Wednesday, July 29, 2009

ফুল হাতে সুন্দরীকে দেখে চরমভাবে টাস্কিত হইলাম

ফুল হাতে সুন্দরীকে দেখে

চরমভাবে টাস্কিত হইলাম

২৬ শে মে, ২০০৯ রাত ১২:২৪





রাতে বাসায় ঢুকার পরে আম্মু বললেন, রিমন সন্ধ্যা থেকে ৩ বার ফোন করেছিল। বাসায় আসলে তোমাকে কলব্যাক করতে বলেছে। আমি বললাম -- এখন তো অনেক রাত এখন রাতে করতে বলেছে নাকি সকালে করলেও হবে? আম্মু বললেন -- তা তো বলেনি , শুধু বলেছে কলব্যাক করতে। ফ্রেস হয়ে বাথরুম থেকে বের হতেই আবার রিমনভাই এর ফোন, বেশ উৎকন্ঠিত লাগছিল তার কন্ঠস্বর , ফোন ধরে হ্যালো বলতেই বললো -- অনন্ত একটা কঠিন বিপদে পড়ে গেছি রে, তোমার সাহায্য লাগবে।

ঘটনা ১৯৯৮ সালের বন্যার সময়ের, আমরা কয়েকজন ফ্রেন্ড মিলে নিজেদের মাঝে এমন উদ্দেশ্যে একটা সার্কেল তৈরী করেছিলাম যে, কারো কোন সাহায্য প্রয়োজন হলে আমরা ভলান্টিয়ারী কাজ করে দিতাম -- এক কথায় ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মহতী উদ্যোগ। যারা আমাদেরকে জানতেন, চিনতেন তারা প্রায় সবাই আমাদেরকে দিয়ে ছোটখাট অনেক কাজ এমনি এমনি করিয়ে নিতেন, আমরাও পরোপকারী ব্রত বেশ উৎসাহের সাথেই পালন করতাম ... সেই সূত্রে অনেক উচ্চ পদস্হ কর্মকতা, ব্যাবসায়ীর সাথে আমাদের বেশ ভাল পরিচিতি হয়ে গিয়েছিল।

একটানা আধ ঘন্টাখানেক রিমন ভাই এর কথা শুনে সার সংক্ষেপ যা বুঝলাম, তা হলো -- উনার গার্লফ্রেন্ড কোন এখ ছোটখাট সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে সংযুক্ত, যারা নাকি ঢাকার ভিতরে বন্যা দুর্গত মানুষের মাঝে কিছু ত্রান সাহায্য করতে চায়, নিজেদের উদ্যোগে কিছু জিনিস , টাকা জোগাড় হলেও সেটা তাদের আইডিয়ার চেয়ে অনেক কম বলে রিমন ভাইকে তিনি বলেছেন হাজার বিশের একটা এ্যামাউন্ট ডোনেশন হিসেবে জোগাড় করে দিতে তাও আবার দুই দিনের মধ্যে, এখন রিমনভাই পড়েছে সমস্যায় , কি করবেন না করবেন ভাবতে ভাবতে তার একদিন শেষ, কালকের দিনের মধ্যে নাকি উনার টাকা যোগাড় করে দিতেই হবে , তা না হলে উনার গার্লফ্রেন্ড যদি ওখান থেকে কোন ধরনের কথা শুনে তাইলে উনার উপর দিয়ে ঘুর্নিঝড় প্রবাহের সমূহ সম্ভাবনা আছে । ঘটনা পানির মতো পরিষ্কার হয়ে গেল ... রিমন ভাই গলা পানিতে দাড়িয়ে, সুতরাং তার জন্য কিছু করতে হবে । উনাকে আস্বস্হ করলাম , কালকের দিনের মধ্যে সম্মানজনক ব্যাবস্হা করা যাবে সমস্যা হবে না, নিশ্চিন্তে ঘুমুতে যান .... এর পরে কয়েক জায়গাতে ফোন করে সবকিছু ঠিকঠাক করে আমিও ঘুমাতে গেলাম।

আগেই বলেছি, এমন সময়ের জন্য আমাদের পরিচিত বেশ কিছু কন্ট্যাক্ট আগেই তৈরী করে ফেলেছিলাম, তাই পরদিন প্ল্যান মতো তাদেরই কয়েকজনের সাথে যোগাযোগ করে বেশ ভাল সংখ্যার একটা এ্যামাউন্ট জোগার হয়ে যাওয়ার পরে ওটা রিমন ভাইকে দিয়ে পাঠিয়ে দিলাম আপুর কাছে। সেদিন রাতের বেলা আবার রিমন ভাই এর ফোন এলো -- অনন্ত, কালকে ওরা, বিশেষ করে তোমার আপু তোমাকে ওদের কেন্দ্রে ডেকেছে, ওদের এমন একটা বড় সাহায্য করেছ বলে ওরা তোমাকে সাথে করে নিয়ে ত্রান বিতরন করতে যেতে চায়, না করতে পারবে না .... আবার সেই আগের মতোই পজিটিভ উত্তর দিয়ে বললাম -- আচ্ছা ঠিকাছে,যাব কালকে। এরপরে তার কাছ থেকে ওদের ঠিকানা আর কখন ওখানে যেতে হবে জেনে নিয়ে সেদিনের মতো অফ গেলাম .... জানলাম রিমন ভাই ও কালকে সেখানে থাকবেন।

সেদিন আবার আমাদের গ্রুপের একটা ত্রান বিতরনের কাজ ছিল নারায়নগজ্ঞে, সেখান থেকে ফিরে সোজা শাহবাগের একটা কাজ শেষ করে আমি রিক্সা নিচ্ছি আপুদের কেন্দ্রে যাব এমন সময় হঠাৎ এক পরিচিত গলার চিৎকার শুনতে পেলাম, ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি জাদুঘরের সামনে আমার এক খুব ক্লোজ ফ্রেন্ড ডাকছে ওখানে যেতে ... রাস্তা পার হয়ে ওর কাছে যেতেই বললো -- দোস্ত আজকে একজনরে প্রোপোজ করুম ঠিক করসি, এই দিনে তারে কি গিফট দেয়া যায় বল না ... সারাদিনের ত্রান বিতরনের ধাক্কায় শরীর তখন বেজায় কাহিল, তখন আর বেশী কিছু মনে করতে ইচ্ছা করছিলো না বলে কিছউ চিন্তা না করেই সোজাসুজি বলে দিলাম -- কয়েকটা ফুল নিয়ে যা । এর পরে তার নেক্সট বায়না -- আমি নার্ভাস ফিল করছি, তুই সিলেক্ট করে দে না দোস্ত। মেজাজটা বিলা হওয়ার আগেই কইলাম জলদি মালন্চে চল আমার কাম আছে, তোর ফুল কিনায়ে দিয়ে আমাকে আরেক জায়গায় যেতে হবে ...

এর পরে ওকে নিয়ে ফুলের দোকানে ঢুকে দেখি আরেক কাহিনী, দুই সুন্দরী ফুল কিনছে তাদের একজন একটা সিলেক্ট করলে অন্যজনের পছন্দ হয়না, আবার অন্যজনের যা পছন্দ সেইটা প্রথম জনের পছন্দ হয় না ... দুই সুন্দরীর একই রকম ঝামেলা দেখে মনের অজান্তেই হাসি এসে গেল ....ওদের কান্ড দেখে হাসতে হাসতে আমি বন্ধুর জন্য ফুল নিয়ে দিয়ে কাউন্টারে যাচ্ছি এমন সময় সময় ওদের একজন বললো -- খুব তো হাসছেন, আমাদের একটু ফুল সিলেকশন করে দিতে পারলে বুঝতাম কিছু পারেন । ওদের কথা গায়ে না মেখে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি , অমনি বন্ধু বলে অনন্ত ইজ্জতের প্রশ্ন, দে নে কটা ফুল সিলেকশন করে। আমি বললাম - তোর মন চাইলে তুই দে, আমার টাইম নাই । এর মাঝেই এক সুন্দরী মুখ বেঁকিয়ে বলে উঠলো -- পারলে না দিবে ... ঝামেলা না বাড়িয়ে কয়েকটি রজনীগন্ধার স্টিক আর গোলাপের কম্বিনেশন করে বললাম -- এই নেন। এর মাঝে আমার দোস্তের চাপসে আরেক কু-বুদ্ধি, ও আমাকে ফিসফিস করে বলে -- শোন, ওদের এই ফুল গুলো শুধু সিলেক্ট না কিনে ও দেই, আমি একটা শুভকাজে যাচ্ছি কারো মনে দুঃখ দেয়া ঠিক হবে না ... এই শুনে ওকে বললাম --তুই যা করার কর গিয়ে, আমি নাই এর মধ্যে ... বন্ধু আমার দু জনের ফুল একসাথে নিয়ে টাকা দেয়ার সময় বলে --- অনন্ত, ওরে নিয়ে রাইতে খামু ভাবছিলাম , তুই এই বিলটা দে না দোস্ত । এইটা মনে কর আমি তোর কাছে লোন নিচ্ছি, পরে দিয়া দিমু নে ... আমি আসকাইলাম -- আর ওদের ঐ ফুলের দাম কেডা দিবো ? ... দোস্ত কইলো -- ওটাও তুই দিয়ে দে না প্লিজ। ইজ্জতের সওয়াল ... অবশেষে নিজের মানিব্যাগের পেট কাইটা দুইজনের ফুলের দাম দিয়া সুন্দরীদের ফুল ওদের হাতে দিয়ে বিদায় দিলাম, এর পরে দোস্তরে কইস্যা একখান জীবনমুখী বানী শুনায়া রিক্সা নিয়ে রওনা দিলাম আপুর সেই সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের দিকে ।

সেখানে পৌছে দেখি গেটের সামনে রিমন ভাই সেই সাথে সেই আপু অপেক্ষা করছে আমার জন্য, উনার সাথে পরিচিত হয়ে একসাথে ভিতরে ঢুকতে গিয়েই পর পর দু বার ধাক্কা খেলাম , প্রথমত ওখানের সবাই আমাকে ঢুকতে দেখে দাড়িয়ে পড়েছে, আর দ্বিতীয়ত আমাকে স্বাগতম জানানোর জন্য ফুল হাতে দাড়িয়ে আছে সেই জন যিনি কিছুক্ষন আগে আমাকে বলেছিলেন -- খুব তো হাসছেন, আমাদের একটু ফুল সিলেকশন করে দিতে পারলে বুঝতাম কিছু পারেন .....

No comments: