আমার লেবু চা
আর কোঁকড়া চুলওয়ালী হাসি
২৫ শে জুন, ২০০৯ ভোর ৫:০৮
সেদিন ছুটি থাকার ঘুম থেকে সকাল সকাল ওঠার কোন ইচ্ছা ছিলনা, ফলাফল দুপুর পর্যন্ত ঘুম ... ভুল করে একটি সেলফোন সাইলেন্ট করতে ভুলে যাওয়ার খেসারত হিসেবে তার কর্কষ আওয়াজে ঘুমের বারোটা বাজতেই চোখ মেলে দেখি কোকড়াচুলওয়ালীর আম্মুর কল ... রিসিভ করতেই বলে উঠলো -- কৈ তুমি ?
আমি বললাম -- বাসায় আছি, ক্যান ?
ও বললো -- আমরা আসছি তোমার বাসায় ... বলেই ফোন কেটে দিলো
ঘটনা কি, এমন অসময়ে ক্যান আসছে ওরা , চিন্তা করতে করতে আমি আবার হারিয়ে গেলাম ঘুমের রাজ্যে ....
ঘন্টা খানিক পরে ডোরবেলে ক্রমাগত ডিং ডং হতে থাকলে বুঝতে পারলাম বান্দা হাজির ... দরজার দাড়িয়ে ঘুম আমার উষ্ক খুষ্ক চেহারা দেখে ওরা দুজনেই অবাক ... ঘরে ঢুকতে ঢুকতে কোকড়াচুলওয়ালী একের পর এক প্রশ্ন করে যেতে লাগলো --তুমি কি ঘুমাচ্ছিলা, এত্ত ঘুমাচ্ছ ক্যান আজকে ? কখন উঠস ? ফ্রেস হইসো ?
আমি : এরমম, মানে ... আমি কেবল ঘুম থেকে উঠেছি তো, তাই .... ![]()
পুরোটা উত্তর শোনার কোন ভাবই দেখলাম না দেড়ফুটির মধ্যে , আমাকে রীতিমত ধাক্কাতে ধাক্কাতে ঢুকিয়ে দিলো বাথরুমে , আর বাইরে থেকে বলতে লাগলো -- একেবারে ফ্রেস হয়ে তার পরে বের হবা, নাইলে বেরুতে দিবো না ....
একাবরে ফ্রেস হয়ে বেরুনোর পরে ঝপাং করে কোলে উঠে পিচ্চি বলে -- আজকে আমার পরীক্ষা খুব ভাল হইসে আমি আইসক্রীম খাব ... ফ্রিজ খুলে দেও
আমি বললাম -- বাসায় আইসক্রীম নেই যে ![]()
ও বললো -- তাহলে কাষ্ট খুলে চিপস দেও ...
আমি বললাম -- সেটাও শেষ হয়ে গেছে যে
কয়েকটা চকলেট আছে চলবে ? ![]()
চোখ পাকিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে কোকড়াচুলওয়ালী বলে -- হুমমম, দেও !
সে যাত্রায় কোন রকমে পার পেয়ে যেন জানে পানি আসলো ...
এর মধ্যে দেখি ডাইনিং টেবিলে দেড়ফুটির আম্মু আমাদের তিনজনের জন্যই সকালের নাশ্তার জন্য স্যান্ডউইচ বানিয়ে রেডি করছে , আমাকে দেখে বললো - চা কফি কি বানাবা নিজে বানাও ...
আমি বললাম -- আমি তো লেবু চা খাই আজকাল , চলবে ?
জবাবে হ্যা শোনার পরে আমি চলে গেলাম চা বানাতে , গুটু গুটু পায়ে কোকড়াচুলওয়ালীও আমার সাথে সাথে কিচেনে গিয়ে দেখি সে নিজেই চা বানানোর জিনিসপত্র নিয়ে ঘুটুর মুটুর শুরু দিলো, প্রথমে চা বানানোর পাত্র, এর পরে চিনি আর টি ব্যাগের বক্স নিয়ে এসে আমাকে বললো -- আর কি লাগবে ?
আমি বললাম -- লেবু , দাড়াও আমি ফ্রিজ থেকে বের করছি ....
ও বললো -- তুমি দাড়াও আমি আনি ... বলতে বলতেই ফ্রিজের হ্যান্ডেল ধরে টানাটানি করেও যখন খুলতে পারছেনা তখনো আমাকে বলে না যে খুলে দাও .... আত্মসম্মান বলে কথা
... আস্তে করে ওর পাশে দাড়িয়ে দরজাটা খুলে দিতেই ভিতর থেকে আস্ত লেবু একটা বের করে নিয়ে দরজাটা ধড়াম করে বন্ধ করে দিলো ... বুঝলাম খোলার সময়ে ওর সাথে পাঙ্গা নেয়ার ফলাফল এইটা ...
গরম পানিটে টি ব্যাগ দিয়ে লেবুর রস চিপে দিতেই কোকড়া চুলওয়ালী বলে -- শুধু লেবুর রস দেও ক্যান, লেবুর খোসাও দেও কেটে কেটে , ভালো লাগবে
ওর কথা না শুনলে যে কি হয় তা জানা আছে বলেই কথামতো শুধু আমার চায়ের মগে লেবুর খোসা টুকটো টুকরো করে কেটে দিলাম ... এরপরে চায়ের উপরে ভেসে থাকা লেবুর খোসাগুলো দেখে পিচ্চি হেসেই কুটি কুটি ...
এই অবস্হা শুনে পাশের রুম থেকে ওর আম্মু আসতেই আমার চায়ের মগের দিকে আংগুল তুলে হেসে গড়াতে গড়াতে কোকড়াচুলওয়ালী বলে --- দেখ দেখ আম্মু , ও চায়ের মধ্যে লেবু খায়না, লেবু দিয়ে চা খায় ....

No comments:
Post a Comment