মেহেদী রাঙ্গানো হাতের ছোঁয়া
২৮ শে এপ্রিল, ২০০৯ রাত ২:০০

মেকি হাসি টা ফুটিয়ে তুলতে খুব একটা সমস্যার মুখে পড়তে হয়নি তাকে ... মনের চাপা অপ্রত্যাশিত সত্যটাকে স্বযত্নে লুকিয়ে অনাবিল হাসিতে চারিদিকের মানুষগুলোকে আনন্দে ভরিয়ে দিয়ে ধীরে ধীরে একপাশে সরে যেতেই বেদনার কালোছায়া ছেয়ে গেল ওর অবয়ব জুড়ে ... অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে আংগুলের অগ্রভাগ দিয়ে চোখের কোন থেকে চিকচিকে পানির ফোটা টি কে দুর করে দিতেই মনে হলো গলাটা বেশ ভারী অনুভুত হচ্ছে ... ওয়েটারের কাছ থেকে ইশারায় এক গ্লাস পানি চাইতেই লক্ষ্য করলো আড়চোখে কেউ কেউ তাকে লক্ষ্য করছে ... হয়তো এখানের কারো কারো গসিপের মধ্যমনি সে ... তবুও আজকে সে এখানে এসেছে শুধু নিজের সবচেয়ে কাছের মানুষটির জন্য ... তার অনুরোধ কোনভাবেই টলাতে পারেনি সেই দিন যখন সে বলেছিল -- আমার জীবনের সব দুঃখের সময় তোকে কাছে পেয়েছি, আর এমন আনন্দের দিনে তুই পারবি আমার থেকে দুরে থাকতে ?
এক অন্যরকম ঘটনার মাধ্যমে ওদের পরিচয় হয়েছিল একদিন, কাছে আসার সুযোগ থাকলেও তখন কাছে আসা হয়নি, হয়তো সবচেয়ে কাছে আসার জন্যই সেদিন বিধাতা নিজেদের মধ্যে দুরত্বটা বজার রেখেছিলেন ... আর এর পরে যখন কাছে আসা হলো, তখন এতটাই নিবিড় সম্পর্ক তৈরী হয়েছিল যে তখন থেকেই আজকের দিনটির জন্য দুজনের মাঝেই একটি ভয়ের জন্ম নিয়েছিল ... সময়ের সাথে সাথে একজন সেটিকে অতিক্রম করতে পারলেও অন্যজন ধীরে ধীরে গুটিয়ে যাচ্ছিলো নিজের ভিতরের এক অপরিচিত জগতে ... সময়ের সাথে সাথে অপরজন যখন তার পথ চলার সাথীকে বেছে নিল, তখন গুটিয়ে যাওয়া অনুভুতিগুলো বাইরে আসতে চাইলেও সে ওগুলোকে বাইরে আসার অনুমতি দেয়নি ... সযত্নে লুকিয়ে রেখেছিল তার আনন্দ-মুখোশের অন্তরালে ... ঠিক যেমন আজও নিজের সমস্ত আবেগকে কফিন বদ্ধ অন্ধকারে রেখে নিজের প্রানহীন দেহখানিকে টেনে এনেছে এই ঝলমলে আলোকসজ্জা মাঝে ...
ঘাড় ঘুরিয়ে ওদের দুজনের জুটিকে দেখে একধরনের চাপা কষ্ট বুকে অনুভুত হলেও তাকে শক্ত মুঠোবদ্ধ হাতে দমিয়ে ঠোটে একচিলতে হাসি ফুটিয়ে ওদেরকে একসাথে বুকে জড়িয়ে ধরতেই হু হু করে কেদে ওঠা মনটাকে আর দমিয়ে রাখা গেল না ... "তোরা দু জন অনেক অনেক সুখি হ" কথাটা বলেই আনমনে নিজের অসাড় শরীরকে বয়ে নিয়ে গেল ঝলমলে আলোর বাইরের আধো-অন্ধকার কোনে ... আজ বড় একা, বড় অসহায় লাগছে তার ...
ডুকরে কেদে উঠতেই বন্দী আবেগগুলো যেন ফুঁসে উঠতে লাগলো বাইরে বেরুনোর জন্য ... এ সময়ে যেন নিজেকে সংবরণ করা বড় কষ্টকর ... কিছুক্ষন পর --- কাধের উপরে পেল চুড়ির রিনিঝিনি শব্দের সাথে এক মেহেদী রাঙ্গানো শীতল হাতের স্পর্শ, ঘাড় ঘুরিয়ে তার মুখটি দেখতেই যেন মেরুদন্ড বেয়ে নেমে গেল এক অনাবিল শান্তিধারা ... একই সাথে এক অতি পরিচিত কন্ঠস্বর বলে উঠলো -- খুব বেশী কষ্ট পেয়েছিস, তাই না ? আমার দুঃখ যে সবসময় সমানভাবে বেটে নিতো সে আজ আমার আনন্দের দিনে কি মন খারাপ করে থাকবে ?
কয়েক মুহুর্ত নিরবতাকে ভেঙ্গে ও বলে উঠলো -- আমি যে তোর সত্যিকারের বন্ধু, আমি আজ তা প্রমান করে দিবো ... সত্যি সত্যি সত্যি ।।
No comments:
Post a Comment