Tuesday, September 1, 2009

এক দুরন্ত প্রজাপতির ডাইরীতে একটি গোলাপের ভালবাসা

এক দুরন্ত প্রজাপতির ডাইরীতে

একটি গোলাপের ভালবাসা


২১ শে আগস্ট, ২০০৯ ভোর ৫:৪২





সাত সকালে ঘুমের ১২ টা বাজিয়ে শুরু হলো ....ক্রিং ক্রিং ক্রিং ....

--- হ্যালো
>> কিরে কৈ তুই , কি করিস ?
--- বাসায়... ঘুমাই, ক্যান ?
>> আধ ঘন্টার মধ্যে আয় তো আমার বাসায় ... কাজ আছে
--- কি যন্ত্রনা, এখনো ঘুম ঠিক মতো ভাঙ্গলো না আধাঘন্টার মধ্যে আসব কিভাবে ?
>> আমারে তুই যন্ত্রনা বললি ?
--- না মানে , ঠিক তা না ...
>> তাইলে কি ? যন্ত্রনার দেখেছিস কি তুই, আয় একবার আমার সামনে এর পরে দেখিস
--- কি করতে চাস বলতো ?
>> এক ঘন্টা দিলাম, এর ভিতরে হাজির হবি , কথা ফাইনাল ....

অতঃপর লাইনটা কেটে গেল ... বুঝলাম ঘন্টা খানিকের মধ্যে পৌছুতে না পারলে খবর আছে , বান্দরনীটা কিছু একটা করেছে নিশ্চই .... ঝটপট ফ্রেস হয়ে, নাকে মুখে নাশতা গুজে দিলাম দৌড় ... ওর বাসায় পৌছে ডিং ডং দিতে দিতে ১০ - ১২ মিনিট লেট হয়ে গিয়েছে দেখে মনে মনে প্রমাদ গুনছি আজকে কি না জানি আছে কপালে .... কিন্তু না, আমি লেট করেছি অথচ কেউ রাগ করলো না ... হাসি মুখে দরজা খুলে তিড়িং বিড়িং করতে করতে নিয়ে চললো ওর ঘরে ... আমিও ওর পিছে পিছে চললাম, আর ভাবতেছিলাম , আল্লাই জানে ওর মনে আজকে কি প্ল্যান চলছে ... ওর ঘরে পৌছে আমাকে বসিয়ে রেখে বললো

>> এক পা ও নড়বি না এখান থেকে, আমি আসছি
--- কৈ যাস ?
>> চুপ !! একদম কথা নাই

এর পরে খিল খিল করে হাসি দিয়ে প্রজাপতির মতো উড়ে চললো অন্য কোথাও ... কিছুক্ষন পর আবার হাজির হলো হাতে বেশ বড় একটা ব্যাগ নিয়ে ... আর বললো

>> জানিস আজকাল আমার মনটা বেশ ভালো আছে
--- কিসের জন্য ?
>> আম্মু আমাকে দুটো শাড়ি কিনে দিয়েছিল ...
--- কিসের জন্য ?
>> কিসের জন্য মানে ? পরার জন্য, তার উপর কি হবে বল তো ?
--- কি আর হবে , বান্দরের ছবি নাইলে জঙ্গলের গাছপালা আঁকানো থাকবে

ভেবেছিলাম খোচাটা খেয়ে চিৎকার দিয়ে উঠবে বরাবরের মতো, কিন্তু সে তো কোনো রকম রিএ্যাক্ট না করেই হাসিমুখে বলে উঠলো

>> আরে নাহ ! এর উপরে আমি কাজ করেছি, আমার নিজের হাতে , বুঝেছিস বুদ্ধু
--- (আমি কিছুটা উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললাম) শাড়িগুলোরে গিনিপিগ বাননো কি খুব দরকার ?
>> মানে ? আমি শাড়িগুলো নষ্ট করেছি ভেবেছিস ?
--- এর চেয়ে ভাল কিছু আপাতত মাথায় আসছে না তো ...
>> তুই চুপ থাক, যে জন্য তোকে ডেকেছি তাই দেখ ...
--- আচ্ছা দেখা ...

আবার সে প্রজাপতির মতই সেই বিশাল ব্যাগ হাতে করে উড়তে উড়তে চলে গেল আন্টিদের রুমে ... একটু পরে ফিরে আসলো যখন তখন যাকে দেখলাম সে যে কে ছিল আমি নিজেই জানি না ... অপলক দৃষ্টিতে নিবিড় মনোযোগে দেখছিলাম এক অপুর্ব সুন্দর কারুকাজের শাড়িটে মোড়ানো প্রজাপতি কে ... নেচে গেয়ে সারাঘর ছুটে বেড়িয়ে আবার সে চলে গেল দ্বিতীয় শাড়ি পরে আসাতে ... আর আমি, টেনে নিলাম টেবিলের উপর রাখা ওর ডায়রীটা .... একটু পরেই পাশে সাজিয়ে রাখা ফুলদানী থেকে একটি গোলাপ নিয়ে তার ভিতর রাখতেই আরেকটি মন কাড়া কারুকাজের শাড়ি পরে যখন ও ঢুকলো সাথে সাথে ওর নোটবুক বন্ধ করে দিতে দেখে বলে উঠলো ...

>> আমার ডায়েরী পড়ছিস পড়, কিন্তু আমাকে দেখে বন্ধ করার কি আছে ?
--- না মানে , এমনি ...
>> সেখানে এমন তো কিছু নেই যা তোর অজানা ...
--- তা জানি , তবে হয়ত এমন কিছু আছে যা আমার জানা কিন্তু তোর অজানা ...
>> অসম্ভব ... হতেই পারে না
--- কখনো অসম্ভবও সম্ভব হয় ...
>> কৈ দেখি তো ...

এরপর ওর চোখের সামনে ভেসে উঠলো খুব পরিচিত এক হাতের লেখায় একটি লাইন ---

হবে কি তুমি, কোন কাঁটাওয়ালা গোলাপের সুগন্ধে বিভোর অনাবিল আনন্দে উড়ে বেড়ানো এক দুরন্ত প্রজাপতি ?




No comments: