পাত্রীর নানীর ক্যাতা --
তাও আবার আমার সাথে ?
১৮ ই মে, ২০০৯ রাত ১১:০২
কয়েক বছর আগের কথা ... আমার এক বন্ধুর বিয়ের কথা বার্তা চলছিল ... দু পক্ষ আগে থেকেই পারিবারিক ভাবে কিছুটা পরিচিত হলেও ছেলে মেয়ে দুই আলাদা দেশে থাকার কারনে মধ্যে আগে দেখা হয়নি কখনো ..... শুধু নামে পরিচয়, ছবিতে দেখা আর অল্প সল্প ফোনে কথা হয়েছিল ওদের মাঝে ... তাই ফাইনাল ডিসিশনের আগে সবার ইচ্ছা হলো ছেলে মেয়ে দুজনের নিজেদের মধ্যে একটু আলাপ করে নিক এর পরে ওরা নিজেরা ফাইনাল ডিসিশন জানাবে সবাইকে ...
যেমন কথা তেমন কাজ , পাত্রীর খালা এ দেশে থাকে সেই সুবাধে ওরা সেখানে বেড়াতে আসলো ... পাত্র আবার একলা একলা যেতে একটু কেমন কেমন করছিল বলে আমাকে বললো দোস্ত আমাদের সাথে চল, অনেক কিছু হয়ত বাবা মা' র সামনে বলতে পারবো না সেগুলো তোকে বলবো তুই সবাইকে বলে দিস ... আমিও ফ্রি আছি দেখে রাজি হয়ে গেলাম ... এর পরে এল সেই দিন, পাত্রের বাবা মা ভাই বোন আরো কয়েকজন আর আমি একসাথে রওনা দিলাম পাত্রীর বাড়ির উদ্দেশ্যে .... সময় মতো আমরা ওখানে পৌছে দেখলাম ওদের বাড়িতেও তাদের আত্মীয় স্বজনে গমগম করছে ...চারিদিকে বেশ একটা উৎসব উৎসব ভাব আছে ... সবাই বেশ সমাদর করে আমাদেরকে ভিতরে নিয়ে যেতেই দেখি ঘরে পাত্রীর মুরুব্বীর অভাব নেই ঘরে ... তবে সবাই যাদেরকে বেশ সমীহ করছে তারা হলেন ওর নানা, নানী ... তারা যা বলছে সবাই সেটা অক্ষরে অক্ষরে মানছে ... উনারা আবার কয়েকদিনের জন্য এসেছেন দেশ থেকে ...
ঘরে ঢুকে সবাই কিছুক্ষন কথা বলা হলে পরে একসময় বলা হলো ছেলে মেয়ে আলাদা এক জায়গাতে কথা বলতে যাক ... মুরুব্বীরা এখানে থাকুক , কিন্তু মেয়ে সেই ভিতর থেকে সামনে আসে না আর বন্ধু আমার পাশ থেকে নড়ে না ... এই না দেখে পাত্রীর খালা আমাকে বলে - অনন্ত, তোমার বন্ধুকে নিয়ে বাইরের বাগানে আসো তো ... উনার সাথে আমরা দুজনে বাইরে যেতেই দেখি চরম সাজে সেজে বাগানের এক কোনে দাড়িয়ে আছে পাত্রী ... এদিকে তাকে দেখে আমার বন্ধুর পালস এমন বেড়ে গেল যে সে ফিসফিস করে আমাকে বললো --- দোস্ত আর যাই করিস, এখান থেকে যাসনে যেন, প্লিজ ... তাকে আস্বস্ত করলাম , আমি কোথাও যাচ্ছি না... এখানেই খালার সাথে কথা বলছি, তুই যা কথা বল গিয়ে ... এই কথা আবার শুনতে পেয়েছে পাত্রীর খালা ... তিনি আমাকে বললেন -- ঐদিকে মেয়ের ও নাকি একই অবস্হা ... কি করা যায় বলোতো ? .... আমি বললাম -- চলেন দুইটারে ধাক্কা মেরে বাগানের একটা গর্তে ফালায়া দেই সেইখানেই কথা বলুক, নাইলে এরা যা নাটক শুরু করসে তাতে সারা রাত পার করে দিবে এভাবে দাড়ায়ে দাড়ায়ে ...
চারিদিকে আস্তে আস্তে অন্ধকার নেমে আসছে, তখনো একদিকে আমার বন্ধু দাড়িয়ে দাড়িয়ে আমার ধৈর্য্য পরিক্ষা নিচ্ছে , ওদিকে পাত্রীও দেখি অন্যদিকে তাকিয়ে আঙ্গুল মোচড়াইতেসে আর তার খালার কথা শুনতেসে ... একসময় পাত্রীর খালা এসে আমারে বলে -- অনন্ত এইবার কি করি ? এ দুইটারে নিয়ে তো বহুত ভ্যাজালে পড়া গেল ... কিছু করা যায় না এদের ? আমি বললাম -- আপনি বড় আছেন, আপনি ওদেরকে এক জায়গাতে আনেন, ... এর পরে উনি বললেন -- এক কাজ করো তুমি গিয়ে *** (পাত্রী) সাথে একটু কথা বলো এর পরে আমি (বন্ধুটাকে দেখিয়ে বললো) এই গাধাটারে পাঠাচ্ছি .... উপায়ন্তর না দেখে আমি বললাম -- আচ্ছা , যাচ্ছি ...
এদিকে আমি পাত্রীর কাছে গেছি কথা বলতে, আর ওদিকে ভিতরে পাত্রীর মুরুব্বিরা নিজেদের মাঝে গবেষনা করছে - বাইরে ওরা এত কি কথা বলছে ? ... একসময় পাত্রীর নানী নিজেই কি কথা বলা হচ্ছে তা দেখতে এসে দেখলো আমি দাড়ায়ে কথা বলছি পাত্রীর সাথে আর তার খালার পাশে দুরে দাড়িয়ে আমার বন্ধু ... নানী আর কোন দিক না তাকিয়ে সোজা আমাদের পিছন দিক থেকে হেটে এসে আমার হাত ধরে বললো -- নানাভাই আর কত কথা বলবা , কোন চিন্তা কোরো না ... আমার দোয়া আছে তোমাদের সাথে ... চল ভিতরে যাই ।
আচমকা এই ঘটনায় পাংশু মুখে পাত্রী, বাকরুদ্ধ আমি একদিকে দাড়িয়ে আছি আর ওদিকে চমকে ওঠা খালার সাথে হৃদয়ে চাপ খাওয়া গাধাটা দৌড়ে আসলো আমাদের কাছে ... পাত্রীর খালা , নানীকে বললো -- আম্মা আম্মা কি করেন, পাত্র তো এইটা (বলে আমার বন্ধুকে দেখালো)
অমনি পুরো কথা না শুনেই নানীর চিৎকার করে উঠলো -- তাইলে ও এইখানে কি করছে ?
এর পরে খালা তাকে পুরো ঘটনা বুঝিয়ে বলার পরে হেসে দিয়ে তিনি আমার গায়ে মাথায় হাত বুলায়ে বললেন -- কিছু মনে কইরো না নাতিন, তোমার সাথে হালকা মিস্টেক হয়ে গেছে ...
No comments:
Post a Comment