Monday, February 9, 2009

জীবনে লেখা একমাত্র প্রেমপত্র ... অতঃপর

জীবনে লেখা একমাত্র প্রেমপত্র ... অতঃপর

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১২:৫০












সামনেই ভ্যালেন্টাইনস ডে বলেই হয়তো চারিদিকে খালি প্রেমের আভাস, সুবাস যাই বলেন তাই পাচ্ছি ... এ কারনেই হয়তো সবার সামনেই একজনের সাথে লোটোপুটি হুটোহুটি করতে দেখেও তারই পুর্বপরিচিত আরেকজন আজকে আমারে প্রপোজ করে বসেছে ... আমি তো বলি লে - হালুয়া, কাহিনী কোন দিক দিয়ে প্যাচ খেলো নিজেই তো বুঝলাম না , যাই হোক ... ঘটনার ঘনঘটায় মনে পড়ে গেল জীবনের প্রথম প্রেমপত্র লেখার অভিজ্ঞতা :| (কাকতালীয়ভাবে সেটিও ছিল ফেব্রুয়ারীর ঘটনা) ........ ঘটনা সংক্ষেপে এইরকম ---

কলেজের কেবল ভর্তি হয়েছি ... বলতে গেলে পুরাই পাংখা অবস্হা ... সকালে ঘর থেকে বের হয়ে কলেজ, সেখান থেকে স্যারের বাসা, সেখান থেকে সংসদ ভবনে আড্ডা, অথবা খেলা করা এসব করে আনন্দে দিন পার করে দিয়ে রাতে বাসায় ফেরা ছিল দৈনন্দিন রুটিন ... সকালের কলেজে আমরা ৩ জন বন্ধু সবসময় একসাথে যেতাম ... সবাই আমরা স্কুল + এলাকার ফ্রেন্ড ছিলাম, একদিন এদের মাঝে একজন বললো দোস্ত আজকে রাতে তুই আমার বাসায় থাকিস একটু দরকার আছে ... জিজ্ঞেস করলাম ক্যান ? .... সে বললো --- আসিস এর পরে বলবো .... বাসায় বলে ওদের বাসায় বিকালেই পৌছে গেলাম, ইচ্ছে ছিল ওর কোন কাজ থাকলে জলদি শেষ করে রাতে বাসায় ফিরে আসবো (আমার আব্বু আম্মুর কথা ছিল,বাইরে যত রাতই কর না কেন, বাসায় ফিরবা) ... কিন্তু ওর বাসায় গিয়ে দেখি কাহিনী অন্য রকম .... বুঝলাম আজকে রাতে ফেরা হচ্ছে না ....

কাহিনী হলো খুবই সাধারন - ওর ছোট বোনের বান্ধবী থাকে পাশের বাসায় (নতুন এসেছিল), দু জনই পাশাপাশি বিল্ডিং এর চার তলায় ...তাকে তার অনেক পছন্দ হয়েছে ... এবার সে তাকে প্রোপোজ করতে চায় ... কিন্তু কিভাবে করবে বুঝতে পারছে না ... এ বিষয়ে সে নাকি আমার সাহাজ্য চায় ... আমি বলি, আরে বাবা আমি নিজে এ জিনিস থেকে ১০০ হাত দুরে থাকি আর আমি এসব কখনো করিওনি আমি তোকে কি পরামর্শ দিবো ? ... আর এ বিষয়ে আমাদের অন্য বন্ধুটা অনেক বেশী এ্যাডভান্স তাকে জিজ্ঞেস করিসনা ক্যান ? ... কিন্তু তার একই কথা ... তুই বল ... কি করা যায় .... এটা আর কাউকে বলা যাবে না ... আমি বললাম আচ্ছা দেখি চিন্তা করে কিছু করা যায় কিনা ...

ওদের বাসায় অবাধ যাতায়াতের কারনে আংকেল আন্টি ওর ভাই বোন সবাই আমাকে একরকম ফ্যামিলি মেম্বারের মতই দেখতো .... সেদিন বিকালে আমি আর আমার বন্ধু আর ওর ভাই বোন সবাই একসাথে ওদের ছাদে বসে আড্ডা দিচ্ছি এমন সময় দেখি ঐ মেয়ে তার ছোট বোন কে নিয়ে এসে হাজির ... বেশ জম্পেশ আড্ডা দেয়া হলো সেদিন , পাশাপাশি তার সাথে পরিচয় আর তার কিছু ভাল লাগা জিনিসের কথাও জেনে নিলাম কথায় কথায় ... সন্ধ্যা হতেই সে চলে গেল তার বাসায় আমরাও ঘরে আসলাম

(কাহিনী বলার সুবিধার্থে আমার বন্ধুর কাল্পনিক নাম দেয়া হলো অমিত আর তার পছন্দের মানুষটির নাম দিলাম পরী)

একটু রাত হতেই অমিত আমাকে বারান্দায় ডেকে নিয়ে বললো এদিকে আয়, অন্ধকার বলে লাইট জ্বালাতে বলতেই ও বললো নাহ ... চুপ চাপ দেখ - দেখলাম পরী ওদের বারান্দায় লাইট জ্বালিয়ে বসে পড়ছে ... মাঝে মাঝে এদিকে তাকাচ্ছে ... আমি বলি দোস্ত সেও মনে হয় তোরে ভাল পায় ... শুনে অমিতের গেল মাথা খারাপ হয়ে বললো আমি আর কিছু জানি না তোর সাথে তো আজকে ওর কথা হইছে তুই আমার হয়ে ওকে বল না প্লিজ ... আমি মনে মনে বলি -- ভাল বিপদে পড়া গেল দেখি ... বললাম দোস্ত ঐটা বাদে অন্য কিছু বল, সেইটা করে দেই ... সে অনেক চিন্তা করে বললো -- তাইলে একটা চিঠি লিখে দে ... আমি বলি -- তুই কি লেখা ভুলে গেছিস নাকি যে তোর কথা আমাকে লিখতে হবে ? ... তবুও সে জোরা জুরি শুরু করে দিলো , তার নাকি নার্ভাস লাগছে ... বললাম আমি তো জীবনে কখনো লিখিনি ... তারপরও অনুরোধে ঢেকি গেলার অবস্হায় কোন রকমে একটা চিঠি লিখে দিলাম তাতে যে জিনিস ছিল তা হলো -- অমিত ওকে প্রথম কোথায় কখন দেখেছিল, তাকে কি কারনে পছন্দ করে, সেদিন বিকালে জেনে নেয়া তার পছন্দের জিনিসগুলো দিয়ে সাজানো কিছু হাবিজাবি কথাবার্তা, আর কিছু পাম পট্টি ... সেদিন বিকেলে একটি জিনিস জানতে পেরেছিলাম পরীর অন্যতম দুর্বল সাবজেক্ট ছিল ইংরেজী ... তাই চিঠিটা কি মনে করে ইচ্ছা করেই ইংরেজীতে লিখেছিলাম ... আর অমিতকে বলেছিলাম একটা গিফট কিনে সেটার সাথে চিঠিটা দিতে।

এর কয়েকদিন পরে ....

কলেজে অমিতকে জিজ্ঞেস করলাম, কিরে চিঠি পেয়ে পরী কি বললো ? ও আমাকে বললো -- সে নাকি গিফট সিলেক্ট করতে পারেনি এখনো এ জন্য নাকি চিঠি ও দেয়নি ... আমি বললাম -- আয় আমার সাথে ... শাহবাগের মালঞ্চ থেকে তাকে কয়েকটা রজনীগন্ধার কিনে ওর হাতে দিয়ে বললাম -- এক্ষুনি যা, ওরে গিয়ে এগুলো আর চিঠিটা নিজে হাতে দে ...

এর পরের কাহিনী হয়েছে এরকম ---

অমিত চিঠি আর ফুল পরীর হাতে দেয়ার পর সে সুন্দর করে বলেছিল থ্যাংকু ... ফুলগুলোও খুব সুন্দর ... চিঠিটা হাতে নিয়ে ওর সামনে খুলে পড়েছিল ... এরপরে হঠাৎ নাকি জিজ্ঞেস করেছিল -- এটা আপনি লিখেছেন ? ... অমিত ছিল এমনিতে নার্ভাস এর উপরে হঠাৎ এ প্রশ্নে থতমত খেয়ে বলে ফেলেছে -- আমি না অনন্ত লিখেছে ... এর পরে নাকি পরী জিজ্ঞেস করেছে -- ফুলগুলো কে সিলেক্ট করেছে অনন্ত ভাইয়া ? ...। কিংকর্তব্যবিমুড় অমিত যন্ত্র মানবের মতো বলে বসলো -- হ্যা ...

অতঃপর ... অমিতকে নিয়ে সোজা পরী চলে এলো আমাদের কলেজে খুজে খুজে আমাকে আবিষ্কার করলো কলেজের ছাদে "ধোয়া উৎসবের" মাঝে ... এসে সোজা সুজি বলে বসলো -- অনন্ত ভাইয়া, উইল ইউ বি মাই ভ্যালেন্টাইন ? :|

No comments: