বেয়াঈন আমার আয়না দেখে চমকে উঠলো
১৬ ই মে, ২০০৯ রাত ১২:৫৪
শহরে জন্ম, সেখানেই বড় হয়েছি, আর গ্রামে যেতাম বেশী হলে বছরে একবার, তাও ২ - ৩ দিনের জন্য ... কখনো কখনো ২ - ৩ বছরে ১ বার ... একবার, অনেকদিন পরে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছি এক কাজিনের বৌ ভাতে ... সেখানের বিয়ে বাড়ির আনন্দ আর শহুরে আনন্দের মাঝে বেশ পার্থক্য ছিল বলে প্রথম প্রথম ওদের সাথে তাল মিলাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিলো ... বিয়ে বাড়ি সাজানোর পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকায় আমাদের কয়েকজনের উপরে বাড়ি সাজানোর দায়িত্ব দেয়া হলো ... বিশাল বড় বাড়ি, ক্যামনে কি করি সেই নিয়ে আমরা অস্হির ... ভাবীর বাড়ি কাছেই হওয়ায় ও বাড়ির লোকজন দিন রাত এখানে আসা যাওয়া করছে ... এর মাঝে রয়েছিল আমাদের এক দল বিয়াঈন ... ওদের মাঝে একজন আবার ঢাকা থেকে যাওয়ার কারনে ও বাড়িতে বেশ আধিপত্য বিস্তার করে চলছিল ... হুট হাট এ বাড়িতে এসে আমাদের কাজে ডিস্টার্ব করাই যেন ওদের ঐ দিনের একমাত্র কর্মপরিকল্পনা বলেই মনে হচ্ছিলো ... বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ এসে একবার বললো - এহ ! এটা কোন ধরনের ফুল , ঘর সাজানোর জন্য এমন ফুল কখনো ব্যবহার হয় নাকি ? ...... আল্পনা করছে, আল্পনার "আ" কি জিনিস তা জানা আছে নাকি এদের ... সেই সাথে ইচ্ছে করেই হাটতে গিয়ে হাতে পায়ে জড়িয়ে পেঁচিয়ে কাজের / সাজানোর জিনিসগুলোকে ফেলে দেয়াটা একসময় একেবারে সহ্যের বাইরে চলে গেলে উনাদেরকে বললাম --- এত যখন ভাল সাজাতে পারেন তবে পারলে আপনারাই সাজান তো আমরাও একটু দেখি কি মহান শৈল্পিন জ্ঞানের আধার হয়ে এ ধরাভুমিতে এসেছেন আপনারা ... ওদের মুখ দেখে বুঝলাম কথাটা বেশ গায়ে লেগেছে ... অন্ধকার মুখ করে ওরা চলে গেল ওদের বাড়িতে ... কয়েক ঘন্টা পরে যখন ফিরে এলো তখন ওদের মুখ ঝামটা বিহীন হাসিমুখ দেখে যতটা না ভালো লাগলো তার চেয়ে আশংকা হতে লাগলো ওদের সাহায্য করার মহানুভবতা দেখে ... যদিও বাকি কাজটুকু বেশ ভালভাবেই একসাথে করে ফেললাম , তার পরেও হঠাৎ ওদের এই পরিবর্তন দেখে মনের মাঝে একটা খচখচানী থেকেই গেল .....
ঘটনার শানে নুজুল তখনই বুঝতে পারলাম যখন আমি শাওয়ার নিতে গিয়েছি ... ঝর্না দিয়ে পানি মাথা বেয়ে নিচে পড়তেই চমকে উঠলাম ... এত্ত রক্ত কোত্থেকে আসলো, হায় হায় ... মাথা ফাটছে আমি নিজেই টের পাইনি ... এ কেমন কথা
... মাথায় যত পানি ঢালি ততই দেখি লাল রক্তের মতো পানি পড়ে,অথচ মাথায় কোন কাটা নেই, ব্যাথা নেই ... কিছুক্ষন পরেই বুঝতে পারলাম আসল কাহিনী ... কাজের ফাঁকে আমার মাথায় রং দিয়ে গেছে শয়তানের নানীগুলোর কোন একজন .... যতই পানি ঢালি ততই রং মিশানো পানি পড়তে থাকে .... শ্যাম্পু দিতে দিতে সেইটা শেষ, সাবান ও ঘষতে ঘষতে হাফ হলে পরে দেখি মাথা থেকে রং একটু কম পড়া শুরু করেছে ... এভাবেই সেদিনের মতো শাওয়ার থেকে বের হয়ে রেডি হলাম ![]()
অনুষ্ঠান শুরু হতেই ওবাড়ির মানুষজনের আনাগোনার মাঝে খুজে বেড়াচ্ছি সেই জনকে যিনি আমার চুলের ১২টা বাজিয়েছেন ... সবাই আসার পরেও বুঝতেই পারলাম না আসলে কে করেছিল সে কাজটি ... এদিকে সেই মানুষটাকে কিছু একটা করার জন্য মনটা বড়ই আইটাই শুরু করে দিয়েছিল ... একসময় ওবাড়ীর ছোট এক পুচ্চিকে চকলেট দিয়ে বের করে নিলাম সেই নাম, যাকে আমি অনেকক্ষন থেকেই বাত্তি জ্বালায়ে খুজতেছিলাম ... জানা গেল ঐ কাজের কাজি হলেন সেই জন যিনি ঢাকা থেকে গিয়েছিলেন ... আমিও মনে মনে বলি বেয়াঈন সাহেবা ... আমি ও সেইখান থেকেই এসেছি, আপনারে সাইজ না করলে তো আমার চলবে না ... ব্যাস , এক কাজিনকে ডেকে কয়েকটা জিনিস আনতে বললাম .... এর পরে অপেক্ষা করতে থাকলাম সেই মাহেন্দ্রক্ষনের ..... রাতে সবাই মিলে আড্ডা দিতে বসেছি, সবাই বেশ মজা করছে ... এর মাঝেই হঠাৎ করে লোডশেডিং এর কারনে কারেন্ট চলে গেল ... তার পরে ও মোমবাতির আলোয় চলতে থাকলো আমাদের আড্ডা ...
এমন সময় এক কাজিন বলে উঠলো অনন্ত তুমি জাদু দেখাবে না ? ... এ কথা শোনার সাথে সাথে সবাই বলে উঠলো জাদু দেখবো জাদু দেখবো .... আমি বললাম আচ্ছা ঠিক আছে ... জাদু দেখাচ্ছি ... তবে একজন আমাকে সাহায্যকারী দরকার হবে ... অনেকেই বলে উঠলো আমি করবো , আমি করবো ... সবার দিকে ঘুরে ঘুরে তাকিয়ে একসময় তাকেই এ্যাসিস্টেন্ড হিসেবে পছন্দ করলাম যিনি ছিলেন সেই ঢাকাইয়া বেয়াঈন ... তাকে বললাম --- শুনেন এই জাদুর সব কিছু আপনি করবেন আমি খালি জাদুমন্ত্র পড়বো ঠিকাছে ? ... উনি সাথে সাথে রাজি হয়ে গেলেন .... উনার খুশী খুশী মুখ দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিলো আমাকে তিনি আমাকে কোন না কোন বিপদে ফেলতে চান ...
এর পরে তাকে আগে থেকেই পাশে রাখা এক জগ পানি দিয়ে বললাম, এই নেন পানি এটা দিয়ে ঠিকমতো ওজু করে আসেন এর পরে সবাইকে আমরা জাদু দেখাবো ... তিনি অন্ধকারের মধ্যেই বারান্দায় গিয়ে ওজু করে ঘরে আসতেই বললাম ... এই নেন আয়না ... এবার দেখেন তো আর মধ্যে কিছু দেখতে পান কি না ... আয়নায় মুখ দেখতেই তার ফর্সা মুখের যে হাল হয়েছিল তা দেখে আমরা হেসে গড়িয়ে পড়লাম ... কারন আমার ঢাকাইয়া বেয়াঈন সেই আয়নাতে এক কালো ভুতের ছবি দেখতে পেয়েছিল ......

No comments:
Post a Comment