল না করে তাহলে কিন্তু.......... ... ওদিকে অমিতের বাবাকেও কে বা কারা ফোনে হুমকী দিতে থাকলো অমিত যদি এবার পরিক্ষা দেয় তবে তার একমাত্র ছেলেকে ********* ..........

এতসবের মধ্যেও অমিত ঠান্ডা মাথায়, খুবই ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর যথাসম্ভব সঠিক দেয়ার চেষ্টা করলো শুধুমাত্র রাত্রীর জন্য ... পরিক্ষা শেষে ফলাফল প্রকাশের আগে পর্যন্ত দুজনের বাসা থেকেই দু জনকে বলা হলো আপাতত বাইরে ঘোরাঘুরি না করার জন্য ... তার পরেও ওরা চুপি চুপি দেখা করতো বাইরে ... এর পরে একদিন বিকেলে ----

সংবাদ এলো পরীক্ষার ফল প্রকাশ পেয়েছে ... অমিতের ঘরে ইন্টারনেটে বসে ওরা দুজনে দেখছিলো ফলাফলের তালিকা ... কিন্তু কৈ ...অমিতের রোল নং কোথাও দেখা যাচ্ছে না কেন ? রাত্রী আর অমিত দুজনেই আতি-পাতি করে ঘন্টা খানেক ধরে খুজলো এক পাতা ফলাফলের রেজাল্টের পাতায় অমিতের রোল নং টা কিন্তু তাও পেল না ...

হঠাৎ অমিত শুনতে পেল তার পাশে কি যেন একটা ধপ করে মেঝের উপর পড়ে গেল .... ঘাড় ফিরিয়ে দেখলো রাত্রী অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে ফ্লোরে মাথা ফেটে রক্ত গড়িয়ে লাল করে দিচ্ছে তার ফ্লোরে থাকা বই খাতাগুলো কে... সাথে সাথে বিদ্যুৎ চমকানোর মতো কিছু উল্টাপাল্টা চিন্তা তাকে গ্রাস করতেই মাথার ভিতর পাগলা ঘন্টা বাজতে থাকলো ....ঢং ! ঢং ! ঢং ! .....

উফফফ !!! আর কিছু সে মনে করতে পারছে না ... মাথাটা ছিড়ে যাচ্ছে অসম্ভব ব্যাথায় .....





পুনশ্চ : পরদিন সকালে মানসিক হাসপাতালে না থাকলে অমিত দেখতে পেত মাথায় ব্যান্ডেজ বেধে অশ্রুসিক্ত নয়নে রাত্রী ইন্টারনেটে সেই একই ওয়েব সাইট খুলে পড়ছে --- কম্পিউটার কম্পোজে ভুলের কারনে গতকাল প্রকাশিত ফলাফলে কয়েকটি রোল নং বাদ পড়ায় আমরা অত্যন্ত দুঃখিত। সংশোধীত ফলাফল নিন্মে দেয়া হলো --- এবং যার মাঝে প্রথম সারিতে সে বড় বড় অক্ষরে অমিতের রোল নং দেখা যাচ্ছিলো।



.

Thursday, February 5, 2009

ইচ্ছে পূরনের স্বপ্ন যাত্রা (Bangla Blog)

ইচ্ছে পূরনের স্বপ্ন যাত্রা

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৫:৫৫







সবাই বলে জন্মের সময় তার মা মারা গিয়েছিল, আর তার আগেই নাকি কোন এক এ্যাক্সিডেন্টে তার বাবা ... এর পর রিক্সাওয়ালা চাচাই তাকে কুড়িয়ে এনেছিল তার ছোট্ট কুড়ে ঘরে... নিজের ঘর সংসার না থাকায় এ ছেলেটিই হয়ে ওঠে তার সব কিছু ... নিজের ছেলের মতো আদরে তাকে বড় করে তুলতে দিনের পর দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করতে গিয়ে নিজেই অসুস্হ হয়ে পড়ে ছিলেন কয়েক দিন ... এর পরে হঠাৎ একদিন কাউকে কিছু না জানিয়ে চলে গেলেন অন্য পারে .... তখন তার বয়স আর কত হবে, চার কি পাঁচ ... তখন থেকেই পাশের ছোট্ট হোটেলের মালিক তাকে ছোট খাট কাজের জন্য নিজের কাছে রেখে দেয় ... সারাদিন তার সব কথা কাটায় কাটায় ঠিক রেখে করলেও যেন কোনভাবেই যেন তাকে সন্তুষ্ট করতে পারে না অথচ সে সারাদিনের কাজের বিনিময়ে শুধু তিন বেলা খাওয়া ছাড়া একটা পয়সাও পায় না ... এ নিয়ে তার মাঝে মাঝে দুঃখ হলেও মুখ ফুটে কখনো কিছু বলতে পারে না ...

হোটেলে প্রতিদিন কত মানুষ আসে, কত রকম খাবারের অর্ডার দেয় তারা, তাদের ছোট ছোট জিনিস এগিয়ে দিতে দিতে কোন সময় যে সবার কাছে তার আসল নামের পরিবর্তে পিচ্চি নামে পরচিত হয়ে গিয়েছিল, সে নিজেও জানে না ... আজকাল নিজের নাম কারো মুখে না শুনতে শুনতে পিচ্চি ছাড়া নিজের আর যে কোন নাম কখনো ছিল তাই সে ভুলে গিয়েছে ....

হোটেলে টাইম অনুযায়ী কিছু বাধা কাস্টমার আছে ... যেমন বেশী সকালে যারা আসে তারা নাস্তা করেই হুড়মুড় করে চলে যায় বেশিক্ষন থাকে না ... মাঝের সময়ে যারা আসে তারা একটু আরাম আয়েশ করেই নাস্তা খায় ... দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত একই ভাবে কিছু মানুষ আসে ... ঠিক একটা থেকে দুইটার মধ্যে যারা আসে তারা জলদি খেয়ে দৌড় দেয় আর অন্যরা খেতে বসলে এমনভাবে চিবিয়ে চিবিয়ে আয়েশ করে খায় যেন শুধু খাওয়া না হজম পর্যন্ত করে তার পরে এখান থেকে বেরুবে ... বিকালের মামু রা পিচ্চির সবচেয়ে ফেভারেট কাস্টমার ... ওরা কি সব পলিটিস পলিটিস কথা বলে ... পলিটিস কি জিনিস পিচ্চি এখনো সেটা না বুঝলেও এতটুকু বোঝে যে ঐটা একটা বড় - সড় কোন কাজ ... যেখানে অনেক টাকা পাওয়া যায়, যারা ঐ কাজ করে অনেক মানুষ তাদের কে ভয় পায় কারন তারা অনেক শক্তিশালী হয় ... এই যে মামু গুলো এখানে আসে এদেরকে তো পিচ্চির বস পর্যন্ত সমীহ করে চলে ... একসাথে অনেক মামু আসলে অনেকে তাদের জন্য জায়গা ছেড়ে দেয় ... মাঝে মাঝে কিছু দুষ্টু মামু খাওয়ার দাওয়া করে এমনি এমনি চলে গেলেও হোটেলের কেউ কিছু বলে না ... অথচ অন্য কোন কাস্টমার এমন করলে কয়েকবার তাদেরকে তো পিটুনি পর্যন্ত খেতে দেখেছে .... আজকাল পিচ্চির মনে একটা স্বপ্ন মাঝে মাঝে উকি দেয় ... সে ঐ মামুদের মতো পলিটিস করবে ... অনেক টাকা বানাবে, এর পরে এই রকম একটা হোটেলের মালিক হবে ....

কথায় কথায় একদিন এক মামু কে সে বলে ফেলেছিল কথাটা ... মামুটা অন্য সব মামু থেকে বেশি ভাল ... কখনো কাউকে বকা দেয়নি ... রাগ করে কখনো চোখ রাঙ্গায়নি ... প্রতিবার বিল দেয়ার সময় বেশী টাকা দেয় আর যে জিনিসটা পিচ্চির সবচেয়ে বেশী ভাল লাগে তা হলো প্রতিবার উনি আসলেই তাকে দুই - পাচ টাকা টিপস দিয়ে যায় ... এছাড়া উনাকে ভাল লাগার অন্য একটা কারন ও আছে ... একদিন এই মামু বিরানী খাচ্ছিলো আর পিচ্চি সেটা দুর থেকে দেখছিল ... মনে মনে তারও খুব বিরানী খেতে ইচ্ছা হয়েছিল ... মামুটা কিভাবে যেন যেনে গিয়েছিল তার মনের কথা ... যাওয়ার সময় কিছু টাকা বেশী দিয়ে ওর বসকে বলেছিল পিচ্চিকে এখনই যেন পেট ভর্তি করে বিরানী খাওয়ানো হয় ... এর পরে ওর বস কেমন ভালো-মানুষের মতো ওকে পেট ভর্তি করে টাটকা বিরানী খাইয়েছিল ... মনে পড়তেই একটা অন্যরকম আনন্দের অনুভুতি মনের ভিতর দোলা দিয়ে যায় ... সেই মামু কে একদিন সাহস করে বলে ফেলেছিল তার স্বপ্নের কথা , তখন মামু মুচকি হেসে বলেছিল -- ঠিকাছে ... তোকে একদিন আমাদের সাথে নিয়ে যাব পলিটিক্স করতে ... আনন্দে তার চোখে সেদিন পানি এসে গিয়েছিল ... তাই দেখে মামু তাকে আরো কাছে টেনে নিয়ে নতুন একটা বিশ টাকার নোট দিয়ে বলেছিল ... নে, এইটা তোর পলিটিক্সে প্রথম ইনকাম ! ... সেই দিন থেকে পিচ্চি অপেক্ষা করে চলছে, কবে মামু তাকে নিয়ে যাবে তাদের সাথে পলিটিস করতে ....

অপেক্ষার পালা শেষ করে একদিন সত্যই এলো সেই ক্ষন ... রান্না ঘরে সেদিন অনেক প্লেট জমে ছিল, তাই বুয়ার সাথে মিলে সে ওগুলো পরিষ্কার করছিল ... সেটা শেষ করে বাইরে আসতেই ওর বস বললো - এক মামু এসে নাকি বলে গেছে ঐ ভালো মামু টা পিচ্চিকে জলদি রাস্তার মোড়ে উনার অফিসের সামনে যেতে বলেছে ... শুনতে দেরী কিন্তু দৌড়াতে দেরি নাই ... এমন ভাবেই এক দৌড়ে সে মামুর অফিসের সামনে গিয়ে দেখে সেখানে অনেক মানুষ জমা হয়েছে ... আরো মানুষ দলে দলে আসছে ... ভিতরে দরজা বন্ধ করে মামু রা কি জানি কথা বলছে ... আর বাইরের সবাই এক অন্যরকম উত্তেজনায় ছটফট করছে ... এদের মাঝে থাকতে থাকতে পিচ্চির এক অন্যরকম উত্তেজনায় রক্ত টগবগ করা শুরু করলো ...

একটু পরে কয়েকজন মামু ভিতরের দরজা খুলে বের হয়ে আসলেন, এসে বললেন আজকে মিছিল হবে ... কোন কোন দিক দিয়ে ঘুরবে, তাতে কি কি শ্লোগান দেয়া হবে ... অল্প কিছু মামু কে বলা হলো কে কে কোন দিকে থাকবে ... এক সময় সেই ভালো মামু পিচ্চিকে ডাকলেন ... বললেন ... আজকে তুই সবার সামনে থাকবি ... পারবি না ? ... এক লাফে রাজি হয়ে উঠে পিচ্চি বললো -- আপনি বললে জান দিতেও রাজি মামু :)

একটু পরেই মিছইল শুরু হলো ... উফ ! সেকি শ্লোগানের গর্জন ... এ গর্জন শুনে পিচ্চির পায়ের রক্ত যেন মাথায় উঠে যাচ্ছিলো ... হাত পা ছুড়ে শ্লোগান দিতে দিতে মিছিলকে সে যেন একলাই টেনে নিয়ে যাচ্ছিলো ... আর যাবেই না কেন ... এ যে তার ইচ্ছে পূরনের স্বপ্ন যাত্রার শুরু .....

হঠাৎ সামনের এক চিপা গলি থেকে কয়েকজনকে দৌড়ে আসতে দেখা গেল ....

এর পর পরই শোনা গেল একসাথে কয়েকটি অদ্ভুত শব্দের ঝনঝনানি ..... ঠাস, ঠাস, ট্যাররর.... ঠাস ......