Tuesday, October 6, 2009

অন্যরকম একটা ভোর

অন্যরকম একটা ভোর

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১:৪৯




ঘরের চারিদিকে এক নজর বুলিয়ে দিলে কেউ কি বলবে মাত্র সপ্তাহেই কেউ এ ঘরটাকে মাতৃত্বের পরম আদরে সাজিয়ে দিয়ে গিয়েছে ? দরজার ঠিক সামনে হাই হিল দুটো দুদিকে এলোমেলো ভাবে ছড়িয়ে আছে ... তার ঠিক পাশেই কোল-কাস্ট টার উপরে সব রকমারী প্রসাধন সামগ্রী এদিক সেদিক পড়ে আছে, ড্রয়ার গুলোর সবকটা কিছুটা করে খুলে রাখা তার ভিতর থেকে নিজেদের অস্তিত্ব প্রকাশ করে উঁকি দিয়ে বের হয়ে আছে বেশ কয়েকটি শাড়ির পাড়, ওড়না আর ফতুয়ার অংশ বিশেষ ... তার নিচেই মেঝেতে ছড়িয়ে আছে উপর থেকে গড়িয়ে পড়া কয়েকটি লিপস্টিক, কাজল, নেইল পলিশ আরো কিছু ছোট ছোট জিনিস ... কোল-কাস্টের পাশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে গত রাতের বানানো মডেল গুলো বিচ্ছিন্ন অংশগুলো ... কম্পিউটার টেবিলে অবস্হাও ঠিক সেই রকম ... ওর উপরে ঠিক কত প্রকারের জিনিস আছে তা কেউ গুনে বলতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে ... কি বোর্ড আর মাউস টা ছাড়া বাকি অংশটুকুকে গারবেজ বললেও মনে হয় পরিষ্কার বলা হবে ... মনিটরে এখনো স্ক্রীন সেভারটা জানান দিচ্ছে , সে ঘুমোয়নি জেগেই আছে ... পানির খালি বোতল দুটো সেই রাতের বেলা থেকেই গড়াগড়ি খাচ্ছে টেবিলটার পাশে ...

এসি আর ফ্যান দুটো একসাথে চালানোর পরেও কেউ জানালা বন্ধ করতে ভুলে যায় এমন মানুষ মনে হয় পৃথিবীতে বেশ কমই আছে... আধ-খোলা জানালার পর্দাগুলোও এলোমেলো ভাবেই ঝুলছে গতকাল থেকে ... পড়ার টেবিলের উপরে একটা কলম রাখারও জায়গা দেখা যায় না , আর চেয়ারটাকে চেয়ার না বলে কাপড়ের স্ট্যান্ড বললে বুঝি বেশী সঠিক বলা হবে ... বিছানাটা ডাবল বেডের ... তবুও যেন মনে হয় এ ঘরে এদিক সেদিক থেকে মুখ বের করে সে কোন রকমে তার অস্তিত্বকে জানান দিচ্ছে ... বেডের এমন কোন ফাঁকা অংশ নেই যেখানে কেউ এসে বসতে পারবে ... এক পাশে কাপড়ের স্তুপ, অন্য পাশে মনে হয় এল লাইব্রেরীর সব বই খাতা, নোট .... আর এর মাঝে একটা ছোট্ট উজ্বল দ্বীপের মত আলি জ্বালিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে ল্যাপটপটা ... আর সব কিছুর মাঝখানে গোল হয়ে শুয়ে আছে সন্ধ্যা ...।

কদিনের অমানুষিক কাজের চাপের পর কাল রাতে যখন কাজের রেজাল্ট হাতে পেল, আনন্দে কেঁদে ফেলেছিল সবার সামনেই ... প্রয়োজনীয় পেপারস গুলো হাতে নিয়ে একছুটে বাসায় চলে এসেছিল , আজ তাকে খুব মনে পড়ছে ... সেই মানুষটাকে, এটা ছিল যার সারা জীবনের একমাত্র স্বপ্ন যার বিনিময়ে সে তার সবকিছু বিসর্জন দিতেও কুন্ঠা বোধ করেনি ... তাকে ছাড়া আজ যে সে এই সাফল্যকে কিভাবে সে সেলিব্রেট করবে ? সেই চিন্তাগুলোয় জট পাকিয়ে যেতেই গত রাতেই করে ফেলেছে এই লঙ্কাকান্ড, এর পরে লোনা জলের বর্ষন শেষে চোখ ফুলিয়ে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে অচেতন ...

এলোমেলো পর্দার মাঝখান দিয়ে সমান্তরালভাবে সকাল বেলার মিষ্টি আলোর রেখাগুলো ওর মুখে এসে পড়তেই ঘুম ভেঙ্গে গেল, ফোলা ফোলা চোখ দুটি আজ আর মেলতে চাইছে না, শুধু উপভোগ করতে চাইছে সেই সুতীক্ষন চুম্বন যা একদিন সেই মানুষটা দিয়ে বলেছিল, কাছে থাকি কিম্বা দুরে, পাশে থাকি অথবা না তোমার সাফল্যগাথার পুরষ্কার আমি দিয়েই যাবো সারাজীবন ... ভোরের আলোয় শুধু নিজেকে একবার মেলে ধরবে ঐ আলোয় ভেসে আমি তোমার কপালে রেখে যাব একরাশ ভালবাসার উষ্ম ছোয়া ... সন্ধ্যা আজ এই সকাল বেলার আলোর সেই ভালবাসার পরশ মেখে নিতে নিতেই সেল ফোনটা বেজে উঠলো ... কলটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে সেই যাদুময় আদুরে কন্ঠস্বরে শুনতে পেল এক সুতীক্ষ্ণ ভালবাসার উষ্মতা ...




No comments: