ভাগ্নীর জন্মদিনে
দু পা চলতেই ধপাস !!
২৮ শে জুলাই, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:২৩

আজকের টক অফ দ্যা টাউন - বৃষ্টি আর জলাবদ্ধতা ... কত সুখ আর দুঃখের কথকতা সবাই বলে যাচ্ছে অনর্গল ... ঢাকায় থাকতে এমন অভিজ্ঞতা আমারও হয়েছে সে সময়ের স্মৃতিচারনের মাঝেই হঠাৎ মনে পড়ে গেল আরেক ধরনের অভিজ্ঞতার কথা ...
সেদিন ছিল আমার বড় ভাগ্নির জন্মদিন,সবাই মিলে আমরা তখন গিয়েছি গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে ... তার কয়েকজন মামা আর খালামনি মিলে তার জন্মদিন পালন করবে ঠিক করেছে, অনেক দুর থেকে একটা কেক আনা হলো, আপুনিকে দিয়ে বিরানী, মাংস আর চিকেন ফ্রাই বানিয়ে, সবাই মিলে একটা ঘরকে সাজানো হলো ... বিকাল হতেই আকাশ পাতাল এক করে ঝুমঝুম বৃষ্টি শুরু ... আমরা সবাই একসাথে গোল হয়ে মুড়ি মাখা খাচ্ছি আর ঢাকায় এমন সময় কে কি করি তার গল্প করছি ... আমার কাজিন একজন বলে উঠলো - আমার সিঙ্গাড়া খেতে মন চাইছে , ঢাকায় থাকলে এমন বৃষ্টিতে গরম গরম সিঙ্গাড়া না খেলে আমার হয় না ... এই না শুনে ভাগ্নী তার একমাত্র মামাকে ধরেছে -- অন্তু মামা আমি সিঙ্গাড়া খাব, নিয়ে আস ... আমার আর কিছু চাই না আজকে ...
গ্রামের রাস্তা সব কাঁদায় একাকার, তার উপরে কারেন্ট নাই ... একটা হোটেল আছে, অনেক দুরে ... ওরা এখনো খোলা আছে কি না ঠিক নাই ... তার উপরে আমাদের কাঁদায় হাটার অভ্যাস নাই ... কিছুক্ষন আমতা আমতা করেও যখন ভাগ্নীর হাত থেকে রেহাই পেলাম না, তখন বাধ্য হলে আরেক কাজিনকে নিয়ে অন্ধকার রাস্তায় ছাতা মাথায় দিয়ে চললাম সিঙ্গাড়া শিকারে ... ঘর থেকে বের হচ্ছি এমন সময় নানাভাই বললেন -- কিরে , এই সময়ে জুতা পরে কৈ যাস, বাইরে যে কাদা তাতে পায়ের আঙ্গুল চেপে চেপে হাটতে হবে, খালি পায়ে যা !!
নানাভাই এর কথা মেনেই সেভাবে ঘর থেকে বের হতেই ছোট মামা বললেন, পাশের ঘাটে নৌকা আছে ওতে করে আমি ঐদিকেই যাচ্ছি, চলো তোমাদের নামিয়ে দেই ... মামার সাথে গিয়ে দেখি মামার আরো কয়েকজন বন্ধু একসাথে কৈ যানি যাচ্ছে, আমরা দু ভাইও ওদের সাথে হোটেলটার কাছাকাছি একটা ঘাট পর্যন্ত গেলাম, এর পরে ছোট মামা আমাদেরকে নিয়ে হোটেলে বসিয়ে মালিক কে বললেন গরম গরম সিঙ্গাড়া ভেজে দিতে ... আর আমাদের বললান -- বাসায় যেতে পারবা তো হেটে ? ... ঘাড় ঝাকিয়ে বুক ফুলিয়ে দুজনেই জবাব দিলাম -- পারব !!!
কিছুক্ষন পরে সিঙ্গাড়া ভাজা হয়ে গেলে দুজনে রওনা হলাম নানাবাড়ির দিকে ... সমস্যা হলো আমরা দুজনের কেউই কাদায় হাটতে অভ্যস্ত ছিলাম না, বেশী কাদার জায়গা গুলোতে হাটতে পারলেও অল্প কাদায় জায়গাগুলোতে পা রাখামাত্রই আরেক দিকে সরে যাচ্ছিলো ... সাথে টর্চ এনেছিলাম, কিন্তু একহাতে সিঙ্গাড়া আরেক হাতে ছাতা থাকার কারনে সেটা জ্বালানোর সুযোগ পাচ্ছিলাম না কেউ ... খুবই ধীরে ধীরে পা টিপে টিপে আগাচ্ছি দুজন ... মাঝে মাঝে এমন অন্ধকার হয়ে আসে , যে পাশের কাজিন কে ও দেখতে পাচ্ছিলাম না ...আবার কথা বললে পিছলে যেতে পারি এ ভয়ে কেউ কথাই বলছিলাম না,
একসময় হঠাৎ কাজিন চিল্লায়ে উঠলো -- অনন্ত, রাস্তা কোন দিকে ? ...
আমি বলি -- ক্যান, এই রাস্তা তো সোজা নানা বাড়ি গেছে ...
কাজিন বলে -- আমার সামনে তো খালি পানি ... রাস্তা খুজে পাই না ...
বৃষ্টির মাঝেই ছাতা বন্ধ করে টর্চ জ্বালিয়ে দেখি , সাবধানে পথ চলতে চলতে কাজিন আমার রাস্তার ঢাল বেয়ে নিচে নেমে পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালের কিনারায় দাড়িয়ে আছে ... হো হো করে হাসতে হাসতে ওরে বললাম --রাস্তা এই দিকে, উঠে আসো এবার ... কিন্তু অনেক চেষ্টার পরেও টর্চের আলোয় ঢাল বেয়ে উপরে সে আর উঠতে পারে না ... অগত্যা আমি একটু নীচে গিয়ে ওকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে এক হ্যাচকা টানে উপরে তুলে আনলাম ... এর পরে দুজনেই ছাতা বন্ধ করে সে হাতে টর্চ জ্বালিয়ে নানা বাড়ির দিকে রওনা হলাম, আগে তো রাস্তা দেখতে পাচ্ছিলাম না, এখন পরিষ্কার দেখতে পেয়ে জায়গা বুঝে পা রেখে সামনে আগানোর চেষ্টা করতেই --- একসাথে দুজনে ধপাস !!!
কোন রকমে সামলে নিয়ে আবার উঠে আরেকটু দুর যেতেই কাজিন বলে -- সাবধানে চলটে হবে, নাইলে কিন্তু .... কথাটা শুনতে শুনতেই আমি আবার ধপাস !! ... আমাকে পড়তে দেখে কাজিনও আবার ধপাস !!!!
এভাবে চলতে চলতে ২০ মিনিটের পথ ঘন্টা তিনেক পার করে যখন নানা বাড়ি পৌঁচেছি, এক নজর দেখে নানা বাড়ির সবাই হাসতে হাসতে কুটি পুটি ... সবচেয়ে বেশী হাসছে দেখি আমার পিচ্চি ভাগ্নীটা ... সেই সাথে একের পর এক ভঙ্গীমায় শুকনা মেঝেতে ধপাস করছে আর বলছে -- মামা, তোমরা এইভাবে পড়েছিলা ?
No comments:
Post a Comment