Thursday, November 19, 2009

অক্ষর দাহে আত্মাহুতি !

অক্ষর দাহে আত্মাহুতি !

১৫ ই নভেম্বর, ২০০৯ সকাল ১০:৩৫





আলতো করে ধরে চোখের সামনে রাখতেই অসামান্য উজ্জলতায় আজো জ্বল জ্বল করে জ্বলে ওঠে চিঠি গুলোর প্রতিটি অক্ষর ... ঠিক যেমনটি জ্বলে উঠতো এত দিন এতটা বছর ধরে প্রতিটি দিন, প্রতিটা ক্ষন, প্রতিটি মুহুর্তে ...ভালবাসার কোমল স্পর্শে আজো যেন অক্টোপাশের মত জড়িয়ে ধরতে চায় সেই প্রথম দিনটির মতো ... এক মুহুর্তে মিটিয়ে ফেলতে চায় দুই দেহ মাঝের অনন্ত দুরত্ব... মনের মতই দেহের ক্ষেত্রেও দুজনের মাঝে তৈরি করতে চায় অদ্বিতীয় স্বত্তা ... ভালবাসায় ভরা মুগ্ধ চোখে দেখতে থাকা চিঠির উপর হঠাৎ কোথা থেকে দু-ফোটা পানি পড়াতে, সম্বিৎ ফিরে পেতেই কঠিন বাস্তবতার চরম স্বার্থপরতার সামনে দাড়িয়ে পড়তেই হলো ... এই চোখটাই আসলে যে তার চরম এবং পরম শত্রু... এটা না থাকলেই তাকে আজ এ দিনটি দেখতে হতো না ... আর এই মুহুর্তের জন্মও নিত না কখনো ...


ধীর পদক্ষেপে উঠে দিয়াশলাই এর একটি কাঠি বের করে আগুন জ্বালাতেই একটুকরো আগুনের দেখা পাওয়া গেল.... নাহ ! এটা ঠিক সেরকম আগুন না যেমনটি সে চায়... তার চাই আগুনের লেলিহান শিখা, ঠিক যেমনটি জ্বলছে তার বুকের ভিতর ...দিয়াশলাই এর বাক্স খুলে এর ভিতর কাঠিটির আগুন অন্য বারুদের গায়ে লাগতেই অসামান্যভাবে সেই আগুনেরই সন্ধান পাওয়া গেল যার অপেক্ষা সে করে চলেছিল বেশ কিছুক্ষন ধরে ... দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠা আগুনের শিখার কাছে চিঠিটির একাংশ ধরতেই যেন চাতকের মতই আত্মাহুতির অভিপ্রায়ে অক্ষরগুলো ওকে বুকে টেনে নিলো ...


আস্তে আস্তে পুড়তে থাকা চিঠির প্রতিটি অংশে আজ যেন সে দেখতে পাচ্ছে সেই সব দিনের দৃশ্য যখন ওরা দুজনে উদ্দাম আনন্দে উপভোগ করেছিলো সূর্যকীরণের উত্তপ্ত প্রেম আর রাতের নিঃশব্দ ভালবাসা ... আশা নিরাশার হাজারো দ্বন্দকে দুরে ঠেলে দিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সাথে থাকার , সবসময় ... হঠাৎ জ্বলতে থাকা আগুনের শিখায় চিঠি ধরা হাতের চামড়াগুলো একটু একটু পুড়তে থাকায় যেন চলমান ছবিগুলো একে একে পরিবর্তিত হতে থাকলো ... সন্ধ্যার মিষ্টি আলোয় আজ ওর হাতে অন্য কারো হাত, যে হাত এক সময় তাকে ধরে বলেছিল -- কখনো ছেড়ে যাবনা ... টানা টানা মায়াময় সেই দু চোখে আজ অন্য কারো প্রতিচ্ছবি উদ্ভাসিত ... আর তখনি বাতাসে ভেসে আসলো নিজের কন্ঠস্বর - তোমাকে আমি কখনোই আমার অপরাধী হতে দিব না ... কারন ... আমি যে তোমাকে ভালবাসি ....



ছোট্ট বাবুদের মিষ্টি কথা

ছোট্ট বাবুদের মিষ্টি কথা

১১ ই নভেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৫:০৪




আমার দুই ছোট্ট কাজিন আছে এখানে ... একজন ৫ অন্যজন ৭ বছর বয়স ... স্কুলে আর বাইরে ওদের দিনের বেশীরভাগ সময় কাটে অন্য ভাষায় কথা বলে অথবা শুনে, বাসায় এসে বেশীরভাগ সময় "আভাটার" "বেন ১০" জাতীয় কার্টুন দেখে , তাও আবার সেই ভাষায় ... বাংলা শুধু বলতে পারে ঘরের মানুষগুলোর সাথে ... আমার আংকেল আন্টি কখনোই ওদের সাথে বাংলা ছাড়া অন্য ভাষায় কথা বলেন না, উনাদের কথা হলো -- আমরাও যদি ওদের সাথে বাংলা না বলি তাহলে ওরা কখনোই নিজের ভাষা শিখবে না ... যা শেখাটা ওদের জন্য অনেক জরূরী।


প্রথমে আমার ৭ বছরের কাজিনের গল্প বলি ...

একদিন তাকে বলা হলো
-- যাও তো কিচেনের কাস্টের ভিতরে দেখ চকলেট আছে , নিয়ে এসো আর অন্য ভাইয়া আপুদেরকেও দাও ... ( সেদিন বাসায় গেষ্ট আর তাদের কয়েকজন বাচ্চা ছিলো)
একটু পরে সে ফিরছে না দেখে আন্টি বললেন -- কৈ তুমি , খুজে পাইসো চকলেট গুলো ?
ওদিক থেকে সাথে সাথে ফিরে এসে সে উত্তর দিলো -- আম্মু আমি অনেক খুজসি কিন্তু কোন চকলেট পাইসিলাম না :|

আরেক দিনের গল্প ....
আংকেল আর আন্টি ওকে নিয়ে একটা মজার খেলা খেলছিলো ... ওর হাতে একটা চিপস এর প্যাকেট দিয়ে আংকেল বলেছিলেন -- সামনে যাও তো কয়েকটা চিপস তোমার আম্মুকে দিয়ে আসো, (তাকে দেয়ার পরে) এবার পিছনে এসে আমাকে দাও ...
এভাবেই তাকে শিখানো হচ্ছিলো নিজের যে কোন জিনিস সবাইকে দিয়ে খেলে কেমন আনন্দ পাওয়া যায় ... সেদিন বিকেলে আংকেল ঘুমিয়ে আছেন , আন্টি ওকে নিজে সুপার মার্কেটে গিয়ে কিছু বাজার করে আবার ঘরে ফিরেছেন ... এমন সময় আংকেল ঘুম থেকে জেগে বললেন -- তোমরা কোথায় গেসিলা, কখন আসলা ?
তখন আমার ঐ কাজিন জবাব দিলো -- আমরা কালকে বাজার কত্তে গেছিলাম একটু পরে পিছনে আসছি ...
(সে সময় সে আজকে / কালকে ... আগে/পরে এর মানে ঠিক মতো জানতো না)


এবার বলি ছোট কাজিনের গল্প

একদিন উপরের নিজেদের ফ্ল্যাট থেকে আমার এখানে এসে পিচ্চিটা কয়েকটা চকলেট দিলো, দেয়ার পরে বললো -- এইগুলো তোমার আর (হাতের কয়েকটা দেখিয়ে বললো) এইগুলো আমার জন্য...
আমি তখন দুষ্টুমি করে ওর গুলোও নিয়ে বললাম ... থ্যাংকু, এইবার যাও
সে এমনভাবে আমার দিকে তাকালো যেন সে চলে গেলে আমার মহা বিপদ হবে ... দরজার দিকে একটু যাবো যাবো ভাব দিয়ে আমাকে বলতে থাকলো -- আমার চকলেট গুলো ফিরায়ে দিবা ? নালে আমি যালাম কিন্তু ... কৈ দেও ... নালে আমি এক্কুনি যালাম কিন্তু....


আবার কয়েকদিন আগে স্কুল থেকে ফিরে নিজেদের ঘরে না গিয়ে দুই ভাই আমার ড্রইংরুমে এসে ধপাস করে বসে পড়েছে ...ঢুকেই কথা নেই বার্তা নেই ব্যাগ একদিকে, মোজা আরেকদিকে চেলে ফেলে দিয়ে শুয়ে পড়লো সোফার উপরে ...
আমি জিজ্ঞেস করলাম -- কি হইসে এমন করছো কেন ?
পিচ্চি বলে -- আজকে স্কুলে সারা দিন তুর্নঈ (স্পোর্টস) করাইসে তাই আমি ভেঙ্গে গেছি ...
আমি বলি -- কি হইসে ?
সে আবার বলে --
সারা দিন তুর্নঈ করে আমি অনেক ম্যু (ক্লান্ত) মানে .... ভেঙ্গে গেছি



জীবন বদলে দেয়া চিরকুট

জীবন বদলে দেয়া চিরকুট

০৫ ই নভেম্বর, ২০০৯ দুপুর ২:০৪






উফফ !! অসহ্য এক বিশ্রী গন্ধে কেবিন টা ভরে রয়েছে, প্রথম দিন ডেটল দিয়ে মেঝে মুছে দেবার পরেই কেমন যেন গা গুলিয়ে আসছিল ওর তাই সাথে সাথে নার্সদেরকে ডেকে বলেছিল তার কেবিনে যেন এমন জীবানু নাশক ব্যাবহার করে যাতে এমন গন্ধ থাকবে না, এর পরে আজকে ওরা এমন কিছু লিকুইড মিশিয়ে ঘর পরিষ্কার করেছে যে তার গন্ধে এ কেবিনে টেকা দায় হয়ে পড়েছে .... এক কেবিনে ভারী পর্দা দিয়ে আলাদা করা দুজন রুগীর জন্য ... এমনিতেই অস্বস্হিকর পরিবেশ তার উপর বিশ্রী গন্ধ (এটাকে দুর্গন্ধ বলাই উত্তম) ... এ অবস্হার মধ্যে মরার উপরে খাড়ার ঘা হিসেবে হাসতে হাসতে সুমনার কেবিনে প্রবেশ করলো শুভ্র ... শুভ্র একই কেবিনের অন্য পাশের রোগী, খিটমিটে সুমনার রাগে গজ গজ করা শুনেই উৎসুক দর্শকের মত উকি দিয়েছে ওর এখানে ... আর ঢুকেই পাগলের মত খিটমিট করতে দেখে নিজর চুপ থাকা কে সামলাতে না পেরে ফিক করে হেসে দিয়েছে ... ব্যাস , শুরু হয়ে গেল সুমনার কেয়ামত ... চেনা নেই জানা নেই এভাবে এসে হাসবে কেন সে ? ... নক করে ঢুকে পড়েছে বলেই তাকে ভদ্র বলা যায়না তো ... কোথায় যে তাকে নিয়ে আসা হলো ... আব্বু আম্মুর উপর এখন তার আরো অনেক বেশী রাগ হতে লাগলো ....সব দোষ তাদের... ওদের জন্যই তো আজকের তার এইখানে আসতে হইসে ....

ঘটনার সূত্রপাত কয়েকদিন আগে ... সেমিষ্টার ফাইনালের চাপে অস্হির সুমনা ... বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান সেই সাথে ইনস্টিটিউটের অন্যতম মেধাবী শিক্ষার্থী , সুতরাং দুদিকের প্রত্যাশাকে পূরনের লক্ষ্যে রাত দিন এক করে পড়ছিল সে ... মাঝে মাঝে পড়ার চাপে চিড়েচ্যাপ্টা সুমনা কয়েক ঘন্টা ঘুমিয়ে রেষ্ট নেয় অথবা পাপ্পুর সাথে গল্প করে মাথাটা ফ্রেশ করে নেয় ... পাপ্পু ওর খুব কাছের একজন বন্ধু, ওর কথা বলার ধরনটাই এমন যে শুনতে থাকলে শুধুই শুনতে ইচ্ছে করে ... সেও গল্প শুনিয়ে মজা পায়, তাই ওকে গল্প বলে যায় একের পর এক ... অনেক দিন ওর কাছে গল্প শুনতে শুনতে সে ঘুমিয়ে পড়েছে ... এভাবে চলতে চলতে এক রাতে ওর আব্বু এসে দেখে বিছানায় বই খুলে সুমনা কার সাথে যেন গল্পে মশগুল হয়ে আছে ... এই অবস্হা দেখে তিনি দিগ্বিদিক জ্ঞানশুন্য হয়ে বকে গেলেন কিছুক্ষন তারই আদরের মেয়েকে ... সবসময় তার সব কাজকে তিনি প্রশ্রয় দিলেও সেমিষ্টার ফাইনালের সময় তার এমন কাজকে তিনি কখনোই সমর্থন করেন না ... এদিকে পাপ্পু ফোনে থাকা অবস্হায় এমন বকা খাওয়ায় অপমানিত আর সেই সাথে সবচেয়ে প্রিয় মানুষটার কাছ থেকে শোনা কঠিন কথাগুলো সুমনার জন্য সহ্য করা সত্যি কষ্ট কর হয়ে পড়েছিল ... তাইতো সে রাগে, অপমানে, অভিমানে মায়ের ড্রয়ার থেকে চুরি করে আনা দু পাতা ঘুমের ঔষুধ খেয়ে শুয়ে পড়েছিল চির নিদ্রার অভিপ্রায়ে ... এর পরে কি হয়েছে সে নিজেও জানে না , গতকাল যখন চোখ খুলেছে তখন নিজেকে পেয়েছে এই কেবিনের ভিতরে ...

দরজায় ঠক ঠক নক ভিতরে আসতে পারি বলতে বলতেই পর্দা সরিয়ে কেবিনের ভিতর শুভ্র প্রবেশ করেই খিক খিক করে গা জ্বালানো হাসি দিয়ে বললো ... আমি শুভ্র (সুমনা মনে মনে বলে -- তোর নাম জানতে চেয়েছি নাকি ), এ কেবিনের ও পাশের বেডটাই আমার (সুমনা মনে মনে -- আমায় উদ্ধার করেছিস পাশে থেকে), এখানে কয়েকদিন থাকলেই এ গন্ধ আপনার সহ্য হয়ে যাবে (সুমনা মনে মনে -- তোকে এই দুর্গন্ধের উকালতি করতে বলেছে কে ?), আপনার কোন কিছুর প্রয়োজন হলে আমাকে ডাকতে পারেন (সুমনা মনে মনে -- গলায় দড়ি দিতে ডাকবো, চলবে ?)... এখন আসি , পরে কথা হবে (সুমনা মনে মনে -- দুর হ ! তোর মুখ আমি দেখতে চাইনা) ... কথাগুলো মনে মনে বললেও মুখে বলার মত অভদ্রতা করতে পারলোনা শুধু মাত্র দুটো মায়াভরা চোখের দিকে তাকিয়ে , তবে শুভ্র চলে যাওয়ার পরেই সে নার্সকে ডেকে বলে দিয়েছিল ওকে যেন মানা করে দেয়া হয় তার সাইডে আসতে .... কথাটি নার্স শুভ্রকে জানিয়ে দেয়ার পরে সেখান থেকেই চিৎকার বলে উঠেছিল .... জলদি সুস্হ হয়ে উঠুন তবেই আমার এ যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পাবেন ....

এমনিতে সকাল থেকেই মেজাজ খারাপ তার উপরে শুভ্রর এই ফালতু আচরন মেজাজটা আরো বিগড়ে দিয়েছে ...ম্যুড ভয়ংকর খারাপ অথবা রাগ হলেই সুমনার না খাওয়ার একটা পুরোনো অভ্যাস আছে সেই সাথে এই মুহুর্তে ঔষধ না খাওয়ার এক রকম পণ করেছে সে, দরকার নেই তার ভাল হওয়ার; এমন অপমান আর বকা খাওয়ার পরে বেচে থাকারই ইচ্ছে নেই তার ... সে কারনেই সকালের নাশ্তা আর তার পর খেতে দেয়া ঔষধগুলো এখনো টেবিলের উপরেই পড়া আছে ... আগে আর কেউ না হোক আব্বুর মন খারাপ দেখে সে খেয়ে নিতো ... কিন্তু এবার সেই আব্বুই এমনভাবে তাকে বকা দিয়েছে, সুতরাং সে খাবেই না ... এবার সে দেখে নিতে চায় দুনিয়ায় কে আছে যে তাকে খাবার আর ঔষধ খাওয়াতে পারে ....

হাসপাতালের নার্সদের অনেক ধৈর্য্য, না হলে ওর মতো সব কিছুতে না বলা রুগীদের সাথে এমন করে সুন্দরভাবে কথা কেউ বলার কথা না ... ওর ঘুম ভাঙ্গার পর, সকাল থেকে দু জন ডাক্তার এসেছেন আর গোটা তিনেক নার্স ... সবার মুখেই হাসি... অমায়িক ব্যাবহার ... এদের মাঝে ডাক্তার দুজন আর দুজন নার্সকে ওর বেশ লেগেছে ... ঘর পরিষ্কার করতে আসা মহিলাটাও ওর বকা খেয়েও হাসি মুখে নিজের কাজ শেষ করে গিয়েছে, তার আচরনও ওর বেশ ভাল লেগেছে ... ডাক্তার দুজন সকাল থেকে কয়েকবার ওকে দেখে গিয়েছে ... দুজনেই বেশ সুদর্শন, মিষ্টিভাষী ... আর বেশ জলদি মিশতে পারেন ... অনেক ভাবে বুঝিয়েছেন উনারা, এই মুহুর্তে খাবার আর ঔষধ খাওয়াটা ওর জন্য খুবই জরুরী, কেবল মাত্র বেশ বড় একটা বিপদ কাটিয়ে উঠেছে সে, এখন যদি তার শরীরের ঠিকমত যত্ন না নেয়া হয় তবে আরো অসুস্হ হয়ে পড়বে ... উনাদের দুজনের কথা শুনতে তার বেশ ভাল লাগে, কিন্তু সে তো রাগ করে আছে না হলে কখন উনাদের কথা মত খাবার আর ঔষধ খেয়ে ফেলতো ... উনাদের দুজনেরই কয়েকটা কমন মুদ্রাদোষ আছে, যেমন " ঠিকাছে" " বুঝতে পারছেন" " তাইনা" "তাহলে" ... এগুলো যখনই ওরা বলে তার খুবই হাসি পায় কিন্তু অভিমানের সময় হাসতে নাই এ জন্য হাসি চাপতে সে ঐসময়গুলো উনাদের কথার উত্তর হ্যা, হু বলে দেয় ... যে দুজন নার্সকে ওর ভাল লেগেছে উনারা একেবারে গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে আম্মুর মতই আদর করে বুঝাতে চেয়েছেন , অন্য সময় হলে যে আদর উনারা করেছেন তার একশভাগের একভাগ করলেই সে যে কোন কাজ করতে রাজি হয়ে যেত ... আরেকজন খুবই সল্পভাষী, খেয়ে নিন না খেলে শরীর খারাপ করবে বলে চলে গিয়েছে ... তাকে তার সেইভাবে পছন্দ না হলেও অপছন্দ হয়নি ... তবে একটা ব্যাপার সবাই আলাদা আলাদাভাবে ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে তাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করেছে ... এবং শেষ পর্যন্ত বিফল মনোরথে ফেরত গিয়েছে ...

কিছুক্ষন থেকে তার মনের অবস্হা আরো খারাপ হয়ে আছে , তার প্রিয় মানুষ, তার আব্বু যিনি তার পাশে থাকার জন্য হাসপাতালে এসেছেন উনাকে শুভ্রর ডিস্টার্ব করার কথা বলাতে সেই যে ঐপাশে গিয়ে বসেছেন আর উঠে আসার নামই নাই ... একটু পর পর আবার ওরা দুজন কি নিয়ে যেন হো হো করে হেসে উঠছে, এমন অসভ্য একটা ছেলের পাশে বসে কি যে গল্প করে চলেছে আল্লাহ ই জানে ... এর মাঝে ৫ - ৭ মিনিটের জন্য তার পাশে এসে ওকে দেখে আব্বু বললেন -- মা, তুই কিছু খাবি ? ... ঝটকার সাথে "না" বলার পরে উনি দ্বিতীয়বার আর জিজ্ঞেস না করে ফলের ঝুড়ি থেকে ছুরি আর কয়েকটা আপেল, আঙ্গুর, বেদানা, কমলা নিয়ে আবার বেরুচ্ছেন দেখে সে জিজ্ঞেস করলো কৈ যাও ? তিনি একমুখ হাসি দিয়ে বললেন -- শুভ্রকে খাওয়ায়ে আসি ... চট করে যেন মাথায় রক্ত চড়ে গেল সুমনার ... ধীরে ধীরে সেটা ভয়ংকর রাগে পরিনত হতে থাকলো যখন ঐপাশ থেকে দুজন মিলে খাওয়ার কথা বলতে শুনলো ... উফফ ! এমন মিষ্টি কমলা খুব কমই খেয়েছি আংকেল ... আরে কালো আঙ্গুর, আমার খুব প্রিয় আপনিও নেন আঙ্কেল ... বেদানা এখন না পরে খাই, এমন খেলে তো আমার পেট ফেটেই যাবে, সুমনার বাবা বলেন -- আরে খাওতো, না হলে পিট্টি দিয়ে খাওয়াবো তোমাকে ... এ সবের মাঝেই দুপুরের খাবার নিয়ে স্বল্পভাষী নার্সটা হাজির হলো সুমনার কাছে, খাবারের ট্রে টা টেবিলের উপরে রেখে যাওয়ার সময় বলে গেল, একটু পরে আপনার ঔষধ দেয়া হবে ... বলেই সে চলে গেল

বেশ কিছুক্ষন থেকে সুমনার কাছে কেউ আসছে না, কোন ডাক্তার নার্স কেউ না, ওর বাবাও শুভ্রর কাছে বসে আছে ... জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতে তাকাতে চোখ ব্যাথা হয়ে গিয়েছে মনে হয়, টিভি চালিয়ে ৩৭টার মধ্যে দেখার মত একটাও চ্যানেল খুজে পেল না বলে বিরক্তে চোখ কুঁচকে পাশে রাখা খাবারের ট্রের দিকে তাকাতেই এতক্ষনে খেয়াল করলো সেখানে খাবারের সাথে একভাজ করে রাখা একটা ছোট্ট চিরকুট পড়ে আছে ... কি মনে করে সেটা তুলে চোখ বুলাতেই দেখলো, তাতে লেখা --

" মেয়েটার নাম তনু, পড়তো শহরের নামী একটা স্কুলে ক্লাস টু তে, বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে হওয়াতে তারা কখনোই তার কোন কিছুর অভাব না রাখার চেষ্টা করেছেন, তবুও তার মনে সারাক্ষন এক বিষাদের ছায়া লেগেই থাকতো, স্কুল আর মায়ের সাথে শপিং ছাড়া তার বাকিটা সময় কেটে যেতে নিজেদের ফ্ল্যাটেই ... হয়ত কাছের কোন বন্ধু অথবা খেলার সাথী না থাকার কারনে অথবা ছোট্ট একটি গন্ডিতে আবদ্ধ হয়ে থাকার কারনেই সে আস্তে আস্তে বিষন্নতা নামক কঠিন অসুখে পতিত হচ্ছিল ....

পরবর্তি খাবারের ট্রেতে পাঠানো চিরকুটে জানতে পারবেন এরপর তনুর অবস্হাটা ঠিক কতটা খারাপ হয়েছিল, ঠিকাছে ?"


গল্পের বই এর পাগল সুমনার জন্য এটা কি পরিমান ভয়ংকর টর্চার তা সে ছাড়া আর কেউ জানে না, বুঝবেও না ... হঠাৎ করে দেখলো তার কুঁচকানো ভ্রু দুটো আরো বেকে রয়েছে, মাথাটা ভয়ংকর রকমভাবে ধরেছে , জানালা দিয়ে তাকাতেই যেন আকাশ পাতাল এক করে ঘুরে উঠলো সবকিছু .... কেন এমন হচ্ছে তার সাথে ... এ কি না খাওয়ার কারনে নাকি তনুর পরবর্তিতে কি হয়েছে তা জানার জন্য ? নাহ ! তার আর অপেক্ষা সহ্য হচ্ছে না ... বেল বাজিয়ে নার্সকে ডেকে বললো খাবার ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে আরেকবার দেয়া যাবে প্লিজ ? ... হাসিমুখে স্বল্পভাষী নার্স কয়েক মিনিটের মধ্যে তাকে গরম খাবারের ট্রে দিয়ে বের হওয়ার সাথে সাথে সেখান থেকে ছোঁ মেরে পরবর্তি চিরকুট টা তুলে নিয়ে খুলতেই সুমনার মেজাজটা চরমরকম খারাপ হয়ে গেল, সেখানে লেখা আছে

" একটুও খাবার না খেলে তো তনুর পরবর্তি ঘটনাগুলো বলা যাবেনা তাই কিছুটা হলেও আপনাকে খেতে হবে ... কিছু না হলেও অন্তঃত চিকেন স্যুপ এক গ্লাস পানি আর ঔষধগুলো যদি খান তো পরের অংশটা দেয়া যেতে পারে, ঠিক না ? "


এটা পড়তে পড়তে সুমনার যেন কান্না চলে এল, কি করবে সে ... একদিকে পাহাড়ের ন্যায় অটল অভিমান অন্যদিকে তনুর কি হয়েছিল জানতে অসম্ভব ইচ্ছে করছে ... অগত্যা হাফ বাটি স্যুপ, হাফ গ্লাস পানি আর ঔষধগুলো খেয়ে বাকি খাবার ফেরত দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলো ... পরের খাবার কখন দেয়া হবে ? স্বল্পভাষী নার্সটা বললো -- বিকেলে নাশতা দেয়া হবে .... অতঃপর কি হলো তনুর সে চিন্তা করতে করতে কখন যে সে ঘুমিয়ে পড়েছে নিজেও জানে না ... তার ঘুম যখন ভাঙলো তখন বিকেলের নাশতা দিয়ে একজন নার্স আস্তে আস্তে চলে যাচ্ছিলেন ... ট্রের উপরে রাখা ছোট্ট চিরকুট টা দেখতে পেয়েই সে আবার এক নিঃশ্বাসে পড়া শুরু করে দিলো --

" তনুর বিষন্নতা আস্তে আস্তে বাড়তেই লাগলো, দিনের পর দিন এভাবে চলতে চলতে এক সময় দেখা গেল তার খাওয়া দাওয়া, ঘুম, পড়ালেখা সবকিছুর উপর অনিহা চলে এসেছে... দিনে দিনে তার ওজন কমতে লাগলো, নিজের ঘর থেকে বের হতো না, ঘরের লাইট ও জ্বালাতে দিতো না, সেই সাথে সবার সাথে কথা বলাও বন্ধ করে দিয়েছিল ... কত ডাক্তার, প্রফেসর দেখানো হলো কেউ বুঝেই উঠতে পারছিলো না ওর কি হয়েছে, কেন হয়েছে... এমনকি একদিন একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বলেই বসলেন এমনটা চলতে থাকলে হয়ত তাকে আর বেশি দিন বাঁচিয়ে রাখাই সম্ভব হবে না ... তনুর জন্য দুঃশ্চিন্তায় অস্হির বাড়ির প্রতিটি লোক ... ওর বাবা মা থেকে শুরু করে কাজের লোক, বাবুর্চি, ড্রাইভার এমনকি দারোয়ানও ... এমন একদিন, উদ্ভ্রান্তের মত ছুটতে ছুটতে মায়ের কাছে এসে সে বললো -- মা আমদের অনেক খাবার তো ফেলে দেয়া হয় সেখান থেকে কিছুটা আমাকে দিবা ? .....

এর পরে কি হয়েছিল জানতে পারবেন পরের চিরকুটে, তবে এর জন্য আপনাকে অবশ্যই বিকেলের নাশতার পুরোটুকু খেতে হবে, ঠিক আছে?"

মায়ের কাছে এভাবে ফেলে দেয়া খাবার চাওয়ার কথাটা পড়তে পড়তে সুমনার চোখ দিয়ে কখন যে টপ টপ করে পানি পড়তে শুরু করেছে সে নিজেও বুঝে উঠতে পারেনি ... এমন সুন্দর টুকটুকে আদুরে মেয়েটা কি শেষ পর্যন্ত মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়লো যে ভালো খাবারের পরিবর্তে ফেলে দেয়া খাবারের সন্ধান করছে ? ... এমন একটা ফুটফুটে বাবুকে সুস্হ করতে জান দিয়ে হলেও চেষ্টা করতো , তাইতো এরপর তনুর কি হয়েছে জানার জন্য সে এখনি আহত পাখির মত ছটফট শুরু করে দিয়েছে ... গোগ্রাসে বিকেলের খাবার সব শেষ করে বেল বাজিয়ে নার্সকে ডেকে জিজ্ঞেস করবো রাতের খাবার কখন দিবে ... রাত ৮ টার সময় রাতের খাবার সার্ভ হয় শুনে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আৎকে উঠলো সুমনা ... এখনো ৩ ঘন্টা পরে ? .... সে জিজ্ঞেস করলো -- তার যদি জলদি ক্ষিধে পায় তবে কি কিছু পাওয়া সম্ভব ? ... মায়ের মত আদর করা ওর অন্যতম প্রিয় নার্সটি ওর কপালে একটা ছোট্ট চুমু দিয়ে বলে, তোমার যখনই খেতে মন চাইবে খালি বেল বাজিয়ে বললেই তোমাকে সার্ভ করা হবে ... ঠিকাছে ? ... সে চলে যেতেই এতক্ষনে সুমনা চোখ পড়লো ওর বাবার উপরে, কখন যে উনি মা কে নিয়ে তার বিছানায় পাশে দাড়িয়েছেন বুঝতেই পারেনি... জ্বরে অসুস্হ মা মেয়েকে দেখতে ছুটে চলে এসেছেন হাসপাতালে, ওদিকে কিছুক্ষন সুমনার খোজ খবর নিয়ে ওর বাবা চলে গেলেন শুভ্রর কাছে, এই না দেখে সুমনা এক গাদা অভিযোগ করে বসলো মায়ের কাছে, মেয়েকে আদরে আদরে ভরিয়ে দিতে দিতে তিনিও বাবাকে অনেক বকা দিলেন ... ঘন্টা খানিক পরে ভিজিটিং আওয়ার শেষ হলে তিনি চলে গেলেন বাসায় ... আম্মু চলে যাওয়ার পরে পরেই তনুর কথা মনে পড়তেই রাজ্যের ক্ষিদে যেন সুমনার পেটে এসে বাসা বাধলো ... সাথে সাথে ডিং ডং করে ঘন্টা বাজিয়ে কিছু একটা খাবে জানাতেই হাসিমুখে স্বল্পভাষী নার্সটা চলে গেল খাবার আনতে ... যাওয়ার সময় বলে গেল - রাতের খাবারের সময়ের অনেক আগেই চাওয়া হয়েছে বলে আসতে একটু দেরী হতে পারে...

আধ ঘন্টার মাথায় খাবারের ট্রে হাতে প্রিয় এক নার্সকে আসতে দেখে সুমনা খাবারের চেয়ে ট্রে তে কোন চিরটুক আছে কি না দেখার জন্য রীতিমত দাড়িয়ে পড়লো ... ছোট্ট একটা আদর দিয়ে নার্স ওর হাতে চিরকুট টা দিয়ে বললো এটার জন্যই দুষ্টুটার ক্ষিদে পেয়েছিল তাই না ? ... চিরকুট টা পেয়ে আর এমন আদুরে কথা শুনে সুমনা যেন আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল ... আর কাল ক্ষেপন না করেই ও পড়তে শুরু করলো এবারের বেশ বড় চিরকুট টা ...

" অবাক চোখে মেয়ের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে মা বললেন কেন মামনি, ও খাবার কেন , তোমাকে টাটকা কিছু বানিয়ে দিতে বলি ? ... কিন্তু তনুর না সূচক ঘাড় নাড়িয়ে বললো - ওগুলো তো ফেলেই দিবে, এর চেয়ে আমাকে দাও না প্লিজ ... মেয়ের কথা ফেলতে না পেরে কাজের বুয়াকে দিয়ে তিনি বাসি ভাত পাঠিয়ে দিয়ে দরজার আড়াল থেকে শোনার চেষ্টা করতে লাগলেন তার মেয়ে কি করে ... ততক্ষনে খবর পেয়ে তনুর বাবাও অফিস থেকে ছুটে এসেছেন দেখতে তার মেয়ে কি করে , কিছুক্ষন পরে ঘরের বাইরে থেকে তনুকে একমনে নিজে নিজে কথা বলতে শুনে একসাথে দুজনেই ভিতরে গিয়ে দেখে তনু খাবারগুলো একটু একটু করে বাইরে ফেলছে আর বলছে -- আসো আসো খাও, আরেকটু খাও ... বাবা মা কে ঘরে ঢুকতে দেখেই ঠোটে আঙ্গুল দিয়ে চুপ থাকতে বলে হাতের বাটির সবটুকু ভাত বাইরে ফেলে একটু পরে ইশারায় বললো -- এদিকে আসো। আস্তে আস্তে উনাদের হাত ধরে জানালার কাছে আনতেই অবাক নয়নে তারা দেখলেন কার্নিসের কোনায় একটা ছোট্ট চড়ুই পাখির বাসা... সেখানে এক মা চড়ুই পাখি তনুর দেয়া খাবার গুলো খুটে খুটে তুলে নিয়ে বাচ্চাদেরকে খাওয়াচ্ছে ... তাই দেখে আনন্দে ও মুখ টিপে হেসে চলেছে, শব্দ করছে না, পাছে যদি ওদের ডিস্টার্ব হয় .... এর পর থেকে প্রতিদিন সময় মত তনু ঐ পাখির বাচ্চাদের সাথে গল্প করা আর খাবার খাওয়াতে শুরু করলো, এভাবে চলতে চলতে কিছুদিনের মধ্যেই দেখা গেল সবগুলো চড়ুই আর কার্নিস থেকে না, বরং তনুর জানালায় বসে খাবার খাচ্ছে ... সেই সাথে তনুও কিছু দিনের মধ্যেই একেবারে ঝরঝরে সুস্হ হয়ে উঠলো ... আগের যে কোন সময়ের চেয়ে উচ্ছল আনন্দে নিজের সব কাজ উৎসাহের সাথে শেষ করার পাশাপাশি সময়মত চড়ুইদের খাবার খাইয়ে, ওদের সাথে নিজের সারাদিনের গল্প করে বেশ কাটছিল দিন গুলো .... হঠাৎ একরাতে অন্ধকার মেঘে ভর করে দুরন্ত গতিতে ছুটে এলো কালবৈশাখী ঝড়, উড়িয়ে তাড়িয়ে ধ্বংস করে দিলো অনেকের সাজানো সংসার ... সেই সাথে কার্নিসে বানানো চড়ুই পাখির সাজানো ছোট্ট ঘর আর তনুর মুখে এতদিন লেগে থাকা আনন্দের হাসিটি ...

এবার সত্যি সুমনার কান্না পেতে লাগলো ... সামনে রাখা ডিনার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে কিন্তু তনুর কি হলো না জানলে যে খেতেও পারছে না, অন্যরকম এক মায়ার বাধনে জড়িয়ে পড়েছে সে তনুর সাথে ... যেভাবেই হোক ওকে জানতে হবে এর পরে তনুর সাথে কি হয়েছিল ... মনে মনে নতুন এক বুদ্ধি এঁটে সে গপাগপ খেয়ে নিলো ঠান্ডা হয়ে যাওয়া ডিনার ... ডিং ডং ঘন্টা বাজিয়ে খাবারের ট্রে ফেরত পাঠানোর সময় নার্সকে জিজ্ঞেস করলো রাতে ক্ষিদে পেলে কি সে কিছু চাইতে পারে ? ... হাসিমুখে হ্যা বলেই স্বল্পভাষী নার্সটা চলে গেল ... সে যেতে না যেতেই ওর কেবিনে বাবা ঢুকে ওর শরীরের অবস্হার কথা যেনে বসেই রইলেন ওর পাশে ... তনুর জন্য অস্হিরতা অথবা অন্য কোন কারনে এখন কেন যেন বাবার সাথে অভিমান করতে মন চাইছে না সুমনার ... শুধু একবার জিজ্ঞেস করলো -- তুমি এখানে ? ওপাশের মানুষটা কি ঘুমিয়ে পড়েছে নাকি ? ... ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আদরের মেয়েটিকে বুকে টেনে নিয়ে কিছুক্ষন বসে থাকার পরে বললেন -- শুভ্রর অবস্হা বেশী ভাল না, এজন্য ওকে ইন্টেনসিভ কেয়ারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ... সুমনা এই প্রথম শুভ্রর জন্য হঠাৎ করেই বেশ কষ্ট অনুভব করতে লাগলো ...

কিছুক্ষন পর রাউন্ডে আসা ডাক্তার ওকে পরীক্ষা করে বেশ খুশী মনে বললেন, আপনার শরীরের যথেষ্ট উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করার কারনেই আপনি অনেক সুস্হ হয়ে উঠেছেন, আশা করি কাল সকালেই আপনি বাড়ী যেতে পারবেন ... কথাটা শুনে যে কারো মনে আনন্দের সূচনা হওয়াটা স্বাভবিক হলেও সুমনার ঘরে ফেরার এক বিন্দু ইচ্ছে নেই ... বরং মনে মনে সে ঠিক করে ফেলেছে, এর পর তনুর কি হয়েছিল না জেনে সে এখান থেকে বেরুবে না ... আদরের মেয়েটাকে এভাবে চুপ করে মন খারাপ করতে দেখে ওর বাবা জিজ্ঞেস করলেন, কি হয়েছে মা এমন করে আছিস কেন ? ... কষ্টগুলোকে আর ধরে রাখতে না পেরে বাবার বুকে ঝাপিয়ে পড়ে হু হু করে কেঁদে উঠে সুমনা তাকে সব ঘটনা খুলে জানালো ... সেই সাথে এটাও বললো - তনুর কি হয়েছে আর কে এই গল্প লিখে লিখে তাকে খাইয়েছে না জানা পর্যন্ত সে হাসপাতাল ছেড়ে যাবে না ... মেয়ের এই ইচ্ছেটাকে পূরনের লক্ষ্যে সুমনার বাবা চললেন এ দুটি প্রশ্নের খোজে ... কিছুক্ষন পর ফিরে এসে বললেন , তোমার দুটি উত্তর পেয়েই তুমি কাল সকালে বাড়ী ফিরতে পারবে ...

তখন মধ্যরাত পাশের চেয়ারে বসে ওর বাবা ঘুমুচ্ছেন ... কিন্তু সুমনার চোখে ঘুম নেই, তনুর কি হয়েছিল এর পরে ? ... না জানলে যে ওর ঘুমই আসবে না আজ রাতে ... ডিং ডং ঘন্টা বাজিয়ে কিছু হালকা খাবারের কথা জানানোর কিছুক্ষন পরেই এক মমতাময়ী নার্স এসে ট্রেতে কিছু কুকিজ আর এক গ্লাস গরম দুধ দিয়ে গেল, যাওয়ার সময় ওর কপালে চুমু দিয়ে যেতে যেতে বললো -- শুনলাম কাল সকালে চলে যাবে তুমি ... আর কখনো যেন এমন কোরোনা , আচ্ছা ? ... কথা শেষ হওয়ার আগেই ডিউটিতে থাকা ডাক্তার এসে বললেন -- আপনি রাতে ঘুমানোর চেষ্টা করেন, তা না হলে আপনার শরীরের যতটুকু উন্নতি হয়েছে তার চেয়ে বেশী খারাপ হয়ে যেতে পারে ... ট্রের দিকে তাকিয়ে এরপর তিনি বললেন -- ওগুলো খেয়ে শুয়ে পড়ুন, ঠিকাছে ? শুভরাত্রী .... ওরা দুজনেই চলে যাওয়ার সাথে সাথে ট্রে তে রাখা চিরকুট টা তুলে নিয়ে ও পড়তে লাগলো ...

"ঝড়ের পর থেমে তনুর মনে এক ফোটা আনন্দ নেই, নেই সেই আনন্দের উচ্ছলতা ... ভেজা চোখে চুপচাপ বসে থাকা জানালায় ... কারো সাথে কথা বলে না ... পাখিদের ঠিক যে সময় খাবার দিতো , অভ্যাস বশত রান্নাঘর থেকে কিছু খাবার এনে জানালায় ছড়িয়ে দিয়ে চুপ চাপ অপেক্ষা করতে লাগলো কখন আসবে ওরা, কখন খাবে ওর দেয়া খাবারগুলো ... মেয়ের এই কান্ড দেখে আর বাবা মা কারো সহ্য হয় না ... ফুপিয়ে কেদে উঠে দুজনেই অন্য রুমে চলে যায় ...যেখানে নিরবে ফেলতে পারবে ওদের দু ফোটা চোখের জল ... হঠাৎ ছোট্ট দুটি হাতের ছোয়ায় দুজনেই চমকে উঠলো তাকিয়ে দেখলো হাসিমুখে দাড়িয়ে আছে তনু ... ওরা তার দিকে তাকাতেই ফিসফিসিয়ে বললো -- এদিকে এসো, দেখে যাও ... গুটি গুটি পায়ে ওরা তিনজনে তনুর ঘরের দরজার দাড়িয়ে দেখতে লাগলো এক অপূর্ব দৃশ্য ... জানালার উপরে বসে একমনে টুক টুক করে খেয়ে চলেছে কয়েকটি ছোট্ট চড়ুই পাখি ।।"

আপনি জানতে চেয়েছেন -- গল্পটা আপনাকে কে শুনালো, এর উত্তর পাবেন কাল সকালে... ডিসচার্জ হওয়ার সময় আমার শেষ চিরকুটে... শুভ রাত্রী ।"


চিরকুট টা পড়ে সুমনার মনে যেন আর আনন্দ ধরে না ... তনুর গল্পটা শেষ হয়েছে, সকালে যে জানতেও পারবে কে তাকে গল্পটা শুনিয়েছে ... এই খুশীতে কখন যে তার চোখ লেগে এসেছিল সে নিজেই জানেনা , সকালে তার আব্বুর ডাকাডাকিতে চোখ খুলতেই তিনি বললেন ,সকাল হয়ে গিয়েছে নাও চলো বাসায় যাই ... সে উঠে ফ্রেস হয়ে আসতে না আসতেই ওর বাব বললেন , তোমার ডিসচার্জের সব পেপার রেডি করে এনেছি ... এবার চলো যাই ... বাবার পাশে দাড়িয়ে সুমনা বললো, এর মাঝে কোন চিরকুট নেই বাবা ? শেষ একটা আসার কথা ছিল ... খুশীর ঝিলিক তোলা চোখে ফাইলের ভিতর থেকে সুমনার জন্য আসা শেষ চিরকুট টা সুমনার হাতে দিয়ে তিনি দাড়ালেন তার অতি আদরের মেয়ের পাশেই ... আর সুমনা পড়তে থাকলো --

" ছোটবেলায় তোকে যে প্রতিদিন গল্প শুনাতাম আর তুই মায়ের হাতে ভাত খেতি মনে আছে ? না হয় অনেক দিন তোকে গল্প শুনাইনি, তাই বলে কি ভেবেছিস বাবা টা অনেক বোকা হয়ে গিয়েছে ? সে কি পারবে না তার মেয়ের অভিমান ভাঙ্গিয়ে গল্প শুনাতে শুনাতে খাবার খাইয়ে দিতে ? এবার বল, এমন একটা গল্প লেখার জন্য আমাকে কত নম্বর দিবি ? "


চিরকুট টা পড়া শেষ করতেই বাবার বুকে ঝাপিয়ে পড়ে তার সেই ছোট্ট আদরের মেয়েটা ফিক করে হেসে বলে উঠলো -- তোমাকে একশ তে একশ দশ দিলাম বাবা....




পূর্নতার পথে একটুকরো ভালবাসা

পূর্নতার পথে একটুকরো ভালবাসা

২৯ শে অক্টোবর, ২০০৯ বিকাল ৫:৩৯





জানালার গ্রীল ধরে ঠিক কতক্ষন দাড়িয়ে আছে কান্তারীর ঠিক মনে নেই, এই পড়ন্ত বিকেলে বৃষ্টির ঝাপটায় পুরো ভিজে গেলেও আজ কেন যেন ঠান্ডা লাগার চিন্তা মনেও আসছে না ওর ... দুর আকাশের মেঘের ভেলায় আজ যেন ওর চিন্তা ঘুড়ি উড়ে চলেছে সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত দুরন্ত কোন কিশোরীর মত ... এত বছরের মন খারাপ করা অন্ধকারাচ্ছন্ন মেঘগুলোকে আজ যেন ছুয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে এক্কেবারে কাছ থেকে, আদরে আদরে হাত বুলিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে ওদের তুলতুলে ভেজা শরীরের প্রতিটি অনু পরমানুগুলোকে ... বৃষ্টিকে যার এতদিনের ভয় অল্প এক্টু ভিজলেই ঠান্ডা লাগে বলে, সেই বৃষ্টির হাত ধরেই আজ সব ভয় কাটিয়ে উচ্ছল আনন্দে নেচে উঠতে মন চাইছে হৃদয়ের প্রতিটি সুক্ষাতিসুক্ষ আবেগ অনুভূতি ... ওপাশের বিল্ডিং এর কার্নিসে ভিজে চুপ চাপ বসে থাকা কুচকুচে কালো কাক গুলোকে আজ কেন যেন অন্যদিনের মত তাড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করছে না , বরং পরম মমতায় এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে মনের মাঝে একটুকরো অন্যরকম ইচ্ছের জন্ম নিচ্ছে - ইশ ! ওদেরকে যদি এক টুকরো কাপড় দিয়ে মুছে দেয়া যেত .... বারান্দায় রাখা ফুল গাছগুলোকে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ভিজতে দেখে আজ কেন জানি ফিক করে হেসে উঠতে মন চাইলো, কারন আজ সে ওদের মত নিজেও ভিজছে জানালায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে,তবে ওদের ডালে ডালে অসংখ্য কলি দেখতেই কেন যেন লজ্জায় লাল টুকটুক হয়ে উঠলো ওর ফর্সা গাল দুটো ... রাস্তার উপর জমে থাকা বৃষ্টির পানিগুলো প্রতিদিন ওর বিরক্তের কারন হলেও আজ যেন মন চাইছে -- ইশ ! ঐ পানিগুলোর মধ্যে যদি একটু দাপিয়ে আসা যেত, কি মজাই না হতো ... বৃষ্টির মাঝে রাস্তায় হাটতে থাকা স্কুল ফেরত এক বাচ্চা তার মায়ের মেলে ধরা ছাতার বাইরে বেরিয়ে ভেজার যে কি প্রানান্তর চেষ্টা করে চলেছে দেখতেই মনে অজান্তেই ফিক করে হাসি দিয়ে মনে মনে প্রার্থনা শুরু করলো - আমি চাই তুমি বিজয়ী হও, শুধু আজকে নয় সারাটা জীবন তুমি সকল বাধা পার করে বিজয়ী বেশে আবির্ভুত হও সেই মমতাময়ী মায়ের সামনে যে তোমাকে একটুকরো কাপড় দিয়ে তোমাকে তুমুল বর্ষনের হাত থেকে রক্ষা করে চলেছে ... হঠাৎ করেই যেন তার অনুভুত হলো গত রাতে আবিষ্কৃত নিজের ভিতরে ক্রমে ক্রমে বেড়ে ওঠা কেউ একজন আন্দোলিত করে নিজের অস্তিত্বের জানান দিয়ে জিজ্ঞেস করছে -- আর আমি ? ... পরম মমতায় ওর উপরের চামড়ার আবরনে ভালবাসা মাখা আদরে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে সে বলে উঠলো -- ওরে দুষ্টু, আমার সব ভালবাসা আর শুভকামনা যে শুধু তোরই জন্য !!!


ভালবাসায় ভরা ছোট্ট একটি টেক্সট : ফাইন্ড মি

ভালবাসায় ভরা ছোট্ট একটি টেক্সট : ফাইন্ড মি

১৬ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ৯:২৩





সামনের বাঁকটা পার হলেই ওদের বাড়ী, এইখানে আসলে কেন জানি ওর কথা খুব বেশী মনে পড়ে, সারাদিন যদিও ওকে অনেক মিস করা হয় তবুও এইখানে আসলেই মনে হয় যেন , ইশ ! ওকে যদি এই মুহুর্তে দেখা যেত ....তখন থেকেই দেড়শ মিটারের এট্টুক পথটা যেন হাজার মাইলের চেয়ে দীর্ঘ মনে হতে থাকে ... মোড়টা পার হয়ে বাড়ীর সামনে আসতেই দারোয়ানকে দেখা গেল গেট খুলছে ... খুবই আন্তরিক মানুষ, বয়সে বড় বলেই তাকে সে সম্মান করে কথা বলে, এই এতটুকু ভাল ব্যাবহার পাওয়ার পরে লোকটার কাজকর্ম দেখে মনে হয় ওর জন্য যেন লোকটি জীবন দিয়ে দিতে পারবে , পার্কিং এ গাড়ী রাখতেই সামনে রাখা ফোনে বেজে উঠলো মনকাড়া সেই নির্দিষ্ট টেক্সট টোন ... আলতো আদরে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখতে পেল এসে গিয়েছে সেই কাঙ্খিত টেক্সট -- ফাইন্ড মি ...

দরজার কাছে আসতেই দেখা গেল ওটা আগে থেকেই খোলা রাখা আছে , তার মানে সে আজকে ধারে কাছে নাই ... তাই ঘরে ঢুকেই প্রথমে সোফার পিছে দেখতে দেখতে বলে উঠলো -- আজকে তুমি কাছেই আছ জানি, চুপ করে থাকলে কিন্তু আমার সাথে দু মিনিট কথা কম বলতে পারবে ... তুমি কি তাই চাও ? চাইলে চুপ থাকো, নাইলে কথা বলো তো ?

নাহ ! সেখানে ওকে পাওয়া গেলনা ... তবে কোথায় খোজা যায় ... পর্দার পিছনে ? .... গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে একটানে জানালা থেকে পর্দা সরিয়ে দিয়ে দেখা গাল ... নাহ !! নাই তো ... তবে ? .... কিচেনে ? .... ওখান থেকে কেমন একটা সুগন্ধ আসছে , আবার দরজাও চেপে দেয়া ... সে নিশ্চই ওখানে আছে ... ধীর গতিতে সন্তর্পনে কিচেনের দরজা আস্তে আস্তে করে অর্ধেক খুলতেই দেখা গেল ঢিমে আঁচে গ্যাসের চুলায় রান্না হচ্ছে ওর খুবই প্রিয় গলদা চিংড়ী ফ্রাই ... সে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো -- আমি জানি এখানেই তুমি আছ... এবার সে কি আমার সামনে আসবে , নাকি আমাকেই তাকে খুজে বের করতে হবে শুনি ? ...... কিন্তু নাহ ! কেউ তো সামনে আসছে না ... দরজাটা পুরো খুলে ভিতরে দেখা হলো , দরজার কোনায় দেখা হলো ... নাহ, সে নাই এখানেও ... তাহলে কোথায় গেল সে ? .... বাথরুমে ? ...

আস্তে আস্তে বাথরুমের পাশে দাড়াতেই ভিতরে পানি পড়ার শব্দ পাওয়া গেল ... তার মানে এখানে সে এসেছিল ...দরজায় একটু ধাক্কা দিতেই দেখা গেল সেটা খোলা, ধুম করে পুরোটা খুলে দেখা গেল বালতিতে কয়েকটা ছোট ছোট হাতে ধোয়ার কাপড় পড়ে আছে আর তার উপরে অল্প করে পানি ছেড়ে দিয়ে রাখা আছে সেটারই শব্দ বাইরে থেকে শোনা যাচ্ছিলো .... ভিতরে চারিদিকে চোখ বুলিয়ে মনে মনে হেসে এবার ও বলে উঠলো -- আচ্ছা, তাহলে তুমি বেডরুমে না হয়েই পারো না ... আসছি আমি ...

বেডরুমের দিকে যেতে যেতেই দেখা গেল সেটা আস্তে করে বন্ধ হয়ে গেল ... এর পরে আর বুঝার কিছু বাকি নাই, তবুও সে -- কোথায় তুমি, তোমাকে এখনো খুজে পেলাম না , কোথায় লুকালা, বের হয়ে আসো বলতে বলতে বেডরুমের দরজা খুলে সোজা বেডের পাশে গিয়ে দাড়ালো ... সুন্দর করে সাজানো বেডের উপরে লম্বা কেউ ব্লাংকেট মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে ... ওটার কাছে যেতে যেতেই আদর আদুর গলায় সে বলে উঠলো -- আমি জানি তুমি এখানে আছ, এখানে ছাড়া তুমি আর কোথাও নাই ... আর পরে ব্লাংকেটে হাত দিতে গিয়ে হঠাৎ চোখে পড়লো জানালার পর্দার নিচে দুটো সুন্দর পা ছটফট করতে করতে অনেক চেষ্টায় নিজের দুষ্টুমি লুকিয়ে চলেছে ... এই না দেখে ও হাত সরিয়ে দু হাত কোমরে দিয়ে বলে উঠলো ... এবার কি তোমার উপর থেকে নিজে নিজে ব্লাংকেট সরাবে নাকি আমাকেউ সরাতে হবে, হু ? .... সারা ঘর খুজে এখন পেয়েছি তাকে, এবার কিন্তু তাকেই আমার সামনে আসতে হবে... সে যতক্ষন সামনে না আসবে আমি কিন্তু জানালার পাশে দাড়িয়ে থাকবো ? ..... এরপরে জানালার দিকে পিঠ ফিরিয়ে মুখে একটু দুষ্টু হাসি নিয়ে সে "টুক্কিঈঈঈঈই" বলতে না বলতেই পর্দা সরিয়ে পরীর বাচ্চাটা ওর পিঠের উপর ঝাপিয়ে পড়তেই সেখান থেকে ওকে বুকে টেনে নিয়ে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো - তুমি কি জানো , তোমার আমি কত্ত ভালোবাসি ? ... এরপর, গোলাপী অধরের অস্ফুট সম্মোহনী শব্দে নিজের জবাব খুজতে হারিয়ে গেল , এক অন্য জগতে ...



অন্ধকারের পূনরাবৃত্তি

অন্ধকারের পূনরাবৃত্তি

১২ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১০:৪৫




সুনসান চারিদিক নিরব নিস্তব্ধ অন্ধকার গলিতে একলা হেটে চলেছে ছেলেটি রাতের বেলার অতি পরিচিত পথটিতে খুব প্রয়োজন না হলে দিনের বেলা তার চলাচল নেই বললেই চলে ... তাইতো রাতের অন্ধকার রাস্তাটি যেন অতি আপন জনের মতো আকড়ে ধরে রেখেছে হৃদয়ের কাছাকাছি .... সেদিন রাতে ঐ পরিচিত রাস্তায় চলতে গিয়ে হঠাৎ শুনতে পেল যেন করুন কোন আর্তনাদের সুর ... যেন চাপা স্বরে কেউ কেঁদে চলেছে এক টুকরো সাহায্যের প্রত্যাশায় ... বিভীষিকাময় অন্ধকারের পর্দা ভেদ করে করুন শব্দের উৎসে পৌছাতেই দেখতে পেল এক আহত চড়ুই পাখির বাচ্চা কাতর কন্ঠে আর্তনাদ করে চলেছে ... কোনো দুষ্টু ছেলের দল তার ডানা ভেঙ্গে দিয়েছে ... ডানা ভাঙ্গার অসহ্য যন্ত্রনায় ছটফট করছে দেখে অন্ধকার মানুষটি তাকে আলতো করে পরম মমতায় কোলে তুলে নিলো ... একটু খানিক স্নেহের ছোঁয়া চড়ুই বাচ্চাটির হৃদয়ে যেন ভরিয়ে দিলো অনাবিল প্রশান্তির উষ্মতা ... চকিতে নজর পড়লো রাস্তার ওপারে দেয়াল ঘেষে কুকড়ে থাকা এক মানবীয় ছায়া মুর্তির উপর ... থরথর কাঁপতে থাকা ছায়ামুর্তির কাছে যেতেই শুনে গেল তার ফুঁপিয়ে কান্নার চাপা আর্তনাদ ... কাছে গিয়ে দাড়াতেই স্পষ্ট দেখা গেল তার ক্ষীন শরীরে আতংকে শিউরে ওঠা কাপুনি ... অস্ফুট গোঙ্গানীতে স্পষ্ট হলো তার নিরাপত্তাহীনতা ... হয়ত সে ভেবেছিলো এও ঐ সব শকুনের মতই আরেক নরখাদক ... শীতল কন্ঠের সাহায্য প্রদানে আগ্রহী কন্ঠস্বরটিকে যেন অথৈ সাগরে ডুবতে থাকা সাতার না জানা কারো কাছে পাশ দিয়ে ভেসে যাওয়া খড়কুটো মনে হতেই শত দ্বিধায় আন্দোলিত হৃদয়ে হাতটি ধরে দাড়িয়ে পড়লো এক টুকরো আলোর প্রত্যাশায় ....

ঘরটি বেশ অগোছালো, জানালা গুলো ভিতর থেকে শক্ত করে আটকানো আর তার উপরে ভারী পর্দা দিয়ে ঢাকা ... দেয়ালগুলো নোংরা না হলেও অযত্নের ছাপ বিদ্যমান , ঘরের প্রতিটি কোনা যেন মাকড়সাদের নিজস্ব সম্পত্তি ... ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ঘরের প্রতিটি জিনিস যেন চিৎকার করে এক এলোমেলো জীবনের বর্ননা দিয়ে চলেছে ... একটা মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই এ বাড়ীতে বিদ্যমান তবে একটা বিষর স্পষ্ট যে এখানে মাত্র একজন ছাড়া আর কারো প্রবেশাধিকার নেই ... কিচেনে আসবাব পত্র সবই আছে শুধু একটি করে গ্লাস প্লেট আর চায়ের মগ ... বাথরুমটা বেশ সাজিয়ে গুছিয়ে বানানো হয়েছিল কিন্তু চরম অবহেলার ছাপ পড়ে রয়েছে যত্রতত্র ... চারিদিকে এক নজর চোখ বুলালেই যে কারো মনে একটা কথাই উদিত হতে বাধ্য , আর তা হলো -- এই লোকটির জীবন যাত্রা একেবারে অন্যরকম .... বড়ই অদ্ভুত ....

কয়েক সপ্তাহ পরের ঘটনা,

চড়ুই পাখিটা এখন নিজে নিজে হেটে হেটে সারা বাড়ি ঘুরে বেড়ায়, যেন তার নিজের বাড়ির মতই ... ওর জন্য একটা জানালা সবসময় খুলে দিয়ে রাখা আছে যেখানে কয়েকদিন ধরে কিছু চড়ুই পাখির আসা যাওয়া লক্ষ্য করা যায় ... ওরা একসাথে সারাদিন খেলা করে ... আর সন্ধ্যা হলেই আহত চড়ুই এক বাচ্চাকে রেখে চলে যায় নিজেদের ঘরে ... অন্ধকার মানুষটি পরম মমতায় একদিন কাচা হাতে বেধে দেয়া ব্যান্ডেজ খুলে দেখে ভিতরের আহত অংশটা শুকিয়ে গিয়েছে ... এখন চড়ুই বাচ্চাটা একটু একটু করে উড়তেও পারে ... তবে কোন এক কারনে সে ঘরের বাইরে কখনো যায় না ... সবাই একসাথে খেতে বসলে অন্ধকার মানুষটির প্লেট থেকে টুক টুক করে খাওয়াটা যেন তার অভ্যাসে পরিনত হয়েছে ... পাশে একটু খাবার ছিটিয়ে দিলেও সেখান থেকে সে খায় না ... ওদিকে ভয়ে কাতর মেয়েটিও বেশ গুছিয়ে নিয়েছে নিজেকে ... বাড়ীর প্রতিটি কোনে নিজের হাতে পরিষ্কার করেছে সে ... ঘরের প্রতিটি জিনিসকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে ঠিক ঠিক যায়গা মতো ... নিজের ঘরের মতই নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে ঘরের অন্য দুটি প্রানীর সাথে ... প্রথমে প্রথমে একটু ভয় করলেও এখন সে অল্প বিস্তর বাইরের কাজও শুরু করে দিয়েছে ... টুকিটাকি জিনিস আর প্রতিদিনের বাজার করা সে নিজের কাজ মনে করেই করছে নিয়মিত .... আর অন্ধকার মানুষটি, অনেক বছর পর যেন সেই আগের রুপে দেখতে পাচ্ছে তার অতি পরিচিত এই বাসাটিকে ... অনেক বছর আগের মতই বাইরে একবেলাও না খেয়ে নিজের বাসাতেই আজকাল তারা তিনজনে একসাথে খাচ্ছে, দিনের বেলা সে বাইরে আগের মত কাজে যাচ্ছে ... রাতের জীবনকে ছুটি দিতেই আজ যেন খুজে পেয়েছে নিজের সেই হারিয়ে যাওয়া স্বকীয়তা .... এরপরে একদিন, অনেক চিন্তার পর অন্ধকার থেকে নিজেকে বের করে আনা মানুষটির আবার নতুন করে বাঁচতে ইচ্ছে হলো, আবার ইচ্ছে হলো নতুন করে জীবনটাকে সাজাতে ... ঠিক সেইভাবে শুরু করতে যেভাবে সে একসময় শুরু করেছিলো তার জীবনের এক নতুন অধ্যায় ... সারাদিনের কর্মব্যাস্ততার পরে নিজের ভিতরটাকে ঠিকঠাক গুছিয়ে, এক হাতে একটি চড়ুই বাচ্চাটার জন্য নতুন একটা প্লেট আর মনের কোনে উকি দেয়া ফুটফুটে মেয়েটির জন্য একটি লাল টুকটুকি শাড়ী নিয়ে ঘরের দরজার দাড়াতেই আজ যেন সেই অনুভুতির ছওয়া পেল, যা আরো একদিন পেয়েছিল, অনেক বছর আগে .... এর পর দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই তার সাজানো গোছানো বিছানার উপর দেখতে পেল পাশাপাশি দুটি জিনিস ... চড়ুই পাখিটির খুলে ফেলা ব্যান্ডেজ আর একখানা কৃতজ্ঞতাপত্র ...



বাসর রাতের গল্প : ঘটনার পিছনের ঘটনা

বাসর রাতের গল্প :

ঘটনার পিছনের ঘটনা

০৭ ই অক্টোবর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:২৮






গ্রামের বাড়ির বিয়ে গুলোতে আসলেই অন্যরকম মজা হয় ... একবার মনে আছে একজনের গায়ে হলুদে তার গায়ে কি পরিমান কাদা মাখানো হয়েছিল, সেই সাথে দু বাড়ীর মানুষ একে অপরকে কাদা মাখিয়ে একসাথে পুকুরে গোসল করতে নেমেছিলো ... আমি তখন অনেক ছোট তাই সে দুরে দাড়ায়ে এ সব দেখেছিলাম ... তবে বড় হয়ে একটু আধটু মজা যে করেছিলাম ... তবে খুব বেশী কিন্তু না :P বিয়ে অনুষ্ঠানের অনেক কাহানী আগেও বলেছি আজকে বরং বাসর ঘরের একটা কাহানী বলি ...

শীতকালের কোন এক সময়ে আমার দুর সম্পর্কের এক চাচাতো ভাই এর বিয়েতে গিয়েছি, এমনিতে গ্রামে শীত বেশী তার উপরে এতটা পরিচিত না সবার সাথে , আর বয়স ও খুব একটা বেশী না ... ক্লাস ৬ - ৭ এ পড়ি , সুতরাং কেউ সেই টাইপ পাত্তা দেয় না , কি আর করা সারা দিন খাওয়া দাওয়া আর পরিচিতদের সাথে ঘুরে ফিরে সময় কাটিয়ে দেয়ার পরে যখন জানলাম আজকে তাদের বাসর রাত, আর বড়দের অনেক কে দেখালম কি করা হবে আজকের রাতে তাই নিয়ে নিজেদের মাঝে ফিসফিস করছে, তাই দেখে নিজেরও ইচ্ছে হলো ওদের সাথে মজা করতে, কিন্তু অন্তুরে কেউ নিজেদের দলে নিলো না, বিশেষ করে একটা বড় আপু আর ওর বোনেরা (যার বাসর রাতে এইটার শোধ নিয়েছিলাম সেই রকম ভাবে ;) ) ... ওরাই কে কি করবে তাই ঠিক করছিলো বাগানে বসে বসে ...

এর পরে কি আর করা, বন্ধুদের সাথে নিয়ে স্কুলের মাঠে চলে গেলাম বিকেলের দিকে অন্যদের খেলা দেখতে দেখতে মুড়ি চানাচুর মাখা খাচ্ছিলাম একটা দোকানে বসে ... হঠাৎ দোকানদার বলে -- আপনারা নতুন আসছেন এইখানে, পটকা লাগবে ?
আমি বলি -- পটকা কি জিনিস ?
আমার সাথে একজন বলে -- আতশবাজী ...
সাথে সাথে মাথার মধ্যে একখান হিটলারী বুদ্ধি এসে গেল ... নগদে এক প্যাকেট চকলেট বাজী কিনে সন্ধ্যার সময় রওনা হলাম বিয়ে বাড়ীর দিকে ....

রাতের বেলা, সবাই ঘুমুতে যাবে ... এমন সময় আপুরা দেখি বর-বৌ এর বাসর ঘরে বসে বসে ওদের সাথে দুষ্টুমি করছে, আমাদের ছোট্ট দলটাও ওদের সাথে যোগ দিতে ও ঘরে সুন্দর করে সাজানো বেডটার চারপাশে দাড়াতেই ওরা আবার ক্যাচাল শুরু করে দিলো , ছোটরা এখানে কি করে রে , যাও ঘুমুতে যাও ... আবার এমনভাবে অপমানিত হয়ে ফেরত আসছি এমন সময় একজন বললো , আজকে দেখি অনেক মশা.... তোদের কেউ একজন দুটো মশার কয়েল নিয়ে আসিস তো এই ঘরে ... আচ্ছা আনছি বলে বের হতেই দুজন কে পাঠিয়ে দিলাম আন্টিদের কাছ থেকে কয়েল আনতে আর আমরা অপেক্ষা করতে লাগলাম ঘরের বাইরে ...

কিছুক্ষন পরের দৃশ্য .... বাসর ঘরে দুটো কয়েল হাতে অন্তু আর তার এক কাজিনের প্রবেশ, একটা কয়েল ঘরের এক অন্ধকার কোনায় আরেকটা কয়েল বেডের নীচে রেখে দুজনের প্রস্হানপূর্বে আরেকবার আপুদের খিকখিকানী হাসির সাথে টিপ্পুনি খাওয়া -- আজকে আমরা ওদের সাথে সারা রাত গল্প করবো, তোমরা যাও ঘুমাও ...এ কথা শুনে নিরব হাসি দিয়ে ওদের দুজনের প্রস্হান .... ঘন্টা খানিক পরে, বাসর ঘর থেকে মেয়েগুলোর খিক খিক হাসি আর হট্টোগোলের আওয়াজ ছাপিয়ে একটু অন্যরকমের আওয়াজ পাওয়া গেল ... বুম !!!! :P :P






অলস মস্তিষ্কের আকথা

অলস মস্তিষ্কের আকথা

০৮ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ৮:৪৯






বুদ্ধিমত্বা মানুষের জীবনকে সুন্দরভাবে পরিচালনায় সহায়ক হলেও কখনো কখনো তা জীবনকে করে তোলে অপেক্ষাকৃত জটিল আর দ্বন্দে ভরপুর ... অপেক্ষাকৃত কম বুদ্ধিমত্তা কোন পাপ নয় বরং সরল সহজ জীবনযাপনের অন্যতম উপকরণ বলেই আমার ধারনা... যদিও বেশীরভাগ মানুষ এর বিরোধীতা করতে পারে তবুও আমি বলবো এটাই ঠিক, যত কম বুঝবে তত কম কষ্ট পাবে ততই সহজ ও নির্বিঘ্নে জীবনকে পরিচালিত করা যাবে ...


*************************

দৃষ্টিশক্তি মানুষের জীবনের জন্য একান্ত প্রয়োজনীয় .... তবে শুধু চর্মচোখের দৃষ্টি নয় জীবন চলার পথকে সহজ করতে মনের দৃষ্টিশক্তিও অপরিহার্য, কারন মনের প্রখর দৃষ্টি বিনা জীবন চলার পথ বন্ধুর হওয়াটা শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র ... তবে মনের সেই প্রখর দৃষ্টিশক্তি যখন অনেক অপ্রিয় সত্যের মুখোমুখি দাড় করায় যা চর্মচক্ষু দ্বারা অবলোকন করা যায় না, তখনি মানসপটে ভেসে ওঠে একটিই অস্ফুটবানী -- ধরনী তুমি দিখন্ডিত হও... হারিয়ে যাই আমি তোমার ভিতর ....

************************

ঘ্রানের পারদর্শিতা অনেক দুরের বিপদকে সময় থাকতেই সতর্ক করে দিয়ে থাকে বলে তার অপরিহার্যতা প্রশ্নাতীত ... সে দিক থেকে উন্নত নাসিকা বস্তু জগতের অবস্হার নির্দেশিকা এবং অবশ্যাম্ভাবী বিপদমুক্তির কারন হলেও এর অযাচিত ব্যবহার সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনা নিশ্চিত করে থাকে ... তাইতো যেখানে সেখানে নাক গলানোর অভ্যাসকে বদঅভ্যাস নামেই সকলের নিকট পরিগনিত হয়ে থাকে ...

***********************

মুদ্রার এক পাশ দেখে অন্য পাশকে মুল্যায়ন না করে সবদিক অবলোকন করার পরেই একটি নির্দিষ্ট ধারনায় পৌছানো আবশ্যক, অন্যথায় অনর্থ অবশ্যম্ভাবী না হলেও এর যথেষ্ট সম্ভাবনা থেকেই যায় ....

Tuesday, October 6, 2009

ছড়ায় ছড়ায় অন্তুর বাস্তব শিক্ষা লাভ

ছড়ায় ছড়ায়

অন্তুর বাস্তব শিক্ষা লাভ

০৬ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ৩:২০





সেদিন জ্বর নিয়ে কাজে গিয়েছি, কাজ করতে করতে একে তো রাত হয়ে গেল সেই সাথে জ্বর বাড়তে লাগলো , ফলাফল - রাতে ফেরার মত অবস্হা ছিল না, তাই ওখানেই থেকে গেলাম রাত টুকু ... পরের দিন বাসায় যাইনি শুনে এক আঙ্কেল বয়সী আরেক কো-ওয়ার্কার কে নিয়ে আমার পাশে বসলো ,

বসে বললেন --> অন্তু রাতে যাও নাই বাসায় তো কেউ কিছু কয় নাই ?

আমি কইলাম --> বাসায় আর কেউ নাই যে খবর নিবে বাসায় ফিরোনা ক্যান ...

উনি কইলো --> আমার অবস্হা কি দেখসো ? একটু দেরী হইলেই ফোনের পর ফোন আসতে থাকে, কৈ আছি, কি করি আরো কত কি ... তোমার ও একই অবস্হা হয়ে যাবে ...

আমি আসকাইলাম --> ক্যামনে ?

উনি বললেন --> ক্যামনে ? তাইলে একটা প্রচলিত ছড়া শুনো --

যখন তোমার দুই পাও (পা)
যেখানে খুশী সেখানে যাও

যখন তোমার চার পাও (পা)
আমায় সাথে নিয়ে যাও

যখন তোমার ছয় পাও (পা)
বাব তুমি কৈ যাও ....


এইবার বুঝতে পারসো ?



ছড়া শুনতে শুনতে অন্তুর মনে ভেসে ওঠা কয়েকটি দৃশ্যের ছবি অনেকটা এই রকম ---



প্রথম দৃশ্য




দ্বিতীয় দৃশ্য





শেষ দৃশ্য





ছবি কৃতজ্ঞতায় -- গুগল মামা

শতবর্ষ পেরিয়ে নতুনের প্রত্যাশায়

শতবর্ষ পেরিয়ে

নতুনের প্রত্যাশায়

০২ রা অক্টোবর, ২০০৯ বিকাল ৩:৫৫






চায়ের কাপে পড়ে থাকা
তলানীটা যেন
এঁকে দেয় জীবনের
শেষ মূহুর্তের জল ছবি

পুরোনো পিরিচে রাখা
ভাঙ্গা কাপ টিতে যেন পাওয়া যায়
খুব পরিচিত কোন একটি জীবনের
জীবন্ত প্রতিচ্ছবি

এক পা ভেঙ্গে দাড়িয়ে থাকা
টি-টেবিলটা যেন
পরিপূর্ন এ জগৎ সংসারের
অবাক বিশ্ময়

নড়বড়ে ঘুনে ধরা ইজি চেয়ারটা
জীবনের শেষ মূহুর্তেও
কালের সাক্ষী হয়ে বয়ে চলেছে
অপ্রয়োজনীয় কিছু বোঝা

জানালার পাশ ঘেষে পড়ে থাকা রংচটা পর্দাটা
যেন কোন পরাজিত সৈনিকের মত
গুটিয়ে রেখেছে নিজেকে

তার কোল ঘেষে
গ্রীলের ফাঁক দিয়ে
ছড়িয়ে দেয়া হলো
ধুসর চোখের বিবর্ন স্বপ্ন

ব্যাথিত সময়ের উৎসুক মন
মেঘাচ্ছন্ন হৃদয়ের সুপ্ত বাসনায়
শতাব্দীর শেষ প্রান্তে দাড়িয়ে
নতুন সূর্যোদয়ের অপেক্ষায়....



আত্মোপলব্ধীর পথ ধরে ছুটে চলা অন্তর্দ্বন্দ অতঃপর

আত্মোপলব্ধীর পথ ধরে

ছুটে চলা অন্তর্দ্বন্দ অতঃপর

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:২০



অনেকে নাকি নিজের মনের সাথে কথা বলতে পারে, কৈ আমি তো কখনো এমনটা করিনি, জিনিসটা ভাবতে ভাবতেই কেন জানি মনে হলো জিনিস টা করলে খুব একটা খারাপ হবেনা মনে হয় ... সুতরাং চেষ্টা করেই দেখা যাক ....

আমি : মন তুই কৈ ?
কারো কোন সাড়া শব্দ নাই ... তাই আমি আবার তার সাথে কথা বলার জন্য নিজের সম্পূর্ন মনোযোগ দিতে চেষ্টা করলাম ... আর আবার জিজ্ঞেস করলাম

আমি : আমার ছায়া, আমার মন , কোথায় তুই ?
হঠাৎ মনে হলো কেউ যেন ভিতর থেকেই উত্তর দিলো ... তার অস্তিত্ব প্রকাশ করে যেন জানান দিলো, সে আছে ....

আমি : আমি এমন কেন রে ?
মন : কেমন ?
আমি : আমি সবার মাঝে থেকেও নিজেকে সবসময় আড়াল করে রাখি কেন ?
মন : কারন তুই সাধারন না ...
আমি : মানে ?
মন : মানে তুই সবার মত দেখতে হলেও আসলে তুই অন্যরকম এক জীব
আমি : তবে আমি এই জগতে কি করছি ?
মন : খুব সম্ভব ভুল করে চলে এসেছিস ...
আমি : ধুর , কি সব আবোল তাবোল কথা বলছিস
মন: আমি যা বলছি সেটাই ঠিক, তুই নিজেকে আর কনফিউজড করিস না ... সত্যকে মেনে নে ...

আমি : সত্য টা কি ?
মন : তুই মানুষরুপী এক অসামাজিক জীব ...
আমি : প্রমান কর ...
মন : তোর এই মুহুর্তে বন্ধু সংখ্যা কত ?
আমি : সে তো অনেক আছে
মন : নাহ ! ভাল করে ভেবে বল ... যাদের সাথে তোর যোগাযোগ আছে, বন্ধুর মত তাদের সাথে আছিস এই মুহুর্তে
আমি : হাতে গোনা অল্প কয়েকজন ... খুবই অল্প কয়েকজন
মন : তুই কতজনের সাথে নিয়মিত কথা বলিস ?
আমি : সে সংখ্যা তো এক আঙ্গুলের বেশী পার হবে না ...
মন : ফোনে কাজ ছাড়া গল্প করিস আগের মত ?
আমি : নাহ ! কাজ ছাড়া কারো ফোন ই এ্যাটেন্ড করি না , করলেও দু - তিন জনের
মন : গত এক - দুই বছরে বেড়াতে গিয়েছিস কোথাও ?
আমি : মনে পড়ে না
মন : রাতে ঘুমাস ?
আমি: নাহ
মন : আর কাউকে কেয়ার করিস ?
আমি : মনে হয় না ...
মন : কারো কষ্ট দুর করতে পারিস ?
আমি : নাহ !

মন : আগে যেমন পঙ্খীরাজ উড়ায়ে লং ড্রাইভে বের হতি আজকাল আর তা করিস ?
আমি : নাহ , শেষ কবে গেছি নিজেরই মনে নাই
মন : বই পড়িস ?
আমি : নাহ
মন : সামাজিক কোন আচার অনুষ্ঠানে যাস ?
আমি : নাহ
মন : এক বিল্ডিং এ তোরা যারা থাকিস ওদের সাথে শেষ কবে কথা বলেছিস ?
আমি : মনে নাই ... পিচ্চিদের সাথে দেখা হলে দিনে এক দুইটা কথা হয়, বড়দের কারো সাথে ঈদের দিন ছাড়া মনে হয় মাস খানেকের বেশী হবে কথা বলা হয়নি ...
মন : তোর সবচেয়ে প্রিয় যায়গা কোনটা ?
আমি : দরজা বন্ধ অবস্হায় আমার বেডরুম ... যেখানে আর কারো ঢুকার অনুমতি নেই
মন : আর বাইরের সবচেয়ে প্রিয় যায়গা ?
আমি : নির্জন কোন নদীর পাড়ে একলা বসে থাকতে
মন : তোর আশে পাশে কি তাহলে সমাজের ছিটে ফোটাও রাখতে দিয়েছিস ?
আমি : মনে হয় না
মন : নিজেকে কি সমাজের একটা অংশ হিসেবে রেখেছিস ?
আমি : মনে হয় না
মন : তাহলে তুই বল, তুই কি এই সমাজের কেউ ?
আমি : যথেষ্ট সন্দেহ আছে ...
মন : ঠিক বলেছিস, এবার কি বুঝেছিস তুই যে একটা অসামাজীক প্রানী

এবার সত্যি এই অসামাজিক প্রানীটা চিন্তায় পড়ে গেল ... নিজের ভিতরের কথাগুলোকে সে কি পারবে কখনো ইগনোর করতে ? তবে কি ওগুলোই সত্যি ? পারবে কি কখনো এই সমাজের সাথে মিশতে ? গড়তে পারবে নিজেকে অসামাজিক প্রানী থেকে সামাজিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে ? ... হয়তো হ্যা , অথবা না ....




ঈদের চাঁদের মাঝে লুকিয়ে থাকা পূনর্জন্ম

ঈদের চাঁদের মাঝে

লুকিয়ে থাকা পূনর্জন্ম

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:৩০






সকাল ৭টার এ্যালার্মটা প্রতিদিনের জন্যই দেয়া থাকে তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো সেই এ্যালার্মে ওর ঘুমটা খুব কম দিনই ভেঙ্গেছে , সবসময় দেখা যায় তার ঘুমটা দু চার মিনিট আগেই ভেঙ্গে যায় আর এ্যালার্ম বাজার আগেই তা বন্ধ করে দেয় ... আজ অনেক দিন পর... উহু , অনেক দিন বললে বোধ হয় ভুল হবে অনেক বছর পর ঘুমে যেন তার চোখ আটকে আসছিল, এ্যালার্মের শব্দে আজকে যেন উঠতেই মন চাইছিল না, ঘুমের ঘোরেই মন বলছিল এই কর্কশ ডাকের যায়গাতে যদি কোন মধুর শব্দে আজ ঘুম ভাঙ্গতো তবে হয়ত আজকের সকালটা হয়ে উঠতো অন্যরকম সুন্দর ... অন্যসময়ের মতই, গত একমাসে প্রতিদিন সেহরী খেয়ে একটু ঘুমানোর অভ্যাসটার সাথে বেশ মানিয়ে নিয়েছে সে, তাইতো এখন পর্যন্ত কখনো তার কাজে যেতে দেরী হয়নি তবে আজ হঠাৎ এই চিন্তার ঘোরের কারনেই হয়ত ১৫ মিনিট দেরিতেই ঘুমটা ভাঙ্গলো ... ত্রস্ত পায়ে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেস হয়ে সুনিপুন হাতের সুক্ষ কারুকাজে নিজেকে রেডি করতে কখনোই তার ১৫ থেকে ২০ মিনিটের বেশী লাগে না ... আজও তার ব্যাতিক্রম না হলেও কেন যেন মনের মাঝে এক অন্যরকম অনুভুতি দোলা দিয়ে যাচ্ছিলো .... ঠিক ৭:৪৫ এ দরজায় তালা লাগিয়ে করিডোর দিয়ে হাটতে হাটতে এত বছরের পরিচিত যায়গাটাকে যেন নতুনের মত মনে হচ্ছিলো ... এটা কি সকালে ১৫ মিনিট দেরি হওয়ার কারনে মনে হতেই হাত ঘড়িতে সময়টা দেখে নিশ্চিত হলো -- নাহ ! আজ অফিসে যেতে দেরী হবে না, হাতে যথেষ্ট সময় আছে ...

করিডোর পার হয়ে লিফটের সামনে আসতেই প্রতিদিনের সেই পরিচিত মুখগুলোকে দেখতে পেল যারা একসাথে একই সময়ে লিফটে করে নিচে নামে ...মিস্টার আর মিসেস এরিক তার আদরের মেয়ে ক্যারিন, আর তাদের পাশে দাড়িয়ে আছে কলেজগামী আরেক প্রতিবেশীর মেয়ে ... সেই সাত আট বছর ধরে দেখছে ওকে তবুও আজ যেন ওর নামটা মনে করতে পারছে না ,নিজের মনে নিজেই প্রশ্ন করে বসে ওর নামটা যেন কি ? ... কাছে আসতেই যন্ত্রচালিত মানবের মত সবাইকে শুভ সকাল বলে দাড়িয়ে গিয়ে আজ লক্ষ্য করলো ওরাও শুভসকাল বলে প্রতিউত্তর করে, কিন্তু সবার মুখে থাকে এক অন্যরকম স্নিগ্ধতার পরশ ... মনে মনেই আবার প্রশ্ন করে বসলো -- এই জিনিসটা এত বছরেও কেন আমার চোখে ধরা পড়লনা ?...

সামান্য কিছুক্ষন পর, অভ্যস্ত হাতে পার্কিং লট থেকে হুশ করে বেরিয়ে যেতে যেতে খেয়াল করলো আজকের সকালটা একটু অন্যরকম লাগছে ... জানালা টার উপর দিকে অল্প একটু নামিয়ে দিতেই সকাল বেলার টাটকা হাওয়া ওর গায়ে যেন ছুয়ে দিলো এক অনাবিল শান্তির ছাপ ... মনটা যেন একেবারেই ভাল হয়ে গেল সাথে সাথে, অথচ কাল রাত থেকে সে অন্যরকম কিছু প্ল্যান করছিল আজকের জন্য ... প্ল্যানটার কথা মনে পড়তেই আস্তে আস্তে সে যেন ফিরে চলছিল সেই আগের মানুষটির মাঝে যাকে সে তিলে তিলে গড়ে তুলেছে গত সাত আট টি বছর ধরে ...যার ভিতর থেকে ধীরে ধীরে এক একটা করে বের করে দিয়েছে অনুভুতির ছিটেফোটা ... নিটল কালো গভীর দুটি চোখে প্রতিস্হাপন করেছে নিশ্চল পাথরের স্হবিরতা ... মন থেকে মুছে ফেলেছে আনন্দ নামক জিনিসটি ... সবার মাঝে থেকেও এক অদৃশ্য দেয়াল তৈরি করে নিজেকে আলাদা করে নিয়েছে সবার কাছ থেকে ... হুমমম ... এক দু জন নয়, সবার কাছ থেকেই সে আজ দুরে ... শারিরীক আর মানসিক, দুভাবেই ... বস্তু জগতের কঠোরতা আপন করে নেয়ার বিনিময়ে দুর করেছে মনের সুপ্ত ইচ্ছেগুলো, ভালোলাগা গুলো আর সেই সাথে ভালবাসা ... নাহ ! এ জিনিস গুলো আজ কেন তাকে এভাবে ভাবাচ্ছে ? এগুলো সে তো কখনো চিন্তা করে না ... তবে আজ কেন করছে ? অফিসে গিয়ে কালকের কাজের একটা প্ল্যান তৈরি করতে হবে, ঠিক কি কাজ করলে নিজেকে সকাল থেকে রাত দুপুর পর্যন্ত ব্যাস্ত রাখা যাবে তা নিয়ে বরং চিন্তা করা যাক ... এবার সে ঐ দিকেই আবার নিজের মনোযোগকে নিবদ্ধ করার পাশাপাশি হয়ে উঠলে লাগলো সেই চিরাচরিত অন্যমানুষে ...

অফিসে ঢুকতেই আজকে দেখে কাজের চাপ বেশ কম, সবাই যার যার কাজ বেশ আগে ভাগেই শেষ করে রেখেছে, মুসলমান কলিগ গুলো সবাই আজ বেশ সকালে এসেই কাজে হাত লাগিয়েছে, যেন একরকম উঠে পড়ে লেগেছে দুপুরের আগেই আজকের কাজগুলো শেষ করে কালকের কাজের কিছু অংশ শেষ করে একদিনের ছুটি নিয়ে ঈদের দিনটা আনন্দে কাটাতে পারে ... সবার মুখেই এক অন্যরকমের পরিতৃপ্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে , এক মাস সিয়াম সাধনার পরে কাল ঈদ ... বিদেশ বিভুইয়ে অইসলামিক দেশে ঈদের জন্য একটা দিনের বেশী ছুটি পাওয়াটা কল্পনার ব্যাপার তবে ঈদের দিন ছুটিটা সবাই যে ভাবেই হোক নিয়ে থাকে ... নন-পেইড ছুটি হলেও নিয়ে নেয় ... কিন্তু সে অন্যরকম একজন, তাই তার কাজ ও অন্যরকম ... সে ছুটি নেয়, সবার মত সেই ঈদের দিন ছুটি নেয় তবে মাত্র কয়েক ঘন্টার জন্য ... ঈদের নামাজটা পড়ে সে সোজা চলে আসে কাজে, এরপর গভীর রাত পর্যন্ত নিজেকে ব্যাস্ত করে রাখে কাজের মাঝে যাতে কোনভাবেই ঈদের পুরোনো স্মৃতিগুলো ওকে তাড়া করে নিয়ে না যেতে পারে সেই অসামান্য আনন্দের মুহুর্তগুলোতে যখন ঈদের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যেত রমজানের আগে থেকেই ... কাছের বন্ধুরা সব এক ডিজাইনের পান্জাবী, স্যান্ডেল আর চাদর পরে ঈদ করবে বলে পুরো রমজান মাসটি দল বেধে ঢাকার প্রতিটি শপিং সেন্টার চষে ফেলতো ... একটাও যদি কম পাওয়া যেত তবে সে ডিজাইন যতই পছন্দের হোক না কেন বাদ দিতে এক সেকেন্ডও কার্পন্য করতো না, ঈদের দিন থেকে নিয়ে পরের দুই তিন দিন একটানা বেষ্ট ফ্রেন্ডগুলোর সাথে কাটিয়ে তৃতীয় বা চতুর্থ দিনে ঘরে ফিরে আম্মুর অভিযোগ শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে যেত " সেই ঈদের দিন নামাজ পড়ে এসে একটু খেয়ে বের হয়েছিলে আর দুদিন পরে বুঝি ক্ষিদে পেয়েছে ?" ... এর পরে এমনি আদরের বকাগুলো শুধু সে না, বরং তার কাছের বন্ধুগুলোকেও খেতে হতো সবকটা মায়ের কাছ থেকে, কখনো কখনো ঈদির বদলে সবার পিঠে পড়ত গোটা কয়েক ধুমধাম কিল ... হাসতে হাসতে গড়াগড়ি দিতে দেখে মায়েদের মনগুলো কেমন করে যেন গলে যেত, পরম মমতার আদরে ভরে দিতেন সবকটা ছেলেগুলোর জীবন ... সব ক'জনের বাবা একরকম ছিলেন না তবে জানতেন এই বাদরের দল ঘরে ঢুকলে তাদের পকেটের উপর হামলা হবেই, এ ক'দিন একটানা ঘুরাঘুরি করে নিশ্চয়ই ওদের পকেট খালি বলেই ঘরে ঢুকেছে, তাই তারাও আগেভাবে নিজের পকেটগুলোকে রেডি করে রাখতেন যাতে "চাহিবামাত্র নোটগুলোর আসল বাহকদের হাতে সেগুলো হস্তান্তর করা যায়" ... নাহ ! আজ এত বছর পরে কেন এসব মনে পড়ছে, সে তো সবার থেকে এতদুরে আছে বলে এসব পুরোনো স্মৃতি মনে করতে দুঃখ বাড়াতে চায় না, যে জিনিস আর কখনো ফিরে পাবার নয় তার আশা কেন করবে সে ? এ জীবনে কষ্ট পাওয়ার মত অনেক কিছুই আছে, আর বাড়ানোর দরকার নেই, এ কথাটিকেই মনে রেখে নিজের জীবন থেকে বছরের দুটি কষ্টের দিন গুলোকে অতি সন্তর্পনে দুরে রেখে চলেছে প্রতিবার ... ঈদ এখন আর তার জীবনে আনন্দ নিয়ে আসেনা , বরং তা যেন আসে স্মৃতির সুঁচালোর কাঁটার সুতীক্ষ্ণ খোচায় ওকে রক্তাক্ত করে তুলতে ...

এসব ভাবতে ভাবতেই আজ কখন যে দুপুর গড়িয়ে গেল ভেবেই পেলনা সে ... সেল ফোনে টেক্সের শব্দে চিন্তার রেশটা কেটে যেতেই দেখে আব্বু আম্মু একসাথে নাম লিখে ম্যাসেজ দিয়েছে, কাল আমাদের ঈদ, ঈদ মোবারক ... সাথে সাথে সেল ফোন থেকেই ডাইরেক্ট ফোন করে তাদেরকেও ঈদের মোবারকবাদ দিয়ে শক্ত চোয়ালে ফুটিয়ে তোলা মৃদু হাসির শব্দে ওদের মন ভরিয়ে দিয়ে লুকিয়ে রাখলো নিজের সব দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রনা ... এর কিছুক্ষন পরে এক আরেকটি টেক্সট ... ""আজ আমার আকাশে ঈদের চাঁদ উঠেছে, তোমার আকাশেও নিশ্চই উঠবে,কখনো না বললেও আমি জানি তুমি ঈদের দিনে কেমন করে কাটাও, তোমার যেভাবে খুশী তুমি সেভাবে নিজের ঈদের দিনটি কাটাও তাতে আমি কিছুই বলবো না, শুধু একটা অনুরোধ - অন্তত এবারের ঈদের চাঁদটা কি তুমি আমার জন্য দেখবে ?""

পরিচিত এই কাছের মানুষটা কখনোই তার কাছে কিছু চায়নি, আজ কি মনে এমন আবদার করলো সে ? সে কি জানে না এই কাজটা করতে তার কি পরিমান কষ্ট হবে ... সে কি সব যেনেও বুঝতে চায় না নিজের সাথে কি পরিমান যুদ্ধ করে তাকে এই কাজটা করতে হবে ... আজ সে নিজেও বুঝতে পারছেনা এই টেক্সট টি যেন তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে সেই পুরোনো আনন্দে উচ্ছল ঝলমলে দিনগুলোতে ... অনেক করেও নিজেকে যেন আর বেঁধে রাখতে পারছে না অদৃশ্য সেই দেয়ালের মাঝে , যা এত বছর ধরে তিলে তিলে সে নিজেই গড়ে তুলেছিল নিজের চারপাশে ... মাথাটা যেন আজ আর নিজের নিয়ন্ত্রনে নেই ... অনেকটা ঘোরের মাঝেই সে ঐ কাছের মানুষটিকে টেক্সট রিপ্লাই দিয়ে বসলো -- "আমার মনে কেন যে এমনটা হচ্ছে ঠিক জানি না, তবে আজ সত্যি সত্যি তোমার জন্য ঈদের চাঁদ দেখতে খুব ইচ্ছে করছে"



বন্ধুর বৌ এর চেহারা আজ যেন এক জীবন্ত প্রশ্নবোধক চিহ্ন !!!

বন্ধুর বৌ এর চেহারা

আজ যেন এক

জীবন্ত প্রশ্নবোধক চিহ্ন !!!

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:১১




বহুদিন পরে সেল ফোনে একটি পুরোনো নম্বর থেকে কল দেখে প্রথমে উৎসাহী আর তারপরে কোন এক অজানা কারনে আতংকিত হয়ে উঠলাম। উৎসাহের কারন হলো বিয়ের পর থেকে এই নম্বরের মালিক আমাকে কল করা একপ্রকার কমিয়েই দিয়েছে আর আতংক এই কারনে যে, কোন না কোন ঝামেলা ছাড়া সে আমাকে কল দেয় না। সুতরাং কি হবে, কি হইসে, এসব ভাবতে ভাবতেই রিসিভ করলাম আমার বন্ধুর কলটা ....

>> হ্যালো ...
---> অন্তু কেমন আছিস
>> আমি ভাল , তোর খবর কি ?
---> এইত্তো, চলে ...
>> মানে ?
---> আর কইস না, জীবনটা একেবারে তেজপাতা হয়ে গেল ...
>> সে আবার কি অবস্হা ?
---> না রে, তেজপাতা না বলে পাতলা ডাইল বলা ভাল ...
>> শোন, উপমা ছাড় আগে ঠিক করে হইসে কি ?
---> আমি দোস্ত কোয়েশ্চেন সাইনে আটকে গেছিরে :|
>> আবার ? ... কি হইসে খুলে বলবি ?
---> তোর ভাবীরে চেহারা দেখলে এখন খালি মনে প্রশ্ন জাগে ...
>> আগে তুই তারে দেখলে কনফিউজড হইতি আর এখন প্রশ্ন জাগে ?
---> আসলে ওর চেহারাই এখন আমার কাছে এক প্রশ্নবোধন চিহ্ন হয়ে গেছে রে
>> খুলে বল আবার কি হইসে ...

---> এই মনে কর সেদিন উইকেন্ডে দুজনে উঠেছি সকালে, ভাবলাম অনেক দিন পরে দুজনেই বাসায় আছি একসাথে ব্রেকফাস্ট বানায়া খাই, অফারটা দেয়ার সাথে সাথে লুফে নিয়ে সে বললো, রুটি তুমি বানাও আমি সব্জি ভাজি আর কফি বানাই আচ্ছা ? ... সাথে সাথে রাজি হয়ে গেলাম কিচেনে ... সে অন্যদিকে সব্জি বানাচ্ছে আমি আরেকদিকে রুটি বেলছি, হঠাৎ সে এসে বলে এইটা কি বানাচ্ছ ... এইটা কি রুটি হইসে নাকি বাংলাদেশের মানচিত্র ? ... আমি কইলাম তাইলে কি করুম ... এবার সে নিজের চেহারার চারপাশে আঙ্গুল ঘুরায়ে বললো চাঁদের মত গোল রুটি বানাও ... সাথে সাথে তার বাংলা পাঁচের মত চেহারার সামনে প্রশ্নবোধক চিহ্ন দেখতে পেলাম, বুঝে উঠতে পারছিলাম না কেমন সাইজের রুটি বানাবো...
>> এর পরে ?

---> এর পরে আর কি, পরের রুটিটা পাকা আমের আটির মতো হয়ে যাওয়াতে তার চোখ থেকে যে আগুন বের হচ্ছিলো মনে হচ্ছিলো যেন তাওয়াতে না দিয়েই আমার সবরুটি সেদ্ধ হয়ে যাবে ...সে সময় ওপাশে নচ্ছাড় ল্যান্ড লাইনের ফোন বেজেই চলছিল ... কেউই ধরছিলাম না, এবার সে বলে উঠলো -- কেউ ফোন করছে টা কি কারো কানে ঢুকছে না ? ধরো গিয়ে যাও ... ফোন এ্যটেন্ড করে আসার পথে হঠাৎ দেখি বৌ এর সেল ফোন বাজছে ... এবার আবার না ধরলে ঝাড়ি মারে কিনা ভাবতে ভাবতেই কলটা ধরতেই দেখি ওর প্রিয় বান্ধবী কল করেছে ... সেল টা ওকে দিতেই প্রথমে দেখে নিলো কে ফোন করেছে, এরপর খুবই অল্প কথায় লাইন কেটে দিয়ে বললো -- বয়স বাড়ছে আর অভ্যাস খারাপ হয়ে যাচ্ছে তোমার, মেয়ে মানুষের কল দেখলে কথা না বলে থাকা যায় না তাই না ? এবার থেকে আমার সেল ধরা তোমার জন্য নিষিদ্ধ !!!
>> হুমম .... তোর তো উভয় সংকট অবস্হা দেখা যায় ...

---> আরে রাখ তো উভয় সংকট অবস্হা , আমার মত অবস্হায় পড়লে বুঝতি সংকট কত প্রকার আর কি কি ...
>> কথা না প্যাচায়ে বলে ফেল ঘটনা কি হইসে ....

---> সেদিন আমারে নিয়ে গেছিলো ঈদের শপিং এ, যাওয়ার আগে কইলো - এবারের ঈদ টা সাদামাটা ভাবেই করবো রোজার মাসে যদি সংযম কি জিনিস না শিখলাম তাইলে আর কবে শিখবো বলো ... আমি কইলাম ঠিকাছে । দুজনে গেলাম বসুন্ধরায় প্রথমে সে তো কিছু কিনতেই চায় না, যেটা দেখে সেটাই ভাল্লাগে কিন্তু কইলো নাহ, এইবার শপিং এর বাজেট কম রাখসি , সংযম করবো ... তোমারে এবার বেশী জ্বালাবো না ঠিক করেছি ... দেখি সস্তা কিছু পাওয়া যায় কি না... আমি কইলাম -- সস্তার দরকার নেই তোমার যা মন চায় কিনো ঈদের আনন্দের কাছে টাকা কোনো ব্যাপার না ... কথাটা বলে শেষ করতে পারলাম না অমনি দেখি পিছন থেকে বৌ এর নাম ধরে চিৎকার করতেসে ... দেখি তার পুরানা দোস্ত জামাইরে নিয়া আইসে শপিং এ ... দাড়ায়া দাড়ায়া খানিক্ষন গল্প করার পরে দুই বান্ধবী কইলো তুমরা গল্পাইতে থাকো আমরা শপিং টা শেষ করে আসি ... কৈ দেও তো তোমার ওয়ালেট টা এই বলে বৌএর বান্ধবী তার স্বামীর সিন্দুক লুটে নেয়ার পরে আমারটাও আমার কাছে রাখার কোন সুযোগ পেলাম না... ঘন্টা তিনেক পরে ওরা যখন ফিরলো তখন দেখি দু হাতের ব্যাগের ওজনে দুজনেরই ত্রাহি ত্রাহি অবস্হা। অতঃপর তাদের রেজিষ্টার্ড কামলা দুইজন ওদের কষ্ট নিবারন করার পরেই তাদের আবদার, অনেক ঘুরে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি এবার বাড়ী চলো ... বান্ধবীর কাছ থেকে বিদায় নেয়ার পরে বৌ কইলো তোমার কাছে রিক্সা ভাড়া আছে তো ?
>> আয় হায় , বলিস কি রে .... দুঃখ করিস না দোস্ত বৎসরে ঈদ মোটে দুইবার আসে, চিন্তা কর এটা যদি প্রতিমাসে আসত তবে তোর কি হাল হত ? আচ্ছা সেদিন ভাবী রিক্সায় ফেরার কথা বললো, গাড়ি নিয়ে যাসনি ক্যান ?

---> আর কইস না, ওরে নিয়ে তার কয়দিন আগে গাড়িতে করে যাচ্ছিলাম শশুর বাড়ী, পথে কি মনে করে সিডি চালিয়েছিলাম , ওতে বাজছিলো -- চাঁদের আলোয় বাঁধ ভেঙেছে ... কোন কুক্ষনে যে মুখ থেকে যে বের হইসিল -- এই গানটা কলেজের একটা ফাংশনে সিমি গাইসিল মনে আছে ? ... (দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে ) এর পরের কাহিনী তোরে কওন যাইবো না ... পারলে বুইঝা নে ...
>> কি বুঝাইলি ঠিক বুঝিনাই, তবে কিছু একটা হইসিল সেটা বুঝতেসি ... এখন কি করিস ?

---> একটু পরে পরীক্ষা দেয়ার জন্য রেডি হই ...
>> এই রাত দুপুরে কিসের পরীক্ষা ?
---> একটু পরে তোর ভাবীর পছন্দের সবকটা হিন্দি সিরিয়াল শুরু হবে, তখন আমাকেও একসাথে দেখতে হবে, সে নাকি একলা একলা দেখে মজা পায় না আর আমি ওসবে কোন ইন্টারেস্ট পাই না ... তবুও ওর মন রক্ষার জন্য বসতে হয় ... আর বসে বসে পরীক্ষা দেই ...
>> মন রক্ষা করে বসে দেখিস ভাল কথা কিন্তু পরীক্ষা কিসের ?
---> ব্যাটা বিয়া তো করিস নি বুজবি না, নাইলে বৌ এর কোনো পছন্দের সিরিয়ালে হাসির যায়গায় মন খারাপ করে আর মন খারাপের যায়গায় মুচকি হাসি দিলেই বুঝতে পারতি রৌদ্র উজ্জ্বল দিনে ক্যামনে আকাশে গ্রহ উপগ্রহ তারা সব দেখা যায় ...

আরো একটি নির্ঘুম রাত্রীর আকথা

আরো একটি

নির্ঘুম রাত্রীর আকথা

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১০:০৮





চোখ দুটো আবারো জেগে রয়েছে অক্লান্ত, আঙ্গুলগুলো দুরন্ত গতিতে ছুটে চলেছে কি বোর্ডের উপরে ... মস্তিষ্কের রক্তকনিকা গুলো আজ যেন আবার জেগে উন্মত্ত উঠেছে পুরোনো নেশায়, দুর থেকে ভেসে আসে কোন এক নাম না জানা প্রানীর ডাক ... ঠিক যেন মৃত্যুপুরীতে জেগে থাকা কোন ডাইনীর কান্নার সুর ... হঠাৎ ডালা ঝাপটে উড়ে যায় বুঝি এক ভুতুম পেচা , অজান্তেই মনে প্রশ্ন জাগে -- এ কি কোন অমঙ্গলের প্রতীক নাকি নিছক মনের কল্পনা ? ... এখানে রাস্তায় বেওয়ারিশ কুকুর ঘুরে বেড়ায় না, বরং তারা লালিত হয়ে থাকে পরম আদরে ... কিন্তু এক কি শুনছি আমি, অজানা কোনখান থেকে বাতাসে ভেসে আসছে বুঝি এক কুকুরের মরা কান্নার সুর ... নিরব নিস্তব্ধ শহরের একাকী রাস্তাগুলোয় চুলচাপ নিজের বুকে আগুন জ্বেলে দাড়িয়ে আছে ল্যাম্পপোষ্ট গুলো ... সুনসান নিরবতার মাঝে মাথা তুলে দাড়িয়ে আছে বিকটকায় কিম্ভুতকিমাকার অন্ধরকার বাড়িগুলো ... এখান থেকে বেশ দুরে, ঐ যে দেখা যাচ্ছে কিসের যেন সাইন বোর্ড, ক্রমাগত জ্বলছে আর নিভছে ... ভুতুড়ে শহরের সাথে মন খারাপের পাল্লা দিয়েই বুঝি আজ আকাশে জমেছে অভিমানের মেঘমালা ... তারাগুলোও যেন সেই সাথে অন্ধকারের চাদর মুড়ি দিয়ে নিজেদেরকে আড়াল করায় ব্যাস্ত ... চাঁদ নিজেকে অপরূপ সাজে সজ্জিত করেও যেন মেঘের ঘোমটার আড়াল করে রেখেছে নিজের সৌন্দর্যকে ... কি বোর্ড থেকে হাত সরিয়ে এক বুক আশা নিয়ে তাকিয়ে থাকলাম একটু একটু করে বেশ খানিকক্ষন .... কখন কমবে তার অভিমান, মেঘের ঘোমটা সরিয়ে একটু কি দেখাবেনা সে তার চাঁদ মুখ খানি অন্তত একটি বারের জন্য ? ... নিজের ঘরকে অন্ধকারের সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে চুপচাপ অপেক্ষা করছিলাম সেই মাহেন্দ্রক্ষনের ... অতঃপর সেল ফোনের এ্যালার্ম জানিয়ে দিলো - আরো কতশত রাতের মত আবারো আমি কাটিয়ে দিয়েছি আরো একটি নির্ঘুম রাত ...



পটলচেরা সুনয়নার হৃদয় চেরা ভাব

পটলচেরা সুনয়নার

হৃদয় চেরা ভাব

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ২:২২







শীতের রাতে সবারই ইচ্ছে করে কম্বল মুড়ি দিয়ে একটা আরামের ঘুম দিতে, অথচ আমাকে যেতে হচ্ছে কিনা নাইট জার্নিতে , কেমন টা লাগে ... অবশ্য যাওয়ার জন্য মারুফ অনেক আগে থেকেই টানা হেচড়া করছিল ... একদিন পরে ওর বোনের বিয়ে, আমরা ক বন্ধু সবাই ওদের এত কাছের যেন আমরা এক বাড়ীর ছেলে, কিন্তু আজকের দিনটা পর্যন্ত পরীক্ষা থাকায় আর যাবনা ঠিক করেছিলাম, মারুফ কে তো শত রকমের ঝাড়ি পট্টি দিয়ে শান্ত করে ছিলাম কিন্তু মুন্নি আপু কে কিছুই জানাইনি ... খবর পেলাম ওদিকে মুন্নি আপু ওদের বাড়ীতে সবাইকে পৌছুতে দেখে হৈ হুল্লোড় আর আড্ডা দিয়ে বেশ আনন্দে সময় কাটিয়ে দিচ্ছে ... একদিন বাদে যে এই মেয়েটার বিয়ে তা কেউ বলবে না এমনটাই মজা করছে নাকি ... মনে মনে বলছিলাম, বেঁচে গেলাম এইবারের মত, ওর বৌ ভাতেই না হয় যাওয়া যাবে । কিন্তু সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে পরীক্ষা শেষ করে বাসায় এসে ফ্রেস হতে যাব এসময় আম্মু বললো -- অন্তু মুন্নি ফোন করে তোমাকে খুজছিল, আর বলেছে বাসায় আসার পরপরই যেন তুমি ওকে কলব্যাক করো ... কি মনে করে সাথে সাথে কল দিলাম আর এর পরে শুরু হলো হবু বৌ এর ইমোশন্যাল ব্ল্যাকমেইল ... সংক্ষেপে বলতে গেলে তিনি এক কথায় বলে দিলেন আমার সব কটা ভাই বোন এসেছে এখানে বিয়েতে একটা ছাড়া, ওকে এতদিন কিছু বলিনি কারন ওর পরীক্ষা ছিল আজকে যখন তার পরীক্ষা শেষ সে নিজে বলুক তাকে কি আমি নিজে ঢাকায় গিয়ে নিয়ে আসবো নাকি সে নিজেই আজকে রাতের বাসে করে এখানে পৌছাবে, সে যদি না আসে তবে একট আফসোস নিয়ে আমি বিয়েতে বসবো আর সে আফসোস জীবনে কখনো মুছবে না ... বুঝতে পারলাম এবার আর রক্ষে নাই যেতেই হবে নাইলে মুন্নিপু মন খারাপ করবে তো করবেই যারাটা জীবন আমাকে ঝাড়ি আর বকা আর খোচানীর উপর রাখবে ... সুতরাং সুবোধ বালকের মত ফ্রেস হয়ে খেয়ে দেয়ে, কটা কাপড় নিয়ে সন্ধ্যাবেলা রওনা দিলাম কল্যানপুর বাসস্ট্যান্ডে ...

কনকনে শীতের রাত, হাতে জ্বলন্ত সিগারেট হাতে বাস কাউন্টারের সামনে নেমে দুটো লম্বা টানে বুক ভরা ধোয়ায় শরীরটা গরম করে ভিতরে ঢুকেই দেখি ওয়েটিংরুম ভর্তি মানুষ। মনে মনে বলি ঈদের তো এখনো ১০ - ১২ দিন বাকী আছে এখনও এত ভীড় ক্যান , আজিব ব্যাপার ... কাউন্টারে বসা পরিচিত মামু ... গিয়া কইলাম জিয়া ভাই খবর কি ,টিকেট দেন তো দুইটা একখান যাওয়ার একখান আসার এখন যামু আর ঈদের আগে ফিরমু ... জিয়া ভাই আমার দিকে খানিক্ষন ফ্যাল ফ্যাল করে তাকায়া কইলো -- অন্তু ভাই সামনে ঈদ এই সময়ের টিকিট সবাই আধা / একমাস আগে কাইট্যা রাখসে আর আপনি কন এখন যাইবেন আর টিকেট লাগবে ? ফিরতির টিকিট দিবার পারুম একটার যায়গায় দশটা কিন্তু এখনের টিকিট দেয়া ঝামেলা হয়া যাবে অন্তু ভাই আমারে দুইটা দিন আগে ফুন দিলেই তো আপনার লাইগ্যা রাইখা দিতাম ... আমি কইলাম -- আমার আগে প্ল্যান আছিলো না যাওনের, ঘন্টা দুই আগে হইসে এখন যাওন লাগবো আর কোন কথা নাই ... কেমনে ব্যাবস্হা করবেন আপনি জানেন ... টিকেট না দিতে পারলে ড্রাইভার মামুর গলে গল্প করতে করতে যামুগা কইলাম এর পরে কখনো কিনুম না আপনার এই বাসের টিকেট কাইরে কিনতেও দিমু না .... জিয়া ভাই কইলো -- অন্তু ভাই কি যে বলেন, আপনে বসেন আমি দেখি কি করা যায় ...

পুরা কাউন্টার জুড়ে মানুষ গিজগিজ করছে, বসার যায়গা খুজে পাওয়াই বড় মুষ্কিল হয়ে পড়লো ওদিকে কাউন্টারের ভিতরেও বাসের অনেক মানুষ ঘুরা ফিরা করছে, তাই শেষমেষ ঘুরে ফিরে যায়গা না পেয়ে দরজার সামনের রাখা ছোট্ট বেন্চে বসলাম। ভিতরের অনেক মানুষের কারনেই বুঝি ঘরটা বেশ গরম লাগছিল এখানে বেশ শীত। কিছু একটা করা দরকার ভাবতে ভাবতে পকেট থেকে বেনসনের প্যাকেট টা বের করতেই দেখি ইয়া বড় দু ব্যাগ হাতে এক সুন্দরী এসে বলছে এই যে শুনেন একটু যায়গা দেন তো ... বেন্চের একপাশে সরে গিয়ে তাকে বসার যায়গা করে দিয়ে সিগারেটে আগুন জ্বালানোতে মনযোগ দিলাম ... বেন্চটা এত বড় যে চারজন অনায়াসে বসতে পারে তার একপাশে আমি আর আরেক পাশে সুন্দরী বসার পরে বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ যেন ভুমিকম্পে আমার রীতিমত বেন্চ থেকে পড়ে যাওয়ার দশা ... ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম সুন্দরী তার একটা দশাসই ব্যাগ যা কিনা তিনজনের চেয়ে বেশী যায়গা দখল করতে পারে, আমাদের দুজনের মাঝে রেখে তার উপরে হাত দিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে ... আমি বললাম -- এইটা কি হলো ?
সে বললো -- ব্যাগটা নীচে রাখলে ময়লা হবে তাই উপরে তুলে রাখলাম
আমি বললাম -- ওটা যে যায়গা নিয়েছে তাতে তো আপনি ছাড়া আর কেউ বসতে পারবে না তা বুঝতে পারছেন ?
সে বললো -- আর নীচে রাখলে যে আমার নতুন ব্যাগটা ময়লা হবে সেটা বুঝতে পারছেন না ?
এতক্ষনে খেয়াল করলাম এই কটকটির অসম্ভব সুন্দর দুটো পটল চেরা চোখ আছে যা আমার খুবই পছন্দের ... তাই আর তার সাথে গ্যান্জাম না করে উঠে দাড়ালাম, ফস করে সিগারেট টা জ্বালিয়ে এক বুক ধোয়া ছেড়ে বললাম -- ওটা না রাখলে এখানে আরো অন্তত দুজন আরামসে মানুষ বসতে পারতো ...
সে আবার বলে উঠলো -- আমার ব্যাগ আমি রেখেছি , আপনি বলার কে ? আর আপনি যেভাবে সিগারেট খাচ্ছেন ওটার গন্ধেই তো আপনার পাশেও তো কেউ দাড়াতে পারবে না , ওঠা নিভিয়ে ফেলেন ...
এইবার সুজোগ পেয়ে বলে উঠলাম -- আমার সিগারেট আমি জ্বালাইসি আপনি বলার কে ?
সে বললো -- আমাদের ক্যাম্পাসে হইলে দেখায়া দিতাম
আমি কইলাম -- ঠিকানা টা দিয়ে ঢাকায় ফিরে বইলেন কবে ঐখানে যেতে হবে , যামু নে ... তখন দেখুমনে কি করতে পারেন ...
সে কইলো -- রোকেয়া হলের সামনে যদি আপনারে পাইসি কোনো দিন, তাইলেই দেইখেন কি করি ...
আমি কইলাম -- ঐ এলাকার আশেপাশেই আমার চলাচল সবসময়, আপনি আপনাগো দারোয়ানের সাথে দাড়ায়া থাইকেন কখন আমি যাই ওখান থেকে, দেখা হবেই ..
সে বললো --- দেইখা নিমু ...
আমি কইলাম -- আইচ্ছা ...

এরপরে দুজনেই চুপচাপ , ঘড়ি দেখলাম বাস ছাড়ার সময় হয়ে গিয়েছে, এখনো জিয়া ভাই কি করলো টিকিটের দেখার জন্য ভিতরে যেতেই উনি বললো -- অন্তু ভাই একটা সিটের ব্যাবস্হা মনে হয় হইসে , একজনের ফোন আসছিলো উনি আজকে কাজের ব্যাস্ততার জন্য যেতে পারবেন না, উনাকে তিনদিন পরের একটা সিট দিয়েছি ... নিবেন নাকি ?
আমি কইলাম --- নিবো নাকি মানে ?
হে হে হে করে হেসে জিয়াভাই কইলো -- জানতাম এইটাই কইবেন, নেন কাইট্যাই রাখসিলাম আগে থেকে ...

সবাই এক এক করে বাসে উঠে গেলে পরে সবার শেষে বাস ড্রাইভার আর হেলপার মামুর লগে গল্প করতে করতে বাসে উঠলাম, সিট নম্বর দেখে খুজে খুজে নিজের সিটে বসতে যাব এমন সময় সহযাত্রীর উপরে চোখ পড়তেই আবার যেন একটা ভুমিকম্পের ঝাকুনি অনুভুত হলো ... কারন জানালার পাশের সিটটা আমার, সেটা দেখি দিব্যি সেই সুনয়না চর দখলের মত দখল করে বসে রয়েছে ... আমাকে দেখে সে বলে উঠলো -- জানালার পাশের সিট টা আমার ভাল লাগে, আপনি এই পাশে বসেন
আমি বললাম -- নিতান্ত ভদ্রতা বশত কোন রকম গোলমাল ছাড়াই নিজের পছন্দের জায়গাটা আপানর জন্য ছেড়ে দিলাম, নাইলে আপনি যে হুমকী দিয়েছেন তার পরে আপানর জন্য কোন কিছু স্যাকরিফাইস করার মন আমার নেই ...
সে বললো -- ওটা তো ঢাকায় এসেই আমি দেখে নিব আপনাকে, আপাতত বাড়ী ঈদ করতে যাচ্ছি বলে আপনার সাথে কোন গোলমাল করতে ইচ্ছে হচ্ছে না ...
আমি বললাম -- মনটা চাইতেসে ঐখানের গরুর হাটে আপনারে বিক্রি করে দিয়ে আসি , সময় থাকলে ঠিকই দিয়া আসুমনে ...
সে বললো -- হুহ !!
আমি কইলাম -- ক্র্যাপ !!

এবার আশে পাশে দুজনেই তাকিয়ে দেখলাম লোকজন হা করে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে, আমরা একবার মানুষজনের দিকে তাকাই আর অগ্নিদৃষ্টিতে একজন আরেকজনকে ভষ্ম করে দিতে চেষ্টা করছি ... ভাগ্য ভাল ড্রাইভার মামুও ততক্ষনের গাড়ি স্টার্ট দিয়ে গান চালিয়ে দিয়েছে, আর মিনিট পাঁচেকের মধ্যে ভিতরের লাইট টা নিভে যেতেই শুরু হলো পটল চেরা সুনয়নার সাথে এক টক ঝাল মিষ্টিতে ভরপুর এক অন্যরকম নীশিথ বাস যাত্রা ....



অন্যরকম একটা ভোর

অন্যরকম একটা ভোর

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১:৪৯




ঘরের চারিদিকে এক নজর বুলিয়ে দিলে কেউ কি বলবে মাত্র সপ্তাহেই কেউ এ ঘরটাকে মাতৃত্বের পরম আদরে সাজিয়ে দিয়ে গিয়েছে ? দরজার ঠিক সামনে হাই হিল দুটো দুদিকে এলোমেলো ভাবে ছড়িয়ে আছে ... তার ঠিক পাশেই কোল-কাস্ট টার উপরে সব রকমারী প্রসাধন সামগ্রী এদিক সেদিক পড়ে আছে, ড্রয়ার গুলোর সবকটা কিছুটা করে খুলে রাখা তার ভিতর থেকে নিজেদের অস্তিত্ব প্রকাশ করে উঁকি দিয়ে বের হয়ে আছে বেশ কয়েকটি শাড়ির পাড়, ওড়না আর ফতুয়ার অংশ বিশেষ ... তার নিচেই মেঝেতে ছড়িয়ে আছে উপর থেকে গড়িয়ে পড়া কয়েকটি লিপস্টিক, কাজল, নেইল পলিশ আরো কিছু ছোট ছোট জিনিস ... কোল-কাস্টের পাশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে গত রাতের বানানো মডেল গুলো বিচ্ছিন্ন অংশগুলো ... কম্পিউটার টেবিলে অবস্হাও ঠিক সেই রকম ... ওর উপরে ঠিক কত প্রকারের জিনিস আছে তা কেউ গুনে বলতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে ... কি বোর্ড আর মাউস টা ছাড়া বাকি অংশটুকুকে গারবেজ বললেও মনে হয় পরিষ্কার বলা হবে ... মনিটরে এখনো স্ক্রীন সেভারটা জানান দিচ্ছে , সে ঘুমোয়নি জেগেই আছে ... পানির খালি বোতল দুটো সেই রাতের বেলা থেকেই গড়াগড়ি খাচ্ছে টেবিলটার পাশে ...

এসি আর ফ্যান দুটো একসাথে চালানোর পরেও কেউ জানালা বন্ধ করতে ভুলে যায় এমন মানুষ মনে হয় পৃথিবীতে বেশ কমই আছে... আধ-খোলা জানালার পর্দাগুলোও এলোমেলো ভাবেই ঝুলছে গতকাল থেকে ... পড়ার টেবিলের উপরে একটা কলম রাখারও জায়গা দেখা যায় না , আর চেয়ারটাকে চেয়ার না বলে কাপড়ের স্ট্যান্ড বললে বুঝি বেশী সঠিক বলা হবে ... বিছানাটা ডাবল বেডের ... তবুও যেন মনে হয় এ ঘরে এদিক সেদিক থেকে মুখ বের করে সে কোন রকমে তার অস্তিত্বকে জানান দিচ্ছে ... বেডের এমন কোন ফাঁকা অংশ নেই যেখানে কেউ এসে বসতে পারবে ... এক পাশে কাপড়ের স্তুপ, অন্য পাশে মনে হয় এল লাইব্রেরীর সব বই খাতা, নোট .... আর এর মাঝে একটা ছোট্ট উজ্বল দ্বীপের মত আলি জ্বালিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে ল্যাপটপটা ... আর সব কিছুর মাঝখানে গোল হয়ে শুয়ে আছে সন্ধ্যা ...।

কদিনের অমানুষিক কাজের চাপের পর কাল রাতে যখন কাজের রেজাল্ট হাতে পেল, আনন্দে কেঁদে ফেলেছিল সবার সামনেই ... প্রয়োজনীয় পেপারস গুলো হাতে নিয়ে একছুটে বাসায় চলে এসেছিল , আজ তাকে খুব মনে পড়ছে ... সেই মানুষটাকে, এটা ছিল যার সারা জীবনের একমাত্র স্বপ্ন যার বিনিময়ে সে তার সবকিছু বিসর্জন দিতেও কুন্ঠা বোধ করেনি ... তাকে ছাড়া আজ যে সে এই সাফল্যকে কিভাবে সে সেলিব্রেট করবে ? সেই চিন্তাগুলোয় জট পাকিয়ে যেতেই গত রাতেই করে ফেলেছে এই লঙ্কাকান্ড, এর পরে লোনা জলের বর্ষন শেষে চোখ ফুলিয়ে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে অচেতন ...

এলোমেলো পর্দার মাঝখান দিয়ে সমান্তরালভাবে সকাল বেলার মিষ্টি আলোর রেখাগুলো ওর মুখে এসে পড়তেই ঘুম ভেঙ্গে গেল, ফোলা ফোলা চোখ দুটি আজ আর মেলতে চাইছে না, শুধু উপভোগ করতে চাইছে সেই সুতীক্ষন চুম্বন যা একদিন সেই মানুষটা দিয়ে বলেছিল, কাছে থাকি কিম্বা দুরে, পাশে থাকি অথবা না তোমার সাফল্যগাথার পুরষ্কার আমি দিয়েই যাবো সারাজীবন ... ভোরের আলোয় শুধু নিজেকে একবার মেলে ধরবে ঐ আলোয় ভেসে আমি তোমার কপালে রেখে যাব একরাশ ভালবাসার উষ্ম ছোয়া ... সন্ধ্যা আজ এই সকাল বেলার আলোর সেই ভালবাসার পরশ মেখে নিতে নিতেই সেল ফোনটা বেজে উঠলো ... কলটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে সেই যাদুময় আদুরে কন্ঠস্বরে শুনতে পেল এক সুতীক্ষ্ণ ভালবাসার উষ্মতা ...




Tuesday, September 1, 2009

বোকা মানুষের একটি ছোট্ট বোকা ইচ্ছে

বোকা মানুষের

একটি ছোট্ট বোকা ইচ্ছে


০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:২২




কাক ডাকা ভোরে আর কাউকে না হোক বাবা ওকে ঘুম থেকে ডেকে তুলবেই তা সে যত রাতেই ঘুমাক না কেন , সকালের নাশ্তার জন্য কিছু দরকার হলে তা দোকান থেকে ওকেই আনতে হবে, ঘরের টুকিটাকি কাজ গুলো যেন ওর অপেক্ষাতেই থাকে কখন সে ওগুলোতে হাত লাগাবে আর ঠিকঠাক করবে ... নাহ কাজগুলো যে সে অনিচ্ছায় করে তা নয় বরং ইচ্ছা অনিচ্ছা দুটো মিলিয়েই সে কাজগুলো করে থাকে। ইচ্ছা অনিচ্ছা কথা দুটোর মাঝে বিস্তর পার্থক্য থাকলেও তার কাছে এর আসলে কোন মুল্য নেই, কারন ও জানে কাজগুলো ওকেই করতে হবে তাই ইচ্ছা অনিচ্ছার ধার না ধরেই " আমাকেই করতে হবে তাই করবো" এ কথার উপর ভিত্তি করেই সব কাজ গুলো নিজের হাতেই একের পর এক সমাধা করে চলে ... পড়ালেখায় কখনো যে সে খারাপ ছিল তা নয়, রেজাল্টও কখনো খুব ভালো না করতে পারলেও সন্মানজনক ফলাফল নিয়েই সবসময় ঘরে ফিরেছিল, তবে তার পিঠাপিঠি ভাই বোনেরা যদি এর কাছাকাছি ও রেজাল্ট নিয়ে ঘরে ফিরে তবে তাদেরকে মাথায় তুলে রাখা হয় , ঘরে সেদিন ভাল ভাল রান্না করা হয় কখনো তাদেরকে উৎসাহ দেয়ার জন্য গিফট ও দেয়া হয় আর ওকে বলা হয় পরের বার যেন আরো ভাল রেজাল্ট করে এটা অতোটা ভাল হয়নি ... তার ও ইচ্ছে করে কোন গিফট না হোক মাঝে মাঝে এমন একটু সুন্দর কথা শুনতে একটু আদর পেতে কাজের পরে পড়ার জন্য একটু বেশী সময় পেতে যাতে করে পরীক্ষায় আরেকটু ভাল রেজাল্ট করা যায় ... আর ... উমম ... আরো বিশেষ কিছু পেতে ইচ্ছে করে তবে সেগুলো হয়তো কখনো পাবে না ... বিশেষ কিছুর কথা যখন এসেই গেল তখন ওসব দিকে একটু ফিরে দেখা যাক...

যদিও ওর বিশেষ কিছু গুলো হয়ত সবার জন্য সাধারন কিছু ই হবে তবুও সেগুলো ওর জন্য বিশেষ কিছু হয়েই থেকে যাবে সবসময় ... ঠিক যেমন বাবার হাতটা যদি কখনো ওর মাথায় একবারের জন্যও রাখত তবে হয়তো এর চেয়ে শান্তির আর কিছুই থাকতো না , কোন একটা দিন যদি মায়ের বকুনি বা ভাই বোনদের টিপ্পুনি থেকে রক্ষা পেত তবে হয়ত সেদিনটা ওর জীবনের সবচেয়ে ভাল দিন হয়ে উঠতো ... শুধু কি তাই ... ক্লাসের ছেলে মেয়েগুলো যদি একটা দিন ওকে নিয়ে হাসাহাসি না করতো তবে সে দিনটি হয়ত ওর জন্য পরম শান্তির কারন হতো ... আর যদি মনের কোন উকি দেয়া ভালবাসার মানুষটা তাকে ইচ্ছে করে বোকা না বানিয়ে, তাকে অন্ধকারে না রাখার চেষ্টা করে তার পছন্দের মানুষের সাথেই ঘুরতে যেত তবে হয়ত সেটি হয়ে উঠতো তার জীবনের অন্যতম স্মরনীয় দিন ।

তবুও সে বাসার সবার গালমন্দ শুনে প্রতিউত্তর করে না, সহপাঠীদের টিপ্পুনীকে সিরিয়াসলি না নিয়ে হাসি মুখে ওদের সামনে আরো নিজেকে হাস্যকর জীব হিসেবে পরিগনিত করে, সব কিছু জেনে বুঝেও মনের মানুষটির কাছে ইচ্ছে করেই বোকা সেজে থাকে যাতে ওকে বোকা বানিয়ে সে যে আনন্দ পায় তাতে যেন কখনো কমতি না আসে ... কারন সে জানে এইসব করেই অন্য সব মানুষগুলো শান্তি পায়, নিজেদের মাঝে আনন্দের জোয়ারে ভেসে যায়, আত্মতৃপ্তিতে ভরে ওঠে ওদের মন আর সেই সাথে চরিতার্থ করে নিজেদের কাংক্ষিত সুপ্ত বাসনাগুলো ... আজ তাইতো সে নিজেকে বোকা, তুচ্ছ আর অপদস্ত বানিয়েই অন্য সবার মনে আনন্দের বন্যা বইয়ে দেয়াকেই নিজের পাথেয় করে নিয়েছে ...কারন ও জানে, মানুষের মুখে একটুখানি হাসি ফোটানো পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজগুলোর অন্যতম।



কোকড়াচুলওয়ালী বলে "আমি নাকি মস্ত বোকা"

কোকড়াচুলওয়ালী বলে

"আমি নাকি মস্ত বোকা"

২৫ শে আগস্ট, ২০০৯ বিকাল ৫:৫৩






রাত জেগে হাতের কাজটা শেষ করে ঘুমুতে ঘুমুতে বেশ দেরী হয়ে গিয়েছিল, তাইতো ঘন্টা খানেক পরে উঠে সেহরী করতে করতে মনে হচ্ছিলো আবার আরেক্টু ঘুমিয়ে না নিলে আমার পুরা ব্যান্ড বেজে যাবে আজকে ... যাই হোক ... ফ্রেস হয়ে একটু বিফ আর ভাত ওভেনে গরম করে এর পরে সালাদ বানিয়ে সেহরী করতে বসেছি এমন সময় ফোন ... ক্রিং ক্রিং ... নম্বরটা দেখে নিজের ঠোটের কোনে একটা আনন্দের হাসি ফুটে উঠেছে তা আয়নায় না দেখলেও বেশ বুঝতে পারলাম ... কল রিসিভ করে বললাম

>> হ্যালো
--- হ্যালো , অন্তু ঘুম ভেঙ্গেছে ?
>> ঘুম ভেঙ্গেছে সেই কবে, সব রেডী করে সেহরী খেতে বসলাম, তোমরা কেমন আছ ?
--- আমরা ভাল আছি, আজকে একটা অনেক খুশীর সংবাদ দেয়ার জন্য ফোন দিলাম
>> কি খবর ?
--- শুনে তুমি আনন্দে লাফ দিয়ে উঠবে
>> আরে খবর টা কি , বলবা তো ?
--- তোমার কোকড়াচুলওয়ালী আজকে সেহরী করতে উঠেছে , তুমি কি সেটা জানো ?
>> ওমা , তাই নাকি , সত্যি ? কৈ দেও তো ওর কাছে একটু কথা বলি ...
--- আজ নাকি সে সারাদিন রোজা রাখবে, বিশাল বড় রোজা ...
>> কি ?
--- সেটাই তোমাকে জানাবে বলেই তো আমাকে ফোন করতে বললো , নাও কথা বলো

এবার কোকড়া চুলওয়ালী ফোন নিয়ে বলে ....

>>> তুমি জানো আজকে আমি এক্টা মস্ত বড় রোজা রাখবো ... সারা দিনের জন্য
--- তাই নাকি, খুব ভাল ... সেহরী কি দিয়ে করছো তুমি ?
>>> আম্মু আমাকে চিনি আর কলা দিয়ে দুধ ভাত মাখায় দিসে, আর পরে চকলেট দিবে বলসে ...
--- তাই, অনেক মজার সেহরী তো ....
>>> তুমি কি দিয়ে সেহরি করো ?
--- আমি ভাত আর গরুর মাংস দিয়ে করছি .... সারা দিন রোজা রাখতে কষ্ট হবে না ?
>>> না হবে না
--- যদি চিনি দুদুর ক্ষিদা লাগে ?
>>> আজকে খাব না , ইফতারীর সময় খাব, আম্মু তাই বলসে
--- আর যদি পিপাসা লাগে ?
>>> রোজা রাখলে সেটাও খাওয়া যায় না , জানো না তুমি ?
--- আমি তো ভাবসিলাম চোখ বন্ধ করে কেউ যদি চিনি দুদু আর পানি খায় তো কেউ দেখতে পাবে না আর রোজাও ভাংবে না ... ট্রাই করে দেখবা নাকি ?
>>> হি হি হি হি
--- কি হলো হাসছ কেন
>>> তুমি আসলেই কিচ্ছু জানো না, তোমার তো এক্টাও রোজা হয়নি
--- (আমি অবাক হয়ে বললাম) কেন কেন ?
>>> আম্মু বলসে আমাকে, এভাবে রোজা হয় না, আমি জানি বুঝছ ?
--- আচ্ছা দুপুরে একবার ইফাতারী আর সন্ধ্যায় আরেকবার ইফতারী করে নিও , তাহলে একদিনে দুটো রোজা হয়ে যাবে আচ্ছা ?

এবার সত্যি সত্যি হাসতে হাসতে কুটি পুটি হয়ে জানের টুকরা টা বললো ...

>>> তুমি আসলেই একটা মস্ত বোকা, তুমি কি এভাবে ৩০ দিনে ৬০ টা রোজা রাখ ?

অতঃপর এর জবাব খুজতে খুজতে ফজরের নামাজের সময় হয়ে যাওয়ায় আপাতত এই যাত্রায় রক্ষা পেলাম :|



এক দুরন্ত প্রজাপতির ডাইরীতে একটি গোলাপের ভালবাসা

এক দুরন্ত প্রজাপতির ডাইরীতে

একটি গোলাপের ভালবাসা


২১ শে আগস্ট, ২০০৯ ভোর ৫:৪২





সাত সকালে ঘুমের ১২ টা বাজিয়ে শুরু হলো ....ক্রিং ক্রিং ক্রিং ....

--- হ্যালো
>> কিরে কৈ তুই , কি করিস ?
--- বাসায়... ঘুমাই, ক্যান ?
>> আধ ঘন্টার মধ্যে আয় তো আমার বাসায় ... কাজ আছে
--- কি যন্ত্রনা, এখনো ঘুম ঠিক মতো ভাঙ্গলো না আধাঘন্টার মধ্যে আসব কিভাবে ?
>> আমারে তুই যন্ত্রনা বললি ?
--- না মানে , ঠিক তা না ...
>> তাইলে কি ? যন্ত্রনার দেখেছিস কি তুই, আয় একবার আমার সামনে এর পরে দেখিস
--- কি করতে চাস বলতো ?
>> এক ঘন্টা দিলাম, এর ভিতরে হাজির হবি , কথা ফাইনাল ....

অতঃপর লাইনটা কেটে গেল ... বুঝলাম ঘন্টা খানিকের মধ্যে পৌছুতে না পারলে খবর আছে , বান্দরনীটা কিছু একটা করেছে নিশ্চই .... ঝটপট ফ্রেস হয়ে, নাকে মুখে নাশতা গুজে দিলাম দৌড় ... ওর বাসায় পৌছে ডিং ডং দিতে দিতে ১০ - ১২ মিনিট লেট হয়ে গিয়েছে দেখে মনে মনে প্রমাদ গুনছি আজকে কি না জানি আছে কপালে .... কিন্তু না, আমি লেট করেছি অথচ কেউ রাগ করলো না ... হাসি মুখে দরজা খুলে তিড়িং বিড়িং করতে করতে নিয়ে চললো ওর ঘরে ... আমিও ওর পিছে পিছে চললাম, আর ভাবতেছিলাম , আল্লাই জানে ওর মনে আজকে কি প্ল্যান চলছে ... ওর ঘরে পৌছে আমাকে বসিয়ে রেখে বললো

>> এক পা ও নড়বি না এখান থেকে, আমি আসছি
--- কৈ যাস ?
>> চুপ !! একদম কথা নাই

এর পরে খিল খিল করে হাসি দিয়ে প্রজাপতির মতো উড়ে চললো অন্য কোথাও ... কিছুক্ষন পর আবার হাজির হলো হাতে বেশ বড় একটা ব্যাগ নিয়ে ... আর বললো

>> জানিস আজকাল আমার মনটা বেশ ভালো আছে
--- কিসের জন্য ?
>> আম্মু আমাকে দুটো শাড়ি কিনে দিয়েছিল ...
--- কিসের জন্য ?
>> কিসের জন্য মানে ? পরার জন্য, তার উপর কি হবে বল তো ?
--- কি আর হবে , বান্দরের ছবি নাইলে জঙ্গলের গাছপালা আঁকানো থাকবে

ভেবেছিলাম খোচাটা খেয়ে চিৎকার দিয়ে উঠবে বরাবরের মতো, কিন্তু সে তো কোনো রকম রিএ্যাক্ট না করেই হাসিমুখে বলে উঠলো

>> আরে নাহ ! এর উপরে আমি কাজ করেছি, আমার নিজের হাতে , বুঝেছিস বুদ্ধু
--- (আমি কিছুটা উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললাম) শাড়িগুলোরে গিনিপিগ বাননো কি খুব দরকার ?
>> মানে ? আমি শাড়িগুলো নষ্ট করেছি ভেবেছিস ?
--- এর চেয়ে ভাল কিছু আপাতত মাথায় আসছে না তো ...
>> তুই চুপ থাক, যে জন্য তোকে ডেকেছি তাই দেখ ...
--- আচ্ছা দেখা ...

আবার সে প্রজাপতির মতই সেই বিশাল ব্যাগ হাতে করে উড়তে উড়তে চলে গেল আন্টিদের রুমে ... একটু পরে ফিরে আসলো যখন তখন যাকে দেখলাম সে যে কে ছিল আমি নিজেই জানি না ... অপলক দৃষ্টিতে নিবিড় মনোযোগে দেখছিলাম এক অপুর্ব সুন্দর কারুকাজের শাড়িটে মোড়ানো প্রজাপতি কে ... নেচে গেয়ে সারাঘর ছুটে বেড়িয়ে আবার সে চলে গেল দ্বিতীয় শাড়ি পরে আসাতে ... আর আমি, টেনে নিলাম টেবিলের উপর রাখা ওর ডায়রীটা .... একটু পরেই পাশে সাজিয়ে রাখা ফুলদানী থেকে একটি গোলাপ নিয়ে তার ভিতর রাখতেই আরেকটি মন কাড়া কারুকাজের শাড়ি পরে যখন ও ঢুকলো সাথে সাথে ওর নোটবুক বন্ধ করে দিতে দেখে বলে উঠলো ...

>> আমার ডায়েরী পড়ছিস পড়, কিন্তু আমাকে দেখে বন্ধ করার কি আছে ?
--- না মানে , এমনি ...
>> সেখানে এমন তো কিছু নেই যা তোর অজানা ...
--- তা জানি , তবে হয়ত এমন কিছু আছে যা আমার জানা কিন্তু তোর অজানা ...
>> অসম্ভব ... হতেই পারে না
--- কখনো অসম্ভবও সম্ভব হয় ...
>> কৈ দেখি তো ...

এরপর ওর চোখের সামনে ভেসে উঠলো খুব পরিচিত এক হাতের লেখায় একটি লাইন ---

হবে কি তুমি, কোন কাঁটাওয়ালা গোলাপের সুগন্ধে বিভোর অনাবিল আনন্দে উড়ে বেড়ানো এক দুরন্ত প্রজাপতি ?




বড় বিলাই আপুর বাসায় একদিন

বড় বিলাই আপুর বাসায় একদিন

২০ শে আগস্ট, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৫৬





এতদুর আসতে হবে আগে জানলে আসার আগে দু বার চিন্তা করে নিতাম নিশ্চয়ই, তার উপরে ওর বাসায় প্রথম যাচ্ছি ...কিন্তু জঙ্গলের মাঝের এভাবে ধুলোবালি মাখা অতিথি দেখার পরে সে কি যে বলবে, কি করবে কে জানে ... আপনারা ভাবছেন কার কথা বলছি ? ... দাড়ান বলছি, সে আর কেউ না আমাদের সবার পরিচিত বড় বিলাই আপি ....

আপি টা অনেক দিন থেকেই বাসায় দাওয়াত দিয়ে কান ঝালাপালা করে দিচ্ছিলো যাওয়ার জন্য, কিন্তু ইজি কাজে বিজি থাকার কারনে ওর বাসায় সময় বের করাই মুষ্কিল হয়ে পড়েছিল ... শেষ পর্যন্ত যখন ফাইনাল পরীক্ষার ২ সপ্তাহ খানেক বাকী তখনই মনে হল এইটা সবচেয়ে উত্তম সময় ওর বাসায় বেড়াতে যাওয়ার ... যেই ভাবা সেই কাজ, পড়া বাদ দিয়ে সোজা রওনা হলাম ওর বাসার উদ্দেশ্যে ... ওর বাসায় আবার মুড়ির টিনে ছাড়া যাওয়া যায় না, চিড়ার টিন বা তেলের টিন হলে চলবে না ... মুড়িট টিনেই যেতে হবে ... এই প্রগৈতিহাসিক জিনিস এবার আমি কৈ পাই, তাইলে কি ওর বাসায় যাওয়া ক্যান্সেল করতে হবে নাকি ? ... মনে মনে দৃড় প্রতিজ্ঞা নিলাম ভাঙবো কিন্তু মচকাবো না ... যেমনেই হোক ওর বাসায় যেতেই হবে আমাকে, অতঃপর জিঞ্জিরা জাদুঘর থেকে শেষ মুড়ির টিনটা নেয়ার ব্যাবস্হা করে ওটাতে চেপে চললাম বিলাইপুর বাড়ি দিকে ... অতঃপর সাত বালির সমুদ্র আর তের কালাপানির নদী পার হয়ে ওর বাসার সামনে এসে দু হাতে ধুমধাম বাড়ি দিয়ে মাথা আর জিন্সের প্যান্ট থেকে মন খানেক ধুলো ফেলে ঘন্টা বাজালাম .... ডিং ডং

ভেতর থেকে আওয়াজ এলো >>> কে রে ?
আমি জবাব দিলাম ---- আমি অন্তু
>>> কোন অন্তু ?
--- দরজা খুলেই দেখ কোন অন্তু
>>> দরজা জ্যাম লেগে গেছে , আজকের আর খুলবে না ,কালকে আসেন
--- আজকে খুলবে না মানে কি ... খুলবা নাকি দরজা ভাঙ্গবো আমি ?
>>> আপনি ০১৭৫*****২ নং চিনেন ? এই এলাকার ওসি কইলাম আমার ছোট বোনের বড় দুলাভাই, এইটা তার নম্বর, দিমুনি একটা কল? নাকি মানে মানে ভাগবেন এখন ?
--- ধুর আপি, এমন করো ক্যান এতদুর থেকে আইসি, কোথায় দরজা খুলে ভাইটারে ঢুকতে দিবা না, কাহানী শুরু করসো
>>> আরে অন্তু তুই ? আগে বলবি না ?
--- আগেই তো বলেছি এইটা আমি, নাম কি ভুল শুনেছ নাকি ? এখনো দরজা খুলো না ক্যান ?
>>> আচ্ছা পরে করিস ঝগড়া, এখন দরজার একটা ঠেলা দে, খুলে যাবে ...

ঠেলার ও দরকার হলো না, হালকা ধাক্কায় দরজা খুলে যেতেই দেখি লাঠি হাতে রনরঙ্গিনীরুপে বিলাইপু দাড়িয়ে আছে ...তাই দেখে জিজ্ঞেস করলাম ...

--- কি হইসে, এমন করে দাড়ায়ে আছো ক্যান, আর দরজা খোলাই তো ছিল তো কইলানা ক্যান ?
>>> (>" style="border: 0pt none ;" width="23" height="22"> কইরা আপি কয় ) দরজার ছিটকিনি টা নষ্ট, তাই একটু ভঙ নিলাম তোর লগে, এমনটা না করলে চোর ডাকাত আইসা তো সব কিয়া যাইব বুঝোস না ?

--- হইসে হইসে অনেক বুদ্ধি তোমার, এইবার একটু শরবত দিবা? ভীষন তেষ্টা পেয়েছে
>>> এই এক্ষুনি নিয়ে আসছি, কিন্তু তুই ফাইনাল পরীক্ষার আগে আসলি ক্যান ? পড়াশুনা শেষ নাকি ?
--- আরে নাহ আপি, পড়ায় ফাকি দেয়ার এর চেয়ে ভাল কোন উপায় পাইলাম না , এ জন্য আর কি ...
>>> দাড়া একটু শান্ত হয়ে বস, এর পরে তোর খবর করতেছি আমি ...
--- দেখা যাবে ...

একটু পরে দু গ্লাস লেবুর সরবত হাতে আপি ঘরে ঢুকে একটা গ্লাস আমাকে আরেকটা নিজে নিলো ... ফ্রিজ থেকে কয়েকটা আইস কিউব এনে গ্লাসে ফেলে দিতেই মনটা ভরে গেল ঠান্ডায় ... কিন্তু শরবত মুখে দিতেই কেমন জানি মিষ্টি কম লেবু বেশী লাগছিল ... বললাম

--- এই জঙ্গলে চিনি দাম কি অনেক বেশী নাকি ?
>>> ক্যান ? কম হইসে নাকি ?
--- না মানে শরবতের নমুনা দেইখা এরকমই মনে হইলো
>>> তাই বলে তুই আমারে এমনে বলবি ?
--- তাইলে চিনি নিয়ে আসো আরেকটু
>>> কিচেনে আছে নিয়ে নে নিজে নিজে ... কিন্তু শোন ...
--- অল্প নিতে বলবা তো ? ঠিকাছে অল্পই নিবো
>>> না, অল্প না , অন্য কিছু বলতে চাইছিলাম, শুনবিনা যখন তখন যা, নে গিয়ে নিজে নিজে

বিলাইপু আমারে কি অল্প নিতে কইতে চাইছিল নাকি চিন্তা করতে করতে দেখি সামনেই খোলা পড়ে আছে চিনি লেখা বড় একটা কৌটা ... মনে মনে বললাম, আমার লগে কিপ্টামী ,দাড়াও আজকে গ্লাস ভরে চিনি খাব ... যেমন বলা তেমন কাজ, টেবিল চামচে গোটা পাচ ছয় বার চিনি শরবতের মধ্যে ফেলে ৩২ দন্ত বিকশিত করে নাড়তে নাড়তে হাজির হলাম আপুর সামনে ... দেখি সেও মুচকি মুচকি হাসতেছে , কইলাম
--- কি হইসে ?
>>> (খিক খিক করে হেসে) নে এইবার মনের আনন্দে খা

ওরে খিক খিক হাসি দেখে এক নিঃশ্বাসে ঢকঢক করে হাফ গ্লাস শরবত শেস করতে করতে মনে হইলো আমি কোন শরবত না বরং বঙ্গোপসাগরের মধ্যে মুখ ডুবায়ে পানি খাচ্ছি ... লবনের ঠেলায় আমার তখন জান যায় যায় অবস্হা আর ঐ দিকে আপি টা হেসে গড়াগড়ি ... বললো
>>> তোরে ঐটাই বলতে যাচ্ছিলাম যে, আমি কালকে চিনি লেখা কৌটায় ভুল করে লবন রেখে দিসিলাম, চিনি আছে খোলা একটা প্যাকেটের মধ্যে ... খিক খিক খিক

তক্ষুনি আমার আকাশ বাতাস কাপায়ে ঝনঝন শব্দে কানে তালা লেগে যাওয়ার মত অবস্হা, কোন রকমে চোখ খুলতেই দেখি সেল ফোনে সকাল ৮ টার এ্যালার্ম বাজছে ... ক্রীং ক্রীং ক্রীং



এক ফোটা জল আর এক পশলা বৃষ্টি

এক ফোটা জল আর এক পশলা বৃষ্টি

১৮ ই আগস্ট, ২০০৯ রাত ১১:১৫






সামনে পরীক্ষা, পড়ার চরম চাপ আশেপাশের কয়েকজনের কারো মুখে কথা নেই ... মুখ গুজে ওরা চারজন জান প্রান দিয়ে সবাই পড়ছে... শুধু সন্ধ্যার মন পড়ে আছে অন্যখানে ... দুরে, বহুদুরে ... সেলফোনটা আর নোট দুটোতেই একসাথে বুলিয়ে যাচ্ছে তার চোখের দৃষ্টি ... কিছু একটা চাইছে ওর মন ... তবু বুঝে উঠতে পারছে না, সেটা কি ...

এর মাঝে বেজে ওঠে ওদের মাঝে একজনের সেলফোনে নির্দিষ্ট একটি রিং ... কল টা পিক করেই সে উঠে চলে গেল ঘরের অন্য পাশে ... এর পরে শুরু হলো ফিসফিসিয়ে গল্প ... অল্পক্ষন পরেই সে হাসিমুখে ফিরে এসে বলে -- ও ফোন করেছিলো ... এরপরেই মহা আনন্দে শুরু করে দিলো পরীক্ষার প্রস্তুতি ... সন্ধ্যার মনটা যেন আরেকটু খারাপ হয়ে গেল ... তবুও আবার চেষ্টা করলো পড়ায় মন বসাতে ...

আবার কিছুক্ষন পরে আরেকজনের সেল ফোনে একটা টেক্সট আসার সাথে সাথে সে কলব্যাক করে দুমিনিটেরও কম সময়ের উজ্জ্বল মুখে পড়ায় বসতেই সন্ধ্যার বুকটায় যেন হাহাকার করে উঠলো ... অনেক দুরের সে মানুষটা ব্যাস্ত আছে ঠিকাছে , তাই বলে একটা কল না হোক তাকে একটা টেক্সট ও করতে পারে না ?

বাইরে মুষল ধারায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে, আকাশ বাতাস কাপিয়ে ঝরঝর করে যেন ঝরে পড়ছে সন্ধ্যার জমাট বাধা কষ্টগুলো ... দুরের মানুষটাকে বেশীক্ষন কল করার মত ক্রেডিট নাই ... টেক্সড করা যায়, কিন্তু তার যে ওর কন্ঠ শুনতে খুব ইচ্ছে করছে ... কি করবে কি করবে চিন্তা করতে করতে হঠাৎ মনে পড়লো ওদের গোপন সংকেতের কথা ...সাথে সাথে সেল হাতে নিয়ে তিনটে মিসকলে পাঠিয়ে দিলো মনের গোপন ইচ্ছেটাকে দুর দেশের সেই মানুষটির কাছে ....

শেষ বান্ধবীটির সেলে কল আসতেই সে ছুটে গেল জানালার ধারে ... মুগ্ধ নয়নে দাকিয়ে রইলো পথের ধারে দাড়িয়ে থাকা একজনের দিকে ... হাত নেড়ে ইশারায় ওরা একে অপরকে জানিয়ে দিলো, আমি ভাল আছি, তুমি ভাল থেক ... ওর ছুটে যাওয়া দেখে সন্ধ্যার চোখে যেন জলের বান ডেকে উঠলো ... ঘাড় ঘুরিয়ে বারান্দায় ছুটে গিয়ে দাড়াতেই কষ্টের কান্না যেন গলা পেরিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে চাইলো ... আনমনেই যেন সেলফোনের উপরে গড়িয়ে পড়লো দু ফোটা জল ... অমনি যেন প্রান ফিরে পেল সেলফোনটি ... বেজে উঠলো বহু প্রতিক্ষীত নির্দিষ্ট সেই রিং টোন টি ...
সে বললো -- কাঁদছ কেন ?
সন্ধ্যা চোখ মুছে বলে -- কৈ না তো ....
সে বললো -- তবে ?
শেষ কথাটি সন্ধ্যার কানে গেলেও ওপাশের কন্ঠস্বর ছাপিয়ে যাওয়া কিসের আওয়াজ শোনা যায় ... জিজ্ঞেস করতেই জানতে পারলো ... সে মানুষটিও বৃষ্টির মাঝে দাড়িয়ে ওর দিকে হাত বাড়িয়ে আছে আর বলছে --- সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আসছি আমি তোমার জীবনে বৃষ্টি হব বলে ....