Tuesday, October 6, 2009

ছড়ায় ছড়ায় অন্তুর বাস্তব শিক্ষা লাভ

ছড়ায় ছড়ায়

অন্তুর বাস্তব শিক্ষা লাভ

০৬ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ৩:২০





সেদিন জ্বর নিয়ে কাজে গিয়েছি, কাজ করতে করতে একে তো রাত হয়ে গেল সেই সাথে জ্বর বাড়তে লাগলো , ফলাফল - রাতে ফেরার মত অবস্হা ছিল না, তাই ওখানেই থেকে গেলাম রাত টুকু ... পরের দিন বাসায় যাইনি শুনে এক আঙ্কেল বয়সী আরেক কো-ওয়ার্কার কে নিয়ে আমার পাশে বসলো ,

বসে বললেন --> অন্তু রাতে যাও নাই বাসায় তো কেউ কিছু কয় নাই ?

আমি কইলাম --> বাসায় আর কেউ নাই যে খবর নিবে বাসায় ফিরোনা ক্যান ...

উনি কইলো --> আমার অবস্হা কি দেখসো ? একটু দেরী হইলেই ফোনের পর ফোন আসতে থাকে, কৈ আছি, কি করি আরো কত কি ... তোমার ও একই অবস্হা হয়ে যাবে ...

আমি আসকাইলাম --> ক্যামনে ?

উনি বললেন --> ক্যামনে ? তাইলে একটা প্রচলিত ছড়া শুনো --

যখন তোমার দুই পাও (পা)
যেখানে খুশী সেখানে যাও

যখন তোমার চার পাও (পা)
আমায় সাথে নিয়ে যাও

যখন তোমার ছয় পাও (পা)
বাব তুমি কৈ যাও ....


এইবার বুঝতে পারসো ?



ছড়া শুনতে শুনতে অন্তুর মনে ভেসে ওঠা কয়েকটি দৃশ্যের ছবি অনেকটা এই রকম ---



প্রথম দৃশ্য




দ্বিতীয় দৃশ্য





শেষ দৃশ্য





ছবি কৃতজ্ঞতায় -- গুগল মামা

শতবর্ষ পেরিয়ে নতুনের প্রত্যাশায়

শতবর্ষ পেরিয়ে

নতুনের প্রত্যাশায়

০২ রা অক্টোবর, ২০০৯ বিকাল ৩:৫৫






চায়ের কাপে পড়ে থাকা
তলানীটা যেন
এঁকে দেয় জীবনের
শেষ মূহুর্তের জল ছবি

পুরোনো পিরিচে রাখা
ভাঙ্গা কাপ টিতে যেন পাওয়া যায়
খুব পরিচিত কোন একটি জীবনের
জীবন্ত প্রতিচ্ছবি

এক পা ভেঙ্গে দাড়িয়ে থাকা
টি-টেবিলটা যেন
পরিপূর্ন এ জগৎ সংসারের
অবাক বিশ্ময়

নড়বড়ে ঘুনে ধরা ইজি চেয়ারটা
জীবনের শেষ মূহুর্তেও
কালের সাক্ষী হয়ে বয়ে চলেছে
অপ্রয়োজনীয় কিছু বোঝা

জানালার পাশ ঘেষে পড়ে থাকা রংচটা পর্দাটা
যেন কোন পরাজিত সৈনিকের মত
গুটিয়ে রেখেছে নিজেকে

তার কোল ঘেষে
গ্রীলের ফাঁক দিয়ে
ছড়িয়ে দেয়া হলো
ধুসর চোখের বিবর্ন স্বপ্ন

ব্যাথিত সময়ের উৎসুক মন
মেঘাচ্ছন্ন হৃদয়ের সুপ্ত বাসনায়
শতাব্দীর শেষ প্রান্তে দাড়িয়ে
নতুন সূর্যোদয়ের অপেক্ষায়....



আত্মোপলব্ধীর পথ ধরে ছুটে চলা অন্তর্দ্বন্দ অতঃপর

আত্মোপলব্ধীর পথ ধরে

ছুটে চলা অন্তর্দ্বন্দ অতঃপর

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:২০



অনেকে নাকি নিজের মনের সাথে কথা বলতে পারে, কৈ আমি তো কখনো এমনটা করিনি, জিনিসটা ভাবতে ভাবতেই কেন জানি মনে হলো জিনিস টা করলে খুব একটা খারাপ হবেনা মনে হয় ... সুতরাং চেষ্টা করেই দেখা যাক ....

আমি : মন তুই কৈ ?
কারো কোন সাড়া শব্দ নাই ... তাই আমি আবার তার সাথে কথা বলার জন্য নিজের সম্পূর্ন মনোযোগ দিতে চেষ্টা করলাম ... আর আবার জিজ্ঞেস করলাম

আমি : আমার ছায়া, আমার মন , কোথায় তুই ?
হঠাৎ মনে হলো কেউ যেন ভিতর থেকেই উত্তর দিলো ... তার অস্তিত্ব প্রকাশ করে যেন জানান দিলো, সে আছে ....

আমি : আমি এমন কেন রে ?
মন : কেমন ?
আমি : আমি সবার মাঝে থেকেও নিজেকে সবসময় আড়াল করে রাখি কেন ?
মন : কারন তুই সাধারন না ...
আমি : মানে ?
মন : মানে তুই সবার মত দেখতে হলেও আসলে তুই অন্যরকম এক জীব
আমি : তবে আমি এই জগতে কি করছি ?
মন : খুব সম্ভব ভুল করে চলে এসেছিস ...
আমি : ধুর , কি সব আবোল তাবোল কথা বলছিস
মন: আমি যা বলছি সেটাই ঠিক, তুই নিজেকে আর কনফিউজড করিস না ... সত্যকে মেনে নে ...

আমি : সত্য টা কি ?
মন : তুই মানুষরুপী এক অসামাজিক জীব ...
আমি : প্রমান কর ...
মন : তোর এই মুহুর্তে বন্ধু সংখ্যা কত ?
আমি : সে তো অনেক আছে
মন : নাহ ! ভাল করে ভেবে বল ... যাদের সাথে তোর যোগাযোগ আছে, বন্ধুর মত তাদের সাথে আছিস এই মুহুর্তে
আমি : হাতে গোনা অল্প কয়েকজন ... খুবই অল্প কয়েকজন
মন : তুই কতজনের সাথে নিয়মিত কথা বলিস ?
আমি : সে সংখ্যা তো এক আঙ্গুলের বেশী পার হবে না ...
মন : ফোনে কাজ ছাড়া গল্প করিস আগের মত ?
আমি : নাহ ! কাজ ছাড়া কারো ফোন ই এ্যাটেন্ড করি না , করলেও দু - তিন জনের
মন : গত এক - দুই বছরে বেড়াতে গিয়েছিস কোথাও ?
আমি : মনে পড়ে না
মন : রাতে ঘুমাস ?
আমি: নাহ
মন : আর কাউকে কেয়ার করিস ?
আমি : মনে হয় না ...
মন : কারো কষ্ট দুর করতে পারিস ?
আমি : নাহ !

মন : আগে যেমন পঙ্খীরাজ উড়ায়ে লং ড্রাইভে বের হতি আজকাল আর তা করিস ?
আমি : নাহ , শেষ কবে গেছি নিজেরই মনে নাই
মন : বই পড়িস ?
আমি : নাহ
মন : সামাজিক কোন আচার অনুষ্ঠানে যাস ?
আমি : নাহ
মন : এক বিল্ডিং এ তোরা যারা থাকিস ওদের সাথে শেষ কবে কথা বলেছিস ?
আমি : মনে নাই ... পিচ্চিদের সাথে দেখা হলে দিনে এক দুইটা কথা হয়, বড়দের কারো সাথে ঈদের দিন ছাড়া মনে হয় মাস খানেকের বেশী হবে কথা বলা হয়নি ...
মন : তোর সবচেয়ে প্রিয় যায়গা কোনটা ?
আমি : দরজা বন্ধ অবস্হায় আমার বেডরুম ... যেখানে আর কারো ঢুকার অনুমতি নেই
মন : আর বাইরের সবচেয়ে প্রিয় যায়গা ?
আমি : নির্জন কোন নদীর পাড়ে একলা বসে থাকতে
মন : তোর আশে পাশে কি তাহলে সমাজের ছিটে ফোটাও রাখতে দিয়েছিস ?
আমি : মনে হয় না
মন : নিজেকে কি সমাজের একটা অংশ হিসেবে রেখেছিস ?
আমি : মনে হয় না
মন : তাহলে তুই বল, তুই কি এই সমাজের কেউ ?
আমি : যথেষ্ট সন্দেহ আছে ...
মন : ঠিক বলেছিস, এবার কি বুঝেছিস তুই যে একটা অসামাজীক প্রানী

এবার সত্যি এই অসামাজিক প্রানীটা চিন্তায় পড়ে গেল ... নিজের ভিতরের কথাগুলোকে সে কি পারবে কখনো ইগনোর করতে ? তবে কি ওগুলোই সত্যি ? পারবে কি কখনো এই সমাজের সাথে মিশতে ? গড়তে পারবে নিজেকে অসামাজিক প্রানী থেকে সামাজিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে ? ... হয়তো হ্যা , অথবা না ....




ঈদের চাঁদের মাঝে লুকিয়ে থাকা পূনর্জন্ম

ঈদের চাঁদের মাঝে

লুকিয়ে থাকা পূনর্জন্ম

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:৩০






সকাল ৭টার এ্যালার্মটা প্রতিদিনের জন্যই দেয়া থাকে তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো সেই এ্যালার্মে ওর ঘুমটা খুব কম দিনই ভেঙ্গেছে , সবসময় দেখা যায় তার ঘুমটা দু চার মিনিট আগেই ভেঙ্গে যায় আর এ্যালার্ম বাজার আগেই তা বন্ধ করে দেয় ... আজ অনেক দিন পর... উহু , অনেক দিন বললে বোধ হয় ভুল হবে অনেক বছর পর ঘুমে যেন তার চোখ আটকে আসছিল, এ্যালার্মের শব্দে আজকে যেন উঠতেই মন চাইছিল না, ঘুমের ঘোরেই মন বলছিল এই কর্কশ ডাকের যায়গাতে যদি কোন মধুর শব্দে আজ ঘুম ভাঙ্গতো তবে হয়ত আজকের সকালটা হয়ে উঠতো অন্যরকম সুন্দর ... অন্যসময়ের মতই, গত একমাসে প্রতিদিন সেহরী খেয়ে একটু ঘুমানোর অভ্যাসটার সাথে বেশ মানিয়ে নিয়েছে সে, তাইতো এখন পর্যন্ত কখনো তার কাজে যেতে দেরী হয়নি তবে আজ হঠাৎ এই চিন্তার ঘোরের কারনেই হয়ত ১৫ মিনিট দেরিতেই ঘুমটা ভাঙ্গলো ... ত্রস্ত পায়ে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেস হয়ে সুনিপুন হাতের সুক্ষ কারুকাজে নিজেকে রেডি করতে কখনোই তার ১৫ থেকে ২০ মিনিটের বেশী লাগে না ... আজও তার ব্যাতিক্রম না হলেও কেন যেন মনের মাঝে এক অন্যরকম অনুভুতি দোলা দিয়ে যাচ্ছিলো .... ঠিক ৭:৪৫ এ দরজায় তালা লাগিয়ে করিডোর দিয়ে হাটতে হাটতে এত বছরের পরিচিত যায়গাটাকে যেন নতুনের মত মনে হচ্ছিলো ... এটা কি সকালে ১৫ মিনিট দেরি হওয়ার কারনে মনে হতেই হাত ঘড়িতে সময়টা দেখে নিশ্চিত হলো -- নাহ ! আজ অফিসে যেতে দেরী হবে না, হাতে যথেষ্ট সময় আছে ...

করিডোর পার হয়ে লিফটের সামনে আসতেই প্রতিদিনের সেই পরিচিত মুখগুলোকে দেখতে পেল যারা একসাথে একই সময়ে লিফটে করে নিচে নামে ...মিস্টার আর মিসেস এরিক তার আদরের মেয়ে ক্যারিন, আর তাদের পাশে দাড়িয়ে আছে কলেজগামী আরেক প্রতিবেশীর মেয়ে ... সেই সাত আট বছর ধরে দেখছে ওকে তবুও আজ যেন ওর নামটা মনে করতে পারছে না ,নিজের মনে নিজেই প্রশ্ন করে বসে ওর নামটা যেন কি ? ... কাছে আসতেই যন্ত্রচালিত মানবের মত সবাইকে শুভ সকাল বলে দাড়িয়ে গিয়ে আজ লক্ষ্য করলো ওরাও শুভসকাল বলে প্রতিউত্তর করে, কিন্তু সবার মুখে থাকে এক অন্যরকম স্নিগ্ধতার পরশ ... মনে মনেই আবার প্রশ্ন করে বসলো -- এই জিনিসটা এত বছরেও কেন আমার চোখে ধরা পড়লনা ?...

সামান্য কিছুক্ষন পর, অভ্যস্ত হাতে পার্কিং লট থেকে হুশ করে বেরিয়ে যেতে যেতে খেয়াল করলো আজকের সকালটা একটু অন্যরকম লাগছে ... জানালা টার উপর দিকে অল্প একটু নামিয়ে দিতেই সকাল বেলার টাটকা হাওয়া ওর গায়ে যেন ছুয়ে দিলো এক অনাবিল শান্তির ছাপ ... মনটা যেন একেবারেই ভাল হয়ে গেল সাথে সাথে, অথচ কাল রাত থেকে সে অন্যরকম কিছু প্ল্যান করছিল আজকের জন্য ... প্ল্যানটার কথা মনে পড়তেই আস্তে আস্তে সে যেন ফিরে চলছিল সেই আগের মানুষটির মাঝে যাকে সে তিলে তিলে গড়ে তুলেছে গত সাত আট টি বছর ধরে ...যার ভিতর থেকে ধীরে ধীরে এক একটা করে বের করে দিয়েছে অনুভুতির ছিটেফোটা ... নিটল কালো গভীর দুটি চোখে প্রতিস্হাপন করেছে নিশ্চল পাথরের স্হবিরতা ... মন থেকে মুছে ফেলেছে আনন্দ নামক জিনিসটি ... সবার মাঝে থেকেও এক অদৃশ্য দেয়াল তৈরি করে নিজেকে আলাদা করে নিয়েছে সবার কাছ থেকে ... হুমমম ... এক দু জন নয়, সবার কাছ থেকেই সে আজ দুরে ... শারিরীক আর মানসিক, দুভাবেই ... বস্তু জগতের কঠোরতা আপন করে নেয়ার বিনিময়ে দুর করেছে মনের সুপ্ত ইচ্ছেগুলো, ভালোলাগা গুলো আর সেই সাথে ভালবাসা ... নাহ ! এ জিনিস গুলো আজ কেন তাকে এভাবে ভাবাচ্ছে ? এগুলো সে তো কখনো চিন্তা করে না ... তবে আজ কেন করছে ? অফিসে গিয়ে কালকের কাজের একটা প্ল্যান তৈরি করতে হবে, ঠিক কি কাজ করলে নিজেকে সকাল থেকে রাত দুপুর পর্যন্ত ব্যাস্ত রাখা যাবে তা নিয়ে বরং চিন্তা করা যাক ... এবার সে ঐ দিকেই আবার নিজের মনোযোগকে নিবদ্ধ করার পাশাপাশি হয়ে উঠলে লাগলো সেই চিরাচরিত অন্যমানুষে ...

অফিসে ঢুকতেই আজকে দেখে কাজের চাপ বেশ কম, সবাই যার যার কাজ বেশ আগে ভাগেই শেষ করে রেখেছে, মুসলমান কলিগ গুলো সবাই আজ বেশ সকালে এসেই কাজে হাত লাগিয়েছে, যেন একরকম উঠে পড়ে লেগেছে দুপুরের আগেই আজকের কাজগুলো শেষ করে কালকের কাজের কিছু অংশ শেষ করে একদিনের ছুটি নিয়ে ঈদের দিনটা আনন্দে কাটাতে পারে ... সবার মুখেই এক অন্যরকমের পরিতৃপ্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে , এক মাস সিয়াম সাধনার পরে কাল ঈদ ... বিদেশ বিভুইয়ে অইসলামিক দেশে ঈদের জন্য একটা দিনের বেশী ছুটি পাওয়াটা কল্পনার ব্যাপার তবে ঈদের দিন ছুটিটা সবাই যে ভাবেই হোক নিয়ে থাকে ... নন-পেইড ছুটি হলেও নিয়ে নেয় ... কিন্তু সে অন্যরকম একজন, তাই তার কাজ ও অন্যরকম ... সে ছুটি নেয়, সবার মত সেই ঈদের দিন ছুটি নেয় তবে মাত্র কয়েক ঘন্টার জন্য ... ঈদের নামাজটা পড়ে সে সোজা চলে আসে কাজে, এরপর গভীর রাত পর্যন্ত নিজেকে ব্যাস্ত করে রাখে কাজের মাঝে যাতে কোনভাবেই ঈদের পুরোনো স্মৃতিগুলো ওকে তাড়া করে নিয়ে না যেতে পারে সেই অসামান্য আনন্দের মুহুর্তগুলোতে যখন ঈদের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যেত রমজানের আগে থেকেই ... কাছের বন্ধুরা সব এক ডিজাইনের পান্জাবী, স্যান্ডেল আর চাদর পরে ঈদ করবে বলে পুরো রমজান মাসটি দল বেধে ঢাকার প্রতিটি শপিং সেন্টার চষে ফেলতো ... একটাও যদি কম পাওয়া যেত তবে সে ডিজাইন যতই পছন্দের হোক না কেন বাদ দিতে এক সেকেন্ডও কার্পন্য করতো না, ঈদের দিন থেকে নিয়ে পরের দুই তিন দিন একটানা বেষ্ট ফ্রেন্ডগুলোর সাথে কাটিয়ে তৃতীয় বা চতুর্থ দিনে ঘরে ফিরে আম্মুর অভিযোগ শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে যেত " সেই ঈদের দিন নামাজ পড়ে এসে একটু খেয়ে বের হয়েছিলে আর দুদিন পরে বুঝি ক্ষিদে পেয়েছে ?" ... এর পরে এমনি আদরের বকাগুলো শুধু সে না, বরং তার কাছের বন্ধুগুলোকেও খেতে হতো সবকটা মায়ের কাছ থেকে, কখনো কখনো ঈদির বদলে সবার পিঠে পড়ত গোটা কয়েক ধুমধাম কিল ... হাসতে হাসতে গড়াগড়ি দিতে দেখে মায়েদের মনগুলো কেমন করে যেন গলে যেত, পরম মমতার আদরে ভরে দিতেন সবকটা ছেলেগুলোর জীবন ... সব ক'জনের বাবা একরকম ছিলেন না তবে জানতেন এই বাদরের দল ঘরে ঢুকলে তাদের পকেটের উপর হামলা হবেই, এ ক'দিন একটানা ঘুরাঘুরি করে নিশ্চয়ই ওদের পকেট খালি বলেই ঘরে ঢুকেছে, তাই তারাও আগেভাবে নিজের পকেটগুলোকে রেডি করে রাখতেন যাতে "চাহিবামাত্র নোটগুলোর আসল বাহকদের হাতে সেগুলো হস্তান্তর করা যায়" ... নাহ ! আজ এত বছর পরে কেন এসব মনে পড়ছে, সে তো সবার থেকে এতদুরে আছে বলে এসব পুরোনো স্মৃতি মনে করতে দুঃখ বাড়াতে চায় না, যে জিনিস আর কখনো ফিরে পাবার নয় তার আশা কেন করবে সে ? এ জীবনে কষ্ট পাওয়ার মত অনেক কিছুই আছে, আর বাড়ানোর দরকার নেই, এ কথাটিকেই মনে রেখে নিজের জীবন থেকে বছরের দুটি কষ্টের দিন গুলোকে অতি সন্তর্পনে দুরে রেখে চলেছে প্রতিবার ... ঈদ এখন আর তার জীবনে আনন্দ নিয়ে আসেনা , বরং তা যেন আসে স্মৃতির সুঁচালোর কাঁটার সুতীক্ষ্ণ খোচায় ওকে রক্তাক্ত করে তুলতে ...

এসব ভাবতে ভাবতেই আজ কখন যে দুপুর গড়িয়ে গেল ভেবেই পেলনা সে ... সেল ফোনে টেক্সের শব্দে চিন্তার রেশটা কেটে যেতেই দেখে আব্বু আম্মু একসাথে নাম লিখে ম্যাসেজ দিয়েছে, কাল আমাদের ঈদ, ঈদ মোবারক ... সাথে সাথে সেল ফোন থেকেই ডাইরেক্ট ফোন করে তাদেরকেও ঈদের মোবারকবাদ দিয়ে শক্ত চোয়ালে ফুটিয়ে তোলা মৃদু হাসির শব্দে ওদের মন ভরিয়ে দিয়ে লুকিয়ে রাখলো নিজের সব দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রনা ... এর কিছুক্ষন পরে এক আরেকটি টেক্সট ... ""আজ আমার আকাশে ঈদের চাঁদ উঠেছে, তোমার আকাশেও নিশ্চই উঠবে,কখনো না বললেও আমি জানি তুমি ঈদের দিনে কেমন করে কাটাও, তোমার যেভাবে খুশী তুমি সেভাবে নিজের ঈদের দিনটি কাটাও তাতে আমি কিছুই বলবো না, শুধু একটা অনুরোধ - অন্তত এবারের ঈদের চাঁদটা কি তুমি আমার জন্য দেখবে ?""

পরিচিত এই কাছের মানুষটা কখনোই তার কাছে কিছু চায়নি, আজ কি মনে এমন আবদার করলো সে ? সে কি জানে না এই কাজটা করতে তার কি পরিমান কষ্ট হবে ... সে কি সব যেনেও বুঝতে চায় না নিজের সাথে কি পরিমান যুদ্ধ করে তাকে এই কাজটা করতে হবে ... আজ সে নিজেও বুঝতে পারছেনা এই টেক্সট টি যেন তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে সেই পুরোনো আনন্দে উচ্ছল ঝলমলে দিনগুলোতে ... অনেক করেও নিজেকে যেন আর বেঁধে রাখতে পারছে না অদৃশ্য সেই দেয়ালের মাঝে , যা এত বছর ধরে তিলে তিলে সে নিজেই গড়ে তুলেছিল নিজের চারপাশে ... মাথাটা যেন আজ আর নিজের নিয়ন্ত্রনে নেই ... অনেকটা ঘোরের মাঝেই সে ঐ কাছের মানুষটিকে টেক্সট রিপ্লাই দিয়ে বসলো -- "আমার মনে কেন যে এমনটা হচ্ছে ঠিক জানি না, তবে আজ সত্যি সত্যি তোমার জন্য ঈদের চাঁদ দেখতে খুব ইচ্ছে করছে"



বন্ধুর বৌ এর চেহারা আজ যেন এক জীবন্ত প্রশ্নবোধক চিহ্ন !!!

বন্ধুর বৌ এর চেহারা

আজ যেন এক

জীবন্ত প্রশ্নবোধক চিহ্ন !!!

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:১১




বহুদিন পরে সেল ফোনে একটি পুরোনো নম্বর থেকে কল দেখে প্রথমে উৎসাহী আর তারপরে কোন এক অজানা কারনে আতংকিত হয়ে উঠলাম। উৎসাহের কারন হলো বিয়ের পর থেকে এই নম্বরের মালিক আমাকে কল করা একপ্রকার কমিয়েই দিয়েছে আর আতংক এই কারনে যে, কোন না কোন ঝামেলা ছাড়া সে আমাকে কল দেয় না। সুতরাং কি হবে, কি হইসে, এসব ভাবতে ভাবতেই রিসিভ করলাম আমার বন্ধুর কলটা ....

>> হ্যালো ...
---> অন্তু কেমন আছিস
>> আমি ভাল , তোর খবর কি ?
---> এইত্তো, চলে ...
>> মানে ?
---> আর কইস না, জীবনটা একেবারে তেজপাতা হয়ে গেল ...
>> সে আবার কি অবস্হা ?
---> না রে, তেজপাতা না বলে পাতলা ডাইল বলা ভাল ...
>> শোন, উপমা ছাড় আগে ঠিক করে হইসে কি ?
---> আমি দোস্ত কোয়েশ্চেন সাইনে আটকে গেছিরে :|
>> আবার ? ... কি হইসে খুলে বলবি ?
---> তোর ভাবীরে চেহারা দেখলে এখন খালি মনে প্রশ্ন জাগে ...
>> আগে তুই তারে দেখলে কনফিউজড হইতি আর এখন প্রশ্ন জাগে ?
---> আসলে ওর চেহারাই এখন আমার কাছে এক প্রশ্নবোধন চিহ্ন হয়ে গেছে রে
>> খুলে বল আবার কি হইসে ...

---> এই মনে কর সেদিন উইকেন্ডে দুজনে উঠেছি সকালে, ভাবলাম অনেক দিন পরে দুজনেই বাসায় আছি একসাথে ব্রেকফাস্ট বানায়া খাই, অফারটা দেয়ার সাথে সাথে লুফে নিয়ে সে বললো, রুটি তুমি বানাও আমি সব্জি ভাজি আর কফি বানাই আচ্ছা ? ... সাথে সাথে রাজি হয়ে গেলাম কিচেনে ... সে অন্যদিকে সব্জি বানাচ্ছে আমি আরেকদিকে রুটি বেলছি, হঠাৎ সে এসে বলে এইটা কি বানাচ্ছ ... এইটা কি রুটি হইসে নাকি বাংলাদেশের মানচিত্র ? ... আমি কইলাম তাইলে কি করুম ... এবার সে নিজের চেহারার চারপাশে আঙ্গুল ঘুরায়ে বললো চাঁদের মত গোল রুটি বানাও ... সাথে সাথে তার বাংলা পাঁচের মত চেহারার সামনে প্রশ্নবোধক চিহ্ন দেখতে পেলাম, বুঝে উঠতে পারছিলাম না কেমন সাইজের রুটি বানাবো...
>> এর পরে ?

---> এর পরে আর কি, পরের রুটিটা পাকা আমের আটির মতো হয়ে যাওয়াতে তার চোখ থেকে যে আগুন বের হচ্ছিলো মনে হচ্ছিলো যেন তাওয়াতে না দিয়েই আমার সবরুটি সেদ্ধ হয়ে যাবে ...সে সময় ওপাশে নচ্ছাড় ল্যান্ড লাইনের ফোন বেজেই চলছিল ... কেউই ধরছিলাম না, এবার সে বলে উঠলো -- কেউ ফোন করছে টা কি কারো কানে ঢুকছে না ? ধরো গিয়ে যাও ... ফোন এ্যটেন্ড করে আসার পথে হঠাৎ দেখি বৌ এর সেল ফোন বাজছে ... এবার আবার না ধরলে ঝাড়ি মারে কিনা ভাবতে ভাবতেই কলটা ধরতেই দেখি ওর প্রিয় বান্ধবী কল করেছে ... সেল টা ওকে দিতেই প্রথমে দেখে নিলো কে ফোন করেছে, এরপর খুবই অল্প কথায় লাইন কেটে দিয়ে বললো -- বয়স বাড়ছে আর অভ্যাস খারাপ হয়ে যাচ্ছে তোমার, মেয়ে মানুষের কল দেখলে কথা না বলে থাকা যায় না তাই না ? এবার থেকে আমার সেল ধরা তোমার জন্য নিষিদ্ধ !!!
>> হুমম .... তোর তো উভয় সংকট অবস্হা দেখা যায় ...

---> আরে রাখ তো উভয় সংকট অবস্হা , আমার মত অবস্হায় পড়লে বুঝতি সংকট কত প্রকার আর কি কি ...
>> কথা না প্যাচায়ে বলে ফেল ঘটনা কি হইসে ....

---> সেদিন আমারে নিয়ে গেছিলো ঈদের শপিং এ, যাওয়ার আগে কইলো - এবারের ঈদ টা সাদামাটা ভাবেই করবো রোজার মাসে যদি সংযম কি জিনিস না শিখলাম তাইলে আর কবে শিখবো বলো ... আমি কইলাম ঠিকাছে । দুজনে গেলাম বসুন্ধরায় প্রথমে সে তো কিছু কিনতেই চায় না, যেটা দেখে সেটাই ভাল্লাগে কিন্তু কইলো নাহ, এইবার শপিং এর বাজেট কম রাখসি , সংযম করবো ... তোমারে এবার বেশী জ্বালাবো না ঠিক করেছি ... দেখি সস্তা কিছু পাওয়া যায় কি না... আমি কইলাম -- সস্তার দরকার নেই তোমার যা মন চায় কিনো ঈদের আনন্দের কাছে টাকা কোনো ব্যাপার না ... কথাটা বলে শেষ করতে পারলাম না অমনি দেখি পিছন থেকে বৌ এর নাম ধরে চিৎকার করতেসে ... দেখি তার পুরানা দোস্ত জামাইরে নিয়া আইসে শপিং এ ... দাড়ায়া দাড়ায়া খানিক্ষন গল্প করার পরে দুই বান্ধবী কইলো তুমরা গল্পাইতে থাকো আমরা শপিং টা শেষ করে আসি ... কৈ দেও তো তোমার ওয়ালেট টা এই বলে বৌএর বান্ধবী তার স্বামীর সিন্দুক লুটে নেয়ার পরে আমারটাও আমার কাছে রাখার কোন সুযোগ পেলাম না... ঘন্টা তিনেক পরে ওরা যখন ফিরলো তখন দেখি দু হাতের ব্যাগের ওজনে দুজনেরই ত্রাহি ত্রাহি অবস্হা। অতঃপর তাদের রেজিষ্টার্ড কামলা দুইজন ওদের কষ্ট নিবারন করার পরেই তাদের আবদার, অনেক ঘুরে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি এবার বাড়ী চলো ... বান্ধবীর কাছ থেকে বিদায় নেয়ার পরে বৌ কইলো তোমার কাছে রিক্সা ভাড়া আছে তো ?
>> আয় হায় , বলিস কি রে .... দুঃখ করিস না দোস্ত বৎসরে ঈদ মোটে দুইবার আসে, চিন্তা কর এটা যদি প্রতিমাসে আসত তবে তোর কি হাল হত ? আচ্ছা সেদিন ভাবী রিক্সায় ফেরার কথা বললো, গাড়ি নিয়ে যাসনি ক্যান ?

---> আর কইস না, ওরে নিয়ে তার কয়দিন আগে গাড়িতে করে যাচ্ছিলাম শশুর বাড়ী, পথে কি মনে করে সিডি চালিয়েছিলাম , ওতে বাজছিলো -- চাঁদের আলোয় বাঁধ ভেঙেছে ... কোন কুক্ষনে যে মুখ থেকে যে বের হইসিল -- এই গানটা কলেজের একটা ফাংশনে সিমি গাইসিল মনে আছে ? ... (দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে ) এর পরের কাহিনী তোরে কওন যাইবো না ... পারলে বুইঝা নে ...
>> কি বুঝাইলি ঠিক বুঝিনাই, তবে কিছু একটা হইসিল সেটা বুঝতেসি ... এখন কি করিস ?

---> একটু পরে পরীক্ষা দেয়ার জন্য রেডি হই ...
>> এই রাত দুপুরে কিসের পরীক্ষা ?
---> একটু পরে তোর ভাবীর পছন্দের সবকটা হিন্দি সিরিয়াল শুরু হবে, তখন আমাকেও একসাথে দেখতে হবে, সে নাকি একলা একলা দেখে মজা পায় না আর আমি ওসবে কোন ইন্টারেস্ট পাই না ... তবুও ওর মন রক্ষার জন্য বসতে হয় ... আর বসে বসে পরীক্ষা দেই ...
>> মন রক্ষা করে বসে দেখিস ভাল কথা কিন্তু পরীক্ষা কিসের ?
---> ব্যাটা বিয়া তো করিস নি বুজবি না, নাইলে বৌ এর কোনো পছন্দের সিরিয়ালে হাসির যায়গায় মন খারাপ করে আর মন খারাপের যায়গায় মুচকি হাসি দিলেই বুঝতে পারতি রৌদ্র উজ্জ্বল দিনে ক্যামনে আকাশে গ্রহ উপগ্রহ তারা সব দেখা যায় ...

আরো একটি নির্ঘুম রাত্রীর আকথা

আরো একটি

নির্ঘুম রাত্রীর আকথা

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১০:০৮





চোখ দুটো আবারো জেগে রয়েছে অক্লান্ত, আঙ্গুলগুলো দুরন্ত গতিতে ছুটে চলেছে কি বোর্ডের উপরে ... মস্তিষ্কের রক্তকনিকা গুলো আজ যেন আবার জেগে উন্মত্ত উঠেছে পুরোনো নেশায়, দুর থেকে ভেসে আসে কোন এক নাম না জানা প্রানীর ডাক ... ঠিক যেন মৃত্যুপুরীতে জেগে থাকা কোন ডাইনীর কান্নার সুর ... হঠাৎ ডালা ঝাপটে উড়ে যায় বুঝি এক ভুতুম পেচা , অজান্তেই মনে প্রশ্ন জাগে -- এ কি কোন অমঙ্গলের প্রতীক নাকি নিছক মনের কল্পনা ? ... এখানে রাস্তায় বেওয়ারিশ কুকুর ঘুরে বেড়ায় না, বরং তারা লালিত হয়ে থাকে পরম আদরে ... কিন্তু এক কি শুনছি আমি, অজানা কোনখান থেকে বাতাসে ভেসে আসছে বুঝি এক কুকুরের মরা কান্নার সুর ... নিরব নিস্তব্ধ শহরের একাকী রাস্তাগুলোয় চুলচাপ নিজের বুকে আগুন জ্বেলে দাড়িয়ে আছে ল্যাম্পপোষ্ট গুলো ... সুনসান নিরবতার মাঝে মাথা তুলে দাড়িয়ে আছে বিকটকায় কিম্ভুতকিমাকার অন্ধরকার বাড়িগুলো ... এখান থেকে বেশ দুরে, ঐ যে দেখা যাচ্ছে কিসের যেন সাইন বোর্ড, ক্রমাগত জ্বলছে আর নিভছে ... ভুতুড়ে শহরের সাথে মন খারাপের পাল্লা দিয়েই বুঝি আজ আকাশে জমেছে অভিমানের মেঘমালা ... তারাগুলোও যেন সেই সাথে অন্ধকারের চাদর মুড়ি দিয়ে নিজেদেরকে আড়াল করায় ব্যাস্ত ... চাঁদ নিজেকে অপরূপ সাজে সজ্জিত করেও যেন মেঘের ঘোমটার আড়াল করে রেখেছে নিজের সৌন্দর্যকে ... কি বোর্ড থেকে হাত সরিয়ে এক বুক আশা নিয়ে তাকিয়ে থাকলাম একটু একটু করে বেশ খানিকক্ষন .... কখন কমবে তার অভিমান, মেঘের ঘোমটা সরিয়ে একটু কি দেখাবেনা সে তার চাঁদ মুখ খানি অন্তত একটি বারের জন্য ? ... নিজের ঘরকে অন্ধকারের সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে চুপচাপ অপেক্ষা করছিলাম সেই মাহেন্দ্রক্ষনের ... অতঃপর সেল ফোনের এ্যালার্ম জানিয়ে দিলো - আরো কতশত রাতের মত আবারো আমি কাটিয়ে দিয়েছি আরো একটি নির্ঘুম রাত ...



পটলচেরা সুনয়নার হৃদয় চেরা ভাব

পটলচেরা সুনয়নার

হৃদয় চেরা ভাব

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ২:২২







শীতের রাতে সবারই ইচ্ছে করে কম্বল মুড়ি দিয়ে একটা আরামের ঘুম দিতে, অথচ আমাকে যেতে হচ্ছে কিনা নাইট জার্নিতে , কেমন টা লাগে ... অবশ্য যাওয়ার জন্য মারুফ অনেক আগে থেকেই টানা হেচড়া করছিল ... একদিন পরে ওর বোনের বিয়ে, আমরা ক বন্ধু সবাই ওদের এত কাছের যেন আমরা এক বাড়ীর ছেলে, কিন্তু আজকের দিনটা পর্যন্ত পরীক্ষা থাকায় আর যাবনা ঠিক করেছিলাম, মারুফ কে তো শত রকমের ঝাড়ি পট্টি দিয়ে শান্ত করে ছিলাম কিন্তু মুন্নি আপু কে কিছুই জানাইনি ... খবর পেলাম ওদিকে মুন্নি আপু ওদের বাড়ীতে সবাইকে পৌছুতে দেখে হৈ হুল্লোড় আর আড্ডা দিয়ে বেশ আনন্দে সময় কাটিয়ে দিচ্ছে ... একদিন বাদে যে এই মেয়েটার বিয়ে তা কেউ বলবে না এমনটাই মজা করছে নাকি ... মনে মনে বলছিলাম, বেঁচে গেলাম এইবারের মত, ওর বৌ ভাতেই না হয় যাওয়া যাবে । কিন্তু সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে পরীক্ষা শেষ করে বাসায় এসে ফ্রেস হতে যাব এসময় আম্মু বললো -- অন্তু মুন্নি ফোন করে তোমাকে খুজছিল, আর বলেছে বাসায় আসার পরপরই যেন তুমি ওকে কলব্যাক করো ... কি মনে করে সাথে সাথে কল দিলাম আর এর পরে শুরু হলো হবু বৌ এর ইমোশন্যাল ব্ল্যাকমেইল ... সংক্ষেপে বলতে গেলে তিনি এক কথায় বলে দিলেন আমার সব কটা ভাই বোন এসেছে এখানে বিয়েতে একটা ছাড়া, ওকে এতদিন কিছু বলিনি কারন ওর পরীক্ষা ছিল আজকে যখন তার পরীক্ষা শেষ সে নিজে বলুক তাকে কি আমি নিজে ঢাকায় গিয়ে নিয়ে আসবো নাকি সে নিজেই আজকে রাতের বাসে করে এখানে পৌছাবে, সে যদি না আসে তবে একট আফসোস নিয়ে আমি বিয়েতে বসবো আর সে আফসোস জীবনে কখনো মুছবে না ... বুঝতে পারলাম এবার আর রক্ষে নাই যেতেই হবে নাইলে মুন্নিপু মন খারাপ করবে তো করবেই যারাটা জীবন আমাকে ঝাড়ি আর বকা আর খোচানীর উপর রাখবে ... সুতরাং সুবোধ বালকের মত ফ্রেস হয়ে খেয়ে দেয়ে, কটা কাপড় নিয়ে সন্ধ্যাবেলা রওনা দিলাম কল্যানপুর বাসস্ট্যান্ডে ...

কনকনে শীতের রাত, হাতে জ্বলন্ত সিগারেট হাতে বাস কাউন্টারের সামনে নেমে দুটো লম্বা টানে বুক ভরা ধোয়ায় শরীরটা গরম করে ভিতরে ঢুকেই দেখি ওয়েটিংরুম ভর্তি মানুষ। মনে মনে বলি ঈদের তো এখনো ১০ - ১২ দিন বাকী আছে এখনও এত ভীড় ক্যান , আজিব ব্যাপার ... কাউন্টারে বসা পরিচিত মামু ... গিয়া কইলাম জিয়া ভাই খবর কি ,টিকেট দেন তো দুইটা একখান যাওয়ার একখান আসার এখন যামু আর ঈদের আগে ফিরমু ... জিয়া ভাই আমার দিকে খানিক্ষন ফ্যাল ফ্যাল করে তাকায়া কইলো -- অন্তু ভাই সামনে ঈদ এই সময়ের টিকিট সবাই আধা / একমাস আগে কাইট্যা রাখসে আর আপনি কন এখন যাইবেন আর টিকেট লাগবে ? ফিরতির টিকিট দিবার পারুম একটার যায়গায় দশটা কিন্তু এখনের টিকিট দেয়া ঝামেলা হয়া যাবে অন্তু ভাই আমারে দুইটা দিন আগে ফুন দিলেই তো আপনার লাইগ্যা রাইখা দিতাম ... আমি কইলাম -- আমার আগে প্ল্যান আছিলো না যাওনের, ঘন্টা দুই আগে হইসে এখন যাওন লাগবো আর কোন কথা নাই ... কেমনে ব্যাবস্হা করবেন আপনি জানেন ... টিকেট না দিতে পারলে ড্রাইভার মামুর গলে গল্প করতে করতে যামুগা কইলাম এর পরে কখনো কিনুম না আপনার এই বাসের টিকেট কাইরে কিনতেও দিমু না .... জিয়া ভাই কইলো -- অন্তু ভাই কি যে বলেন, আপনে বসেন আমি দেখি কি করা যায় ...

পুরা কাউন্টার জুড়ে মানুষ গিজগিজ করছে, বসার যায়গা খুজে পাওয়াই বড় মুষ্কিল হয়ে পড়লো ওদিকে কাউন্টারের ভিতরেও বাসের অনেক মানুষ ঘুরা ফিরা করছে, তাই শেষমেষ ঘুরে ফিরে যায়গা না পেয়ে দরজার সামনের রাখা ছোট্ট বেন্চে বসলাম। ভিতরের অনেক মানুষের কারনেই বুঝি ঘরটা বেশ গরম লাগছিল এখানে বেশ শীত। কিছু একটা করা দরকার ভাবতে ভাবতে পকেট থেকে বেনসনের প্যাকেট টা বের করতেই দেখি ইয়া বড় দু ব্যাগ হাতে এক সুন্দরী এসে বলছে এই যে শুনেন একটু যায়গা দেন তো ... বেন্চের একপাশে সরে গিয়ে তাকে বসার যায়গা করে দিয়ে সিগারেটে আগুন জ্বালানোতে মনযোগ দিলাম ... বেন্চটা এত বড় যে চারজন অনায়াসে বসতে পারে তার একপাশে আমি আর আরেক পাশে সুন্দরী বসার পরে বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ যেন ভুমিকম্পে আমার রীতিমত বেন্চ থেকে পড়ে যাওয়ার দশা ... ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম সুন্দরী তার একটা দশাসই ব্যাগ যা কিনা তিনজনের চেয়ে বেশী যায়গা দখল করতে পারে, আমাদের দুজনের মাঝে রেখে তার উপরে হাত দিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে ... আমি বললাম -- এইটা কি হলো ?
সে বললো -- ব্যাগটা নীচে রাখলে ময়লা হবে তাই উপরে তুলে রাখলাম
আমি বললাম -- ওটা যে যায়গা নিয়েছে তাতে তো আপনি ছাড়া আর কেউ বসতে পারবে না তা বুঝতে পারছেন ?
সে বললো -- আর নীচে রাখলে যে আমার নতুন ব্যাগটা ময়লা হবে সেটা বুঝতে পারছেন না ?
এতক্ষনে খেয়াল করলাম এই কটকটির অসম্ভব সুন্দর দুটো পটল চেরা চোখ আছে যা আমার খুবই পছন্দের ... তাই আর তার সাথে গ্যান্জাম না করে উঠে দাড়ালাম, ফস করে সিগারেট টা জ্বালিয়ে এক বুক ধোয়া ছেড়ে বললাম -- ওটা না রাখলে এখানে আরো অন্তত দুজন আরামসে মানুষ বসতে পারতো ...
সে আবার বলে উঠলো -- আমার ব্যাগ আমি রেখেছি , আপনি বলার কে ? আর আপনি যেভাবে সিগারেট খাচ্ছেন ওটার গন্ধেই তো আপনার পাশেও তো কেউ দাড়াতে পারবে না , ওঠা নিভিয়ে ফেলেন ...
এইবার সুজোগ পেয়ে বলে উঠলাম -- আমার সিগারেট আমি জ্বালাইসি আপনি বলার কে ?
সে বললো -- আমাদের ক্যাম্পাসে হইলে দেখায়া দিতাম
আমি কইলাম -- ঠিকানা টা দিয়ে ঢাকায় ফিরে বইলেন কবে ঐখানে যেতে হবে , যামু নে ... তখন দেখুমনে কি করতে পারেন ...
সে কইলো -- রোকেয়া হলের সামনে যদি আপনারে পাইসি কোনো দিন, তাইলেই দেইখেন কি করি ...
আমি কইলাম -- ঐ এলাকার আশেপাশেই আমার চলাচল সবসময়, আপনি আপনাগো দারোয়ানের সাথে দাড়ায়া থাইকেন কখন আমি যাই ওখান থেকে, দেখা হবেই ..
সে বললো --- দেইখা নিমু ...
আমি কইলাম -- আইচ্ছা ...

এরপরে দুজনেই চুপচাপ , ঘড়ি দেখলাম বাস ছাড়ার সময় হয়ে গিয়েছে, এখনো জিয়া ভাই কি করলো টিকিটের দেখার জন্য ভিতরে যেতেই উনি বললো -- অন্তু ভাই একটা সিটের ব্যাবস্হা মনে হয় হইসে , একজনের ফোন আসছিলো উনি আজকে কাজের ব্যাস্ততার জন্য যেতে পারবেন না, উনাকে তিনদিন পরের একটা সিট দিয়েছি ... নিবেন নাকি ?
আমি কইলাম --- নিবো নাকি মানে ?
হে হে হে করে হেসে জিয়াভাই কইলো -- জানতাম এইটাই কইবেন, নেন কাইট্যাই রাখসিলাম আগে থেকে ...

সবাই এক এক করে বাসে উঠে গেলে পরে সবার শেষে বাস ড্রাইভার আর হেলপার মামুর লগে গল্প করতে করতে বাসে উঠলাম, সিট নম্বর দেখে খুজে খুজে নিজের সিটে বসতে যাব এমন সময় সহযাত্রীর উপরে চোখ পড়তেই আবার যেন একটা ভুমিকম্পের ঝাকুনি অনুভুত হলো ... কারন জানালার পাশের সিটটা আমার, সেটা দেখি দিব্যি সেই সুনয়না চর দখলের মত দখল করে বসে রয়েছে ... আমাকে দেখে সে বলে উঠলো -- জানালার পাশের সিট টা আমার ভাল লাগে, আপনি এই পাশে বসেন
আমি বললাম -- নিতান্ত ভদ্রতা বশত কোন রকম গোলমাল ছাড়াই নিজের পছন্দের জায়গাটা আপানর জন্য ছেড়ে দিলাম, নাইলে আপনি যে হুমকী দিয়েছেন তার পরে আপানর জন্য কোন কিছু স্যাকরিফাইস করার মন আমার নেই ...
সে বললো -- ওটা তো ঢাকায় এসেই আমি দেখে নিব আপনাকে, আপাতত বাড়ী ঈদ করতে যাচ্ছি বলে আপনার সাথে কোন গোলমাল করতে ইচ্ছে হচ্ছে না ...
আমি বললাম -- মনটা চাইতেসে ঐখানের গরুর হাটে আপনারে বিক্রি করে দিয়ে আসি , সময় থাকলে ঠিকই দিয়া আসুমনে ...
সে বললো -- হুহ !!
আমি কইলাম -- ক্র্যাপ !!

এবার আশে পাশে দুজনেই তাকিয়ে দেখলাম লোকজন হা করে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে, আমরা একবার মানুষজনের দিকে তাকাই আর অগ্নিদৃষ্টিতে একজন আরেকজনকে ভষ্ম করে দিতে চেষ্টা করছি ... ভাগ্য ভাল ড্রাইভার মামুও ততক্ষনের গাড়ি স্টার্ট দিয়ে গান চালিয়ে দিয়েছে, আর মিনিট পাঁচেকের মধ্যে ভিতরের লাইট টা নিভে যেতেই শুরু হলো পটল চেরা সুনয়নার সাথে এক টক ঝাল মিষ্টিতে ভরপুর এক অন্যরকম নীশিথ বাস যাত্রা ....



অন্যরকম একটা ভোর

অন্যরকম একটা ভোর

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১:৪৯




ঘরের চারিদিকে এক নজর বুলিয়ে দিলে কেউ কি বলবে মাত্র সপ্তাহেই কেউ এ ঘরটাকে মাতৃত্বের পরম আদরে সাজিয়ে দিয়ে গিয়েছে ? দরজার ঠিক সামনে হাই হিল দুটো দুদিকে এলোমেলো ভাবে ছড়িয়ে আছে ... তার ঠিক পাশেই কোল-কাস্ট টার উপরে সব রকমারী প্রসাধন সামগ্রী এদিক সেদিক পড়ে আছে, ড্রয়ার গুলোর সবকটা কিছুটা করে খুলে রাখা তার ভিতর থেকে নিজেদের অস্তিত্ব প্রকাশ করে উঁকি দিয়ে বের হয়ে আছে বেশ কয়েকটি শাড়ির পাড়, ওড়না আর ফতুয়ার অংশ বিশেষ ... তার নিচেই মেঝেতে ছড়িয়ে আছে উপর থেকে গড়িয়ে পড়া কয়েকটি লিপস্টিক, কাজল, নেইল পলিশ আরো কিছু ছোট ছোট জিনিস ... কোল-কাস্টের পাশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে গত রাতের বানানো মডেল গুলো বিচ্ছিন্ন অংশগুলো ... কম্পিউটার টেবিলে অবস্হাও ঠিক সেই রকম ... ওর উপরে ঠিক কত প্রকারের জিনিস আছে তা কেউ গুনে বলতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে ... কি বোর্ড আর মাউস টা ছাড়া বাকি অংশটুকুকে গারবেজ বললেও মনে হয় পরিষ্কার বলা হবে ... মনিটরে এখনো স্ক্রীন সেভারটা জানান দিচ্ছে , সে ঘুমোয়নি জেগেই আছে ... পানির খালি বোতল দুটো সেই রাতের বেলা থেকেই গড়াগড়ি খাচ্ছে টেবিলটার পাশে ...

এসি আর ফ্যান দুটো একসাথে চালানোর পরেও কেউ জানালা বন্ধ করতে ভুলে যায় এমন মানুষ মনে হয় পৃথিবীতে বেশ কমই আছে... আধ-খোলা জানালার পর্দাগুলোও এলোমেলো ভাবেই ঝুলছে গতকাল থেকে ... পড়ার টেবিলের উপরে একটা কলম রাখারও জায়গা দেখা যায় না , আর চেয়ারটাকে চেয়ার না বলে কাপড়ের স্ট্যান্ড বললে বুঝি বেশী সঠিক বলা হবে ... বিছানাটা ডাবল বেডের ... তবুও যেন মনে হয় এ ঘরে এদিক সেদিক থেকে মুখ বের করে সে কোন রকমে তার অস্তিত্বকে জানান দিচ্ছে ... বেডের এমন কোন ফাঁকা অংশ নেই যেখানে কেউ এসে বসতে পারবে ... এক পাশে কাপড়ের স্তুপ, অন্য পাশে মনে হয় এল লাইব্রেরীর সব বই খাতা, নোট .... আর এর মাঝে একটা ছোট্ট উজ্বল দ্বীপের মত আলি জ্বালিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে ল্যাপটপটা ... আর সব কিছুর মাঝখানে গোল হয়ে শুয়ে আছে সন্ধ্যা ...।

কদিনের অমানুষিক কাজের চাপের পর কাল রাতে যখন কাজের রেজাল্ট হাতে পেল, আনন্দে কেঁদে ফেলেছিল সবার সামনেই ... প্রয়োজনীয় পেপারস গুলো হাতে নিয়ে একছুটে বাসায় চলে এসেছিল , আজ তাকে খুব মনে পড়ছে ... সেই মানুষটাকে, এটা ছিল যার সারা জীবনের একমাত্র স্বপ্ন যার বিনিময়ে সে তার সবকিছু বিসর্জন দিতেও কুন্ঠা বোধ করেনি ... তাকে ছাড়া আজ যে সে এই সাফল্যকে কিভাবে সে সেলিব্রেট করবে ? সেই চিন্তাগুলোয় জট পাকিয়ে যেতেই গত রাতেই করে ফেলেছে এই লঙ্কাকান্ড, এর পরে লোনা জলের বর্ষন শেষে চোখ ফুলিয়ে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে অচেতন ...

এলোমেলো পর্দার মাঝখান দিয়ে সমান্তরালভাবে সকাল বেলার মিষ্টি আলোর রেখাগুলো ওর মুখে এসে পড়তেই ঘুম ভেঙ্গে গেল, ফোলা ফোলা চোখ দুটি আজ আর মেলতে চাইছে না, শুধু উপভোগ করতে চাইছে সেই সুতীক্ষন চুম্বন যা একদিন সেই মানুষটা দিয়ে বলেছিল, কাছে থাকি কিম্বা দুরে, পাশে থাকি অথবা না তোমার সাফল্যগাথার পুরষ্কার আমি দিয়েই যাবো সারাজীবন ... ভোরের আলোয় শুধু নিজেকে একবার মেলে ধরবে ঐ আলোয় ভেসে আমি তোমার কপালে রেখে যাব একরাশ ভালবাসার উষ্ম ছোয়া ... সন্ধ্যা আজ এই সকাল বেলার আলোর সেই ভালবাসার পরশ মেখে নিতে নিতেই সেল ফোনটা বেজে উঠলো ... কলটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে সেই যাদুময় আদুরে কন্ঠস্বরে শুনতে পেল এক সুতীক্ষ্ণ ভালবাসার উষ্মতা ...