Wednesday, July 29, 2009

বড় বিলাই আপির বিবাহবার্ষিকী

বড় বিলাই আপির বিবাহবার্ষিকী

২২ শে জুলাই, ২০০৯ দুপুর ১২:২৩






গাছের ছায়ায় বুনোফুলের মালা পরে বড় বিলাই বসিয়া বসিয়া ভাবিতেছে ... বড়ই অদ্ভুত এই ফুলের ছোট্ট মালাটি ... যেন অদৃশ্য কোন শক্তির আধার এই ছোট্ট জিনিসটা, যার বদৌলতে আজ সে টারজানের কাছে বন্দী ... দৃশ্যত চলমান এবং স্বাধীন দেখালেও এই একটুকরো জিনিসের কল্যানে আজ সে অন্যরকম ভালবাসার অটুট বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আছে ...

টারজান আর তার বড়ই পছন্দের খেলা ছিল জংলী লতায় বানানো ফাঁস দিয়ে খরগোশ ধরা ... গাছের লতা-পাতা দিয়ে টারজান অনেক সুন্দর করে সে সব বানিয়ে ফেলে রেখে দিত জায়গামত... চটুল চপল খরগোসের দলের কেউ এর পাশে আসলেই মুহুর্তের ভিতর ধরা পড়ে যেত ... শুরুতে টারজানের এই করিৎকর্মা কাজ দেখেই বড় বিলাই তার কাছে গিয়ে আসকাইয়াছিলো -- ওহে মানব সন্তান, ইহা কি বানাইয়াছ তুমি, বড়ই মচৎকার ভাবে খরগোস ক্যাচৎকার করিতেছ দেখিতেছি ... আমাকে ও কি একটু শিখিয়ে দিবে, কিভাবে ওটা বানিয়ে খরগোশ শিকার করতে হয় ?

প্রথম দেখাতেই বড় বিলাই এর রুপে মুগ্ধ টারজান প্রথম দিনেই তাকে বুনো লতার ফাঁস বানানো শিখিয়েছিল, তবে সন্ধ্যা হয়ে যাওয়াতে সেদিন আর ওটার প্রয়োগ সম্ভব হয়নি ... তার বাধ্য হয়ে বড় বিলাই পরের দিন আবার গেল টারজানের কাছে খরগোশ শিকার করা শিখতে , ওদিকে দ্বিতীয় দিনে বড় বিলাইকে আসিতে দেখিয়া আবারো টারজানের মন আকু পাকু করিতে লাগিলো ... অনেক চিন্তা করিয়াও বুঝিতে পারিতেছিল না ইহা কি হইতেছে তাহার সাথে ... তাইতো সেদিন তার বানানো ফাঁসের ভিতর নিজের গলা ঢুকিয়ে যখন দেখাতে গিয়েছিল কিভাবে খরগোস এর ভিতরে বাধা পড়ে, তখন সে ফাস তার গলায় আটকে গেলে বড় বিলাই তাকে সে যাত্রায় উদ্ধার করে ... তাহার এহেন উপকারে কৃতজ্ঞ টারজান নিজেও বুঝিতে পারে নাই বড় বিলাই তাহাকে ঐ লতা পাতার ফাঁস থেকে উদ্ধার করেছে ঠিকই তবে বাধিয়া ফেলিয়াছে অন্য এক মায়ার বাধনে ... ওদিকে তাকে শিকার শিখানোর প্রয়াসে নিজের জীবনকে বিপদে ফেলিবার মত পরোপকারী মনোভাবের কারনে বড় বিলাই ও যে কোন সময় টারজানের মায়ার জালে বাধা পড়েছে, সে নিজেও জানে না ... অতঃপর দিনের পর দিন চলিতে লাগিলো তাহাদের যুগপৎ শিকার অভিযান ...

একদিন হঠাৎ টারজান লতাপাতার বদলে বুনোফুলের ছোট্ট ফাঁস বানিয়ে আনিয়াছিল ... বড় বিলাই তাহা দেখিয়ে যারপরনাই উৎসাহের সহিত উহাকে দেখিতে চাহিলে টারজান বলিয়াছিল, ইহা তোমাকে পরানোর জন্যই বানাইয়াছি, মূহুর্তের মধ্যে চমকে উঠে বড় বিলাই দু-কদম পিছে চলিয়া গিয়াছিল ... মনে মনে ভাবিতেছিল, টারজানের মাথা খারাপ হইয়া যায় নাই তো ? ... এতদিন জংলীলতার ফাঁস দিয়া খরগোশ শিকার করিতে করিতে আজ সে বুনোফুলের ফাঁস দিয়া আমাকে শিকার করিবে ... ইহা কি করিয়া সম্ভব ? কিন্চিৎ অনুনয় বিনয় করিয়া সেদিনের মত নিষ্কৃতি পাওয়ার চেষ্টা করিলেও টারজানের মায়াভরা চোখের দৃষ্টি যেন কিউপিডের তীর হইয়া তাহার বুকে বিধিলো ... অদ্ভুত এক ভাললাগার আচ্ছন বড় বিলাই সেদিন নিজের জীবনের পরোয়া না করিয়া টারজানের হাতে নিজের গলায় সেই বুনোফুলের ফাঁস পরিয়া নিয়েছিল, অতঃপর টারজান তাহাকে বুঝাইতে লাগিলো, ইহা কোন সাধারন ফাঁস নয়, ইহাকে লোকসমাজে বলা হয় মালা ... এর পরে টারজানের কাছ থেকে এই মালার মাহাত্য বুঝিতে বুঝিতে কখন যে হলদে বর্নের বড় বিলাই লজ্জার আবীরে নিজেকে রাঙ্গীয়ে গোলাপী রং ধারন করিয়াছিল তাহা আজও অজানাই রয়ে গিয়েছে ....


ঝিরিঝিরি বাতাস যেন একটু কাপিয়ে দিয়ে বড় বিলাই কে টারজানের আগমনের সুসংবাদ দিয়ে গেল .... সেই সাথে সে লক্ষ্য করলো, পাঁচ বছর আগের ঘটনাগুলো চিন্তা করতে করতে আজও সে ঐরকম গোলাপী রং ধারনে করিয়াছে .... একটু পরেই সে শুনিতে পাইলো টারজানের সেই মন হরনকারী ডাক ---- আআআআআআ....

No comments: