Wednesday, July 29, 2009

ভাবনার ছন্দপতনে হারিরে যাওয়া এক বিকেল

ভাবনার ছন্দপতনে

হারিরে যাওয়া এক বিকেল

১২ ই জুন, ২০০৯ বিকাল ৪:৪৭





দুর থেকে রক্তাক্ত ছেলেটার দিকে তাকিয়ে কেমন জানি অনুশোচনায় দগ্ধ হতে লাগলো শীলা ...আনমনেই ভাবতে লাগলো -- ব্যাপারটা এমন কেন হলো ? এমন তো নাও হতে পারতো ... সবকিছু যদি অন্যরকম হতো তবে কি খুব একটা খারাপ হতো ? ...

ঘটনার শুরুটা খুব সাধারন ভাবেই ...

কলেজের খুব ছটফটে, দুরন্ত আর সেই সাথে মেধাবী ছাত্রী হিসেবে শীলাকে সবাই চিনে। যে কোন কাজের, যে কোন অনুষ্ঠানে তাকে সামনের সারিতে পাওয়া যাবেই যাবে ... সুন্দর মুখশ্রীর আর বন্ধুবৎসল হওয়ার কারনেই হয়তো অনেকেই তার পাশে সবসময় মৌমাছির মতো ঘুরঘুর করে থাকে । বন্ধু বান্ধবের তার অভাব নেই, নেই কারো প্রতি তার ব্যক্তিগত দ্বন্দ ... অবশ্য এখানে তেমন কেউই নেই যে ওর সাথে পাঙ্গা নিতে আসতে সাহস করবে ... সেটা অবশ্য ওর জন্য না, বরং ওকে ঘিরে থাকা বন্ধুদের জন্য। ও যেমন অন্যের সব দরকারের সময়ে হাজির থাকে ঠিক তেমনি ওর প্রয়োজনের সময় না ডাকতেই সবাই হাজির হয়ে যায় ... কেউ কেউ এ জিনিসগুলো ঈর্ষা করলেও কখনো মুখ ফুটে বলতে পারে না ... জিনিসগুলো শীলাও বুঝে, কিন্তু সেও ব্যাপারগুলো বেশ উপভোগ করে থাকে ... যে কারনে কখনো এ বিষয়গুলো নিয়ে কোন রকম মাথা ব্যাথা ওর নেই ...

ওদের ক্লাসের কয়েক রকমের স্টুডেন্ট আছে ... কিছু আছে বেশ উৎসাহী যারা সব ধরনের কাজে , পড়ালেখায় সব সময়ে আগে থাকে ... কিছু আছে যারা নিজেদেরকে অন্যদের থেকে একটু দুরে রাখতে পছন্দ করে ... কেউ কেউ আছে যারা অন্যের খুত ধরতে পছন্দ করে অথচ নিজেরা কিছু করতে চায় না, কোন দায়িত্ব নিতে চায় না ... এ সবের মাঝেও একটা ছেলে আছে যে নিজেকে সবকিছু থেকে দুরে রাখে , একলা একলা থাকে .... একটা ড্যাম কেয়ার ভাব তার চোখে মুখে থাকলেও সবার সাথে সহজভাবে মেলা মেশা করে থাকে ... কেউ তার কাছে কোন সাহায্য চাইলে কখনো না করে না ঠিকই তবে কেউ যেন তার কাছে আসতে পারে না .... কাছে থেকেও সে যেন অনেক দুরের একজন মানুষ ... তার সম্পর্কে মিম একদিন বলছিলো -- ও যেন এক পর্দার আড়ালের মানুষ ... দুর থেকে ওকে যত দেখবে ততই মনে হবে ও অনেক পরিচিত একজন .... অথচ যত কাচে যাবে , ততই সে নিজেকে এমনভাবে আড়াল করে ফেলবে যেন মনে হবে অচেনা আগন্তুক ... মিম কথাগুলো বলেছিলো তার অভিজ্ঞতা থেকে ... একদিন ভোরবেলা বড় নোটের ভাংতি রিক্সা ওয়ালাকে দিয়ে ওকে ছেলেটা সাহায্য করেছিল, তবে এর বিনিময়ে সে মিমের কাছ থেকে কিছুই নেয়নি ... মিম চেয়েছিলো ওকে অন্তত এক কাপ চা খাওয়াতে , একটু বন্ধুত্ব করতে ... জবাবে ছেলেটি বলেছিলো -- আমরা তো বন্ধুই, তাই না ? আর আমি এমন কিছু করিনি যার কারনে তুমি এমনভাবে আমাকে কৃতজ্ঞতা জানাবে ... যদি কখনো এমন কিছু উপকার করি তবেই আমাকে চা খাওয়ায়ো, ঠিকাছে ?

কথাগুলো শীলার মনের কোনে এক অন্যরকম অনুভুতির জন্ম দিয়েছিলো... সে নিজেও কখনো ঐ ছেলের সাথে কথা বলেনি , আসলে কোন দরকার পড়েনি বলেই বলা হয়নি ....... তবে মীমের কথাগুলো শুনে কেন জানি ওর দিকে তাকিয়ে অল্প করে হাসতে ইচ্ছে হতো ... বিনিময়ে ছেলেটাও দুর থেকেই মুচকি হাসি উপহার দিতো তবে কখনোই কাছে এসে বলেনি কেমন আছো ... সে নিজেও কখনো জিজ্ঞেস করে নি তুমি কেমন আছ ... ব্যাপারটা শীলার বন্ধু মহলের অনেকের চোখে পড়লেও শীলা কিছু না বলায় ওরাও ছেলেটিকে কিছু বলতো না ... এমন করতে করতে একসময় কৌতুহল রাখতে না পেরে কেউ কেউ বলেই ফেলতো--- ছেলেটার হাসি কি বিশ্রী, আর কেমন আনসোশ্যাল, কারো সাথে মেশে না ... জবাবে শিলা সহজাত ভঙ্গিতে একগাল হাসি দিয়ে উত্তর দিতো -- সময় আসুক ওরে দেইখা নিমু নে .....

হঠাৎ কয়েকদিন দেখা গেল ছেলেটি আর ক্লাসে আসে না, তার কি হয়েছে সহপাঠীদের কেউ তা জানেও না ... মনে মনে কয়েকদিন ধরেই শীলা ওকে খুজে ফিরছে ... কিন্তু কোথাও ওর দেখা নেই .... একদিন বন্ধুদেরকে বলেই ফেললো -- কিরে তোরা ঐ আনসোশ্যাল ছেলেটাকে দেখেছিস কোথাও ? ... সবাই বলে -- নাহ দেখিনি তো .. ক্যান কি হইসে ?
শীলা দুষ্টিমির ভঙ্গিতে উত্তর দেয় --- নাহ কিছু হয়নি, ওরে কেন জানি একটু সাইজ করতে মন চাইতেসে ... এমন সময় ওরে হাতের কাছে পেলে মনের সুখ মিটায়ে মাইর দিতাম ......
ওর অতি উৎসাহী বন্ধুরা এগিয়ে এসে বলে ঠিকাছে দাড়া ও আসুক একদিন সেদিনই তোর মনের ইচ্ছা পূরন করে দেয়া হবে ........ শীলা মনে মনে হাসে , বলে -- ঠিকাছে সেদিন আচ্ছা মতো প্যাদানী দিস ঐ বোকা ছেলেটা কে ...

কয়েকদিন পরে , ক্লাস শেষে শিলারা সবাই একসাথে মাঠের কোনে আড্ডায় বসেছে , এমন সময় ছেলেটি ওদের কাছে হাজির হলো ..... ওকে আসতে দেখেও সেদিন ওরা কেউ কথা বলছে না দেখে বেশ কিছুক্ষন সে অপেক্ষা করলো, এর পরে আস্তে আস্তে একটু পিছিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো সময় সুযোগ হলে বলবে সে কথাটা ... ব্যাগের ভিতর থেকে সুন্দর খামটা বের করে হাতে নিয়ে কিছুক্ষন অপেক্ষা করলো সে .... এর পরেও কেউ ওর দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না দেখে আস্তে আস্তে শীলার কাছে এসে সুন্দর খামটা এগিয়ে দিয়ে হাসিমুখে বললো -- এটা রাখ

শীলা একটু গম্ভীর হয়ে বলে -- কি আছে এতে ?
ছেলেটি উত্তর দেয় -- দেখই না ভিতরে সব লেখা আছে
শিলা এবার দুষ্টুমি করে বলে উঠলো -- প্রেমপত্র কি এভাবে দিতে হয় নাকি ? একটু রোমান্টিক হয়ে কি দেয়া যেত না ?

শিলার কথা শেষ হতে না হতেই ওর অতিউৎসাহী বন্ধুরা চড়াও হয়ে গেল ছেলেটির উপরে ...মূহুর্তের মধ্যে কিল ঘুসি আর হাতে যে যা পেল সবকিছু দিয়ে বেদমভাবে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে ফেললো ওকে ,অথচ ছেলেটি একটা বারের জন্যই কারো গায়ে হাত তুললো না , মুখ আর চোখ ছাড়া আর কোথাও মারলেও কেন জানি সেইভাবে নিজেকে রক্ষাও করলো না ... ছেলেটার এমন অবস্হা দেখে শীলার চিৎকারে ওরা একসময়ে থামলেও ততক্ষনে বেশ ভালভাবেই আহত হয়েছে ছেলেটা ... ব্যাথায় কোঁকাতে কোঁকাতে উঠে দাড়িয়ে ঠোটের কোনে একটা বিদ্রুপের হাসি দিয়ে শিলাকে সে বললো -- ভেবেছিলাম তোমরা আমার বন্ধু হবে অথচ তোমরা তো আমার শত্রু হওয়ারও যোগ্যতা রাখ না ..

কথাটা শুনতেই কেমন জানি খটকা লাগলো শীলা আর তার বন্ধুদের, রক্তাক্ত ছেলেটার চলে যাওয়া দেখতে দেখতে থমথমে মনে ওরা সবাই বুঝতে চেষ্টা করলো ছেলেটা কি বলতে চেয়েছে .... হঠাৎ করে শীলা ওর হাতে ধরা খামটা খুলে দেখলো ওতে একটা বিয়ের কার্ড আছে আর সেইসাথে একটা ছোট্ট চিরকূট , আর তাতে লেখা -- আমার একমাত্র বোনের বিয়েতে তোমাদের সবাই কে দাওয়ার দিচ্ছি, আমার কোন বন্ধুনেই যাদেরকে আমি এই আনন্দের অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিতে পারি , তোমাদেরকে আমার বন্ধু মনে হয়, তাই তোমাদের সবাইকে দাওয়াত দিচ্ছি .... কথাগুলো মুখে বললে তোমরা যদি আমাকে ফিরিয়ে দাও সে দুঃখ আমি সইতে পারবো না তাই কথাগুলো এখানে লিখে দিলাম .... ইতি - তোমাদের সবসময়ের শুভাকাংখী

No comments: