তন্বীকে বকা খাওয়ানোর
সুখময় স্মৃতি
০২ রা জুলাই, ২০০৯ বিকাল ৫:১৭

টিচারের কাছে বকা খাওয়া তন্বীর ফ্যাকাসে মুখটা দেখে মনটা বড়ই ফুরফুরা হয়ে গেল ... আনন্দে ধেই ধেই করে নাচা ইচ্ছা থাকলেও আপাতত তা না করে মুচকি হাসিতেই সন্তুষ্ট থাকলাম ... ওদিকে তন্বী রাগে ফুসতে ফুসতে আমার কাছে এসেই অগ্নিদৃষ্টি বর্ষন করে বললো -- আজকের মত তো জিতে গেলা, পরের বার তোমাকে দেখে নিব
তখন প্রাইমারী স্কুলে পড়ি ... ক্লাসের মাঝে কোন একটা বিষয় নিয়ে আমাদের মাঝে দু গ্রুপের সৃষ্টি হয়েছিল ... একদিকে সব ছেলেরা, অন্যদিকে সব মেয়ে ... দু গ্রুপেরই একটাই টার্গেট থাকতো, অন্যপক্ষের মানুষদের কিভাবে শায়েস্তা করানো যায় ... বিশেষ এক কারনে আমাদের সাইডের আসল টার্গেট আমিই ছিলাম ... যাই হোক, এবার বলি সেদিনের ঘটনা ... সকাল সকাল স্কুলে ঢুকতেই আদনান এসে সামনে দাড়িয়ে বললো -- তোমরা আর যাই করো তন্বিকে যেন কিছু বোলো না ...(উল্লেখ্য আদনান আবার তার বেশ পছন্দের সাথী ছিল) ... আমি বললাম -- দেখ আদনান, তুমি অন্য সেকশনে পড়ো, আর তুমি আমার বন্ধু ... এই গ্যান্জামের মধ্যে তুমি এসো না .... বলে ওকে পাশ কাটিয়ে ক্লাসে ঢুকছি সামনে দেখলাম তন্বি দাড়িয়ে, পিছনে ঘুরে দেখতে যাব অমনি দড়াম করে আমার পিঠে একটা কিল বসিয়েই আদনান দৌড় দিলো ... কিছুক্ষন পরে গেলাম ওদের সেকশনে , গিয়েই পেয়ে গেলাম আমার বহুত কামের দোস্ত উজ্জ্বল কে ... ঘটনাটা ওকে বলতেই বললো -- ঠিকাছে টিফিনের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে ... তমি খালি টিচারের দিকটা দেখবা, বাকিটা আমার ... গেম প্ল্যান ঠিক করে চলে এলাম নিজেদের ক্লাসে ...
টিফিনের আগেই ছিল আমাদের প্রধান হেড মিস্ট্রেসের ক্লাস ... তাও আবার ইংরেজী ২য় পত্র ... যে বিষয়টার জন্য বরাবরই ক্লাসে আমার সুনাম ছিল, সুযোগ পেয়ে সেদিন ক্লাস টেষ্টে ১০/১০ নিয়ে মিস্ট্রেসের নেক নজরে নিজেকে দাড় করিয়েই ক্লাস শেষে উজ্জ্বলকে খবরটা দিয়ে আসলাম ... অন্যদিকে তন্বী আমাদের দ্বিতীয় হেড মিস্ট্রেসের নেক নজরে ববাবরই ছিলো ... টিফিনের আগেই তন্বীর কাছে এসে আদনান তার ধোলাই এর ঘটনা জানাতেই সে নিজের গ্রুপের সাথে ক্লাসে বসেই টিফিন পিরিয়ডে সেকেন্ড মিস্ট্রেসকে দিকে আমাকে বকা খাওয়ানোর প্ল্যান করেছিল ...
ব্যাপারটা জানতেই পারতাম না যদি না অনি এসে ঘটনাটা চুপিচুপি আমাকে জানাতো ... ব্যাস টিফিন পিরিয়ড শুরু হতেই আমরা সব কটা নিজেদের টিফিন নিয়ে হেড মিস্ট্রেসের অফিসের সামনে বসে খেতে লাগলাম, উজ্জ্বলকেও আদনানকে নিয়ে আমাদের সাথে জয়েন করলো (নাইলে আরেকবার সাইজ করবে বলেছিল) ... ওদিকে দলবল সহ তন্বী গিয়েছিল দ্বিতীয় হেডমিস্ট্রেসের কাছে ... গিয়েই নালিশ করলো, তারা নাকি দেখেছে টিফিন পিরিয়ডে আমরা আদনানের সাথে গোলমাল করেছি ... এ কথা শুনে রাগী রাগী চেহারায় সারা স্কুল খুজতে খুজতে যখন উনি আমাদেরকে একসাথে খেতে দেখলো এর পরে একটু থতমত খেয়েই আমাদের জিজ্ঞেস করলেন -- তোমরা নাকি আদনানকে মেরেছ ?
মিসের কথা শুনে তো আমরা আকাশ থেকে পড়লাম যেন, একটু মন খারাপ করেই বললাম -- কি যে বলেন না টিচার, আমরা যদি মারামারি করি তাহলে এখন কি এখানে একসাথে বসে টিফিন খেতাম বলেন ? ... উজ্জ্বল আবার আদনানের ঘাড়ে হাত দিয়ে বললো -- আমরা তো অনেক কাছের বন্ধু , আমরা কি কোন মারামারি করেছি বল আদনান ? ... আদনানও আমাদের কথায় সায় দেয়ার পরপরই একটু জোর গলায় আমি জিজ্ঞেস করলাম -- আমাদের নামে এমন নালিশটা কে করেছে টিচার ? ... আমাদের কান বড়ই ব্যাকুল হয়ে অপেক্ষা করছিল তন্বীর নামটা শোনার জন্য ... কিন্তি টিচার কেন জানি ওর পক্ষ নিচ্ছিলেন ... ঘটনাচক্রে অফিসের ভিতরে আমাদের এ সব কথা যাওয়াতে হেড মিস্ট্রেস বাইরে বেরিয়ে এসে ঘটনা কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই টিচার কিছু বলার আগেই আমরা নালিশ করে দিলাম ... ফলাফল, তন্বীর ডাক পড়লো তার অফিসে, সেই সাথে দ্বিতীয় মিস্ট্রেস কেও আসতে বললেন ...
কিছুক্ষন পরে তন্বী ভিতরে ঢুকতেই শুরু হয়ে গেল দুই টিচারের একসাথে ঝাড়ি ... আর বাইরে দাড়িয়ে আমরা তা শুনতে শুনতে সব ক' জন মুখে হাত দিয়ে হেসেই গড়াগড়ি ..ঝাড়ি শেষে ও যখন বাইরে আসলো তখন হাসিটা কমিয়ে দিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করলাম - আমাদের সাথে টিফিন খাবা, নাকি বকা খেয়েই পেট ভরে গেছে ?
No comments:
Post a Comment