Tuesday, September 1, 2009

বোকা মানুষের একটি ছোট্ট বোকা ইচ্ছে

বোকা মানুষের

একটি ছোট্ট বোকা ইচ্ছে


০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:২২




কাক ডাকা ভোরে আর কাউকে না হোক বাবা ওকে ঘুম থেকে ডেকে তুলবেই তা সে যত রাতেই ঘুমাক না কেন , সকালের নাশ্তার জন্য কিছু দরকার হলে তা দোকান থেকে ওকেই আনতে হবে, ঘরের টুকিটাকি কাজ গুলো যেন ওর অপেক্ষাতেই থাকে কখন সে ওগুলোতে হাত লাগাবে আর ঠিকঠাক করবে ... নাহ কাজগুলো যে সে অনিচ্ছায় করে তা নয় বরং ইচ্ছা অনিচ্ছা দুটো মিলিয়েই সে কাজগুলো করে থাকে। ইচ্ছা অনিচ্ছা কথা দুটোর মাঝে বিস্তর পার্থক্য থাকলেও তার কাছে এর আসলে কোন মুল্য নেই, কারন ও জানে কাজগুলো ওকেই করতে হবে তাই ইচ্ছা অনিচ্ছার ধার না ধরেই " আমাকেই করতে হবে তাই করবো" এ কথার উপর ভিত্তি করেই সব কাজ গুলো নিজের হাতেই একের পর এক সমাধা করে চলে ... পড়ালেখায় কখনো যে সে খারাপ ছিল তা নয়, রেজাল্টও কখনো খুব ভালো না করতে পারলেও সন্মানজনক ফলাফল নিয়েই সবসময় ঘরে ফিরেছিল, তবে তার পিঠাপিঠি ভাই বোনেরা যদি এর কাছাকাছি ও রেজাল্ট নিয়ে ঘরে ফিরে তবে তাদেরকে মাথায় তুলে রাখা হয় , ঘরে সেদিন ভাল ভাল রান্না করা হয় কখনো তাদেরকে উৎসাহ দেয়ার জন্য গিফট ও দেয়া হয় আর ওকে বলা হয় পরের বার যেন আরো ভাল রেজাল্ট করে এটা অতোটা ভাল হয়নি ... তার ও ইচ্ছে করে কোন গিফট না হোক মাঝে মাঝে এমন একটু সুন্দর কথা শুনতে একটু আদর পেতে কাজের পরে পড়ার জন্য একটু বেশী সময় পেতে যাতে করে পরীক্ষায় আরেকটু ভাল রেজাল্ট করা যায় ... আর ... উমম ... আরো বিশেষ কিছু পেতে ইচ্ছে করে তবে সেগুলো হয়তো কখনো পাবে না ... বিশেষ কিছুর কথা যখন এসেই গেল তখন ওসব দিকে একটু ফিরে দেখা যাক...

যদিও ওর বিশেষ কিছু গুলো হয়ত সবার জন্য সাধারন কিছু ই হবে তবুও সেগুলো ওর জন্য বিশেষ কিছু হয়েই থেকে যাবে সবসময় ... ঠিক যেমন বাবার হাতটা যদি কখনো ওর মাথায় একবারের জন্যও রাখত তবে হয়তো এর চেয়ে শান্তির আর কিছুই থাকতো না , কোন একটা দিন যদি মায়ের বকুনি বা ভাই বোনদের টিপ্পুনি থেকে রক্ষা পেত তবে হয়ত সেদিনটা ওর জীবনের সবচেয়ে ভাল দিন হয়ে উঠতো ... শুধু কি তাই ... ক্লাসের ছেলে মেয়েগুলো যদি একটা দিন ওকে নিয়ে হাসাহাসি না করতো তবে সে দিনটি হয়ত ওর জন্য পরম শান্তির কারন হতো ... আর যদি মনের কোন উকি দেয়া ভালবাসার মানুষটা তাকে ইচ্ছে করে বোকা না বানিয়ে, তাকে অন্ধকারে না রাখার চেষ্টা করে তার পছন্দের মানুষের সাথেই ঘুরতে যেত তবে হয়ত সেটি হয়ে উঠতো তার জীবনের অন্যতম স্মরনীয় দিন ।

তবুও সে বাসার সবার গালমন্দ শুনে প্রতিউত্তর করে না, সহপাঠীদের টিপ্পুনীকে সিরিয়াসলি না নিয়ে হাসি মুখে ওদের সামনে আরো নিজেকে হাস্যকর জীব হিসেবে পরিগনিত করে, সব কিছু জেনে বুঝেও মনের মানুষটির কাছে ইচ্ছে করেই বোকা সেজে থাকে যাতে ওকে বোকা বানিয়ে সে যে আনন্দ পায় তাতে যেন কখনো কমতি না আসে ... কারন সে জানে এইসব করেই অন্য সব মানুষগুলো শান্তি পায়, নিজেদের মাঝে আনন্দের জোয়ারে ভেসে যায়, আত্মতৃপ্তিতে ভরে ওঠে ওদের মন আর সেই সাথে চরিতার্থ করে নিজেদের কাংক্ষিত সুপ্ত বাসনাগুলো ... আজ তাইতো সে নিজেকে বোকা, তুচ্ছ আর অপদস্ত বানিয়েই অন্য সবার মনে আনন্দের বন্যা বইয়ে দেয়াকেই নিজের পাথেয় করে নিয়েছে ...কারন ও জানে, মানুষের মুখে একটুখানি হাসি ফোটানো পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজগুলোর অন্যতম।



কোকড়াচুলওয়ালী বলে "আমি নাকি মস্ত বোকা"

কোকড়াচুলওয়ালী বলে

"আমি নাকি মস্ত বোকা"

২৫ শে আগস্ট, ২০০৯ বিকাল ৫:৫৩






রাত জেগে হাতের কাজটা শেষ করে ঘুমুতে ঘুমুতে বেশ দেরী হয়ে গিয়েছিল, তাইতো ঘন্টা খানেক পরে উঠে সেহরী করতে করতে মনে হচ্ছিলো আবার আরেক্টু ঘুমিয়ে না নিলে আমার পুরা ব্যান্ড বেজে যাবে আজকে ... যাই হোক ... ফ্রেস হয়ে একটু বিফ আর ভাত ওভেনে গরম করে এর পরে সালাদ বানিয়ে সেহরী করতে বসেছি এমন সময় ফোন ... ক্রিং ক্রিং ... নম্বরটা দেখে নিজের ঠোটের কোনে একটা আনন্দের হাসি ফুটে উঠেছে তা আয়নায় না দেখলেও বেশ বুঝতে পারলাম ... কল রিসিভ করে বললাম

>> হ্যালো
--- হ্যালো , অন্তু ঘুম ভেঙ্গেছে ?
>> ঘুম ভেঙ্গেছে সেই কবে, সব রেডী করে সেহরী খেতে বসলাম, তোমরা কেমন আছ ?
--- আমরা ভাল আছি, আজকে একটা অনেক খুশীর সংবাদ দেয়ার জন্য ফোন দিলাম
>> কি খবর ?
--- শুনে তুমি আনন্দে লাফ দিয়ে উঠবে
>> আরে খবর টা কি , বলবা তো ?
--- তোমার কোকড়াচুলওয়ালী আজকে সেহরী করতে উঠেছে , তুমি কি সেটা জানো ?
>> ওমা , তাই নাকি , সত্যি ? কৈ দেও তো ওর কাছে একটু কথা বলি ...
--- আজ নাকি সে সারাদিন রোজা রাখবে, বিশাল বড় রোজা ...
>> কি ?
--- সেটাই তোমাকে জানাবে বলেই তো আমাকে ফোন করতে বললো , নাও কথা বলো

এবার কোকড়া চুলওয়ালী ফোন নিয়ে বলে ....

>>> তুমি জানো আজকে আমি এক্টা মস্ত বড় রোজা রাখবো ... সারা দিনের জন্য
--- তাই নাকি, খুব ভাল ... সেহরী কি দিয়ে করছো তুমি ?
>>> আম্মু আমাকে চিনি আর কলা দিয়ে দুধ ভাত মাখায় দিসে, আর পরে চকলেট দিবে বলসে ...
--- তাই, অনেক মজার সেহরী তো ....
>>> তুমি কি দিয়ে সেহরি করো ?
--- আমি ভাত আর গরুর মাংস দিয়ে করছি .... সারা দিন রোজা রাখতে কষ্ট হবে না ?
>>> না হবে না
--- যদি চিনি দুদুর ক্ষিদা লাগে ?
>>> আজকে খাব না , ইফতারীর সময় খাব, আম্মু তাই বলসে
--- আর যদি পিপাসা লাগে ?
>>> রোজা রাখলে সেটাও খাওয়া যায় না , জানো না তুমি ?
--- আমি তো ভাবসিলাম চোখ বন্ধ করে কেউ যদি চিনি দুদু আর পানি খায় তো কেউ দেখতে পাবে না আর রোজাও ভাংবে না ... ট্রাই করে দেখবা নাকি ?
>>> হি হি হি হি
--- কি হলো হাসছ কেন
>>> তুমি আসলেই কিচ্ছু জানো না, তোমার তো এক্টাও রোজা হয়নি
--- (আমি অবাক হয়ে বললাম) কেন কেন ?
>>> আম্মু বলসে আমাকে, এভাবে রোজা হয় না, আমি জানি বুঝছ ?
--- আচ্ছা দুপুরে একবার ইফাতারী আর সন্ধ্যায় আরেকবার ইফতারী করে নিও , তাহলে একদিনে দুটো রোজা হয়ে যাবে আচ্ছা ?

এবার সত্যি সত্যি হাসতে হাসতে কুটি পুটি হয়ে জানের টুকরা টা বললো ...

>>> তুমি আসলেই একটা মস্ত বোকা, তুমি কি এভাবে ৩০ দিনে ৬০ টা রোজা রাখ ?

অতঃপর এর জবাব খুজতে খুজতে ফজরের নামাজের সময় হয়ে যাওয়ায় আপাতত এই যাত্রায় রক্ষা পেলাম :|



এক দুরন্ত প্রজাপতির ডাইরীতে একটি গোলাপের ভালবাসা

এক দুরন্ত প্রজাপতির ডাইরীতে

একটি গোলাপের ভালবাসা


২১ শে আগস্ট, ২০০৯ ভোর ৫:৪২





সাত সকালে ঘুমের ১২ টা বাজিয়ে শুরু হলো ....ক্রিং ক্রিং ক্রিং ....

--- হ্যালো
>> কিরে কৈ তুই , কি করিস ?
--- বাসায়... ঘুমাই, ক্যান ?
>> আধ ঘন্টার মধ্যে আয় তো আমার বাসায় ... কাজ আছে
--- কি যন্ত্রনা, এখনো ঘুম ঠিক মতো ভাঙ্গলো না আধাঘন্টার মধ্যে আসব কিভাবে ?
>> আমারে তুই যন্ত্রনা বললি ?
--- না মানে , ঠিক তা না ...
>> তাইলে কি ? যন্ত্রনার দেখেছিস কি তুই, আয় একবার আমার সামনে এর পরে দেখিস
--- কি করতে চাস বলতো ?
>> এক ঘন্টা দিলাম, এর ভিতরে হাজির হবি , কথা ফাইনাল ....

অতঃপর লাইনটা কেটে গেল ... বুঝলাম ঘন্টা খানিকের মধ্যে পৌছুতে না পারলে খবর আছে , বান্দরনীটা কিছু একটা করেছে নিশ্চই .... ঝটপট ফ্রেস হয়ে, নাকে মুখে নাশতা গুজে দিলাম দৌড় ... ওর বাসায় পৌছে ডিং ডং দিতে দিতে ১০ - ১২ মিনিট লেট হয়ে গিয়েছে দেখে মনে মনে প্রমাদ গুনছি আজকে কি না জানি আছে কপালে .... কিন্তু না, আমি লেট করেছি অথচ কেউ রাগ করলো না ... হাসি মুখে দরজা খুলে তিড়িং বিড়িং করতে করতে নিয়ে চললো ওর ঘরে ... আমিও ওর পিছে পিছে চললাম, আর ভাবতেছিলাম , আল্লাই জানে ওর মনে আজকে কি প্ল্যান চলছে ... ওর ঘরে পৌছে আমাকে বসিয়ে রেখে বললো

>> এক পা ও নড়বি না এখান থেকে, আমি আসছি
--- কৈ যাস ?
>> চুপ !! একদম কথা নাই

এর পরে খিল খিল করে হাসি দিয়ে প্রজাপতির মতো উড়ে চললো অন্য কোথাও ... কিছুক্ষন পর আবার হাজির হলো হাতে বেশ বড় একটা ব্যাগ নিয়ে ... আর বললো

>> জানিস আজকাল আমার মনটা বেশ ভালো আছে
--- কিসের জন্য ?
>> আম্মু আমাকে দুটো শাড়ি কিনে দিয়েছিল ...
--- কিসের জন্য ?
>> কিসের জন্য মানে ? পরার জন্য, তার উপর কি হবে বল তো ?
--- কি আর হবে , বান্দরের ছবি নাইলে জঙ্গলের গাছপালা আঁকানো থাকবে

ভেবেছিলাম খোচাটা খেয়ে চিৎকার দিয়ে উঠবে বরাবরের মতো, কিন্তু সে তো কোনো রকম রিএ্যাক্ট না করেই হাসিমুখে বলে উঠলো

>> আরে নাহ ! এর উপরে আমি কাজ করেছি, আমার নিজের হাতে , বুঝেছিস বুদ্ধু
--- (আমি কিছুটা উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললাম) শাড়িগুলোরে গিনিপিগ বাননো কি খুব দরকার ?
>> মানে ? আমি শাড়িগুলো নষ্ট করেছি ভেবেছিস ?
--- এর চেয়ে ভাল কিছু আপাতত মাথায় আসছে না তো ...
>> তুই চুপ থাক, যে জন্য তোকে ডেকেছি তাই দেখ ...
--- আচ্ছা দেখা ...

আবার সে প্রজাপতির মতই সেই বিশাল ব্যাগ হাতে করে উড়তে উড়তে চলে গেল আন্টিদের রুমে ... একটু পরে ফিরে আসলো যখন তখন যাকে দেখলাম সে যে কে ছিল আমি নিজেই জানি না ... অপলক দৃষ্টিতে নিবিড় মনোযোগে দেখছিলাম এক অপুর্ব সুন্দর কারুকাজের শাড়িটে মোড়ানো প্রজাপতি কে ... নেচে গেয়ে সারাঘর ছুটে বেড়িয়ে আবার সে চলে গেল দ্বিতীয় শাড়ি পরে আসাতে ... আর আমি, টেনে নিলাম টেবিলের উপর রাখা ওর ডায়রীটা .... একটু পরেই পাশে সাজিয়ে রাখা ফুলদানী থেকে একটি গোলাপ নিয়ে তার ভিতর রাখতেই আরেকটি মন কাড়া কারুকাজের শাড়ি পরে যখন ও ঢুকলো সাথে সাথে ওর নোটবুক বন্ধ করে দিতে দেখে বলে উঠলো ...

>> আমার ডায়েরী পড়ছিস পড়, কিন্তু আমাকে দেখে বন্ধ করার কি আছে ?
--- না মানে , এমনি ...
>> সেখানে এমন তো কিছু নেই যা তোর অজানা ...
--- তা জানি , তবে হয়ত এমন কিছু আছে যা আমার জানা কিন্তু তোর অজানা ...
>> অসম্ভব ... হতেই পারে না
--- কখনো অসম্ভবও সম্ভব হয় ...
>> কৈ দেখি তো ...

এরপর ওর চোখের সামনে ভেসে উঠলো খুব পরিচিত এক হাতের লেখায় একটি লাইন ---

হবে কি তুমি, কোন কাঁটাওয়ালা গোলাপের সুগন্ধে বিভোর অনাবিল আনন্দে উড়ে বেড়ানো এক দুরন্ত প্রজাপতি ?




বড় বিলাই আপুর বাসায় একদিন

বড় বিলাই আপুর বাসায় একদিন

২০ শে আগস্ট, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৫৬





এতদুর আসতে হবে আগে জানলে আসার আগে দু বার চিন্তা করে নিতাম নিশ্চয়ই, তার উপরে ওর বাসায় প্রথম যাচ্ছি ...কিন্তু জঙ্গলের মাঝের এভাবে ধুলোবালি মাখা অতিথি দেখার পরে সে কি যে বলবে, কি করবে কে জানে ... আপনারা ভাবছেন কার কথা বলছি ? ... দাড়ান বলছি, সে আর কেউ না আমাদের সবার পরিচিত বড় বিলাই আপি ....

আপি টা অনেক দিন থেকেই বাসায় দাওয়াত দিয়ে কান ঝালাপালা করে দিচ্ছিলো যাওয়ার জন্য, কিন্তু ইজি কাজে বিজি থাকার কারনে ওর বাসায় সময় বের করাই মুষ্কিল হয়ে পড়েছিল ... শেষ পর্যন্ত যখন ফাইনাল পরীক্ষার ২ সপ্তাহ খানেক বাকী তখনই মনে হল এইটা সবচেয়ে উত্তম সময় ওর বাসায় বেড়াতে যাওয়ার ... যেই ভাবা সেই কাজ, পড়া বাদ দিয়ে সোজা রওনা হলাম ওর বাসার উদ্দেশ্যে ... ওর বাসায় আবার মুড়ির টিনে ছাড়া যাওয়া যায় না, চিড়ার টিন বা তেলের টিন হলে চলবে না ... মুড়িট টিনেই যেতে হবে ... এই প্রগৈতিহাসিক জিনিস এবার আমি কৈ পাই, তাইলে কি ওর বাসায় যাওয়া ক্যান্সেল করতে হবে নাকি ? ... মনে মনে দৃড় প্রতিজ্ঞা নিলাম ভাঙবো কিন্তু মচকাবো না ... যেমনেই হোক ওর বাসায় যেতেই হবে আমাকে, অতঃপর জিঞ্জিরা জাদুঘর থেকে শেষ মুড়ির টিনটা নেয়ার ব্যাবস্হা করে ওটাতে চেপে চললাম বিলাইপুর বাড়ি দিকে ... অতঃপর সাত বালির সমুদ্র আর তের কালাপানির নদী পার হয়ে ওর বাসার সামনে এসে দু হাতে ধুমধাম বাড়ি দিয়ে মাথা আর জিন্সের প্যান্ট থেকে মন খানেক ধুলো ফেলে ঘন্টা বাজালাম .... ডিং ডং

ভেতর থেকে আওয়াজ এলো >>> কে রে ?
আমি জবাব দিলাম ---- আমি অন্তু
>>> কোন অন্তু ?
--- দরজা খুলেই দেখ কোন অন্তু
>>> দরজা জ্যাম লেগে গেছে , আজকের আর খুলবে না ,কালকে আসেন
--- আজকে খুলবে না মানে কি ... খুলবা নাকি দরজা ভাঙ্গবো আমি ?
>>> আপনি ০১৭৫*****২ নং চিনেন ? এই এলাকার ওসি কইলাম আমার ছোট বোনের বড় দুলাভাই, এইটা তার নম্বর, দিমুনি একটা কল? নাকি মানে মানে ভাগবেন এখন ?
--- ধুর আপি, এমন করো ক্যান এতদুর থেকে আইসি, কোথায় দরজা খুলে ভাইটারে ঢুকতে দিবা না, কাহানী শুরু করসো
>>> আরে অন্তু তুই ? আগে বলবি না ?
--- আগেই তো বলেছি এইটা আমি, নাম কি ভুল শুনেছ নাকি ? এখনো দরজা খুলো না ক্যান ?
>>> আচ্ছা পরে করিস ঝগড়া, এখন দরজার একটা ঠেলা দে, খুলে যাবে ...

ঠেলার ও দরকার হলো না, হালকা ধাক্কায় দরজা খুলে যেতেই দেখি লাঠি হাতে রনরঙ্গিনীরুপে বিলাইপু দাড়িয়ে আছে ...তাই দেখে জিজ্ঞেস করলাম ...

--- কি হইসে, এমন করে দাড়ায়ে আছো ক্যান, আর দরজা খোলাই তো ছিল তো কইলানা ক্যান ?
>>> (>" style="border: 0pt none ;" width="23" height="22"> কইরা আপি কয় ) দরজার ছিটকিনি টা নষ্ট, তাই একটু ভঙ নিলাম তোর লগে, এমনটা না করলে চোর ডাকাত আইসা তো সব কিয়া যাইব বুঝোস না ?

--- হইসে হইসে অনেক বুদ্ধি তোমার, এইবার একটু শরবত দিবা? ভীষন তেষ্টা পেয়েছে
>>> এই এক্ষুনি নিয়ে আসছি, কিন্তু তুই ফাইনাল পরীক্ষার আগে আসলি ক্যান ? পড়াশুনা শেষ নাকি ?
--- আরে নাহ আপি, পড়ায় ফাকি দেয়ার এর চেয়ে ভাল কোন উপায় পাইলাম না , এ জন্য আর কি ...
>>> দাড়া একটু শান্ত হয়ে বস, এর পরে তোর খবর করতেছি আমি ...
--- দেখা যাবে ...

একটু পরে দু গ্লাস লেবুর সরবত হাতে আপি ঘরে ঢুকে একটা গ্লাস আমাকে আরেকটা নিজে নিলো ... ফ্রিজ থেকে কয়েকটা আইস কিউব এনে গ্লাসে ফেলে দিতেই মনটা ভরে গেল ঠান্ডায় ... কিন্তু শরবত মুখে দিতেই কেমন জানি মিষ্টি কম লেবু বেশী লাগছিল ... বললাম

--- এই জঙ্গলে চিনি দাম কি অনেক বেশী নাকি ?
>>> ক্যান ? কম হইসে নাকি ?
--- না মানে শরবতের নমুনা দেইখা এরকমই মনে হইলো
>>> তাই বলে তুই আমারে এমনে বলবি ?
--- তাইলে চিনি নিয়ে আসো আরেকটু
>>> কিচেনে আছে নিয়ে নে নিজে নিজে ... কিন্তু শোন ...
--- অল্প নিতে বলবা তো ? ঠিকাছে অল্পই নিবো
>>> না, অল্প না , অন্য কিছু বলতে চাইছিলাম, শুনবিনা যখন তখন যা, নে গিয়ে নিজে নিজে

বিলাইপু আমারে কি অল্প নিতে কইতে চাইছিল নাকি চিন্তা করতে করতে দেখি সামনেই খোলা পড়ে আছে চিনি লেখা বড় একটা কৌটা ... মনে মনে বললাম, আমার লগে কিপ্টামী ,দাড়াও আজকে গ্লাস ভরে চিনি খাব ... যেমন বলা তেমন কাজ, টেবিল চামচে গোটা পাচ ছয় বার চিনি শরবতের মধ্যে ফেলে ৩২ দন্ত বিকশিত করে নাড়তে নাড়তে হাজির হলাম আপুর সামনে ... দেখি সেও মুচকি মুচকি হাসতেছে , কইলাম
--- কি হইসে ?
>>> (খিক খিক করে হেসে) নে এইবার মনের আনন্দে খা

ওরে খিক খিক হাসি দেখে এক নিঃশ্বাসে ঢকঢক করে হাফ গ্লাস শরবত শেস করতে করতে মনে হইলো আমি কোন শরবত না বরং বঙ্গোপসাগরের মধ্যে মুখ ডুবায়ে পানি খাচ্ছি ... লবনের ঠেলায় আমার তখন জান যায় যায় অবস্হা আর ঐ দিকে আপি টা হেসে গড়াগড়ি ... বললো
>>> তোরে ঐটাই বলতে যাচ্ছিলাম যে, আমি কালকে চিনি লেখা কৌটায় ভুল করে লবন রেখে দিসিলাম, চিনি আছে খোলা একটা প্যাকেটের মধ্যে ... খিক খিক খিক

তক্ষুনি আমার আকাশ বাতাস কাপায়ে ঝনঝন শব্দে কানে তালা লেগে যাওয়ার মত অবস্হা, কোন রকমে চোখ খুলতেই দেখি সেল ফোনে সকাল ৮ টার এ্যালার্ম বাজছে ... ক্রীং ক্রীং ক্রীং



এক ফোটা জল আর এক পশলা বৃষ্টি

এক ফোটা জল আর এক পশলা বৃষ্টি

১৮ ই আগস্ট, ২০০৯ রাত ১১:১৫






সামনে পরীক্ষা, পড়ার চরম চাপ আশেপাশের কয়েকজনের কারো মুখে কথা নেই ... মুখ গুজে ওরা চারজন জান প্রান দিয়ে সবাই পড়ছে... শুধু সন্ধ্যার মন পড়ে আছে অন্যখানে ... দুরে, বহুদুরে ... সেলফোনটা আর নোট দুটোতেই একসাথে বুলিয়ে যাচ্ছে তার চোখের দৃষ্টি ... কিছু একটা চাইছে ওর মন ... তবু বুঝে উঠতে পারছে না, সেটা কি ...

এর মাঝে বেজে ওঠে ওদের মাঝে একজনের সেলফোনে নির্দিষ্ট একটি রিং ... কল টা পিক করেই সে উঠে চলে গেল ঘরের অন্য পাশে ... এর পরে শুরু হলো ফিসফিসিয়ে গল্প ... অল্পক্ষন পরেই সে হাসিমুখে ফিরে এসে বলে -- ও ফোন করেছিলো ... এরপরেই মহা আনন্দে শুরু করে দিলো পরীক্ষার প্রস্তুতি ... সন্ধ্যার মনটা যেন আরেকটু খারাপ হয়ে গেল ... তবুও আবার চেষ্টা করলো পড়ায় মন বসাতে ...

আবার কিছুক্ষন পরে আরেকজনের সেল ফোনে একটা টেক্সট আসার সাথে সাথে সে কলব্যাক করে দুমিনিটেরও কম সময়ের উজ্জ্বল মুখে পড়ায় বসতেই সন্ধ্যার বুকটায় যেন হাহাকার করে উঠলো ... অনেক দুরের সে মানুষটা ব্যাস্ত আছে ঠিকাছে , তাই বলে একটা কল না হোক তাকে একটা টেক্সট ও করতে পারে না ?

বাইরে মুষল ধারায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে, আকাশ বাতাস কাপিয়ে ঝরঝর করে যেন ঝরে পড়ছে সন্ধ্যার জমাট বাধা কষ্টগুলো ... দুরের মানুষটাকে বেশীক্ষন কল করার মত ক্রেডিট নাই ... টেক্সড করা যায়, কিন্তু তার যে ওর কন্ঠ শুনতে খুব ইচ্ছে করছে ... কি করবে কি করবে চিন্তা করতে করতে হঠাৎ মনে পড়লো ওদের গোপন সংকেতের কথা ...সাথে সাথে সেল হাতে নিয়ে তিনটে মিসকলে পাঠিয়ে দিলো মনের গোপন ইচ্ছেটাকে দুর দেশের সেই মানুষটির কাছে ....

শেষ বান্ধবীটির সেলে কল আসতেই সে ছুটে গেল জানালার ধারে ... মুগ্ধ নয়নে দাকিয়ে রইলো পথের ধারে দাড়িয়ে থাকা একজনের দিকে ... হাত নেড়ে ইশারায় ওরা একে অপরকে জানিয়ে দিলো, আমি ভাল আছি, তুমি ভাল থেক ... ওর ছুটে যাওয়া দেখে সন্ধ্যার চোখে যেন জলের বান ডেকে উঠলো ... ঘাড় ঘুরিয়ে বারান্দায় ছুটে গিয়ে দাড়াতেই কষ্টের কান্না যেন গলা পেরিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে চাইলো ... আনমনেই যেন সেলফোনের উপরে গড়িয়ে পড়লো দু ফোটা জল ... অমনি যেন প্রান ফিরে পেল সেলফোনটি ... বেজে উঠলো বহু প্রতিক্ষীত নির্দিষ্ট সেই রিং টোন টি ...
সে বললো -- কাঁদছ কেন ?
সন্ধ্যা চোখ মুছে বলে -- কৈ না তো ....
সে বললো -- তবে ?
শেষ কথাটি সন্ধ্যার কানে গেলেও ওপাশের কন্ঠস্বর ছাপিয়ে যাওয়া কিসের আওয়াজ শোনা যায় ... জিজ্ঞেস করতেই জানতে পারলো ... সে মানুষটিও বৃষ্টির মাঝে দাড়িয়ে ওর দিকে হাত বাড়িয়ে আছে আর বলছে --- সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আসছি আমি তোমার জীবনে বৃষ্টি হব বলে ....



আলো আঁধারীর আকথা

আলো আঁধারীর আকথা

১৭ ই আগস্ট, ২০০৯ রাত ৮:৩০





>> হ্যালো
-- হাই (পোওওওওও .......)
>> কিরে কৈ তুই
-- আমি রিক্সায় (প্যা ...... পোওওওওও)
>> আরে শালা, এই সব কি রে ... এত্ত পো প্যা করে ক্যান ?
-- হা হা হা , এইটা বাংলাদেশ দোস্ত
>> বিডি তুই কি এই প্যা পোওওও গুলো এডিট কইরা কথা কইতে পারবি ? মাথার মধ্যে বাজতেছে ...
-- হি হি হি হি (প্যা..... পোওওওও)
>> হাসতে হাসতে গড়াগড়ি দিতে হবে না ... উফফ !!! কি বিকট শব্দ !!!!
-- খিক খিক খিক (বিকট সব শব্দের মাঝে তিনি রিক্সায় হেসে গড়াগড়ি দিচ্ছেন !!)

এই শব্দের সমস্যা টা অনেকেরই হয়ে থাকে যারা বাইরে থেকে অনেক দিন পরে দেশে যান ... কয়েকদিন আগে এক বড়ভাই দেশে গিয়েই এই শব্দের জন্য প্রথম এক সপ্তাহের মতো ঘর থেকেই বের হননি মাথা ব্যাথায় ... এত কিছুর পরেও মনের কোনে এক অন্যরকম আশা জাগে, দেশের এ শব্দ দুষনের মাঝেই নিজেকে হারিয়ে ফেলতে চাই ... অন্তত একটা দিনের জন্য হলেও ...

কত দিন ভোরে ঘুম ভাঙ্গে না পাখির কলকাকলীতে .... কতদিন শুনিনা ফেরীওয়ালা হাক ডাক ... কতদিন কাচা বাজারের প্যাচপেচে স্যাতসেতে মাটিতে হাটিনা ... কতদিন ঝুমঝুম বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে তা গায়েই শুকিয়ে ঠান্ডা লাগাই না ... কত দিন অনিয়মের কারনে প্রচন্ড জ্বর বাধিয়ে মায়ের বকুনি খাই না ... কতদিন খাইনা সেই হাতের অমৃত রান্না ... কতদিন পাইনা কারো হাতের উষ্ম ছোয়া ... কতদিন সাতার কাটিনা পদ্মপুকুরের জলে ... কতদিন ডিঙ্গি নৌকায় ভেসে চলিনা শেষ বিকেলের আলোয় ... কতদিন শুনি না রিক্সার সেই টিং টিং বেলের আওয়াজ ... কতদিন খাইনা সেই সব অতি পরিচিত হোটেলের সিংগাড়া, পুরি, কাবাব আর টিকিয়া ... কতদিন খাইনা পুরান ঢাকার সেই বাকরখনি ... কতদিন খাইনা নিরব হোটেলের সেই অনবদ্য ৩২ পদের ভর্তা .... কতদিন উপভোগ করিনা বাংলা মায়ের অপরূপ সৌন্দর্য ...

কোন এক সময় পড়েছিলাম, ঢাকায় নাকি পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম বিষাক্ত বাতাসে ভরপুর ... আজ এখানের সবুজ গাছের নির্মল, টাটকা, শীতল বাতাসের নিঃশ্বাস নিতে নিতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি, তাইতো আজ মনের মাঝে বান ডেকেছে দেশে ফেরার অভিপ্রায় ... আর ঘড়ির কাটার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে ধীরে ধীরে সময় পার করে চলেছি, এক বুক বিষাক্ত নিঃশ্বাস নেবার অপেক্ষায় ....



এখনো বোকাই রয়ে গেলাম ... বুদ্ধিমান হইতে পারলাম না

এখনো বোকাই রয়ে গেলাম ...

বুদ্ধিমান হইতে পারলাম না

১৪ ই আগস্ট, ২০০৯ রাত ৯:১৮





বড়ই দুঃখে আছি ... জীবনের এতগুলো বছর পার করে আসলাম তবুও এখনো বোকা ই রয়ে গেলাম ... বুদ্ধিমান হইতে পারলাম না ...

ছোটবেলা এক ঈদের দিন পাওয়া সবটুকু ঈদির টাকা একজন পত্রিকা হকার কে (যে আমাদের বাসায় পত্রিকা দিত, আর ঈদের আগের দিন ওদের বাসা থেকে সবকিছু চুরি হয়ে গিয়েছিল) দিয়ে দেয়ার পরে নিজের কাছে চকলেট কেনার জন্য এক টাকাও ছিল না ... সাথে বন্ধুরা সবাই বিভিন্ন জিনিস কিনে খাচ্ছিলো আর আমি বোকার মতো কিছু না কিনেই ওদের সাথে ঘুরে বেড়িয়েছিলাম ... ওদের একজন সেটা লক্ষ্য করে কি হয়েছে জিজ্ঞেস করে আসল ঘটনা জানার পরে আমায় ভৎসনা করে বলেছিল -- নিজের জন্য এক টাকাও রাখনি ... এত বোকা মানুষ হয় নাকি ...

স্কুলের এক খুব কাছের বন্ধুর পেন্সিল হারিয়ে গিয়েছিল, ওর বাবা মায়ের বকা আর মাইর থেকে বাঁচানোর জন্য নিজের জন্য কেনা একই রকমের নতুন পেন্সিল দেয়ার পরে বাসায় এসে বক্সে নতুন পেন্সিল না থাকায় আম্মুর কাছে অনেক বকা খেয়েছিলাম, তবুও শিক্ষা হয়নি ... বোকাই থেকে গিয়েছি ...

খেলতে গিয়ে পড়ে হাতে ব্যাথা পাওয়ায় ক্লাসের এক বন্ধু হোমওয়ার্ক করে আনতে পারেনি বলে টিচার তাকে মারতে গেলে বলেছিলাম, স্যার ওর হাতে ব্যাথা ... স্যার পরে তার পরিবর্তে আমি বেতের বাড়িগুলো খাব কিনা জিজ্ঞেস করায় সেটা নিরবে মেনে নিয়েছিলাম ... ক্লাস সুদ্ধ সবাই পরে বলে উঠেছিল ... অন্তুর মত বোকা আর কেউ নাই এই ক্লাসে ... মন খারাপ করে নিজেকেই বলছিলাম -- এর পরেও কি আমার বুদ্ধি হবে না ?

মন ভুলানো কান্না দেখে একবার নিজের জীবন বাজি রেখে কাউকে সাহায্য করার পরে যখন কেউ মুচকি হেসে বলে উঠেছিল, তুমি কেমন বোকা তাই পরীক্ষা করার জন্য একটু টেষ্ট করছিলাম তখন নিজের মাথার চুল ছিড়ে বলতে ইচ্ছে করেছিল, আমি এমন কেন ... একটু বুদ্ধি কি কখনোই হবে না আমার ?

অসুস্হ রুগীকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে সারা রাত নির্ঘুম কাটিয়ে দেয়ার পরে যখন সে বলে উঠেছিল , আমার জন্য তুমি তো কিছুই করো নি ... অন্য কেউ হলে এর চেয়ে বেশী কিছু করতো ... মুখ বন্ধ করে নিরবে সেখান থেকে মাথা নীচু করার পরে চলে আসার পরের সপ্তাহেই যখন সে আবার অসুস্হ হলো, আবার তাকে নিয়ে হাসপাতালে দৌড়াতেই পরিচিত সবাই বলতে লাগলো ... এই বোকা ছেলেটার কখনো বুদ্ধি হবে না ... আসলেই তাই, এখনো আমি এমনই রয়ে গেলাম, একটুকুও বুদ্ধি হলো না ...

কারো জন্য যখন নিজের সবটুক উজাড় করে দেয়ার পরে তাদের হাতের ছুরিতেই নিজের পিঠ বিদ্ধ হতে হতে দেখি, তখন নিজের উপরেই চরম বিরক্তিভরে বলতে থাকি ... আমি যে বোকা সে বোকাই থেকে গেলাম, একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে থাকলেও এতটুকু বুদ্ধি হলো না আমার ...


কেউ যদি বার বার মিথ্যে কথা বলে আর ধরা খাওয়ার পরে স্বীকার করে মাফ চায়, তখন আর তার উপরে রাগ করে থাকতে পারি না ... নিজের ক্ষতি করে হলেও তাকে আবার মনের মত সব কাজ করতে দেই, তার পাশে দাড়াই ... আর আবার যখন তারা কোন নতুন দুঃসময়ের সামনে আমাকে দাড় করায় তখনই মনে মনে বলতে থাকি ... আমি যে বোকা ছিলাম তাই রয়ে গেলাম ... বুদ্ধিমান হতে পারলাম না ...

এই লেখাটা লিখতে লিখতে এখন মনে হচ্ছে, যারা আমাকে বোকা হিসেবে জানতো না তাদেরকেও এর প্রকার ঢোল বাজিয়েই বলতে চলেছি -- আমি বোকা ...

নাহ !! আমি আর কখনোই বুদ্ধিমান হতে পারলাম না .... এ আমার দ্বারা কখনো মনে হয় সম্ভব হবে না ।



এক অন্যরকম অভিজ্ঞতার প্রত্যাশায়... অনন্ত

এক অন্যরকম অভিজ্ঞতার প্রত্যাশায়... অনন্ত

০৫ ই আগস্ট, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:২৭





ঘটনাটা বেশ কিছু বছর আগের ... তখন শখের বসেই অনেক কিছু করে বসতাম ... মন চাইলো তো ভর দুপুরে কারো বাসায় হানা দিয়ে বলে বসলাম ক্ষিদে পেয়েছে রান্না করো, খেয়ে এর পরে যাব তোমার বাসা থেকে ... আবার কখনো মন চাইলো তো খাবার, পানি ছাড়াই শুধু চুইংগাম চিবিয়ে চললাম ... ৫ টা চুইংগাম দিয়ে ৩ দিন কাটিয়ে দিলাম নির্বিঘ্নে ... মন চাইলো তো গরমের দিনে স্প্রাইটের বোতল খুলে না খেয়ে মুখে ছিটিয়ে দিলাম ... কখনো পুরা এক প্যাক বেনসন একটা কাঠি খরচ করে সবকটা পুড়িয়ে ফেললাম ... কখনো শাহবাগের মোড়ে হলুদ রঙ্গা রোড ডিভাইডারের উপরে বসে মনের সুখে ধোয়া উৎসব কর‌্তাম ... তবে এর মাঝে এমন একটি শখ পূরন করেছি, যা আমার নিজের কাছেও একটু স্পেশাল টাইপ বলে মনে হয় ...

সেবার নানাবাড়ি বেড়াতে গিয়েছি আমরা সবাই ... সবাই বলতে নানা বাড়ীর যতগুলো কাজিন আছে সবকজন সেবার একসাথে হয়েছিলাম অনেক বছর পরে ... প্রতিদিন ভোর বেলা বের হয়ে এক একজনের বাড়িতে গিয়ে নাশ্তা করা, খেজুরের রস খাওয়া... এর পরে দুপুরে পুকুরে ঝাপিয়ে পড়ে ঘন্টা ৪ - ৫ সবাই মিলে সাতার দিয়ে বরফ পানি খেলা ... এর মাঝে পুকুর পাড়ের ডাব গাছে কয়েকজন উঠে পড়বে, সেখান থেকে ডাব পেড়ে পানিতে ফেলবে ... সবাই মিলে সেগুলো খেলার ফাকে ফাকে পুকুর পাড়ে বসে খাবে ... বিকালে আবার স্কুলের মাঠে গিয়ে ফুটবল আর সন্ধ্যার পরে ব্যাডমিন্টন খেলা ... এমন করেই কেটে যাচ্ছিলো সেবারের নানাবাড়ী ভ্রমন ...

একদিন আমরা দুই কাজিন মসজিদে গিয়েছি নামাজ পড়তে ... ফেরার পথে মজজিদের পিছনে রাখা একটা বিশেষ জিনিসের উপর চোখ পড়লো... সেটি আর কিছু না... একটা কফিন ... বেশ শক্ত কাঠের বানানো কফিনটা দেখেই বেশ উৎসাহ জেগেছিল মনে জিনিসটা নিয়ে একটু এক্সপেরিমেন্ট করতে ...শত বুঝানোর পরেও কাজিনটার জন্য সে সময় কিছুই করা গেল না ... শুধু তাই না, আমার এই এক্সপেরিমেন্টের শখের কথা সে মামাদের কে বলে দিলে পরে কেউ আর আমাকে একলা মসজিদে ছেড়ে যেত না .... একদিন মাগরিবের নামাজ পড়তে এসে সবার চোখের আড়াল হয়ে থাকলাম ... মসজিদের লোকজন খালি হয়ে গেলে পরেও আমি বসে আছি দেখে সেখানের খাদেম আমাকে জিজ্ঞেস করলো - অন্তু বাবা বাড়ী যাবা না ?

আমি বললাম -- একটু পরে যাব, আপনি চলে যান ...
তাকে চলে যেতে বলেছি, এর পরে উনি আর থাকতে পারবেন না বুঝেই বললেন -- হ্যাজাক লাইট টা থাকলো ... আমি পরে এসে নিয়ে যাব, আচ্ছা ?
আমি বললাম -- আমার কাছে বড় টর্চ লাইট আছে, সমস্যা নেই, আপনি নিয়ে যান
একটু ইতস্তত করতে করতে উনি চলে গেলেন হ্যাজাক লাইট নিয়ে ... পিছনে বসে থাকলাম আমি ... চার ব্যাটারীর লাইট হাতে ...

খাদেম চাচু চলে যাওয়ার পরে আস্তে আস্তে উঠলাম ... ধীরে ধীরে চললাম কফিনের দিকে ... ওটার ঢাকনীটা পাশেই রাখা আছে ... সেটায় একটু হাত বুলাতেই অন্যরকম ভাল লাগছিল ... কফিনের ভিতরটার সব জায়গাতে আস্তে আস্তে হাত বুলাতে বুলাতে চিন্তা করছিলাম, এ জায়গাতে রেখে গ্রামের কত মানুষকে চার জনে বয়ে নিয়ে গিয়েছে ... লোকটাকে সমাধীস্হ করেছে, কিন্তু এটা সেই আগের মতই আছে ... এমন সময় হঠাৎ মনে হলো যে মানুষগুলোকে এতে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো তারা যদি জীবিত থাকতো তবে তাদের কেমন লাগতো এর উপরে শুয়ে থাকতে ? ... অনেক ভেবেও সেই অনুভুতির সন্ধান না পেয়ে নেশা চড়ে বসলো কফিনে শোয়ার ... আগে পিছে না ভেবেই ... ধীরে ধীরে নিজেকে শুইয়ে দিলাম কফিনের ভিতরে ... সে এক অদ্ভুত সুন্দর অন্যরকম অনুভূতি ... এর পরে, হাতের চার ব্যাটারীর লাইট টাকে নিভিয়ে দিয়ে উপভোগ করতে লাগলাম এক জীবন্ত মানুষের কফিন যাত্রা ....



একমূখী রাস্তার শেষপ্রান্তে দাড়িয়ে !!

একমূখী রাস্তার

শেষপ্রান্তে দাড়িয়ে !!


৩১ শে জুলাই, ২০০৯ রাত ১০:১২





মহল্লাটা পুরোনো বাড়ীতে ভর্তি ... নতুন বাড়ি হিসেবে মাত্র হাতে গোনা কয়েকটা বিল্ডিং মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে ... গলির মুখের টং এর দোকানটিতে চানমিয়া সারাদিন পুরোনো দিনের গান বাজাতে থাকে ... তার পাশেই রয়েছে কয়েকটি মুদি দোকান, একটা বেকারী ... এই এলাকা নিয়ে কিছু বিশেষ কিছু কল্প-গল্প প্রচলিত থাকায় স্হানীয় বাসিন্দা ছাড়া নিতান্ত অপারগ না হলে ভাড়াটিয়া হয়ে আসতে চায় না কেউ ... ঠিক তেমনি অন্য এলাকায় নিজের সামর্থ্যের মধ্যে বাসা না পেয়ে অপারগ সুজন এই এলাকায় পা রাখতে বাধ্য হয় ... এখানে বাসা খুজতে এসে নতুন বিল্ডিং এ দুই বেড রুমের বাসা এত অল্প ভাড়ায় পেয়ে যাবে কল্পনাও করেনি ... এখানে একলা থাকলেও সে বেশ সাচ্ছন্দ্যের সাথে চলতে পারবে, আর যদি কেউ সাবলেট হিসেবে তার সাথে থাকে তবে তো সোনায় সোহাগা ... বাড়ীওয়ালাও বেশ হাসিখুশী, ব্যাচেলর ভাড়া দিয়েছেন কোন রকম শর্ত ছাড়াই ... এমন অমায়িক মানুষ আজকের দিনে পাওয়া মুষ্কিল ...

নিজের সম্বল দুটো ব্যাগ নিয়ে সেদিন বিকেলেই হাজির হয়ে গেল নিজের নতুন বাসায়... এ শহরে মাঝারী মানের চাকুরী করতে আসা সুজনের এখনো কোন বন্ধু তৈরী হয়নি... তাই নিজে নিজে অফিস থেকে ফিরে বাকি সময়টাতে সব কটা রুম পরিষ্কার করে ঘর গুছিয়ে ফেলতে কয়েকটা দিন চলে গেল। যাওয়া আসার পথে মুদি দোকান গুলো থেকে প্রয়োজনীয় ছোটখাট জিনিস কিনলেও চানমিয়ার দোকানে কখনো যায়নি। সেদিন সন্ধ্যায় প্রতিদিনের মত ঘন্টা দুয়েকের জন্য কারেন্ট চলে যাওয়ার পরে সুজন ঘর থেকে বেরিয়ে চান মিয়ার দোকানে এক কাপ চা খাচ্ছিলো আর হালকা গল্প করছিল ... হঠাৎ কোন কারন ছাড়াই চান মিয়া বলে উঠলো -- ভাইজান, আপনি তো মনে হয় ১৫ নং বাড়িতে নতুন এসেছেন তাই না ? একটু সাবধানে থাইকেন ... হঠাৎ চানমিয়া তাকে কেন এ কথা বললো তা জিজ্ঞেস করতে যাবে, অমনি গলির অপর প্রান্তে কয়েকটি মটর সাইকেলের আলো দেখতে পেয়ে সে বলে উঠলো -- ভাইজান আপনি যান গা এক্ষুনি , তারিক ভাই আইতাছে , উনি আর উনার দোস্তরা আইলে এইখানে আর কাউরে বসার অনুমতি নাই ...সুজনের চায়ের দামটা পর্যন্ত না নিয়ে ঐ মুহুর্তে তাকে একরকম তাড়িয়ে দিতেই মনের মাঝে একটু খচখচ করতে থাকলো ... তারেক আর তার সঙ্গীরা চানমিয়ার দোকানের সামনে এসে মটরসাইকেলের উপরে বসেই ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতে লাগলো সুজনের ১৫ নং বাসার দিকে হেটে যাওয়া ... একসময় সে মেইন গেট পার হলে পরে ওরাও বসে পড়লো নিজেদের প্রাত্যহিক আড্ডায় ...

এর পরদিন সন্ধ্যায় আবার কারেন্ট চলে গেলে একলা ঘরে ভাল লাগছেনা দেখে ভাবলো চানমিয়ার দোকানে গিয়ে এক কাপ চা খেলে মন্দ হয় না, তবে তারেকদের কথা চিন্তা করে সে চিন্তা নিজের মাথা থেকে বাদ দিয়ে দিলো ... তারেক কে শুধু এই মহল্লায় না বরং এই শহরের বেশীর ভাগ মানুষ চিনে ... তার নামে সব রকমের ভয়ংকর কাহিনী বাতাসে ভেসে বেড়ালেও কোন চাক্ষুস প্রমান না থাকায় পুলিশ পর্যন্ত তাকে কখনো ছুতে পারেনি ... সাত পাচ ভেবে ঘরে তালা লাগিয়ে সুজন পা এগিয়ে দেয় বাড়ীর ছাদের দিকে ... অন্ধকার ছাদে প্রথম উঠতেই কেমন জানি একটা গা শিরশির করতে থাকে তার ... মোবাইলের আলোয় আধো আলো - আধো অন্ধকারে ছাদের এক কোনায় গিয়ে মুক্ত হাওয়ায় বসে আকাশ দেখতে দেখতে হঠাৎ যেন শুনতে পেল কারা যেন হেটে আসছে ছাদের দিকে ... একজন, দু জন ... নাহ, পায়ের শব্দে মনে হয় ওরা কয়েকজন ...

কিছুক্ষন পরে কয়েকটি অস্পষ্ট ছায়াকে দেখতে পায় যারা ছাদের এক কোনায় গিয়ে দাড়ালো, ফিসফিস শব্দে নিজেদের মাঝে কথা বলতে থাকায় সে বুঝতেও পারছিলো না ওরা কারা ... কিছুক্ষন পরে সেল ফোনে ছোটভাই কল দিলে সেটা রিসিভ করতেই ছায়াগুলোর ফিসফিসানী হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় ... কথা বলা শেষ করলে পরে দেখে ওর পিছনে এসে দাড়িয়েছে তিন এলোকেশী কন্যা ... হৃদয় আলোড়িত সুরেলা কন্ঠে একজন বলে উঠলো -- আপনিই কি সুজন সাহেব, নতুন ভাড়াটিয়া ? ... সম্মোহিত কন্ঠে "জ্বি" বলতেই ওরা নিজেদের পরিচয় দিলো ... ওরা নাকি ত্রি-রত্ন, যাদের মাঝে দুজন বাড়ীওয়ালার মেয়ে, অন্যজন পাশের বাসার বাড়ীওয়ালার মেয়ে ... একসাথেই কলেজে পড়ছে সবাই ... কিছু মানুষ থাকে যাদেরকে অল্প পরিচয়েও মানুষকে আপন করে নেয়ার অদ্ভুত ক্ষমতা থাকে, এদের সকলের মাঝেই যেন তা বিদ্যমান ... প্রথম দিনের পরিচয়ে মানুষ যে এত কাছে চলে আসতে সুজনের কখনো জানা ছিলো না ... এদের মাঝে রত্নাকে সবচেয়ে হাসিখুশী আর মিশুক মনে হলো তার ... তাই সে চাওয়া মাত্রই সুজন তার সেল নম্বর ওকে দিতেই রত্না দুষ্টুমি করে বলে উঠলো -- আমি কিন্তু মিসকল দিব, কল করবেন আপনি ... ঠিকাছে ? ... সুজনও দুষ্টুমি করে বলে উঠলো -- ঠিকাছে, বিলের টাকা কিন্তু আমি বাড়ীভাড়া থেকেই কেটে রাখবো ...

সেই থেকে শুরু ওদের কথা বলা, সন্ধ্যার পরে কারেন্ট চলে গেলে ছাদের কোনা একসাথে আড্ডা, অনেক রাতে মন ভাল করে দেয়ার ছলে রত্নার সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলা আর বিশেষ করে রত্নার ওর প্রতি আন্তরিকতা অল্প অল্প করে যেন সুজনের হৃদয় মাঝে ভাললাগার সৃষ্টি করে চলেছিল ... এর পর যখন আবিষ্কার করলো চরম মন খারাপের সময় ফোনের মাঝে সুজনের অল্প আদর যেন মুহুর্তের মধ্যে তাকে নিয়ে যায় আবীর রং এ রাঙ্গানো স্বপ্নের দেশে, তাই তো যেদিন রাতে রত্না ওকে বলেছিল -- তোমার জন্য করা এমন পাগলামী আমি আর কখনো কারো জন্য করিনি ... শোনার পর থেকেই সুজনের মাঝে তার জন্য সৃষ্টি হওয়া ভাললাগা যে ভালবাসায় পরিনত হচ্ছে তা সে খুব ভালভাবেই বুঝতে পারছিল ...

সেদিন সকাল থেকেই সুজনের মন অত্যন্ত বিচলিত, আর উৎকন্ঠায় ভরে আছে ... আজ সন্ধ্যায় সে রত্নাকে তার ভাললাগার কথা জানাবে, সেই সাথে জানাবে এতদিনে তিলে তিলে যে স্বপ্ন ভরা পৃথিবী গড়ার পরিকল্পনা ওরা করেছিল, যত জলদি সম্ভব ওকে সাথে নিয়ে তার শুরু সে করতে চায় ... মাসের শেষ, হাত ফাঁকা, তবুও জীবনের প্রথম নিজের ভালবাসার কথা জানাবে, তাই অনেক শখের ঘড়িটা এক কলিগের কাছে বন্ধক রেখে অফিস থেকে ফেরার পথে ছোট্ট একটা রিং কিনে এনেছিল, তখন থেকেই সেটিকে কিভাবে রত্নার হাতে পরাবে আর কখন কারেন্ট যাবে, তা ভাবতে ভাবতেই ভুলে গিয়েছিল ওকে ফোন করে বলতে যে , সে বাসায় ফিরেছে ... এমনকি অফিস থেকে ফিরে কিছু যে খেতে হয় তাও বেমালুম ভুলে বসে আছে ... প্রতিদিনের মতো সন্ধ্যায় কারেন্ট যাওয়ার সাথে সাথে রত্নাকে ফোন না করেই কয়েকদিনের অতি পরিচিত গুটি গুটি পায়ে ছাদে উঠে এলো ছাদের ঐ নির্দিষ্ট কোনে, যেখানে ওরা কাটিয়েছে বেশ কিছু অসম্ভব সুন্দর সন্ধ্যা ... অন্ধকারের আবছা আলোয় সুজন দেখতে পায় সেখানে দাড়িয়ে আছে তারই অতি পরিচিতার নিশ্চল ছায়া ... কাছে গিয়ে মধুর স্বরে তাকে ডাকতেই যেন ভুত দেখার মত চমকে উঠলো সে ... বললো তুমি এখানে ? আজ তুমি বাসায় ফিরেছ জানাওনি তো ... সুজন তাকে কতভাবে বুঝাতে চাইলো যে , সে ওকে সারপ্রাইজ দিবে বলেই জানায়নি তবুও সে মানতে চায় না ... রাগের চরম বহিঃপ্রকাশের সাথে বলে - চলে যাও আমার সামনে থেকে, এক্ষুনি চলে যাও ... এক সেকেন্ড থাকবে না আমার সামনে , পারলে সে যেন সুজনকে ধাক্কা মেরে সিড়ি ঘরে পাঠিয়ে দেয় ... তবুও সুজন যায় না দেখে এক সময় কান্না জড়িত কন্ঠে বলে -- তুমি এক্ষুনি চলে যাও প্লিজ ...

ঠিক এমন সময়ে ছাদে প্রবেশ করে অপরিচিত এক ছায়া মুর্তি , যাকে দেখতেই পাথরের মত নিশ্চল বাকরুদ্ধ হয়ে দাড়িয়ে পড়ে রত্না ... ধীরে ধীরে কাছে এসে পাশে দাড়াতেই সুজন বুঝতে পারে এটি কার ছায়ামুর্তি ... শান্ত গলায় সে বলে -- সুজন ভাইয়া তুমি একটা চান মিয়ার দোকানের সামনে যাও, আমি আসছি ... শুষ্ক কন্ঠে শোনা যায় রত্নার করুন আর্তনাদ -- তারেক ভাইয়া .... ওর ঠোটে আঙ্গুল রেখে তারেক বলে --- সসসসসস !!!!! .... কিছুক্ষন পর ... সুজনের পা তার অসাড় শরীরকে বয়ে নিয়ে যায় একমূখী রাস্তার শেষপ্রান্তে ....




ওরা দুজন ও কয়েকটি গলদা চিংড়ী

ওরা দুজন ও

কয়েকটি গলদা চিংড়ী


৩০ শে জুলাই, ২০০৯ বিকাল ৫:২৪






ডিং ডং ... ডিং ডং
>> কে ?
> এইতো আমি জানটুস, দরজা খোল ....

দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই

> কৈ ছিলা তুমি, খুলতে এত দেরী হলো যে ? দেখতো আজকে তোমার জন্য কি এনেছি ?
>> একটু বিজি ছিলাম, কি এনেছ ? নতুন শাড়ি ? >" style="border: 0pt none ;" width="23" height="22">
> উহু ! শাড়ী না ... তোমার পছন্দের একটা জিনিস, যেটা খেতে তোমার মন সবসময় আনচান করে ...
>> জলপাই এর আচার ? " style="border: 0pt none ;" width="23" height="22">
> উহু ! এই যে দেখ কত বড় বড় গলদা চিংড়ী ...
>> হুহ ! এইটা বুঝি আমার পছন্দের খাবার ?
> তুমি কি এটা খেতে পছন্দ করনা , বলো ?
>> করি, কিন্তু আজকে তো আমি বলিনি যে এটা খেতে ইচ্ছে করছে ... পেটুক মহাশয়ের ইচ্ছে করেছে বলেই তিনি এনেছেন কথাটা স্বীকার করতে কি খুব কষ্ট হয় ?
> সেই যে, ছ মাস আগে আমরা গিয়েছিলাম পিকনিকে, তখন বলেছিলে না ? এ জন্যই তো আনলাম ...
>> হয়েছে হয়েছে, আমার জন্য যখন এত কষ্ট করে এনেই ফেলেছ, এবার রান্নাটাও করো না প্লিজ !!!
> এই সেরেছে ... :|
>> কি হয়েছে ?
> না মানে, তুমি বাসায় থাকতে আমি রান্না করলে মানুষ কি বলবে বলো ?
>> তুমি রান্না করছো এটা আমি ছাড়া আর কে দেখবে ? কেউ কিছু বলবে না ... জলদি শুরু করো ..
> আমি রান্না করলে যেমনই হোক খেতে কিন্তু হবে, বুঝো ...
>> ভয় দেখাচ্ছ ?
> সেদিন আমার বানানো সুজির টক ঝাল নোনতা হালুয়ার কথা মনে নাই ? অমন হলেও কিন্তু কিছু বলতে পারবে না বলে দিলাম
>> আচ্ছা বাবা ঠিকাছে, হার মানলাম ... এবার দাও তো দেখি ব্যাগটা ... চিংড়ীগুলো প্রসেস করেই রাখি .... পরে ফ্রাই করবো ...

ব্যাগ থেকে বড় বড় পা ওয়ালা গলদা চিংড়ী বের করতে করতে কপোতী বড়ই চিন্তায় পড়ে গেল ... এগুলোকে কিভাবে কি করা যায় ? যদি চিমটি দেয় ? :| .... প্রথমে বেলন দিয়ে পা গুলোকে কটাস মটাশ কের ভাঙবে বলে ঠিক করলো, কিন্তু চিংড়ীটা নিস্তেজ থাকায় সে চিন্তা মাথা থেকে বের করে দিলো ... পরেরটা বের করার সময় ভাবলো এগুলোর লম্বা লম্বা পা দেখতে সুন্দরই লাগছে ... এগুলোকে এভাবেই রান্না করে ফেলবো ... এর পর একটা একটা করে বের করে শেষটা যখন লেজ ধরে বের করতে গিয়েছে ... অমনি সেটা ছড়াৎ করে লাফিয়ে উঠতেই ... তার চেয়ে দ্রুতগতিতে হাউ মাউ করে কপোতী চিটপটাং ...

কিছুক্ষন পরের দৃশ্য ....

হাতে ডাক্তারী গ্লাভস পরে একজন ডাক্তার গলদা চিংড়ীকে শক্ত ভাবে ধরে আছে, অন্যজনও অতি অভ্যস্ত ভঙ্গীতে ওর দুটো পা কে সার্জারী করে নামিয়ে দিচ্ছে, আর দীর্য নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে বার বার বলছে ... কোন দুঃখে যে আজকে গলদা চিংড়ীর ভুত মাথায় চেপেছিল ... :|