Wednesday, July 29, 2009

কপিক্যাটের ইচ্ছে প্রকাশ

কপিক্যাটের ইচ্ছে প্রকাশ

২৬ শে জুলাই, ২০০৯ বিকাল ৪:০৭





পাশের বাড়ির কামাল সাহেবের বৌ নতুন জামদানী শাড়ি কিনেছে, সে খবর পেয়ে মতিন সাহেবের স্ত্রী শুরু করে দিলেন তুলকালাম কান্ড ... তার ঐ রকম জামদানী শাড়ী চাই ই চাই ... তা না পাওয়া পর্যন্ত ঘরের চুলা জ্বলবে না, বাসন কোশন পরিষ্কার হবে না, ঘর বাড়ি পরিষ্কার হবে না ... অগত্যা মতিন সাহেবের মাইনে পাওয়ার আগেই ধার করে গিন্নীকে জামদানীতে মুড়িয়ে ঘরের চুলা জ্বালানোর ব্যাবস্হা করলেন ....

এদিক দিয়ে কামাল সাহেব একটু অন্যরকম ... ভিন্ন ভাবে অবস্হার প্রেক্ষিতে ব্যাবস্হা নিতে তার জুড়ি নেই ... মতিন সাহেবের বৌ তাকে কপি করে, তার মতই নতুন জামদানী কিনেছেন দেখে কামাল সাহেবের বউ তো একেবারে তেলে বেগুনে জ্বলছেন ... তার কথা হলো -- মতিন সাহেবের বাসায় ল্যান্ডলাইন আছে আমাদের নেই ক্যানো, এক সপ্তাহের মধ্যে তার ঘরে টেলিফোন চাই ... মতিন সাহেব বললেন -- প্রতিদিন ভরে দেয়া সেলফোনের ক্রেডিট সেদিন ই শেষ হয়ে যায় বলেই কি ল্যান্ড লাইন দরকার ? ... উত্তরে তার স্ত্রী আর রাগ সামলাতে না পেরে বললেন -- না, তুমি অফিসে গেলে ল্যান্ড লাইনে ফোন করে খোজ নিব পৌছে গিয়েছ কি না ... মতিন সাহেব হাস্যমুখে উত্তর দিলেন -- তুমি এই মুহুর্তে যেভাবে চিল্লায়ে বলছ , সেভাবে জিজ্ঞেস করলে তো আমি অফিসে বসে এমনিতেই শুনতে পাব, এর পরে আর ল্যান্ড ফোনের কি দরকার ? ... সে কথার আসল মর্মার্থ বুঝতে পেরে সে মুহুর্তে লজ্জায় চুপ হয়ে যাওয়া কামাল সাহেবের স্ত্রী এক সপ্তাহের মধ্যেই ঘরে ল্যান্ডলাইনের কানেকশন পেয়েছিলেন ....

কামাল এবং মতিন সাহেবের এই সমস্যা বেশ পুরাতন, ঠিক কখন থেকে এটা শুরু হয়েছে তা ইতিহাসবিদগন বলতে না পারলেও মোটামুটি ধরা যায় দুজনের প্রেমের ভরা জোয়ারের সময় থেকেই এ সমস্যা চলে আসছে ... সে সময়ের একটি ঘটনা এরকম --

মেধার দিক থেকে অন্তরা আর কামালের মাঝে খুব মিল ছিল, ফলাফলটা প্রায় কাছাকাছি আসতো ওদের... পড়াশুনায় তাই ওদের মাঝে চলতো চরম প্রতিযোগীতা ... তার পরেও কোন কারনে কখনো যদি অন্তরা কোন নোট তৈরি করতে না পারত তবে কামাল তার নিজের নোট তাকে দিয়ে দিত, এর পরে দুজনে সেই নোটকে নতুন ভাবে নিজেদের মনমতো পরিবর্তন, পরিবর্ধন করে বানিয়ে নিত ... এ দেখে সীমার ও মনে চাইত মতিন তার জন্য এমন কিছু করুক, তবে মতিনের মাঝে একটু ফাকিবাজি স্বভাব থাকার কারনে অনেক সময় ইনডাইরেক্ট ভাবে এমন কিছু চেয়েও সে কখনো পায়নি ... একদিন কামালকে তার অনেক কষ্টে বানানো নোট হাসিমুখে অন্তরাকে সবার সামনেই দিয়ে দিতে দেখে সীমার ও একটু ইচ্ছে হলো এবার মতিনের কাছ থেকে সে একটা নোট নিয়েই ছাড়বে ...

ইচ্ছে প্রকাশের দুদিনের মধ্যে গোলাপ ফুলের গন্ধে মৌ মৌ করা নোটটি হাতে পেয়ে যেন সীমার খুশীর সীমা পার হয়ে গেল ... এর পরে যখন জানতে পারলো মতিন নিজে দুদিন একটানা, রাত - দিন এক করে এই নোট তৈরী করেছে তখন যেন সীমার আনন্দে কেদে ফেলতে ইচ্ছে করছিল ... তবে পরবর্তি ধাক্কাটা আসতে খুব একটা দেরী হয়নি, যখন ক্লাসের আঁতেল বলে খ্যাত কুদ্দুস হঠাৎ একদিন এসে সীমাকে বললো -- সীমা , তুমি আমি আর মতিন ছাড়া ঐ নোট যেন আর কারো কাছে না যায় তাহলে মাহবুব স্যার আমাকে আর কোন নোট লিখে দিবে না বলেছে, জানোই তো মাহবুব স্যার কেমন রাগী মানুষ, ঠিকাছে ?

এমন ই ঘটনা ঘটেছে আমার সাথেও ... সেদিন কাজে গিয়ে দেখলাম আমার এক কো-ওয়ার্কার ক্লায়েন্টের কাছে একটা নোট পাঠিয়েছে, কিন্তু তাতে কিছু সমস্যা থাকায় বস আমাকে সেটা দেখে ভুলগুলো বের করতে বলেছেন ... কো-ওয়ার্কার কিছু কিছু কারনে আমাকে দু চোখে সহ্য করতে পারে না, সবার কাছে বলে বেড়ায় আমার কাজের স্টাইল নাকি তার একেবারেই পছন্দ না, এক কথায় জঘন্য বললেও নাকি কম বলা হবে ... তাই তার পাঠানো নোট নিয়ে কাজ করতে একেবারেই ইচ্ছে করছিলো না ... অনিচ্ছা স্বত্বেও নোটটি খুলে দেখতেই আমি পুরা টাশকি খাইলাম ... আমার গত বছরে তৈরী করা একটা নোটের পুরা কপি করে দিয়েছে সে , আর এর মধ্যে যেখানে যেখানে নিজে এ্যাড করারা চেষ্টা করেছে সেখানেই সমস্যা হয়েছে ... এর পরে খুটিয়ে খুটিয়ে ক্লায়েন্টের সবগুলো চাহিদা জেনে, নোটের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে নোট টা ঠিক করতে পাঠিয়ে দিলাম কো-ওয়ার্কারের টেবিলে ... সেই সাথে কি মনে করে জলদি জলদি গুগল মামার দোকান থেকে এই ছবিটা বের করে ফাইলের মধ্যে ঢুকিয়ে ওকে পাঠিয়ে দিলাম ....







No comments: