ভালবাসায় ঘেরা
কাঁচের ছোট্ট কুড়ে ঘর
২৭ শে মে, ২০০৯ সকাল ৯:২১
প্রতিদিন বাচ্চাটাকে স্কুলে দিয়ে শপিং মলে একটু এ জিনিস সে জিনিস দেখে একেবারে ওকে নিয়ে ঘরে ফেরাটা যেন অনন্যার প্রতিদিনের রুটিনে পরিণত হয়েছে, অথচ আজকে সেই অতি পরিচিত জায়গাতে ঢুকতেই কেমন জানি অন্যরকম অনুভুতি জেগে উঠেছিল মনের কোনে, মলের ভিতরে কি আজকে যেন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী মানুষের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে নাকি তার আজকে এত মানুষের ভিড়ভাট্টা ভালো লাগছে না। অনেক দিন পরে কেন জানি কোন এক অতি পরিচিত বকুলতলা তাকে দুর থেকে হাতছানি দিয়ে বলছে - অনেক দিন তুমি আসোনি আমার কাছে, বসোনি আমার ছায়ায়, বলোনি দুটো মিষ্টি কথা অথবা গাল ফুলিয়ে অভিমান করোনি আমার সাথে ... তোমার সে সব টুকরো টুকরো ভালবাসাকে আমি যে অনেক বেশী মিস করছি, তুমি কি বুঝতে পারছ ?
ফিসফিসিয়ে অনন্যা উত্তর দেয় -- তোমাকে আমি আর স্মরন করতে চাই না, চাইনা পেতে নতুন করে আর কোন দুঃখের দেখা, খরা চৈত্রের তৃষ্ণার্ত পাখির মতো জলের খোঁজে দিশেহারা হতে চাইনে আর কখনো , এইতো আমি বেশ আছি, সুখে আছি, ভাল আছি ... আমি আর নতুন করে কাউকে কষ্ট দিতে চাই না ... তুমি আর কাছে এসোনা আমার, দুরে আছ দুরেই থাক ....
যন্ত্র মানবীর মতো আবেগহীন পদক্ষেপে এগিয়ে গিয়ে লিফটে উঠে বাটনে হাত রাখতেই বন্ধ হতে থাকা দরজার দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলো অনন্যা -- এ কে ? কাকে দেখতে পাচ্ছে সে তার সামনে ? এ কি চোখের ভুল, নাকি তার উষ্ম মস্তিষ্কের কল্পনার ফল ?
মানুষটি নির্বিকারভাবে লিফটের ভিতরে ঢুকে খুব সুন্দর করে বললো -- ধন্যবাদ আপনাকে। দ্বিতীয়বারের মতো চমকে উঠলো অনন্যা -- ওমা, এ তো সেই কন্ঠস্বর ... তবে কি, এ সেই মানুষ টা..... ?
একটু পিছিয়ে যেতেই লোকটি দিকে দরজার দিকে মুখ করে দাড়ালো, ওদিকে মুখটা ফিরিয়ে না রাখলে মুখটা ভালোভাবে দেখতে পাওয়া যেত কিন্তু বেয়াড়া মানুষটা এমন ভাবে দাড়িয়েছে যেন তার মুখটা কোনোভাবেই দেখতে পাচ্ছে না অনন্যা ... ক্রীম কালারের স্যুট অনন্যার সবসময়েই ভালো লাগে, তাই মানুষটিকে তার মনের মতো রং এর স্যুট পরতে দেখে মনের অজান্তেই যেন আনন্দে আপ্লুত হয়ে উঠলো সে । আবার আকষ্মিকভাবেই ও আবিষ্কার করলো - একি ব্যাপার লোকটি দেখি তার এক সময়ের খুব প্রিয় ম্যান'স বডি স্প্রে মেখে এসেছে ... প্রিয় বডি স্প্রের মিষ্টি আবেশে অনন্যা যেন আস্তে আস্তে হারিয়ে যেতে এক অন্য মায়াময় জগতে, তিল তিল করে যাকে গড়ে তুলেছিল নিজের হাতে, প্রতিটি দিন , প্রতিটি ক্ষনের বিন্দু বিন্দু ভালবাসাকে এক করে বানিয়েছিল নিজেদের ভালোবাসায় কুড়ে ঘর, অথচ সে কোন এক কালবৈশাখি ঝড়ের রাতে নিজের হাতে গড়া সেই ছোট্ট কুড়ে ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছিল এক ইট পাথরের বন্ধ কারাগারে, এর পরে ......
ভাবনাটাকে আর বাড়তে দিলো না লিফটের "বিপ বিপ" সিগন্যাল টি , নিজের ভাষায় সে যেন জানান দিলো, চলে এসেছে অনন্যার গন্তব্য .... যন্ত্রচালিত ঘরটা থেকে যেন আজ বেরোতেই ইচ্ছে হচ্ছে না তার, তবুও গন্তব্যে পৌঁছে কেউ কি আর থেমে থাকতে পারে ? তাই অগত্যা একসময় সমস্ত দ্বিধা দ্বন্দকে পাশ কাটিয়ে, তাকে নেমে যেতেই হলো .... ধীর পদক্ষেপে কিছুদুর এগিয়ে চলতে চলতে মনের মাঝে খুব একটা ইচ্ছে জাগছে মানুষটাকে আর একবার দেখতে ,কিন্তু এ যদি সেই মানুষটা না হয় তবে এমন করলে লোকটাই বা কি মনে করবে তাকে, অথচ আজ তাকে যে ওর দেখতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে ....
এক সময় আর নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে পিছনে তাকে ফিরতেই হলো , কিন্তু ততক্ষনে অনেক দেরী হয়ে গিয়েছে .... ভালবাসায় ঘেরা কাঁচের ছোট্ট ঘরটি তার দরজা বন্ধ করে চলে গিয়েছে অনেক উপরে ... তার নাগালে বাইরে ...

No comments:
Post a Comment