**|| *~** বৃষ্টির ফোটায় আঁকা স্মৃতি **~* ||**
২৯ শে মার্চ, ২০০৯ রাত ২:৫১
দুপুরে জ্বরের ঘোরে ঘুমাচ্ছিলাম, এক সময় ঘুমটা ভেঙ্গে যেতেই বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছিল ... কাচের জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই দেখি ঝমঝম বৃষ্টি হচ্ছে। পাশের বাসার নিচু ছাদটাতে পানি জমে গড়িয়ে পড়ছে নিচে ... আস্তে আস্তে ড্রাইংরুমের গিয়ে জানালার পাশে দাড়ালাম ... বাসার সামনের রাস্তায় কোন পথচারী নেই, গাড়িগুলো হুসসসস করে পানি ছিটিয়ে ছুটে চলেছে ... এমন সময় দেখি ফাকা রাস্তায় ভিজতে ভিজতে অল্প বয়সী দু-জন হাতে হাত ধরে গল্প করতে করতে হেটে চলেছে ... ওদের হাতে হাত ধরে হেটে চলা দেখতে দেখতে নিজেই যেন হারিয়ে গেলাম ঐ বয়সে নিজের স্মৃতি পাতায় ...
তখন বর্ষাকাল , আকাশ ফেটে যখন তখন বৃষ্টি নামে ... সামনে টেষ্ট পরীক্ষা তাই পর পর কয়েক রাত ঘুমাইনি, একটানা জেগে পড়াশুনা করার কারনে শরীরটা বেশ কাহিল হয়ে পড়েছিল...শরীর মন একটু ঘুমের জন্য আকুপাকু করছিল.... বাইরে বেরুতে একেবারেই ইচ্ছা করছিলো না ... তবুও তার মাঝেই একজনের ফোনের কারনেই বের হতে হয়েছিলো সেদিন --- উপলক্ষ্য - তার বান্ধবীর জন্মদিনের গিফট কিনতে হবে এবং তার একটি ই কথা গিফট কিনতে হবে আমাকে সাথে করে ...
একটানা পড়ার পরে একটু ঘুরে আসলে মন্দ হয় না ভেবেই সেদিন বেরিয়েছিলাম ওর সাথে ... ঘর থেকে বের হতেই দেখি আকাশ মেঘলা... বৃষ্টি হতে পারে ... ঠান্ডা বাতাসে একটু শীত শীত করছিল ... এ জন্য গায়ে রেইন কোট টা হাতে নিয়েই বের হলাম ... ওর বাসায় গিয়ে কলিংবেলে ডিং ডং দিতেই হাসিমুখে বের হয়ে বললো ভিতরে আসবি নাকি এখনই বেরুবি ? ...
বললাম -- উহু , বসলে দেরী হবে, এর চেয়ে চল যাই ...
হালকা কলাপাতা রঙ্গের জামায় ওকে বেশ সুন্দর লাগছিলো সেদিন ...
আমি বললাম --- কিরে নতুন জামা নাকি ?
ও বললো -- হু , আম্মা কিনে দিয়েছে , আজকে প্রথম পরলাম
আমি বললাম --- সুন্দর জামা,.... নে চল যাই,.... বাইরে বৃষ্টি হতে পারে কিন্তু সাথে কিছু নিয়ে নিস...
বান্দরনীটা হেসে বললো --- বৃষ্টির ভয়ে সুন্দর জামাটার উপরে কিছু পরা কি ঠিক হবে বল ?
এর পরে তাকে যে আর এ ব্যাপারে কিছু বলে লাভ হবে না তা নিশ্চিত জেনেই আমি ও ওর কথা মেনে নিলাম .... রিক্সা করে একের পর এক কয়েকটি মার্কেট ঘুরে এ দোকান সে দোকান দেখে কিছুই তার পছন্দ হচ্ছে না দেখে বললাম আর কত ঘুরবি, কোথাও একটু বসি চল ... ওমা ! যেই না এ কথা বলেছি মুখটা একেবারে অন্ধকার করে বলে --- আমার সাথে ঘুরতে তোর বোর লাগে ?
আমি বললাম -- না না বোর লাগে না, একটু ক্লান্ত লাগছে ... চল কিছু খেয়ে নেই এর পরে না হয় আবার ঘুরলে হবে...
এর পর অনিচ্ছা স্বত্বেও মুখ ভার করেই চললো আমার সাথে ... হঠাৎ বলে --- আজকে চল মধুর ক্যান্টিনে ছানার মিষ্টি খাব । ওর মন ভাল হবে ভেবে আর দ্বিতীয় কথা না বলেই রিক্সা নিয়ে নিলাম ... মেঘ গুড়গুড় করছিল বেশ কিছুক্ষন ধরেই, আমাদের রিক্সা নীলক্ষেত পার হতেই যেন আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নামলো ... আমার হাতের রেইনকোট টা এগিয়ে দিয়ে ওকে বললাম গায়ে দিতে ... সেটা দুরে সরিয়ে দিয়ে আমায় জানালো --- তার শখ চেপেছে, বৃষ্টিতে ভিজবে ...
আমি বললাম --- তুই গায়ে দিবি না ? ...তাইলে এটা আমিই গায়ে দিলাম কিন্তু
ও বললো -- আজকে তোরসাথে ভিজতে ইচ্ছা করছে .... আমার সাথে আজকে একটু বৃষ্টিতে ভেজ না .... দেখ খুব ভালো লাগবে...
একটু আগেই মন খারাপ করেছে , তার উপরে এমন আদুরে আবদার ক্যামনে না করি ? ..... তাই বললাম -- আচ্ছা চল ভিজি .... তখনই সে রিক্সাওয়ালাকে থামতে বলে রিক্সাও ছেড়ে দিলো ... তার কথা হলো -- হেটে হেটে বৃষ্টিতে ভেজার আনন্দই আলাদা তাই আমাদের হাটা উচিৎ....
এরপরে অনেক্ষন বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে দুজনের হেটে বেড়ালাম ক্যাম্পাসের ভিতরের প্রায় সব জায়গাতে ... শুরুতে আমার একটু শীত শীত লাগাটা কেমন যেন বেশী শীত লাগায় পরিনত হয়ে যাচ্ছিলো ... তবুও ভিজেই চললাম আর অবাক নয়নে দেখতে থাকলাম বৃষ্টি পাগলীর মিষ্টি মুখের উচ্ছল আনন্দের বাহার।
বৃষ্টি একটু কমতেই ওকে বললাম --- গিফট হিসেবে তোর বান্ধবীকে বই উপহার দিলে কেমন হয় ? ....
ওমা ! এক কথাতেই সে রাজি হয়ে গিয়ে কয়েকটা উপন্যাসের বই কিনে বললো -- চল বাসায় যাই, সব ভিজে আছে , এভাবে গায়ে শুকালে ঠান্ডা লাগতে পারে ... চেন্জ করতে হবে...
আবার রিক্সার করে ওকে বাসায় পৌছে দিয়ে দেখি আমার কেমন জানি খারাপ লাগছে...তাই আর কোথাও না দাড়িয়ে সোজা চললাম নিজের বাসায়। আসার সময় বললাম -- শোন, একেবারে পরীক্ষা শেষ করেই তবে দেখা করবো এর মাঝে আসবো না কিন্তু। সে ও বললো -- পরীক্ষার যেন ভাল হয় নাইলে খবর আছে , আর এর মাঝে সে আর ফোন ও করবে না, দেখাও করতে বলবে না। এর ২ - ৩ দিন পরেই টেষ্ট পরীক্ষা শুরু হলো ...যথারীতি পরীক্ষা দিলাম এবং সপ্তাহ খানেক পরে রেজাল্ট আসলে দেখা গেল প্রথম দুটো পরিক্ষায় পাস মার্কের অল্প কিছু বেশী পেয়েছি ...বাকিগুলো ঠিক আছে...
এই না দেখে আমার সুইট দোস্ত রনাঙ্গিনীর রূপ ধারন করে একদিন আমাকে কঠিন বকা দিয়েছিল ... বলেছিল --- আমি পরিক্ষার কয় দিন তোর খবর নেইনি বলে তুই ঠিক মতো পড়িসনি নাকি ? ... নাকি অন্য কিছু নিয়ে এমন ব্যস্ত ছিলাম যে রেজাল্ট খারাপ হয়েছে ? ... সেই সাথে আরো হুমকী দিলো ---- এমন খারাপ রেজাল্ট আর কখনো করলে সে নাকি আমার সাথে আর কখনো কথাই বলবে না।
এতদিন পরে ওর বকার কথা মনে পড়তেই মনের মাঝে অন্য রকম এক আনন্দের দোলা দিয়ে গেল, মনে হলো আহা ! কি মধুর ছিল সেই গাল ফোলানো অভিমানের বকা গুলো ...
তবে আজ পর্যন্ত ওকে যে কথাটা বলা হয়নি, তা হলো --- বৃষ্টিতে সেদিন ভিজে বাসায় ফেরার পরে সেদিন রাত থেকেই আমার অনেক জ্বর হয়েছিল যা আমাকে প্রায় সপ্তাহ খানিক ভুগিয়েছিল ......এবং আমাকে প্রথম দুটো পরীক্ষা দিতে হয়েছিল ১০২° - ১০৩° জ্বর নিয়ে ...

No comments:
Post a Comment