ওরা দুজন নাকি ব্যাচেলর কাপল !!!
১৮ ই জুলাই, ২০০৯ রাত ১২:৩১

দরজায় চাবি ঘুরিয়ে সুমন ঘরের ভিতরে ঢুকতেই সামনের ছড়িয়ে থাকা জুতার সাগরে হোচট খেতে খেতে নিজেকে কোনক্রমে চিৎপটাং হওয়া থেকে রক্ষা করতে করতে দাড়িয়ে পড়ল ... নাহ, সীমা একটুও ঠিক হলো না এখনো ... তার অগোছালো স্বভাবটা আর বুঝি পরিবর্তন হবেই না ... বলতে বলতে সুমন পায়ের জুতো দুটো পূর্ব পশ্চিমে ঠেলে দিয়ে মোজা দুটোকে সুন্দর মত দরজার কোনায় থ্রোইং করতে পেরে নিজেকে অসামান্য দক্ষ ফিল্ডার মনে করতে লাগলো ... দরজা বরাবর দাড়িয়ে হাতের ব্যাগটাকে বেড রুমের ভিতরে উড়িয়ে দিয়ে ঢুকাতে পেরে তিন পাকের ডিসকো ড্যান্স দিয়ে চলে এলো ড্রইংরুমে ... কাপড় না ছেড়েই সোফায় গড়াগড়ি দিয়ে টিভি দেখার মজাই আলাদা ... নিজেকে সোফা পর্যন্ত টেনে নিয়ে গিয়ে ধপাস করার আগে একটু ভ্রু কুচকে দেখলো সেখানে ছড়িয়ে আছে সীমার কাপড়, আর কিছু এটা সেটা কাগজ ... মনে মনে আবার সে বলেই উঠলো -- নাহ ! এ আগে যেমন ছিল তেমনই থেকে গেল ... একটুও বদলালো না !! ... এর পরে সুমন ধপাস করে ওসবের উপরেই শুয়ে পড়ে টিভি চালিয়ে দিয়ে মিনিটে ৫০ টা চ্যানেল একট সাথে দেখতে শুরু করলো ...
ঘরের ভিতরে ধপাস করে ভারি একটা কিছু একটা পড়ার শব্দে সীমার ঘুম ভেঙ্গে যেতেই তড়াক করে উঠে বসে পড়লো ... ঘুম ঘোর চোখে চারিদিকে তাকিয়ে দেখে সবই তো ঠিক আছে, চোখ ডলতে ডলতে গায়ের উপর থেকে কাথাকে একটানে সরিয়ে পা দিয়ে বেডের একপাশে ঠেলে দিতে দিতে একটানে বালিশটাকে ঘুরিয়ে এনে ফেললো নিজের কোলের উপরে ... বেড থেকে ফ্লোরে নামাতেই কিছু একটার উপরে পায়ের চাপ পড়তেই কড়মড় শব্দে চমকে উঠে নিচে তাকিয়ে দেখে সুমনের ব্যাগ ... তখনই বুঝতে পারল পুরানোর ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে আবার ... স্মৃতির পাতায় হাতড়েও ঠিক মনে করতে পারল না এটা সুমনের কত নম্বর চশমা ভাঙ্গলো ... বার বার ই তার ৮ এবং ৯ সংখ্যা দুটির মধ্যে গরমিল লেগে যাচ্ছিলো ... বেজার মনে সুমনের ব্যাগটাকে ওর পড়ার টেবিলের দিকে ঠেলে সরিয়ে হাতে ধরা বালিশটাকে বেডের আরেক কোনায় স্হানান্তর করে চললো ফ্রেস হতে ... ফ্রেস হওয়ার পরে টাওয়েল খোজাটাও যেন ওর জন্য খালি চোখে ব্যাকটেরিয়ার যুদ্ধ দেখার চেয়ে কঠিন কাজ ... ঘরময় জুড়ে থাকা কাপড় সমুদ্রে মিনিট পাঁচ এর মতো সাতার কেটে অবশেষে টাওয়েল পেয়ে মুখ মুছতে গিয়ে দেখে ততক্ষনে টাওয়েলের কাজটা ঘর ভর্তি উষ্ম বাতাস সম্পন্ন করে ফেলেছে ... ধুর ছাই, এখন এটাকে দিয়ে কি করবো বলতে বলতে টাওয়েলটাকে আবার কাপড় সমুদ্রে ভাসিয়ে দিয়ে সীমা এগিয়ে চললো ড্রইংরুমের দিকে ...
ড্রইংরুমে দুজন সামনা সামনি হতেই কিছু একটা ঘটে যাওয়ার আগেই কলিংবেলের শব্দে দুজনই চমকে উঠলো ... আরে, এমন অসময়ে কেউ তো আসে না এখানে, আজকে কে আসলো ... চোখে চোখে কথা হয়ে গেল দুজনের, নিঃশব্দে নিজের নিজের কাজ বুঝে নিয়ে সুমন চললো দরজা খুলতে আর সীমা দু হাত ভরে এলোমেলো কাপড়গুলো নিয়ে চললো বেড রুমের দিকে ... দরজা খুলতেই সুমনের বিষ্ফোরিত চোখ যেন বিশ্বাস করতে পারছিলো তার মিলিটারী শাশুড়ি এসেছেন ... তাও আবার বিনা নোটিসে ... এদিকে কুরুক্ষেত্র উত্তর সম ঘরের অবস্হা বড়ই করুন ... আজকে ওদের দুজনের নিস্তার নাই ... শুকনো গলায় বলে উঠলো -- আসেন মা, ঘরে আসেন ... সীমা এদিকে এসো দেখ কে এসেছে ....
ত্রস্ত পায়ে এগিয়ে এসেই ভুত দেখার মত চমকে উঠলো সীমা ... আরে, মা তুমি ... কেমন আছ বলতে বলতে তার থেকে কোন রকমে জুতার সমুদ্রকে আড়াল করে ড্রইংরুমে নিয়ে যেতেই তিনি বলে উঠলেন -- নাহ! আমি আগে ফ্রেস হবো এর পরে বসবো ... তুই আমার ব্যাগটা নিয়ে আয় তো বেড রুমে ... কোনভাবেই তাকে থামাতে না পেরে মায়ের ব্যাগ হাতে নিয়ে পিছে পিছে বেড রুমে ঢুকতেই হঠাৎ দরজায় তিনি এমন হার্ড ব্রেক করলেন যে আরেকটু হলেই তার সাথে সীমার ধাক্কা লেগে যেত ...
দুজনের এন থমকে যাওয়াটা দুর্যোগের ঘনঘটা জেনেও দুরুদুরু বুকে পিছনে এসে চুপচাপ দাড়িয়ে পড়লো সুমন ...
চোখ ঘুরিয়ে ঘরের কাপড় সমুদ্রের উপর এক নজর চোখ বুলিয়ে তিনি বললেন -- এটা কি কোন থাকার ঘর নাকি জঙ্গল ? ... এখানে তো মশারাও আসলে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা পড়বে ... তোরা এতদিন হয়েছে আমাদের থেকে আলাদা থাকিস এসব কবে শিখবি ? ... সীমা তোর আলমারিটা খোল তো, ওখানে সব কাপড় গুছিয়ে দেই ... সীমাকে তার জায়গা থেকে নড়তে না দেখে তিনি নিজেই গিয়ে আলামরী খুলে ভিতরে দেখতেই তার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল .... বললেন -- এর চেয়ে তো, তোর ঘরের অবস্হাই ভাল রে ... এইটা কি আলমারী নাকি ওয়াশিং মেশিন ? সুমন সীমা একসাথে কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে যেতেই ওদের মা বলে উঠলেন -- তোদের যে অবস্হা দেখছি তাতে করে কে বলবে যে তোদের বিয়ে হইসে ? তোদেরকে তো আসলে বলা উচিত ব্যাচেলর কাপল !!!!
No comments:
Post a Comment