চাঙ্কুর চান্তেকদের কাঁঠাল ছিনতাই
১৪ ই জুলাই, ২০০৯ রাত ৯:৩৬

কাহিনী ছোট কিন্তু ঘটনা বিশাল ... বিদেশের মাটিতে দেশীয় ফলের বড়ই আকাল, বিশেষ করে আমাদের মতো পোড়া কপালীদের জন্য তো শুধু দেশীয় ফল কেন, যে কোন দেশীয় খাবার ই এক রকম দুঃষ্প্রাপ্য ... তবুও মাঝে মধ্যে যা পাই তাই নিয়েই খুশী থাকার চেষ্টা করি, এইটা আবার কারো কারো সহ্য হয় না ... তেমনি হইলো - চাঙ্কুর দুই অতি বদ চান্তেক !!
রাতের বেলা এক আপু ফোন করে জানালো এশিয়ান শপে নাকি বেশ বড় কয়েকটা দেশী কাঠাল এসেছে, কিনব কি না ... জিজ্ঞেস করলাম -- কেমন সাইজ ...
উনি বল্লেন -- বেশ বড়, তবে দামটা মনে হয় বেশী নিচ্ছে ...
আমি আসলাইলাম -- কত ?
উনি কইলো -- এক, একটা ৭৫ ইউরো করে !!
আমি কইলাম -- আমার পুষাইবো না ... বাদ দেন
(মনে মনে বললাম, আমার প্রিয় ফলটা বুঝি আর খাওয়া হলো না )
উনি কইলো -- এক কাজ করি, আমরা অর্ধেক ভাগ নেই, আর তুমি অর্ধেক, ঠিকাছে ?
আমি মনে মনে একটু আস্বস্হ হয়ে কইলাম -- ঠিকাছে !!!
এর পরে দিনের বেলা আমি আর আমার কাজিন এক লগে গেলাম উনার বাসায়, গিয়া কাঠালের সাইজ দেইখা মোটামুটি তব্দা খায়া গেলাম ...
যাই হোক, কাঠাল ভাঙ্গা হলো ... একসাথে সবাই অল্প স্বল্প খেলাম এর পরে বাকিটা একটা বক্সে নিয়ে বের হইলাম বাস স্ট্যান্ডে ... কাজিনের হাতে কাঠালের বক্স দিয়ে বললাম তুমি গিয়ে সিটে বসো আমি টিকিট নিয়ে আসতেছি ...আমরা বাসের মাঝামাঝি জায়গাতে বসেছি এমন সময় দেখি পিছনে পিছনে দুই চান্তেক আইসা পাশাপাশী সিটে বইসা পড়ল ... অতঃপর বাস চলতে শুরু করলো .....
আমি জানালারে পাশে বইসা বাইরের মনোরম দৃশ্য দেখি আর আমার পাশে কাজিন কানে আইপড লাগায়া হাতের রাখা কাঠালের ব্যাগে দোলা দেয় ... একটু পরে ঐ পাশের এক চান্তেকে কাজিন রে আসকাইলো -- কৈত্থেকে জানি আজিব গন্ধ আসে , তুমি পাও ?
কাজিনে কয় -- আমগো ব্যাগ থেকেই আসতেছে
চান্তেকে আসকায় -- জিনিসটা কি ?
কাজিনে কইলো -- আমগো দেশের জাতীয় ফল ... কাঠাল
সাথে সাথে সে তার নিজের ফোন ব্রাউজ করে বাইর করসে কাঠাল কি জিনিস.... এর পরে আসকাইলো এত্ত বড় জিনিস তুমি এমুন ছোট ব্যাগে ভরছ ক্যামনে ? কাজিনে কইলো -- ওর ভিতর থেকে খাওয়ার অংশটা বের করে ঢুকিয়েছি ...
ততক্ষনে মোটামুটি আশেপাশের সবার নাকে কাঠালের গন্ধ পৌঁছে গেছে ... আশেপাশে থেকেও গুনগুনানির আওয়াজ পাইলাম ... এইটা কেমুন জিনিস যার গন্ধ এমনে বাইর হয় ... আমি এই সব শুনি আর বলি .... চাচা ঢাকা কতদুর, থুক্কু আমার বাড়ি কদ্দুর ... আর নিজেরে মনে মনে চাপকাইতেছি গাড়ি না নিয়ে বাসে যাওয়ার জন্য
কিছুক্ষন ধইরা কাঠাল সম্পর্কিত জেরা সহ্য কইরা পরে কাজিনে কয়, এত প্রশ্নের উত্তর দিবার পারুম না ভিতরে কি জিনিস নিজের চোখে দেইখা লও ... বইলা যেই না বক্ষ খুলছে , অমনি পাকা কাঠালের চেহারা দেখার জন্য হুড়মুড় করে লোকজন হাজির হয়ে গেছে ... এইবার চান্তেক দুজন বলে -- আমরা কি এক্টু টেষ্ট করে দেখটে পারি ?
এতক্ষনে কাজিন বুঝলো ভুলটা কোনখানে করে ফেলেছে ... আমার দিকে তাকায়া কয় -- ভাইয়া এইবার ?
আমি আর কি কমু -- কইলাম , কলা যখন বান্দরের সামনে আগায়া ধরেছ তখন ফিরায়ে নিবা ক্যামতে ... দেও খেতে !
আর কৈ যাবা ... দন্ত বিকশিত করিয়া ঐ দুই চান্তেকসহ আশে পাশের মানুষগুলোর গপাগপ কাঠাল খাওয়া দেখে আমি মনে মনে বলি --- এর চেয়ে ওরা যদি আমার কইলজ্যা চিবায়া খাইত তবে মনে হয় বুকে কম ব্যাথা পাইতাম ... এদ্দুর কাঠাল তো একলা আমারই পোষায় না, তার আবার অর্ধেক ভাগ করতে হবে ?
No comments:
Post a Comment