Friday, February 6, 2009

পাগলা ঘন্টা.. ঢং ! ঢং ! (Bangla Blog)


পাগলা ঘন্টা.. ঢং ! ঢং !

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৫:২৮







ঘুম ঘুম চোখে তাকাতেই নিজেকে হাত পায়ে শিকল-বেড়ী পরা অবস্হায় দেখে অবাক হতেই হলো সময়ের স্বনামধন্য ব্যাবসায়ীর একমাত্র ছেলে মেধাবী স্টুডেন্ট অমিতকে ... কিন্তু তাকে এভাবে লম্বা শিকল-বেড়ী দিয়ে কেন বেধে রাখা হয়েছে, কিছুতেই মনে আসছে না কেন তার ? .... চারপাশে গভীর পর্যবেক্ষনের দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখলো কয়েকবার ... কিন্তু, নাহ ! ... এ জায়গা তো তার পরিচিত না ... এখানে সে আগে কখনো এসেছে বলে তো মনেও পড়ে না ... প্রায় অন্ধকার , স্যাতসেতে, ঠান্ডা একটি ঘর যেখানের একটি ছাড়া বাকি সব জানালা বন্ধ , একটি দরজা আছে কিন্তু সেটিও বন্ধ করা ... ঘরে আসবাব - পত্র বলতে তেমন কিছু নেই ... লোহার একটি বেড, টেবিল চেয়ার , দেয়ালে কেমন যেন কালচে রং এ বেশ কিছু আকিবুকি আছে তবে সেগুলো কি দিয়ে লেখা হয়েছিল তা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না ... মাথার উপরে একটি লাইট আছে , তবে সেটা এখন জ্বলছে না ... এ সব দেখতে দেখতে অমিতের চোখ চলে গেল জানালার বাইরে যেখান থেকে শুধুমাত্র দুর-দিগন্তের মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না ... মেঘের খেলা দেখতে দেখতে পুরোনো কিছু স্মৃতি মনে করতে চাইলো অমিত ...

প্রতিদিন অনেক রাত পর্যন্ত পড়ালেখা করার পরে সকালের ক্লাসে উপস্হিত থাকাটা কষ্টকর হলেও সেটার দায়িত্ব নিয়েছিল রাত্রী, কারন প্রতিদিন সে চোখ খুলতো রাত্রীর শুভসকাল শোনার মধ্যে দিয়ে ... এর পরে রেডি হয়ে নিজের রুম থেকে বের না হওয়া পর্যন্ত ফোনেই অপেক্ষা করতো মেয়েটা ... এর মাঝে একটা কথা মনে পড়তেই অজান্তেই হেসে উঠলো অমিত ... একবার রাত্রী ওকে ডেকে তুলে বলেছিল আমি একটু ব্যস্ত আছি তুমি বের হয়ে যেও সময় মতো ... এর পরে ফোনটা কেটে যেতেই ধপাস ! ... অমিতের আর খবর ছিল না ... চোখ খুলে দেখে দুপুর হয়ে গিয়েছিলো ... এটা জানার পর থেকে রাত্রী কখনো ওকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে ঘর থেকে বের না করে ফোন রাখে না .... শুধু তাই না ... নিজের প্রতিদিনের কর্মকান্ডের হিসাব তাকে রাতের বেলা দেয়া লাগতো রাত্রীকে ... ওর কারনেই তো সে রাজনীতি করতে পারে না, সিগারেট খেতে পারে না, বেশী রাত পর্যন্ত কোনখানে আড্ডা দিতে পারে না, খারাপ কোন ছেলেকে বন্ধু হিসেবে রাখতেও পারে না ... তার যেন একমাত্র কাজ - পড়ালেখা করে একটা খুব ভাল রেজাল্ট করতে হবে ... কেন সে এমন করে অমিতের খেয়াল রাখে, কেন সে এমন করে ওর প্রতিটি জিনিস কে নিয়ন্ত্রন করে, কেন তাকে এত ভাল রেজাল্ট করানোর চেষ্টা করছে সে ... জিজ্ঞেস করলে সে শুধু একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে আর কিছু বলতো না ... আর ঐ হাসি টা অমিতের খুব প্রিয় কয়েকটা জিনিসের মধ্যে অন্যতম ....

ঘরের মধ্যে ঘুর্নিঝড় বইয়ে দেয়াও অমিতের অন্যতম বদ-অভ্যাস ছিল ... এটাও রাত্রীর দেয়া শব্দ ... তার বই খাতা নোট সব টেবিল, ফ্লোর আর বিছানায় গড়াগড়ি করে, কাপর-চোপড় সব চেয়ার, সোফা, আর খাটের একাংশ দখল করে বসে থাকে ... তার ঘরের বেড, কোলকাস্ট, টেবিল আর পি সি ছাড়া এমন একটা জিনিস ও নেই যা ঠিক জায়গা তে থাকে না ... এ জন্য সপ্তাহে এক-দু দিন এসে সে নিজ হাতে ঘরের সব কিছু ঠিকঠাক করতে করতে বলতো -- ঘরে তো মনে হয় ঘুর্নিঝড় এসেছিল না হলে দুই দিনেই এমন ওলট-পালট হলো কিভাবে ....

এভাবেই চলছিল ওদের জীবন এর মাঝে চলে এল অমিতের ফাইনাল টার্মের পরীক্ষা ... নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে সে পরিক্ষার প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত ... রাত্রীও তার নজরদারী বাড়িয়ে দিলে অনেক বেশী... কিন্তু এর মাঝে বাধ সাধলো কিছু উটকো ঝামেলা ...

অমিতের বাবার ব্যাবসায়ীক প্রতিদন্ধীর কিছু আন্ডারগ্রাউন্ড কাজের তথ্য প্রকাশ হয়ে পড়াতে তার ব্যাবসাতে বেশ ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়, এর সাথেই তার বখাটে ছেলের জিদ তাদের পাড়ার ওসমান সাহেবের মেয়ে কে তার যে কোন মুল্যে চাই ... খোজ নিয়ে জানা গেল এই ওসমান সাহেবের মেয়ের নাম রাত্রী যে কিনা অমিতের খুব কাছের বন্ধু আর অমিত হলো সেই মানুষটার একমাত্র ছেলে যাকে উনি চির শত্রু বলে মনে করেন .... তাই আর সময় ক্ষেপন না করে ওসমান সাহেবকে তিনি চাপ দিতে লাগলেন তার মেয়ে কে ছেলের বৌ বানাবেন বলে .... এ দিকে ওসমান সাহেব আগে থেকেই অমিতকে চিনতেন এবং পছন্দ করতেন ... কিন্তু এমন অবস্হায় কি করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না ... আবার রাত্রীও সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছে সে অমিতকে ই বিয়ে করবে ঐ বখাটে ছেলে কে নয় .... ওসমান সাহেব বললেন ঠিক আছে অমিত ভাল রেজাল্ট করলে ওর সাথেই তোমার বিয়ে দেয়া হবে আর কারো কথা আমি শুনবো না, কারো হুমকীতে ভয় পাব না তবে ও যদি রেজাল্ট ভাল না করে তাহলে কিন্তু.......... ... ওদিকে অমিতের বাবাকেও কে বা কারা ফোনে হুমকী দিতে থাকলো অমিত যদি এবার পরিক্ষা দেয় তবে তার একমাত্র ছেলেকে ********* ..........

এতসবের মধ্যেও অমিত ঠান্ডা মাথায়, খুবই ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর যথাসম্ভব সঠিক দেয়ার চেষ্টা করলো শুধুমাত্র রাত্রীর জন্য ... পরিক্ষা শেষে ফলাফল প্রকাশের আগে পর্যন্ত দুজনের বাসা থেকেই দু জনকে বলা হলো আপাতত বাইরে ঘোরাঘুরি না করার জন্য ... তার পরেও ওরা চুপি চুপি দেখা করতো বাইরে ... এর পরে একদিন বিকেলে ----

সংবাদ এলো পরীক্ষার ফল প্রকাশ পেয়েছে ... অমিতের ঘরে ইন্টারনেটে বসে ওরা দুজনে দেখছিলো ফলাফলের তালিকা ... কিন্তু কৈ ...অমিতের রোল নং কোথাও দেখা যাচ্ছে না কেন ? রাত্রী আর অমিত দুজনেই আতি-পাতি করে ঘন্টা খানেক ধরে খুজলো এক পাতা ফলাফলের রেজাল্টের পাতায় অমিতের রোল নং টা কিন্তু তাও পেল না ...

হঠাৎ অমিত শুনতে পেল তার পাশে কি যেন একটা ধপ করে মেঝের উপর পড়ে গেল .... ঘাড় ফিরিয়ে দেখলো রাত্রী অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে ফ্লোরে মাথা ফেটে রক্ত গড়িয়ে লাল করে দিচ্ছে তার ফ্লোরে থাকা বই খাতাগুলো কে... সাথে সাথে বিদ্যুৎ চমকানোর মতো কিছু উল্টাপাল্টা চিন্তা তাকে গ্রাস করতেই মাথার ভিতর পাগলা ঘন্টা বাজতে থাকলো ....ঢং ! ঢং ! ঢং ! .....

উফফফ !!! আর কিছু সে মনে করতে পারছে না ... মাথাটা ছিড়ে যাচ্ছে অসম্ভব ব্যাথায় .....





পুনশ্চ : পরদিন সকালে মানসিক হাসপাতালে না থাকলে অমিত দেখতে পেত মাথায় ব্যান্ডেজ বেধে অশ্রুসিক্ত নয়নে রাত্রী ইন্টারনেটে সেই একই ওয়েব সাইট খুলে পড়ছে --- কম্পিউটার কম্পোজে ভুলের কারনে গতকাল প্রকাশিত ফলাফলে কয়েকটি রোল নং বাদ পড়ায় আমরা অত্যন্ত দুঃখিত। সংশোধীত ফলাফল নিন্মে দেয়া হলো --- এবং যার মাঝে প্রথম সারিতে সে বড় বড় অক্ষরে অমিতের রোল নং দেখা যাচ্ছিলো।



.

No comments: