কোঁকড়া চুলওয়ালী বলে
আমি নাকি খুব যন্ত্রনা করি
২১ শে মে, ২০০৯ রাত ১০:০০

অনেক দিন পরে একটি এমন দিন পাওয়া গেল যেদিন কোন কাজ নেই ... সুতরাং নেই কাজ তো খই ভাজের প্ল্যান করছিলাম ...হাতে আপাতত কাজ নেই, ইনফ্যাক্ট বড় একটা প্রোজেক্টের কাজ করার পরে এখন আমার একটু রেষ্টের সময় চলছে , তাই আর নতুন কাজে একটা দিন হাত দিতে ইচ্ছে করছিল না ... কি করি চিন্তা করছি ... আজকে একটা সেই রকম রান্না দিলে হয়, অথবা বাইরে ঘুরি কোথাও ... অথবা সারা দিন শুয়ে বসে টিভি দেখি ... ঘুম থেকে ওঠার পরে এমনই হাজারো চিন্তা মাথার ভিতরে ঘুরপাক খাচ্ছিলো ... আলসেমিটা এমন ভাবে আকড়ে ধরেছিল যে বেড থেকে নেমে চলে গেলাম ড্রইংরুমে সেখানে গিয়ে সোফার উপরে ধপাস করে পড়লাম ... উহু , বসে না ... একেবারে শুয়েই পড়লাম ... রিমোট দিয়ে টিভি টা অন করতেই ডোরবেলের শব্দ ... ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সাড়ে ৯ টা বাজে ... এই অবেলায় কে আসবে আমার কাছে, তাও আবার ফোন না করে ... যাই হোক, চোখ ডলতে ডলতে দরজা খুলতেই আমার চোখ এক্কেবারে ছানাবড়া হয়ে গেল ... ওমা , এ কাকে দেখছি আমি ? ... মায়ের পাশে ভ্রু কূচকে দাড়িয়ে আছে আমার জানের টুকরা কোঁকড়া চুলওয়ালী ... কোন ঘটনাই বোধগম্য হলো না ... প্রথমটা হলো এত সকালে ওরা এখানে কেন, আর দ্বিতীয় হলো জানের টুকরা টা এমন করে গাল ফুলিয়ে আছে কেন
এতসব চিন্তা করছি দেখে ওর আম্মু বললো -- কি হলো ঘরে ঢুকতে দেয়ার আগে এত কি চিন্তা করছো ? .... অমনি কোঁকড়া চুলওয়ালী বলে উঠলো --- আরেক্টু চিন্তা করতে দেও ওকে
সকাল সকাল দুই জনের বকা একসাথে খেয়ে কাচুমাচু মুখে দরজা থেকে সরে দাড়ালাম ... ওরা ভিতরে আসলে পরে দরজা বন্ধ করতে করতে ভাবছি পুচকিটার রাগ কিভাবে কমানো যায় ... আমরা সোফায় বসতে না বসতেই কোঁকড়া চুলওয়ালী আমার ঘরগুলো ঘুরতে ঘুরতে ঢুকলো গিয়ে আমার কিচেনে ... গত কয়েকদিনের এলোমেলো অবস্হার কারনে কিচেনটা একরকম জঙ্গলের পরিনত হয়েছিল ... সেটা দেখতেই ও বলে উঠলো --- দেখ দেখ আম্মু ও কত নোংরা করে রেখেছে ...
আমি বললাম -- কয়েকদিন একটুও সময় পাইনি পরিষ্কার করার, এ জন্য এমন হয়ে আছে ... এক্ষুনি পরিষ্কার করছি, ঠিকাছে ?
অমনি সে বলে উঠলো -- আমি বলেছি বলে পরিষ্কার করছো ? দরকার নেই এখন করার... একদম হাত দিবানা ওতে ... একদম না
এমন সময় পরিষ্কার না করলেও সমস্যা আবার ও মানা করার পরে যদি হাত দেই তাহলেও আমার খবর আছে .... তাই পড়লাম মহা বিপদে ... সময়ের সাথে সাথে কোঁকড়া চুলওয়ালীর রাগ বেড়েই চলেছে ... ওকে এক্ষুনি না সামলালে নিশ্চিত বিপদ আছে আমার কপালে ... ভাবলাম একটু আদর করে দিলে হয়তো ঠান্ডা হবে ... তাই ওর হাত ধরে আদর করে কোলে নিতে গেছি আবার ধমক দিলো -- আমাকে আদর করা লাগবে না ... বলেই দুরে গিয়ে বসলো ...
এর পরে তাকে কত কিছু দিতে চেষ্টা করলাম , চকলেট, আইসক্রিম, চিপস, ও দেখি কোনটাই ধরা তো দুরের কথা ছুয়েও দেখে না ...অসহায় চোখে ওর আম্মুর দিকে তাকিয়ে দেখি সে বেশ উপভোগ করছে ব্যাপারটা ... বুঝলাম সেও কোকড়াচুলওয়ালীর পক্ষে ... সুতরাং আমার কোন রক্ষা নেই আজকে
বললাম, এক কাজ করি চল আমরা তিনজনে মিলে আজকে লং ড্রাইভে যাই অথবা কোনো পার্কে যাই .... কোকড়াচুলওয়ালী দেখি একেবারে চুপ ... হ্যা ও বলে না , নাও বলে না ... ওর আম্মু মুচকি হেসে বললো -- ছুটির দিনে বেড়ানোর জন্যই আমরা এসেছিলাম, তুমি ওর মন খারাপ করে দিয়েছ এইবার আগে ওকে সামলাও তার পরে অন্য প্রোগ্রামের চিন্তা করা যাবে ...
কোকড়াচুলওয়ালী কে আমি বললাম --- দেরি করে ডোর খুলেছি বলে রাগ করেছ ? আমি শুয়ে ছিলাম তো এ জন্য উঠতে দেরি হয়েছিল, আর এমন হবে না .. সর্যি
এবার কোকড়া চুলওয়ালী বলে ---- হুমমমমম
বুঝলাম সে কিছুটা মেনে নিয়েছে .... এবার ভাবছি আর কি করেছি যার কারনে ও এখনো মুখ ভার করে আছে ? এমন সময় পোষ্ট ম্যান এসে কয়েকটা চিঠি ডাকবাক্সে ফেলে গেলে পরে ওগুলো নিয়ে ঘরে আসতে আসতে দেখছিলাম ওগুলো কোথা থেকে এসেছে ... এর মধ্যে একটা দেখি টেলিফোনের বিল ... গত মাসেও ওরা আমার গলাকাটা বিল পাঠিয়েছিল , এবার ও কি করেছে কে জানে , ভাবনাটা মনে আসতেই ওটা খুলছি আর কোকড়াচুলওয়ালীর আম্মুকে বলছি -- কে জানে এ মাসে টেলিফোনের বিলটা কত এসেছে
অমনি দেখি সে চোখের ইশারায় চরমভাবে কিছু একটা মানা করে যাচ্ছে ... আমি বেকুব ইশারাটা বুঝতে না পেরে বিলটা বের করে পড়লাম ... এর পরে বললাম --- কি যে অবস্হা এত ফোন করা লাগে এত্ত যায়গায় ; একদিকে যেমন সময় নষ্ট অন্যদিকে টাকা ও লাগে এত্ত এত্ত ...
অমনি পাশ থেকে কোকড়াচুলওয়ালী বলে উঠলো --- কাউকে ফোন না করলেই পারো ?
ওর মুখের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম , ফোনের বিল দেখে ও রাগ করছে কেন ...ঘটনা কি ? ... পরক্ষনেই মনে পড়লো ... সর্বনাস , কি করেছি আমি
গত পরশু রাতে ঘুমানোর আগে না, আমার ফোন করে ওকে নতুন গল্প বলার কথা ছিল, কাজের চাপে আমি তো একেবারেই ভুলে গিয়েছিলাম ....
ওর সবচেয়ে আদর লাগার মতো, দু হাতে ওর গুল্লু গুল্লু গাল দুটো ধরে বললাম -- লক্ষি বাবু , আমি সেদিন কাজের চাপে এক্কেবারে ভুলে গিয়েছিলাম গল্প বলতে , আজকে দুটো গল্প বলি ?
আমার জানের টুকরাটা একটু মুখ ঘুরিয়ে নিতে চেষ্টা করতেই ওর কপালে টুক্কুস করে একটা চুমু দিয়ে বল্লাম -- তাহলে তিনটা ?
ও তখনো মুখ ভার করে বলে -- সরে যাও ...
আমি বললাম -- তুমি আজকে আমার কাছ থেকে কয়টা গল্প শুনতে চাও না বললে আমি সরবো না ..
ও আবার বলে --- একটাও শুনবো না ...
আমি বললাম -- আমি তো আজকে গল্প না শুনায়ে ছাড়বো না আমার জানের টুকরাটাকে ...
এই বলে ওকে দু হাতে তুলে কোলে নিতেই দেড়ফুটি কোকড়াচুলওয়ালী বলে উঠলো -- " উফফ , তুম খুব যনতনা কলো "
আমি ছাড়া তোমাকে এমন যন্ত্রনা আর কেউ কি করতে পারে বলো, বলতে বলতেই তাকে টেনে নিলাম একেবারে নিজের বুকের ভিতরে, এমনভাবে যেন আমার বুকে এসে জমা হয় তার সবটুকু অভিমান আর কষ্ট ..... আর তার বুকে জমা হয় আমাদের দু জনের সবটুকু ভালবাসা আর আনন্দ ...
No comments:
Post a Comment